১৯৭২ সালে ম্যাট্রিক পাস। এরপর সংসারের দায়িত্ব কাঁধে পড়ে। তাই আর পড়ালেখা হয়নি। তবে পড়াশোনার কথা ভুলে যাননি। দীর্ঘ সময় পরে হলেও ২০০১ সালে এসে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন তিনি। ২০১০ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেন বিএ ডিগ্রি। এরপর ২০১৯ সালে আইনের ডিগ্রিও নিয়েছেন। আজ শুক্রবার তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির (এনরোলমেন্ট) পরীক্ষা দেবেন।

শিক্ষানুরাগী এই মানুষটির নাম মো.

আবদুল হাই মিয়া। বয়স ৭৫ বছর। বাড়ি পাবনা জেলা সদরের দোগাছি ইউনিয়নের কুলুনিয়া গ্রামে। দীর্ঘ ৫৫ বছর তিনি আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। ইচ্ছা ছিল নিজে আইনজীবী হবেন। আর সে ইচ্ছা থেকেই কাজের পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন। আইনজীবী হতে যাচ্ছেন। এতে যেমন তাঁর পরিবার গর্বিত, তেমনি প্রতিবেশী ও সহকর্মীরাও।

আবদুল হাই মিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুল হাই মিয়ার জন্ম ১৯৫১ সালের ৩০ এপ্রিল। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি মা–বাবার তৃতীয় সন্তান। বাবা মরহুম আব্দুর রহমান মিয়া ছিলেন মসজিদের ইমাম। সংসারের টানাপোড়েনে তখন খুব বেশি পড়ালেখা করতে পারেননি আবদুল হাই মিয়া। স্কুলে পড়া অবস্থাতেই ১৯৬৯ সালে আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ১৯৭২ সালে ম্যাট্রিক পাস করে পুরোপুরি পেশায় জড়িয়ে পড়েন। ফলে আর পড়ালেখা করতে পারেননি।

এর মধ্যেই বিয়ে–সংসার শুরু হয়। দুই কন্যাসন্তানের বাবা হন তিনি। মেয়েরা বড় হয়ে পড়ালেখা শুরু করে। তখন আবদুল হাই মিয়া নিজের মধ্যে নতুন করে পড়ালেখার অনুপ্রেরণা অনুভব করতে থাকেন। এরপর ছোট মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে পড়ালেখা শুরু করেন। ২০০১ সালে বাবা-মেয়ে একসঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে এইচএসসি পাস করেন। এতে আরও উৎসাহিত হন আবদুল হাই মিয়া। পরে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি পাস কোর্সে ভর্তি হন। ২০১০ সালে বিএ পাস করে ২০১২ সালে ভর্তি হন পাবনার আমিন উদ্দিন আইন কলেজে। এরপর ২০১৯ সালে আইন পাস করে বার কাউন্সিল সনদের জন্য আবেদন করেন। আজ শুক্রবার তাঁর আইনজীবী হওয়ার জন্য শেষ পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হবে।

আবদুল হাই মিয়া বলেন, কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ৫০ পয়সা হাজিরায় কাজ শুরু করেছিলেন। এখন সেই রোজগার বহুগুণ বেড়েছে। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন। তবে পড়ালেখার বিষয়টি তাঁকে সব সময় তাগিদ দিয়েছে। নিজেকে একজন আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছা জেগেছে। তাই তিনি বয়সের কথা চিন্তা না করে পুনরায় পড়ালেখা শুরু করেছেন। দিনে কর্মক্ষেত্র, রাতে পড়ালেখা করেছেন। স্ত্রী ও দুই কন্যা তাঁকে সহযোগিতা করেছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। সফলতাও পেতে যাচ্ছেন। এখন তিনি নিজেকে সার্থক মনে করছেন।

আবদুল হাই মিয়া ভালো ভালো আইনজীবীর সঙ্গ পেয়েছেন। তিনি খুব অভিজ্ঞ একজন মানুষ। সাদামাটা জীবনযাপন করেন। নিজেকে আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা তাঁর একটি লক্ষ্য ছিল।আলমগীর হোসেন, আইনজীবী, পাবনা

সম্প্রতি আবদুল হাই মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বাড়ি বলতে ঠিক যেমন বোঝায় তেমনই বাড়িটি। তেমন কোনো জৌলুশ নেই। দুটি টিনের ঘর, একটি রান্নাঘর নিয়েই আবদুল হাই মিয়ার বাড়ি। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বাড়িটিতে এখন স্ত্রীর সঙ্গে তিনি থাকেন। মাঝেমধ্যে মেয়ে-জামাতা ও নাতি-নাতনিরা বেড়াতে আসেন। বাড়ির বারান্দায় একটি পুরোনো সাইকেল। এটিই আবদুল হাই মিয়ার চলার বাহন।
প্রতিবেশীরা জানান, আবদুল হাই মিয়া আপাদমস্তক একজন সাদামাটা মানুষ। খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন। সকালে সাইকেলটি নিয়ে কাজে বেরিয়ে যান। বিকেলে বাড়ি ফেরেন। গ্রামের মানুষদের সঙ্গে হেসে কথা বলেন। কোনো দিন তাঁকে কোনো অন্যায় করতে দেখা যায়নি।

প্রতিবেশী মধু বিশ্বাস বলেন, অনেক অল্পবয়সী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ফেল করেন। কিন্তু আবদুল হাই বৃদ্ধ বয়সে এসেও একটি পরীক্ষাতেও ফেল করেননি। তিনি তাঁর ধৈর্যশক্তি দিয়ে পড়ালেখা করে গেছেন। বৃদ্ধ বয়সে এসে নিজেকে আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছেন। এটা এই গ্রামের জন্যও গর্বের।

