১৯৭২ সালে ম্যাট্রিক, ২০০১ সালে এইচএসসি পাস করা আবদুল হাইয়ের আজ বার কাউন্সিলের পরীক্ষা
Published: 25th, April 2025 GMT
১৯৭২ সালে ম্যাট্রিক পাস। এরপর সংসারের দায়িত্ব কাঁধে পড়ে। তাই আর পড়ালেখা হয়নি। তবে পড়াশোনার কথা ভুলে যাননি। দীর্ঘ সময় পরে হলেও ২০০১ সালে এসে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন তিনি। ২০১০ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেন বিএ ডিগ্রি। এরপর ২০১৯ সালে আইনের ডিগ্রিও নিয়েছেন। আজ শুক্রবার তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির (এনরোলমেন্ট) পরীক্ষা দেবেন।
শিক্ষানুরাগী এই মানুষটির নাম মো.
আবদুল হাই মিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুল হাই মিয়ার জন্ম ১৯৫১ সালের ৩০ এপ্রিল। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি মা–বাবার তৃতীয় সন্তান। বাবা মরহুম আব্দুর রহমান মিয়া ছিলেন মসজিদের ইমাম। সংসারের টানাপোড়েনে তখন খুব বেশি পড়ালেখা করতে পারেননি আবদুল হাই মিয়া। স্কুলে পড়া অবস্থাতেই ১৯৬৯ সালে আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ১৯৭২ সালে ম্যাট্রিক পাস করে পুরোপুরি পেশায় জড়িয়ে পড়েন। ফলে আর পড়ালেখা করতে পারেননি।
এর মধ্যেই বিয়ে–সংসার শুরু হয়। দুই কন্যাসন্তানের বাবা হন তিনি। মেয়েরা বড় হয়ে পড়ালেখা শুরু করে। তখন আবদুল হাই মিয়া নিজের মধ্যে নতুন করে পড়ালেখার অনুপ্রেরণা অনুভব করতে থাকেন। এরপর ছোট মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে পড়ালেখা শুরু করেন। ২০০১ সালে বাবা-মেয়ে একসঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে এইচএসসি পাস করেন। এতে আরও উৎসাহিত হন আবদুল হাই মিয়া। পরে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি পাস কোর্সে ভর্তি হন। ২০১০ সালে বিএ পাস করে ২০১২ সালে ভর্তি হন পাবনার আমিন উদ্দিন আইন কলেজে। এরপর ২০১৯ সালে আইন পাস করে বার কাউন্সিল সনদের জন্য আবেদন করেন। আজ শুক্রবার তাঁর আইনজীবী হওয়ার জন্য শেষ পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হবে।
আবদুল হাই মিয়া বলেন, কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ৫০ পয়সা হাজিরায় কাজ শুরু করেছিলেন। এখন সেই রোজগার বহুগুণ বেড়েছে। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন। তবে পড়ালেখার বিষয়টি তাঁকে সব সময় তাগিদ দিয়েছে। নিজেকে একজন আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছা জেগেছে। তাই তিনি বয়সের কথা চিন্তা না করে পুনরায় পড়ালেখা শুরু করেছেন। দিনে কর্মক্ষেত্র, রাতে পড়ালেখা করেছেন। স্ত্রী ও দুই কন্যা তাঁকে সহযোগিতা করেছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। সফলতাও পেতে যাচ্ছেন। এখন তিনি নিজেকে সার্থক মনে করছেন।
আবদুল হাই মিয়া ভালো ভালো আইনজীবীর সঙ্গ পেয়েছেন। তিনি খুব অভিজ্ঞ একজন মানুষ। সাদামাটা জীবনযাপন করেন। নিজেকে আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা তাঁর একটি লক্ষ্য ছিল।আলমগীর হোসেন, আইনজীবী, পাবনাসম্প্রতি আবদুল হাই মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বাড়ি বলতে ঠিক যেমন বোঝায় তেমনই বাড়িটি। তেমন কোনো জৌলুশ নেই। দুটি টিনের ঘর, একটি রান্নাঘর নিয়েই আবদুল হাই মিয়ার বাড়ি। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বাড়িটিতে এখন স্ত্রীর সঙ্গে তিনি থাকেন। মাঝেমধ্যে মেয়ে-জামাতা ও নাতি-নাতনিরা বেড়াতে আসেন। বাড়ির বারান্দায় একটি পুরোনো সাইকেল। এটিই আবদুল হাই মিয়ার চলার বাহন।
প্রতিবেশীরা জানান, আবদুল হাই মিয়া আপাদমস্তক একজন সাদামাটা মানুষ। খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন। সকালে সাইকেলটি নিয়ে কাজে বেরিয়ে যান। বিকেলে বাড়ি ফেরেন। গ্রামের মানুষদের সঙ্গে হেসে কথা বলেন। কোনো দিন তাঁকে কোনো অন্যায় করতে দেখা যায়নি।
