সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যাওয়া ব্যক্তির লাশ উদ্ধার, মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা
Published: 30th, April 2025 GMT
সুন্দরবনে হরিণ শিকার করে মাংস নিয়ে ফেরার সময় বনরক্ষীদের তাড়া খেয়ে নৌকায় মাংস রেখে নদীতে ঝাঁপ দেন তিন ব্যক্তি। দুজন নদী সাঁতরে লোকালয়ে ফিরলেও একজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি তখন। পরদিন সুন্দরবনের মধ্যে খাল থেকে ওই ব্যক্তির লাশ পেয়েছেন স্বজনেরা। তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
লাশ উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির নাম মফিজুল সানা। বাড়ি খুলনার সুন্দরবন-সংলগ্ন দাকোপ উপজেলায়। তাঁর শ্বশুরবাড়ি খুলনার পাইকগাছায়। সেখান থেকে তিনিসহ চারজন ১৮ এপ্রিল সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যান। ২২ এপ্রিল ফেরার পথে ওই ঘটনা ঘটে। ২৪ এপ্রিল কয়রার আওতাধীন সুন্দরবনের বেতনাখালী খালের পশ্চিম পাড় থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
বন বিভাগের হড্ডা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাবিত মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার ভোরের আলো ফোটার আগে শিবসা নদীর পূর্ব পাশের কেওড়াতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে নৌকা থেকে হরিণের ৪টি মাথা ও ৬০ কেজি মাংস জব্দ করা হয়েছিল। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। বনরক্ষীদের উপস্থিতি টের পেয়ে নৌকা ফেলে পালিয়ে যান শিকারিরা। তবে কারও মৃত্যু বা লাশ উদ্ধারের বিষয়ে তাঁদের জানা নেই।
এ ঘটনায় মামলা করতে গতকাল মঙ্গলবার কয়রায় আসেন নিহত মফিজুলের বাবা আবদুল মজিদ সানা। তবে থানার পুলিশ মামলা না নেওয়ায় তিনি খুলনার আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। আবদুল মজিদ সানা বলেন, ‘আমার ছেলে মফিজুল পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালী এলাকায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে সুন্দরবনে গিয়েছিল। তার সঙ্গে একই নৌকায় ওই এলাকার মিজান গাজী, রুহুল কুদ্দুস মোড়ল ও বাদশা গাজী ছিলেন। পরে ২২ এপ্রিল রাতে তাঁদের কয়েকজন বাড়ি ফিরে জানান, নৌকায় হরিণের মাংস থাকায় বন বিভাগের হড্ডা টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা মফিজুলকে আটক করেছে। আর তাঁরা পালিয়ে এসেছেন।’
আবদুল মজিদ আরও বলেন, পরে বন বিভাগে খোঁজ নিলে তাঁরা জানান, কোনো আসামি ধরেননি তাঁরা। ২৪ এপ্রিল সুন্দরবনের বেতনাখালী খালের পশ্চিম পাড় থেকে ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাত ও পায়ে রশি দিয়ে বাঁধার চিহ্ন স্পষ্ট। এখন তাঁর ছেলের মৃত্যুতে কে বা কারা জড়িত, সেটি খতিয়ে দেখার জন্য মামলা করতে এসেছেন।
তবে মামলা না নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
মফিজুলের সঙ্গে সুন্দরবনে যাওয়া গড়ইখালী এলাকার মিজান গাজী বলেন, ‘মফিজুলসহ আমরা চারজন সুন্দরবনে গিয়েছিলাম হরিণ শিকার করতে। বনে ফাঁদ পাতার পর হঠাৎ দেখি একদল অস্ত্রধারী ডাকাত আসছে। পালানোর সময় আমাদের সঙ্গে থাকা বাদশা গাজীকে ডাকাতেরা ধরে ফেলে। সে এখনো ডাকাতদের হাতে বন্দী। পরে আমরা তিনজন রাতের অন্ধকারে সুন্দরবনের হড্ডা টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন শিবসা নদী ধরে লোকালয়ের দিকে আসছিলাম। তখন বনরক্ষীরা আলোর ইশারা দেয়। আমরা ভয়ে নৌকা ফেলে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তখন নদীতে প্রচণ্ড তুফান হচ্ছিল। আমাদের তিনজন সাঁতরে কে কোথায় যাচ্ছি বুঝিনি। পরে দুজন নদীর কিনারে পৌঁছালেও মফিজুলকে আর পাইনি। আমরা এলাকার লোকজন ডেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও কোনো সন্ধান পাইনি। ভেবেছিলাম, তাকে হয়তো বনরক্ষীরা ধরে নিয়ে গেছে। এক দিন পর বনের ভেতরে জেলেদের মাধ্যমে লাশের সন্ধান পাই। তখন বনের বেতনাখালী খালের পাড় থেকে মফিজুলের লাশ উদ্ধার করা হয়।’
নিহত মফিজুলের শ্বশুর মোস্তাক গাজী বলেন, সুন্দরবন থেকে অন্যরা ফিরে এসে মফিজুলের নিখোঁজ হওয়ার খবর দেন। তিনি বন বিভাগ, আদালত সবখানে খোঁজখবর নিয়েও হদিস পাননি। এক দিন পর খবর আসে, কয়রার হড্ডা টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন সুন্দরবনের একটি খালে মফিজুলের লাশ ভাসছে। পরে আত্মীয়স্বজন গিয়ে লাশ এনে বাড়িতে দাফন করেছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন স ন দরবন স ন দরবন র বন ব ভ গ বনরক ষ টহল ফ
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস