চালের দাম যেটুকু কমে বাড়ে তার চেয়ে বেশি
Published: 24th, April 2025 GMT
নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার। মাঝেমধ্যে দুই-এক টাকা কমলেও তা এক বা দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হচ্ছে না। যত টাকা কমে তার চেয়ে বাড়ছে বেশি। এক বছরের বেশি সময় ধরে চালের বাজারে এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
বন্যায় ফলন কম, সরবরাহ খরচ বেড়ে যাওয়া, ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি কম– এ রকম নানা ছুতা দেখিয়ে মূলত চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন মিলার ও করপোরেট ব্যবসায়ীরা।
ভোক্তা-সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, যথাযথ তদারকি ও সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ায় চাল ব্যবসায়ী চক্র নিজেদের ভিত্তি শক্ত করে ফেলছে। বড় ব্যবসায়ীরা চালের বাজারে কলকাঠি নাড়লেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ভরা মৌসুমে কৃষক থেকে ধান কিনে নিজেদের কবজায় নিয়ে নেয় তারা। তারপর পুরো বছর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার তাদের বাগে আনতে পারছে না। এতে বেশি ভুগতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষকে।
কোন চালের দর কত সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, বাজারে গত এক বছরে সরু চালের দর বেড়েছে সাড়ে ১৪ শতাংশ। মাঝারি চালের প্রায় ৯ এবং মোটা চালের ৫ শতাংশ দর বেড়েছে। যদিও গত এক মাসে দাম বাড়ার এই হার কিছুটা কম। তবে সরেজমিন বাজারে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।
গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল, তেজকুনিপাড়া ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরু বা মিনিকেট চালের দাম সর্বোচ্চ দরের রেকর্ড ছুঁয়েছে। ভালো মানের (মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের) এ চালের কেজি এখন সর্বোচ্চ ৯০ টাকা।
বেড়েছে মোটা ও মাঝারি আকারের চালের দরও। খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি গুটিস্বর্ণা বা মোটা চাল ৫৩ থেকে ৫৫ এবং পাইজাম চাল ৫৬ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগে এসব চাল অন্তত ২ টাকা কমে কেনা গেছে। বিআর-২৮ জাত বা মাঝারি চালের কেজি মাসখানেকের ব্যবধানে প্রায় ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৬৬ টাকায়। আবার ভালো মানের বিআর-২৮ জাতের চিকন চাল ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ মিনিকেট বলে বিক্রি করছেন ৭০ থেকে ৭২ টাকায়।
সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সরু চালের। ৮০ টাকা নিচে এখন সরু চাল মিলছে না। মানভেদে এ ধরনের চালের কেজি কিনতে ভোক্তাকে খরচ করতে হচ্ছে কেজিতে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এক-দেড় মাস আগে এ ধরনের চালের কেজি ছিল ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা।
ক্ষুব্ধ ক্রেতা
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে ২৫ কেজি ওজনের এক বস্তা মিনিকেট (সরু) চাল কেনেন বেগুনবাড়ী এলাকার ইলেকট্রিশিয়ান শাহরিয়ার হোসেন। কত টাকায় কিনেছেন জানতে চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, ‘সবজির দাম কমায়া বাহাদুরি করলে হবে? মানুষ কী শুধু সবজি খায়? আগে তো গরিব বাঁচাতে হবে, তারপর বাকি আলাপ।’ একই বাজারে গাজী সাইফুল নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘সরকার বড় ব্যবসায়ীদের ধরতে পারে না। এ জন্য চালের দামও কমে না।’
চালের সংকট নেই
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ১৬ লাখ ৮০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিপরীতে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারিভাবে আমদানি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৯ হাজার টন। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার টন চাল। সরকারি-বেসরকারি মিলে চলতি অর্থবছরের সাড়ে ৯ মাসে মোট আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৭৭ হাজার টন। সরকারের গুদামে বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ টন চাল মজুত রয়েছে।
অনেকে বাজারে সংকট আছে বলে আওয়াজ তুললেও মূলত চালের ঘাটতি নেই। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সংকট শুধু মুখে মুখে। চাহিদামতো সব সময় চাল থাকে। এর আগে কখনই সরু বা চিকন চালের দাম এতটা বাড়েনি। তাদের অভিযোগ, চালের বাজার এখন মিলার এবং করপোরেট ব্যবসায়ীর হাতে।
তেজকুনিপাড়ার মায়ের দোয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘মিলাররা বলে চালের সংকট। তবে যখন যত বস্তার অর্ডার দেই, পাই। মিলে না থাকলে চাল কোথা থেকে দেয়। নাই নাই বলে আতঙ্কে ফেলে দাম বেশি নেয়।’
কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী জনতা রাইস এজেন্সির মালিক মো.
খুচরা আর মিলগেটে চালের দামের ব্যবধান অনেক বেশি বলে মনে করেন মিল মালিকরা। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রশিদ সমকালকে বলেন, মিলাররা চাল বিক্রির সময় পাইকারি ব্যবসায়ীকে চালান সরবরাহ করেন। তাতে চালের ক্রয়মূল্য লেখা থাকে। সরকারের উচিত ব্যবসায়ী পর্যায়ে চালান খোঁজ করে ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের ফারাক দেখা। আর যদি কোনো মিলার চালান সরবরাহ না করেন তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
এবারও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে উল্লেখ করে শীর্ষস্থানীয় এই মিল মালিক বলেন, চাল নিয়ে বেশি টেনশন করতে হবে না। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে মিল, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সরকারের কঠোর নজরদারি দরকার। গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর কারণে মিলারদের বিপদে পড়তে হয়।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, চালের বাজার দীর্ঘদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। এর মূল কারণ বাজারে তদারকি নেই। করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও মিলার একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে দাম বাড়ান। যারা এই সিন্ডিকেটে জড়িত আবার তারাই আমদানিকারক। আমদানি ও মজুত সবই তাদের হাতে। ফলে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে বাজার।
যদিও বাজারে তদারকি অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি সরকারের সংশ্লিষ্টদের। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আরীম আখতার খান বলেন, ‘চালের বাজার তদারকি হচ্ছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস য় র হ জ র টন সরক র র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম
ঈদের বন্ধের আমেজ কাটতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো। ক্রেতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে বেড়েছে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিনের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। পেঁয়াজ, রসুন ও চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও নিম্নমুখী।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর নগরের কাঁচাবাজারে সবজির সরবরাহ কমে যায়। ফলে দাম ছিল কিছুটা বাড়তি। গত রোববার ও সোমবারের দিকে নগরের আড়তগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে। অধিকাংশ সবজির দামও ৪০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে গত মঙ্গলবার থেকে আবারও বাজারে পুরোদমে সবজির সরবরাহ শুরু হয়েছে। যার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।
আজ শুক্রবার নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি আড়তে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে। বেশির ভাগ সবজির দাম প্রতি কেজি ১০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে খুচরা বাজারগুলোতে প্রায় দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা যায়। নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, সাব এরিয়া ও কাজির দেউড়ি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৬০ টাকার বেশি। লাউ, মিষ্টিকুমড়া ও ফুলকপির দাম কিছুটা কম। এসব সবজির দাম ৫০ টাকার আশপাশে। খুচরা বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। পরিবহন খরচ ও আগে কেনার অজুহাতে বাড়তি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদার নুরুল ইসলাম বলেন, বাজারে সব সবজির দাম কম। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তাদের ভোগান্তি হচ্ছে। আড়তের দামের দ্বিগুণ দামে তাঁরা সবজি বিক্রি করছেন।
সবজির বাজারের পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন ও চালের দামও নিম্নমুখী। খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে আজ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫২ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। অন্যদিকে রসুনের কেজি আড়তে ছিল ৮৫ থেকে ১১০ টাকা। খুচরায় সেটি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।
পাহাড়তলী চালের আড়তে মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা) কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে জিরাশাইল ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত তিন দিন আগ থেকে চালের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম কমেছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের সরবরাহ যথেষ্ট আছে। চালের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই এখন।