প্রতিবেশী মধু বিশ্বাস বলেন, অনেক অল্পবয়সী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ফেল করেন। কিন্তু আবদুল হাই বৃদ্ধ বয়সে এসেও একটি পরীক্ষাতেও ফেল করেননি। তিনি তাঁর ধৈর্যশক্তি দিয়ে পড়ালেখা করে গেছেন। বৃদ্ধ বয়সে এসে নিজেকে আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছেন। এটা এই গ্রামের জন্যও গর্বের।
আবদুল হাইয়ের স্ত্রী মোছা. রওশন আরা বলেন, তিনি ১৫ বছর বয়সে বউ হয়ে এসেছিলেন। অনেক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে তাঁদের সংসার চলেছে। কিন্তু স্বামীকে কোনো দিন অবৈধ পথে কোনো অর্থ রোজগার করতে দেখেননি। শেষ বয়সে এসে তিনি পড়ালেখা শুরু করেছেন। রাত জেগে পড়েছেন, দিনে কাজ করেছেন। তিনি যতটুকু সম্ভব স্বামীকে সহযোগিতা করেছেন। এখন স্বামী আইনজীবী হবেন, এটা ভেবেই আনন্দ পাচ্ছেন।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আবদুল হাই মিয়া ও তাঁর পরিবার। সম্প্রতি পাবনা জেলা সদরের কুলুনিয়া গ্রামেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল হ ই ম য় র আইনজ ব প স কর পর ক ষ কর ছ ন পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম দেখায় প্রেম নাকি ঝগড়া? আসছে ইয়াশ–তটিনীর ‘তোমার জন্য মন’
বাংলা ওটিটির নিয়মিত দর্শকেরা ভালো করেই জানেন—যে গল্পে থাকেন শিহাব শাহীন, সেখানে থাকে প্রেম, আবেগ, আর বাস্তব জীবনের মৃদু জটিলতা। এবার সেই নির্মাতা ফিরছেন নতুন এক প্রেমের গল্প নিয়ে। চরকি অরিজিনাল ফিল্ম ‘তোমার জন্য মন’ মুক্তি পাবে ৫ নভেম্বর রাত ১২টায় (৬ নভেম্বর)। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন সময়ের আলোচিত জুটি ইয়াশ রোহান ও তটিনী।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় চরকির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হয় সিনেমাটির মোশন পোস্টার ও ট্রেলার। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা। কেউ লিখেছেন, ‘চরকির ফিল গুড রোমান্সে এবার নতুন জুটি!’ কেউ–বা বলেছেন, ‘ইয়াশ–তটিনীর কেমিস্ট্রি দেখতে মুখিয়ে আছি।’
নতুন প্রেম, নতুন জুটি
‘তোমার জন্য মন’–এর গল্পে মফস্সলে বেড়ে ওঠা দুই তরুণ–তরুণীর সম্পর্ক উঠে এসেছে। শিহাব শাহীন বলেন, ‘এটা একটা ফিল গুড রোমান্টিক গল্প। এর আগে চরকির সঙ্গে কী ধরনের গল্প করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু এবার গল্পটা আমি নিজেই নির্ধারণ করেছি। শুরু থেকেই জানতাম, এই গল্পটা আমি বানাতে চাই।’
গল্পের ভাবনা সম্পর্কে নির্মাতা বলেন, ‘আমাদের কিছু প্রবাদ আছে—“বৃক্ষ তোমার নাম কী ফলে পরিচয়”, “জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো”—এই ভাবনা থেকেই গল্পটা এসেছে। অনেক সময় মানুষের নাম বা পরিচয় বড় হয়ে ওঠে, কিন্তু আসলে মানুষ বড় হয় তার কাজেই। এই দর্শনটাই গল্পের কেন্দ্রে।’
পিউ আর রওনকের গল্প
এই সিনেমায় তটিনী অভিনয় করেছেন পিউ চরিত্রে। নির্মাতার অফিসে গল্প শুনেই তিনি কাজটি করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই দিনের কথা মনে করে তটিনী বলেন, ‘গল্পটা অর্ধেক শুনে ভেবেছিলাম, এরপর কী হবে আন্দাজ করতে পারব, কিন্তু এমন মোড় নিল যে সেটা ছিল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। সেই বিস্ময়টাই আমাকে আকৃষ্ট করেছে।’ তটিনীর ভাষায়, ‘পিউ একটু আবেগপ্রবণ ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা মেয়ে। একটা ঘটনার পর সে নিজের জীবনের কিছু দিক বুঝে নেয়, আত্মোপলব্ধি ঘটে। এই চরিত্রটা অভিনয় করা আমার জন্য মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং ছিল।’