Prothomalo:
2025-06-15@22:30:40 GMT

লেখক যখন শল্যচিকিৎসক

Published: 25th, April 2025 GMT

মারিও বার্গাস য়োসার মহাকাব্যিক উপন্যাস দ্য ওয়ার অব দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড দিয়ে শুরু করা যাক। উপন্যাসের পটভূমি ব্রাজিলের কানুদোস নামের এক বিরাট এলাকা। উনিশ শতকের শেষ দিকে এই কানুদোসেই ব্রাজিলের সেনাবাহিনী নিষ্ঠুরভাবে দমন করে এক গণবিদ্রোহ। লড়াইয়ের একদিকে কানুদোসের অধিবাসী—তারা এক বিশেষ ধর্মীয় সংগঠন, মূলত আদিবাসী, সাবেক ক্রীতদাস ও সমাজচ্যুত লোক দিয়ে ভরা এক বড় জনগোষ্ঠী। অন্যদিকে নতুন জন্ম নেওয়া ব্রাজিলিয়ান রিপাবলিকের এলিট সেনাবাহিনী। কানুদোসবাসীরা কোনোভাবেই এই নতুন সরকারের কর্তৃত্ব, করব্যবস্থা ও ধর্মনিরপেক্ষ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেনে নেবে না। আবার সরকারও কোনোভাবেই মানবে না তার ভূখণ্ডের মধ্যে গজিয়ে ওঠা ‘বিপজ্জনক’ এই ধর্মমুখী ইউটোপিয়াকে। অতএব শুরু হলো পৃথিবী শেষ হওয়ার যুদ্ধ। কানুদোস হয়ে দাঁড়াল আদর্শিক বিরোধের মঞ্চ, মানুষ থেকে মানুষে নিয়তির ফারাকের নিষ্ঠুর উদাহরণভূমি। ব্রাজিলের সেনাবাহিনী চারটি সামরিক অভিযান চালাল সেখানে, যার শেষটায় গিয়ে আমরা দেখলাম পুরো ভূখণ্ডটারই গুঁড়িয়ে যাওয়া। য়োসা উপন্যাসের শেষ ভাগে লিখেছেন, ‘কানুদোস আত্মসমর্পণ করেনি। একে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, অ্যাটম-বাই-অ্যাটম একে ধ্বংস করা হয়েছে, নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। কাদা ও আশা দিয়ে গড়া, প্রার্থনা ও রক্ত দিয়ে বানানো এই নতুন জেরুজালেম প্রতিরোধ করে গেছে একেবারে শেষ পাথরখণ্ডটাও সেখানে খাড়া থাকা পর্যন্ত। কানুদোস এমনভাবে হাওয়া হয়ে গেল যেন সে কখনো ছিলই না, যদিও তার প্রতিধ্বনি—অন্য সব অন্যায়ভাবে খুন হওয়া জিনিসের মতোই—ভেসে থাকল নৈঃশব্দ্যের গা বেয়ে।’

য়োসার গদ্য লক্ষ করুন, দেখুন কীভাবে তিনি গড়ে তুলছেন নারকীয় এক বাস্তবতাকে। ‘নতুন জেরুজালেম’ নামের ধর্মীয় অনুষঙ্গ আনার পাশাপাশি তিনি নিয়ে এলেন সহিংসতার গা–ছমছমে সব শব্দবন্ধ—‘অ্যাটম-বাই-অ্যাটম’, ‘ধ্বংস’, ‘নিশ্চিহ্ন’, ‘রক্ত’। আর আনলেন একদম ঐতিহাসিক এক চিরসত্য—পৃথিবীর ইতিহাস অবিচারের ইতিহাস।

