এবার বরিশালের মেয়র হতে আদালতে জাপা প্রার্থীর মামলার আবেদন
Published: 23rd, April 2025 GMT
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০২৩ সালের নির্বাচনের ফলাফল বাতিল চেয়ে এবার আদালতে মামলার আবেদন করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন (তাপস)। তিনি আদালতের কাছে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন।
আজ বুধবার বরিশাল সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে ইকবাল হোসেনের পক্ষে মামলার আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী আজাদ রহমান। আদালতে বিচারক হাসিবুল হাসান আবেদনটি গ্রহণ করে পরবর্তী আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন।
এর আগে ১৭ এপ্রিল একই আদালতে বরিশাল সিটির মেয়র পদে বিজয়ী ঘোষণার দাবিতে মামলার আবেদন করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। নির্বাচনের প্রায় ২২ মাস পর সৈয়দ ফয়জুল করীমের পক্ষে আদালতে আবেদনটি দাখিল করেন তাঁর আইনজীবী শেখ আবদুল্লাহ নাসির। আবেদনটি পরবর্তী আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন বিচারক। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তার শুনানি হওয়ার কথা। এই দাবিতে কয়েক দিন ধরে বরিশালে বিক্ষোভ, আদালতের সামনে অবস্থান, পদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
আজ বুধবার মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের নির্বাচন যেমন সুষ্ঠু হয়নি, তেমনি ২০২৩ সালের নির্বাচনেও অনিয়ম ও কারচুপির আশঙ্কা ছিল। জাপার প্রার্থী ইকবাল হোসেন এই আশঙ্কার কথা আগেই তৎকালীন নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে জানিয়েছিলেন। এরপরও নির্বাচনে সরকারি সংস্থা ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের সদস্যরা আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে সরাসরি কাজ করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে বহিরাগতদের এনে হোটেলে রাখাসহ ভোটকেন্দ্রে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ভোটের দিন প্রার্থী ইকবাল হোসেনকে ভয় দেখানো হয় এবং তাঁর পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। ভোটারদের ভোট দিতে না দিয়ে নিজেদের লোকেদের দিয়ে ইভিএমের বোতাম চেপে ভোট দেওয়ানো হয়। ৫০টি কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও ফলাফলে অত্যধিক ভোট গ্রহণ দেখানো হয়েছিল। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বহিরাগত একজনকে ধরিয়ে দেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
মামলার আবেদনের পর ইকবাল হোসেন দাবি করেন যে ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারলে তিনি নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হতেন। এ জন্য তিনি আদালতের কাছে ফলাফল বাতিল করে তাঁকে বরিশালের মেয়র হিসেবে ঘোষণা করার আবেদন জানিয়েছেন।
২০২৩ সালের ১২ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁদের মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১২৬টি কেন্দ্রের ফলাফলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ৮৭ হাজার ৭৫২ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করীম পেয়েছিলেন ৩৪ হাজার ৩৪৫ ভোট। আর জাপার প্রার্থী ইকবাল হোসেন ৬ হাজার ৬৬৫ ভোট পেয়েছিলেন। নগরে মোট ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৬ হাজার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইকব ল হ স ন বর শ ল স র ফল ফল
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক রায়হান অভিযুক্ত হলেও নাম নেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে গত বছরের ৪ মার্চ শিক্ষার্থীকে গুলির একটি মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ডিবি। এতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে গুলি করা কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের প্রাক্তন শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে অভিযোগপত্রে নাম নেই যার কাছ থেকে ডা. রায়হান অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন সেই এস এস আল হোসাইন ওরফে সোহাগের। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নওদাপাড়ার সোহাগের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র-বিস্ফোরক ও নাশকতার একাধিক মামলা আছে।
গত বছরের ৪ মার্চ ব্যাগভর্তি অস্ত্র-গুলি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখান শিক্ষক রায়হান। তার দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে লক্ষ্য করে শিক্ষক রায়হান গুলি করেন। শিক্ষার্থী তমাল বাম উরুতে গুলিবিদ্ধ হলেও বর্তমানে সুস্থ। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ব্যাগভর্তি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। তাঁর ব্যাগে লাইসেন্সবিহীন দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি জাপানি সামুরাই, ১০টি বার্মিজ ছুরি ও ৭৮ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া যায়। ডা. রায়হানের বিরুদ্ধে সে সময় আহত শিক্ষার্থী তমালের বাবা বগুড়ার আবদুল্লাহ আল আমিন হত্যাচেষ্টা ও ডিবি পুলিশ বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন রায়হান। যদিও পরবর্তী সময়ে জামিন নিয়ে রায়হান এখন পলাতক। ঘটনার পর থেকে উধাও অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগও।
পুলিশ সূত্র জানায়, ডা. রায়হান সিরাজগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তি ও জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, সোহাগের কাছ থেকেই সব অস্ত্র কিনেছেন। এরপর অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সোহাগ ও রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী। অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগপত্র থেকে সোহাগের নাম বাদ দিয়েছেন ডিবির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম ও ইউনিট ওসি ইকরামুল হোসাইন। ডিবির তদন্ত ও দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা।
সিরাজগঞ্জ ডিবির এসআই নাজমুল হক নতুন তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁর ইউনিটপ্রধান বর্তমান ওসি ইকরামুল হোসাইন আজ ২৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে থেকে পুলিশ পদক নিতে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ফোনে দাবি করেন, ডা. রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় বিচারকের সামনে সোহাগের নাম বললেও তাঁর বাবা বা গ্রামের নাম জানাতে পারেননি। মামলার বাদী এজাহারে যে সোহাগের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেন, তিনি এতে জড়িত নন। বিএনপি করার কারণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করতেই আগের সরকারের সময় সাবেক এসপি ও ওসি সোহাগকে জড়িয়েছেন। শিক্ষক রায়হান যে সময় অস্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তার আগে থেকেই সোহাগ ঢাকা ও ভারতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইমিগ্রেশন ও হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে সাবেক এসপি আরিফুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও মামলার বাদী ডিবির সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী বলেন, শিক্ষক রায়হানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সোহাগের কথোপকথন ও লেনদেনের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই এজাহারে সোহাগের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়।
সমকালের অনুসন্ধানেও সাবেক এসআই ওয়াদুত আলীর এজাহার অনুযায়ী সোহাগের ফোন নম্বরের কল ডিটেইল এবং এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করা হয়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহাগেরই তথ্য ও ছবি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে শিক্ষক রায়হান শরীফ গতকাল ফোনে বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। ডিবির চার্জশিটের বিষয়টি জানি না।’
মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহিম হোসেন বলেন, চার্জশিট থেকে সোহাগকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আত্মঘাতী ও তদন্তের নীতিমালার বাইরে।
জানা গেছে, ভেড়ামারার স্বেচ্ছসেবক দলের সদস্য সচিব কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগ। গতকাল তিনি ফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন ও নাশকতা মামলাগুলো রাজনৈতিক। আমি অস্ত্র ব্যবসায়ী নই। রাজনৈতিক এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীন হলেও পুলিশ সুপার, সার্কেল অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ওসি সুপারভাইজরি অথারিটি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।