আবদুল হাইয়ের স্ত্রী মোছা. রওশন আরা বলেন, তিনি ১৫ বছর বয়সে বউ হয়ে এসেছিলেন। অনেক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে তাঁদের সংসার চলেছে। কিন্তু স্বামীকে কোনো দিন অবৈধ পথে কোনো অর্থ রোজগার করতে দেখেননি। শেষ বয়সে এসে তিনি পড়ালেখা শুরু করেছেন। রাত জেগে পড়েছেন, দিনে কাজ করেছেন। তিনি যতটুকু সম্ভব স্বামীকে সহযোগিতা করেছেন। এখন স্বামী আইনজীবী হবেন, এটা ভেবেই আনন্দ পাচ্ছেন।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আবদুল হাই মিয়া ও তাঁর পরিবার। সম্প্রতি পাবনা জেলা সদরের কুলুনিয়া গ্রামে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল হ ই ম য় র আইনজ ব প স কর পর ক ষ কর ছ ন পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

পানিতে ভাসছিল ২২ দিনের শিশুর মৃতদেহ, ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন মা

ঘর থেকে প্রায় ১৫ ফিট দূরে ছোট আকারের একটি পানি নিষ্কাশনের ডোবা। হঠাৎ সেই ডোবাতে দেখা যায় শিশু মুনতাহার ভাসমান মৃতদেহ। মুহূর্তেই ওই বাড়িসহ আশপাশের এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। গতকাল শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় নিজের ঘরেই ঘুমিয়ে ছিলেন শিশুটির মা তানজীলা খাতুন। তবে কীভাবে ২২ দিনের শিশুটি ডোবার পানিতে পড়ল, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। 

ঝিনাইদহ সদরের নরহরিদ্রা গ্রামের মিল্টন বিশ্বাসের ২২ দিন বয়সী এই কন্যা শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। শিশুটির মা তানজীলা খাতুন ও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি হেফাজতে রেখেছে পুলিশ। শিশুর বাবা মিল্টন বিশ্বাস গাজীপুরে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন।

জানা যায়, দুপুরে নিজ ঘরে শিশু মুনতাহাকে নিয়ে শুয়েছিলেন মা তানজীলা খাতুন। কিছুক্ষণ পর বাড়ির অন্য সদস্যরা এসে দেখেন, মুনতাহা সেখানে নেই। পরে শিশুর মাকে জিজ্ঞাসা করলে বলে কেউ জ্বীনের বেশে এসে ওকে নিয়ে গেছে। পরে কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর বাড়ির পাশের নলকূপের ডোবা থেকে মুনতাহার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় যুবক সোহাগ হোসেন বলেন, ২২ দিনের শিশু হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে পানিতে ডুবে মরবে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর ঘটনার সময় বাড়িতে তার মা ছাড়া কেউ ছিল না। পরে শিশুর মা তানজীলা খাতুনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি আমরা নিয়েছি। সেখানে বেশকিছু কথোপকথন পেয়েছি অন্য একটি ছেলের সঙ্গে। আমাদের ধারণা, পরকীয়ার জেরেই শিশুটিকে তার মা হত্যা করতে পারেন। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এবং মোবাইল ফোনের তথ্য ঘাটলে সব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।

শিশু মুনতাহার দাদী নাসরিন খাতুন বলেন, ঘটনার প্রায় আধাঘণ্টা আগে বাড়িতে দেখি, মুনতাহাকে নিয়ে ওর মা খেলা করছে। এরপর ফিরে দেখি, তানজীলা (শিশুর মা) ঘুমাচ্ছে; কিন্তু মুনতাহা নেই। পরে খোঁজাখুজি করে ডোবায় মৃতদেহ মেলে। তবে এই শিশুর মৃত্যুর পেছনে তার ছেলের বউ (শিশুর মা) জড়িত কি না সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি তিনি। তিনি বলেন, পুলিশ তদন্ত করে সঠিক ঘটনা বের করুক। তবে আমরা নাতনী হত্যার সঠিক বিচার চাই।

মুনতাহার মা তানজীলা খাতুন বলেন, ‘আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। দেখলাম জ্বীনের বেশ ধারণ করে কেউ ওকে (মুনতাহাকে) নিয়ে গেল। এরপর কীভাবে কি হল বলতে পারছি না।

তবে এই শিশুর মৃত্যুর পর ঘটনাস্থলে গিয়ে তানজীলা খাতুনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি হেফাজতে নিলেও এ বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাফুজুর রহমান।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশের মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন, শিশুটির মৃত্যুর বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে। তার মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিস্তারিত পরে জানানো যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অ্যান্টার্কটিকায় বিরল স্কুইডের সন্ধান
  • বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
  • পানিতে ভাসছিল ২২ দিনের শিশুর মৃতদেহ, ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন মা
  • করোনা বাড়ায় এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে বিকল্প চিন্তা
  • দণ্ডাদেশ বহালের রায়ের বিরুদ্ধে ১০ আসামির আপিল ও লিভ টু আপিল
  • গণঅভ্যুত্থানে আহত সামিউলের দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর
  • যথাসময়ে এইচএসসি পরীক্ষা আছে বিকল্প চিন্তাও
  • সমু চৌধুরীর গামছা পরা ছবির আসল গল্প কী, এখন কেমন আছেন তিনি