একটু ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে আসি এবার। য়োসার উপন্যাস অনেকগুলো, প্রায় ২০টা। গুনে দেখলাম, আমি পড়েছি মাত্র ৯টা। তখন আমার বয়স বিশ কিংবা একুশ। ওই সময় ভারতে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় এলাম, ঘাঁটি গাড়লাম শাহবাগের সাহিত্য পাড়ায়। কানুদোসের ধুলো ভরা পথে তত দিনে আমার হেঁটে আসা শেষ। বার্গাস য়োসার হিংস্র, রাগী আর গোলকধাঁধায় ঢোকার বোধ জাগানো গদ্যে তখন আমার মাথা একদিকে কাত, আর হাতে তাঁর উপন্যাস দ্য রিয়াল লাইফ অব আলেহান্দ্রো ম্যায়তা। পুরো শাহবাগ সে দিনগুলোয় মেতে আছে লাতিন আমেরিকার জাদুবাস্তবতা নিয়ে। আর এরই মধ্যে আমি কিনা ঘোষণা করে বসেছি, বার্গাস য়োসা মার্কেসের চেয়েও শক্তিশালী লেখক! এরপর ১৯৯২ সালের দিকে, তখনকার নামজাদা সাহিত্যপত্রিকা মাটিতে বেরোল বার্গাস য়োসা পড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা আমার এক দীর্ঘ নিবন্ধ, যেখানে প্রচ্ছন্নভাবে আমি বলে দিলাম যে তোমরা পড়ে থাকো তোমাদের মার্কেসিয়ান লিরিক্যাল, বর্ণিল-উজ্জ্বলতার মধ্যে; আমি ঢুকছি য়োসার অন্ধকার নরকে—এখানে নরক মানে আসলে এক ঝড়, আকাশ-কালো-করা ঝড়। সেই ঝড় অর্থাৎ বার্গাস য়োসার মধ্যেই প্রথমবারের মতো আমি আবিষ্কার করলাম, কথাসাহিত্য একই সঙ্গে মানুষের নিষ্ঠুর ইতিহাস, আবার কোনো জমকালো হ্যালুসিনেশনও হতে পারে। আমি লিখেছিলাম, ‘মার্কেস তাঁর পাঠকদের প্রেমময় প্রলোভনে ফেলেন, আর য়োসা তাঁর পাঠকদের সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে বসেন।’ 

তিনি যে চ্যালেঞ্জই করেন, সে বিষয়টা আমার মাথায় এসেছিল তাঁর দ্য রিয়াল লাইফ অব আলেহান্দ্রো ম্যায়তা পড়ে। এখানেও সেই একই বিপ্লব-বিদ্রোহের গল্প। আলেহান্দ্রো ম্যায়তা এক ট্রটস্কিপন্থী বিপ্লবী, পঞ্চাশের দশকের পেরুতে ব্যর্থ এক অভ্যুত্থানের নেতা। উপন্যাসজুড়ে কথক সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন ম্যায়তাকে চেনা অসংখ্য মানুষের, উদ্দেশ্য বোঝা যে পেরুর আন্দেজে ঘটা সেই অভ্যুত্থান আসলে ব্যর্থ হয়েছিল কী কারণে? সব বার্গাস য়োসাতেই যেটা হয়, আস্তে আস্তে ফ্যাক্ট ও ফিকশনের সীমারেখা ভেঙে যেতে লাগল। আমরা দেখলাম, এক আলেহান্দ্রো ম্যায়তা আসলে অনেক আলেহান্দ্রো ম্যায়তা—বামপন্থী বীর, কিন্তু কাজকর্ম বাস্তবের সঙ্গে সংগতিহীন; বিশ্বাসে আন্তরিক কিন্তু বাস্তবে একদম কাঁচা এক নেতা; সমকামী, কিন্তু সেটা এমন এক সামাজিক পরিমণ্ডলে যেখানে সমকাম ও সশস্ত্র বিপ্লব একসঙ্গে যায় না। উপন্যাসটিতে ম্যায়তা সব অর্থে বিভ্রান্ত এক বিপ্লবী। 

চ্যালেঞ্জটা পাঠকের দিকে এখানেই ছুড়লেন য়োসা। ম্যায়তার মধ্য দিয়ে তিনি চ্যালেঞ্জ করে বসলেন লাতিন আমেরিকার বামপন্থীদের। মার্ক্সবাদী তকমা বুকে লাগিয়ে ঘোরা মানুষগুলো জানেনই না যে তাঁরা আদতে স্রেফ রোমান্টিক বিপ্লবী, একরকম এটাই য়োসার মোদ্দাকথা। 

বাস্তবেও এই উপন্যাস লেখার কাছাকাছি সময় থেকে য়োসার নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসেরও বাঁকবদল শুরু হয়। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বামপন্থী লেখকের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে, কিউবা ও ফিদেল কাস্ত্রোতে সম্মোহিত হয়ে থাকাকে বিদায় জানিয়ে, তিনি নিজেকে শাণিত করতে থাকলেন কর্তৃত্ববাদী বাম ও স্বৈরাচারী সমাজতন্ত্রের কড়া সমালোচক হিসেবে। ওই শুরু বার্গাস য়োসার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এক নতুন যাত্রার—লেখালেখি রাজনৈতিকই থাকবে, কিন্তু ওই তখন থেকেই তিনি বলা শুরু করবেন লিবারেল ডেমোক্রেসি, বাক্‌স্বাধীনতা, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা, আর ব্যক্তির সার্বিক মুক্তির সপক্ষে। 

আলোচনার এই অংশের শুরুটা করেছিলাম য়োসা পড়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে। সারাংশে এসে বলতে চাইছি যে এই নতুন ‘বামবিরোধী লিবারেল পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল’ য়োসাকে পড়াটাই পাঠকের জন্য ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। 

সারা জীবন বড় ঘটনা হয়েই থেকে গেছেন বার্গাস য়োসা—যেমন লেখক হিসেবে, তেমন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, নাট্যকার ও পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালের ভূমিকায়। ৮৮ বছর বয়সে এই সেদিন তিনি প্রয়াত হলেন। আর আমরা একটা ‘ফেনোমেনন’-এর ইতি দেখলাম। ১৯৯০ সালে পেরুর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে জিততে শেষে হেরে গিয়ে তিনি যে রাজনৈতিক ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছিলেন, সেই ব্যর্থতাকে পরে কী করে সাহিত্যের মাঠের সফলতায় রূপ দিতে হয়, সে চ্যালেঞ্জে জেতারই ‘ফেনোমেনন’ তিনি। 

তাঁর সর্বসেরা উপন্যাস দ্য ফিস্ট অব দ্য গোট পড়ার পরে আমার কাছে এটুকু পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে য়োসার নিজের রাজনৈতিক আদর্শের বদল কোনো সুবিধাবাদের আলিঙ্গন কিংবা কোনো চারিত্রিক বিসংগতি নয়, এটা তাঁর গূঢ়তম অবসেশনেরই এক বর্ধিত রূপ। কী সেই অবসেশন? 

য়োসার অবসেশন ক্ষমতার অঙ্গব্যবচ্ছেদ করা, ক্ষমতার অ‍্যানাটমি নিয়ে কাজ করা। তিনি সামরিক শাসককে নিয়ে লিখুন কিংবা দুর্নীতিগ্রস্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কি বামপন্থী বিপ্লব বা গণ–আন্দোলন নিয়েই লিখুন, তাঁর কলম অপারেশন থিয়েটারে অঙ্গব্যবচ্ছেদের ছুরি হয়ে একদিকেই যায়—শাসক কীভাবে শাসিতের সঙ্গে আচরণ করে এবং ওই শাসনের নিচে পড়ে ব্যক্তিমানুষ কী করে হয় গ্রাসিত, অথবা সো-কলড ‘প্রগতিশীল’ হয়ে ওঠার নামে কী করে সে নৈরাজ্যবাদী ধরনের গোঁড়া-অন্ধ দানবে রূপ নেয়, সেটা বোঝার দিকেই ছিল তাঁর ক্লিনিক্যাল ঝোঁক। 

এক্ষণে সাহিত্যে য়োসার ঘরানা নিয়ে কিছু বলা যাক। তিনি সেই দুর্লভ গোত্রের লেখকদের একজন, যার সাহিত্য বাস্তববাদী ঘরানার ইতিহাসনির্ভর ফিকশন, কিন্তু তার পুরোটা আবার দার্শনিক বৈপরীত্য এবং নানা সংশয় দিয়ে মোড়া। তিনি না উত্তর-আধুনিক, না জাদুবাস্তববাদী। তবে এই দুই ঘরানা থেকে উদার হাতে নিয়ে ভয়ংকর-বাস্তববাদের সাহিত্যিক নির্মাণে তাঁর ওপরে সম্ভবত কেউ নেই। এ বিচারে তাঁর লেখকসত্তার নাড়ি যেমন ধরা নিজের মহাদেশের মার্কেস ও কোর্তাসারের সঙ্গে, তেমন সেটা প্যাঁচানো কনরাড, দস্তয়েভস্কি, কাম্যু, ফকনার আর জর্জ অরওয়েলের সঙ্গেও। ‘আমার সব লেখালেখি তিন ইংরেজি “R” অক্ষর দিয়ে ঘেরা—রিপ্রেশন, রেজিস্ট্যান্স, রেভল্যুশন—দমন–পীড়ন, প্রতিরোধ ও বিপ্লব। আমার ভালো লেখাগুলো, যেমন দ্য ফিস্ট অব দ্য গোট কিংবা দ্য ওয়ার অব দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড তরঙ্গ তোলে একই অস্তিত্ববাদী ঢেউয়ের ওপরে: বীরত্বের ভেতরকার ফাঁপাটুকু, আদর্শবাদের মধ্যকার পচনটুকু, আর আমাদের চেতনার গভীরে দৈত্যের মতো দাঁড়িয়ে থাকা একাকিত্ব—এই তিন ঢেউয়ে ভেসেই আমার লেখালেখি।’ মাত্র দুই বছর আগে নিজের সাহিত্যকর্মের সারকথা তিনি বলে গেছেন এভাবে। 

তাঁর লেখার প্রকরণ বা শৈলীতে আসি। মার্কেসের মতোই য়োসা তাঁর গদ্যে আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখার ক্ষমতা রাখেন। যদিও প্রকরণে তা একেবারেই লিরিসিজমবর্জিত। তিনি বাক্যের কাঠামোর আদি বা ধ্রুপদিরূপে বেশি বিশ্বাসী। আর প্রায়ই সেগুলো যেন অনেকটা ইচ্ছা করে দীর্ঘ করা লম্বা-টানা কোনো নকশার মতো। এটাই য়োসার বিখ্যাত পলিফোনিক বা বহুস্বরিক বর্ণনা প্রকরণ, যেখানে যেকোনো জিনিসের ওপর আলো ফেলা হচ্ছে একের অধিক দৃষ্টিকোণ থেকে। ফলে সময়ের কালানুক্রমিক চেহারাটা হাওয়া, আর ইতিহাস সেখানে খণ্ডিত বা পা-ভাঙা; এবং সংলাপগুলো এই মুখ চেপে ধরা, আবার এই জোর চিৎকারের। য়োসা পড়তে আপনার ধৈর্য লাগবে, কিন্তু তাঁর অধিকাংশ উপন্যাস শেষ করে আপনার মনে হবে আপনি জীবনে সত্যি এবার পড়ার মতো কিছু একটা পড়লেন! বাংলা সাহিত্যের পটভূমি ধরলে য়োসা পড়া অমিয়ভূষণ মজুমদার পড়ার মতো কিছু—একই বহুস্তরবিশিষ্ট সময় ও ইতিহাসের বয়ান, দারিদ্র্য নিয়ে রোমান্টিসিজম করার দিকে একই রকমের সোজাসাপটা ‘না’, আর ব্যক্তি ও রাষ্ট্র—দুই তরফ থেকেই ঘটানো সমান নিষ্ঠুরতার এক ক্যাটাগরিক্যাল বয়ানকৌশল। তাঁর উপন্যাস দ্য ফিস্ট অব দ্য গোট, যেটা হাতে নিলেই ভয় লাগে, যেহেতু ভয়ই ছিল প্রেসিডেন্ট রাফায়েল ট্রুহিয়োর  স্বৈরশাসনের মূলমন্ত্র, সেখানে য়োসা লিখছেন, ‘একনায়কসুলভ স্বৈরশাসনগুলো অজাচারের মতো (অর্থাৎ রক্তের সম্পর্কের মধ্যে যৌনসংসর্গ); যত বেশি দিন ওই জিনিসটা চলতে থাকবে, ততই খোঁড়া-পঙ্গু-লুলা ধরনের কিছু হয়ে ওঠার আগে বিষয়টার শেষ হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’ 

একজন বাংলাদেশি হিসেবে, গত জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলি নিজ চোখে দেখার পর কী রকম আধিভৌতিক সত্যতা নিয়ে আমার কানে বাজে য়োসার এই বাক্য। গার্সিয়া মার্কেস আমাদের দিয়েছিলেন স্বৈরশাসনের স্বপ্নভুবনে বিচরণের কথামালা। আর বার্গাস য়োসা দিয়ে গেছেন ওই একই শাসনের রক্ত, হাড্ডি ও আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর নির্মম বিবরণ।

য়োসা লাতিন আমেরিকার কথাসাহিত্যের বিখ্যাত ‘বুম’ জেনারেশনের লেখকদের একজন। তাঁরা চারজন মূলত এই ‘বুম’-এর চার স্তম্ভ। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস, হুলিয়ো কোর্তাসার, কার্লোস ফুয়েন্তেস ও মারিও বার্গাস য়োসা। এর মধ্যে দুজন—মার্কেস ও য়োসা—সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জেতা লেখক। আর চারজন একসঙ্গে মিলে তাঁরা বিশ্বসাহিত্যে উপন্যাসের অভিমুখ, রূপ ও শৈলীতে বিপ্লবই ঘটিয়ে দিলেন। চারজনই কসমোপলিটন, সাহিত্যে নিরীক্ষার পক্ষে এবং ‘আমাদের সব লেখালেখি ক্ষমতা ও রাজনীতি নিয়েই হতে হবে’—এমন ধারণায় তাড়িত। তবে এত মিল সত্ত্বেও য়োসা এই ‘বুম’ দলে এক বিরাট ব্যতিক্রম। তিনি মানুষের বিপ্লবকে সাহিত্যে রোমান্টিসাইজ করার ঘোর বিপক্ষের লোক; এবং যেকোনো ধরনের আদর্শিক ইউটোপিয়া নির্মাণের বিরোধী। মার্কেস সে অর্থে মরমি—রিয়ালিজমের মধ্যে তিনি বুনে চলেন ম্যাজিক্যাল ও মিথিক্যালকে; আর য়োসা, আগেই বলেছি, একজন শল্যচিকিৎসক—ক্ষমতা, রাজনীতি, গণচেতনা, প্রাতিষ্ঠানিক চেতনা ও ব্যক্তিচেতনাকে কেটেকুটে একাকার করা এক নিবিষ্টমনা সার্জন। মরমি মার্কেস বলেছিলেন, ‘যা আপনি যাপন করছেন, তা আপনার জীবন নয়, যার আপনি স্মৃতিচারণা করছেন এবং যেভাবে তা করছেন, সেটাই আপনার জীবন।’ অন্যদিকে য়োসার কথা, ‘সাহিত্য একটা মিথ্যা জিনিস, যা কিনা সত্য বলছে।’ 

সত্য ও মিথ্যার কথা যে–ই আসছে, আপনি বুঝে যাচ্ছেন, তিনি পার্থিব কংক্রিট বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছেন, রাষ্ট্র বা শাসক যা বলছে সেগুলোকে মিথ্যা ভেবে নিয়ে সেসবের বিরুদ্ধে আপনার বিশ্বাসের সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার এক যোদ্ধা-চেতনার কথা সেটা। এক সাক্ষাৎকারে য়োসা মিশেল ফুকোর সবকিছুতে খুঁত ধরার বাতিকের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি লিখি যাতে করে আমি পাগল হয়ে না যাই।’ সাহিত্য তাঁর জন্য ওইটাই ছিল—পৃথিবীতে ঘটতে থাকা নানা পাগলামির বিরুদ্ধে তা ছিল এক জোর ঘোষণা দেওয়া লড়াই।

য়োসা মারা গেছেন। তাঁর বিখ্যাত কথা—‘আত্মার জন্য সবচেয়ে ভালো খাদ্য সেই গল্প, যার শেষটা ভালো—শেষটা খারাপ হলে কিন্তু হবে না।’ তাঁর গল্প কি শেষ? খারাপভাবে শেষ নাকি ভালোভাবে শেষ? জানতে হলে য়োসা আপনার পড়তে হবে, কারণ মানুষটা নেই, কিন্তু তাঁর উপন্যাসগুলো আছে। ওরা আছে এবং থেকে যাচ্ছে আপনাকে জ্বালাতে, উসকানি দিতে। আর অনবরত বলতে যে অন্যায় থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ো না, তবে জেনো তোমার চোখও ভুল দেখতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপন য স দ য আল হ ন দ র র উপন য স র জন ত ক ব মপন থ অব দ য এক ব র ন আম র অ য টম আম র ক আদর শ ক ষমত আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

এক মৃত্যুপথযাত্রী পিতার থেকে ২০টি শিক্ষা

জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তগুলো প্রায়ই আমাদের গভীরতম শিক্ষা দেয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমরা অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ, জীবন এবং ফসলের ক্ষতি দিয়ে। যারা ধৈর্য ধরে, তাদের সুসংবাদ দাও—যারা বিপদে পড়ে বলে, ‘আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর কাছেই ফিরে যাব।’ তাদের ওপর আল্লাহর রহমত ও নির্দেশনা বর্ষিত হয়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)

আমার পিতার মৃত্যুপথের যাত্রা আমাকে ধৈর্য, ভালোবাসা এবং আধ্যাত্মিকতার এমন কিছু শিক্ষা দিয়েছে, যা আমি আমার পরিবার এবং আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। এই শিক্ষাগুলো যে কাউকে তাদের মৃত্যুপথযাত্রী প্রিয়জনের যত্ন নিতে সাহায্য করবে।

১. এটাই জান্নাতের পথ

এক বছর আগে, আমার পিতা দারুস সালামের একটি মসজিদের সিঁড়িতে পড়ে যান। এ দুর্ঘটনা তাঁকে হুইলচেয়ারে সীমাবদ্ধ করে এবং তাঁর চিকিৎসার জন্য আমরা দুবাইয়ে চলে আসি। একজন বন্ধু আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি যা করছ, এটাই জান্নাত। তোমার পিতার কাছে থাকো।’

এই কথা আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়। যত্ন নেওয়ার কষ্টকে আমি আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ হিসেবে দেখতে শুরু করি। এটি আমাকে কঠিন মুহূর্তে ধৈর্য ধরতে শিখিয়েছে।

আরও পড়ুনবাবা-ছেলের আশ্চর্য বিদায়ের ঘটনা০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫একজন বন্ধু আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি যা করছ, এটাই জান্নাত। তোমার পিতার কাছে থাকো।’

২. আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি

বাবা যেদিন পড়ে যান, সেদিন থেকে আমি অনুভব করি, তাঁর সময় ঘনিয়ে আসছে। আমি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যলয়ের মুসলিম চ্যাপলেইন শায়খ খলিল আব্দুর-রশিদের সঙ্গে কথা বলি।

তিনি বলেন: ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো, কারণ তুমি তোমার পিতার শেষ দিনগুলোতে তাঁর সঙ্গে থাকতে পারছ। কান্না করতে পারো, কিন্তু হতাশ হয়ো না। তাঁর সঙ্গে যা বলতে চাও, বলে নাও। তাঁর জীবনের পরামর্শ শোনো এবং সেগুলো তোমার সন্তানদের কাছে পৌঁছে দাও। তাঁর সম্পত্তি, দাফন এবং সাদাকার ইচ্ছা জেনে রাখো। শেষ মুহূর্তে তাঁর হাত ধরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলো। এই সময় ফেরেশতারা উপস্থিত থাকেন।’

এই পরামর্শ আমাকে আধ্যাত্মিকভাবে প্রস্তুত করেছে এবং আমার দায়িত্ব স্পষ্ট করেছে।

৩. দিনগুলো দীর্ঘ, বছরগুলো ছোট

মৃত্যুপথযাত্রী একজন পিতার যত্ন নেওয়া শিশুপালনের মতো। দিনগুলো ক্লান্তিকর—খাওয়ানো, পরিষ্কার করা, বহন করা। আমার মা এই দায়িত্বের বেশির ভাগ পালন করেছেন, আল্লাহ তাঁকে ভালো রাখুন। কখনো মনে হতো, এই কষ্ট কি শেষ হবে? আবার পরক্ষণেই ভয় হতো, শেষটা কি খুব কাছে?

এই দ্বন্দ্ব আমাকে বর্তমানে থাকতে এবং প্রতিটি মুহূর্তের জন্য শুকরিয়া আদায় করতে শিখিয়েছে।

৪. ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে চলা

পিতার মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। চিকিৎসা, অর্থ বা মানসিক চ্যালেঞ্জ—ঢেউ থামানো যায় না, কিন্তু তাদের সঙ্গে ভেসে চলা যায়। আমি এটাকে ‘সার্ফ-মোড’ বলি। এই মানসিকতা আমাকে চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়াই না করে তাদের গ্রহণ করতে শিখিয়েছে।

৫. কষ্টের মধ্যে স্বস্তি

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি আছে’ (সুরা শারহ: ৫)। পিতার অসুস্থতার মধ্যেও আমরা আল্লাহর রহমত দেখেছি—সঠিক চিকিৎসা দল, সময়মতো সঠিক মানুষের আগমন এবং ছোট ছোট অলৌকিক ঘটনা। এই ‘খায়ের’ আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেছে।

আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো, কারণ তুমি তোমার পিতার শেষ দিনগুলোতে তাঁর সঙ্গে থাকতে পারছ। কান্না করতে পারো, কিন্তু হতাশ হয়ো না। তাঁর জীবনের পরামর্শ শোনো এবং সেগুলো তোমার সন্তানদের কাছে পৌঁছে দাও।শায়খ খলিল আব্দুর-রশিদ, মুসলিম চ্যাপলেইন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যলয়

৬. পিতার সেবা একটি ‘জিহাদ’

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমার পিতা–মাতার সেবাই তোমার জিহাদ’ (বুখারি, হাদিস: ৫৯৭২)। পিতার যত্ন নেওয়া সহজ ছিল না। তাঁর বিরক্তি, দুশ্চিন্তা এবং ক্রমাগত চাহিদা আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছে। কখনো হতাশা বা রাগ অনুভব করেছি, কিন্তু কোরআনের আয়াত—‘তাদের সঙ্গে “উফ” বলো না’ (সুরা ইসরা: ২৩)—আমাকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এই জিহাদ আমার নফসের বিরুদ্ধে লড়াই ছিল।

আরও পড়ুনএক বৃদ্ধ নবী যেভাবে বাবা হলেন০৪ জুন ২০২৫

৭. পালিয়ে যাওয়া

ডাক্তারের জন্য, চেকআপের জন্য বা পিতার খাওয়া-ঘুমের জন্য যে সময়টা অপেক্ষা করতে হতো, সেই ফাঁকে প্রায়ই ফোনে ইউটিউব দেখতে পালাতে চাইতাম। কিন্তু এটি আমার নফসের দুর্বলতা ছিল। পরে বুঝতে পেরে আমি ইউটিউব মুছে ফেলি এবং কোরআন পড়া বা জিকির করার অভ্যাস গড়ি। এটি আমাকে পিতার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে এবং বর্তমানে থাকতে শিখিয়েছে।

৮. সহনশীলতার খেলা

পিতার যত্ন নেওয়া একটি ম্যারাথন, স্প্রিন্ট নয়। সাইক্লিং ও দৌড় থেকে শিখেছি, সহনশীলতার জন্য বিশ্রাম, খাওয়া এবং ব্যায়াম প্রয়োজন। যখন আমি দৌড়াতে যেতাম বা ঘুমাতাম, তখন অপরাধবোধ অনুভব করতাম। কিন্তু নিজের যত্ন না নিলে দীর্ঘ মেয়াদে যত্ন দেওয়া সম্ভব নয়। এটি আমাকে ভারসাম্যের গুরুত্ব শিখিয়েছে।

৯. অস্বস্তিকর আলাপ

মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর সম্পত্তি, ঋণ বা দাফনের ইচ্ছা নিয়ে কথা বলা কঠিন। আমরা পিতার সম্পত্তি নিয়ে কথা বলেছি, কিন্তু তাঁর অছিয়ত (উইল) নিয়ে পুরোপুরি আলোচনা করতে পারিনি। এটি আমাকে শিখিয়েছে, আমাদের সবাইকে মৃত্যুর আগে অছিয়ত স্পষ্ট করে রাখতে হবে। একবার এই আলাপ হয়ে গেলেই হয়ে গেল। অন্য সময় নাহয় স্মৃতি বা পরামর্শ শেয়ার করার জন্য তোলা থাক।

১০. অনিশ্চিত সময়ে পরিকল্পনা

পিতার অবস্থা কখনো উন্নত, কখনো সংকটাপন্ন ছিল। এই অনিশ্চয়তায় জীবন পরিকল্পনা করা কঠিন। আমি ‘বাগানের মালির মানসিকতা’ গ্রহণ করি—গাছের যত্ন নিয়ে ফুল-ফসল আল্লাহর হাতে ভাবেন তাঁরা। তেমনি আমি ইস্তিখারা পড়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিই। এটি আমাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ত্যাগ করে ভাগ্যের ওপর ভরসা করতে শিখিয়েছে।

পিতার খাওয়া-ঘুমের জন্য যে সময়টা অপেক্ষা করতে হতো, সেই ফাঁকে প্রায়ই ফোনে ইউটিউব দেখতে পালাতে চাইতাম। পরে বুঝতে পেরে আমি ইউটিউব মুছে ফেলি এবং কোরআন পড়া বা জিকির করার অভ্যাস গড়ি।

১১. নিয়ত অনুযায়ী আল্লাহর ব্যবস্থা

গত রমজানে আমি দোয়া করেছিলাম, ‘হে আল্লাহ, আমাকে আমার পিতা–মাতার সেবা করার সুযোগ দাও।’ তখন আমি আমেরিকায় স্থায়ী ছিলাম, কিন্তু আল্লাহ অপ্রত্যাশিতভাবে দুবাইয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দেন—১০ বছরের ভিসা, কাজ এবং স্থানীয় সুবিধা। এই বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সুবিধা আমাকে আল্লাহর করুণার ওপর ভরসা করতে শিখিয়েছে।

১২. নিয়তের পবিত্রতা

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমার রব তোমার অন্তরের কথা জানেন। যদি তুমি সৎ হও, তিনি তওবাকারীদের ক্ষমা করেন।’ (সুরা ইসরা: ২৫)

যখন লোকে আমার প্রশংসা করত, আমি নিজেকে প্রশ্ন করতাম, আমি কি আল্লাহর জন্য এটি করছি, নাকি মানুষের প্রশংসার জন্য? হতাশার মুহূর্তে আমি নিয়ত শুদ্ধ করার চেষ্টা করতাম। এটি আমাকে আন্তরিকতার গুরুত্ব শিখিয়েছে।

১৩. জিকিরের মাধ্যমে কষ্ট সহ্য করা

পিতা সারা বছর তাঁর ব্যথার মধ্যেও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, দরুদ শরিফ এবং তিলাওয়াত অব্যাহত রেখেছিলেন। তাঁর জিকির আমাকে একটি গল্পের কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে একজন শায়খ বলেছিলেন, ‘রোগী যদি একটি তাসবিহও বলতে পারেন, তবে তাঁর জীবন রক্ষার চেষ্টা করো।’ পিতার প্রতিটি জিকির তাঁর মর্যাদা বাড়িয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।

আরও পড়ুনপিতা-মাতাই সন্তানের শ্রেষ্ঠ বন্ধু১১ আগস্ট ২০১৬

১৪. আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসেন

একবার একজন নিরাপত্তারক্ষী পিতাকে বলেন, ‘আল্লাহ আপনাকে অনেক ভালোবাসেন, তাই তিনি আপনাকে পরীক্ষা করছেন।’ এই কথা আমাকে ইমাম মালিকের হাদিসের কথা মনে করিয়ে দেয়: ‘একজন মুসলিমের ওপর যেকোনো ক্লান্তি, অসুস্থতা, দুশ্চিন্তা, দুঃখ, কষ্ট বা ব্যথা আসে, এমনকি যে কাঁটা তার শরীরে বিঁধে, তা ছাড়া আর কিছুই নয় যে আল্লাহ তা দিয়ে তার পাপ ক্ষমা করে দেন।’ (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস: ১৮২৮)

এটি আমাকে কষ্টের পেছনের হিকমত বুঝতে সাহায্য করেছে।

মৃত্যু চারটি পর্যায়ে হয়—সামাজিক, মানসিক, জৈবিক ও শারীরিক। আমি পিতার প্রথম তিনটি পর্যায় দেখেছি। শেষ মুহূর্তে, তিনি তিনটি শ্বাস নেন এবং ইন্তেকাল করেন। আমরা তাঁর পাশে পবিত্র কোরআন পড়ছিলাম, জিকির করছিলাম

১৫. দুশ্চিন্তা মোকাবিলা

চিকিৎসা ব্যয় এবং বাবার অবস্থা নিয়ে আমরা ক্রমাগত দুশ্চিন্তায় ছিলাম। একজন বন্ধু আমাকে ইমাম শাফিঈর কবিতা পাঠান: ‘যা ছিল, তাতে আল্লাহ তোমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন; যা হবে, তাতেও তিনি যথেষ্ট দেবেন।’

এ কথা আমাকে দুশ্চিন্তা কমাতে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করতে শিখিয়েছে।’

১৬. মায়ের শক্তি

আমার মা ছিলেন আমাদের পরিবারের মেরুদণ্ড। তিনি বাবার পরিচ্ছন্নতা, খাওয়া এবং আরামের জন্য নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তাঁর ধৈর্য ও ভালোবাসা আমাকে একজন স্ত্রী ও মায়ের অপরিসীম শক্তির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। আমি দোয়া করি, আমরা তাঁর বৃদ্ধ বয়সে তাঁর মতোই যত্ন নিতে পারি।

১৭. চিকিৎসা বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত

আতুল গাওয়ান্দের বই ‘বিয়িং মর্টাল’ আমাকে শিখিয়েছে, মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির জন্য অতিরিক্ত চিকিৎসা কষ্ট বাড়াতে পারে। আমরা একটি ‘প্রাকৃতিক মৃত্যুর অনুমতি’ ফর্ম স্বাক্ষর করি, যা পিতার জন্য শান্তিপূর্ণ মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। এটি আমাকে মৃত্যুকে সম্মান করতে শিখিয়েছে।

১৮. মৃত্যুর মুহূর্ত

মৃত্যু চারটি পর্যায়ে হয়—সামাজিক, মানসিক, জৈবিক ও শারীরিক। আমি পিতার প্রথম তিনটি পর্যায় দেখেছি। শেষ মুহূর্তে, তিনি তিনটি শ্বাস নেন এবং ইন্তেকাল করেন। আমরা তাঁর পাশে পবিত্র কোরআন পড়ছিলাম, জিকির করছিলাম এবং বললাম, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ এই আধ্যাত্মিক মুহূর্ত আমাকে আল্লাহর মহিমার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।

১৯. ব্যক্তিগত ও উম্মাহর কষ্ট

পিতার মৃত্যু আমাদের ব্যক্তিগত কষ্ট ছিল, কিন্তু গাজার ভাই-বোনদের দুঃখ আমাকে আরও বেশি ব্যথিত করেছে। তাদের অনেকে প্রিয়জনের যত্ন নেওয়ার বা দাফনের সুযোগ পায় না। এই অভিজ্ঞতা আমাকে উম্মাহর জন্য কাজ করার প্রেরণা দিয়েছে।

২০. কৃতজ্ঞতা ও দায়িত্ব

এই যাত্রা আমাকে আল্লাহর রহমত, আমার মা, ভাই, বোন, স্ত্রী, সন্তান এবং বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে শিখিয়েছে। মহানবী (সা.)-এর উম্মাহ হিসেবে আমরা মৃত্যুকে কীভাবে সম্মান করতে হয়, তা শিখেছি। আমি দোয়া করি, আল্লাহ আমার পিতাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন এবং আমাদের সবাইকে সুন্দর পরিণতি দিন।

সূত্র: প্রোডাক্টিভ মুসলিম ডটকম। অনুবাদ: মনযূরুল হক

আরও পড়ুনমারা গেলে নয়, সব সময় বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করা২০ মার্চ ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খামেনিকে হত্যায় ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দেন ট্রাম্প
  • সাংবাদিক পরিচয়ে গেস্ট হাউসের কক্ষে কক্ষে তল্লাশি, দম্পতির কাছে বিয়ের প্রমাণ দাবি
  • ডেঙ্গু-করোনায় দুই মৃত্যু, আক্রান্ত ২৭৫ জন
  • চলতি মাসের ১৫ দিনে করোনায় ৪ জনের মৃত্যু
  • গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে প্রপাগান্ডার সয়লাব
  • কারাগারে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত ১
  • রাতারাতি তারকা হলে দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন: রিচি
  • গুম করা হতো তিনটি ধাপে 
  • এক মৃত্যুপথযাত্রী পিতার থেকে ২০টি শিক্ষা