সুন্দরবনে হরিণ শিকার করে মাংস নিয়ে ফেরার সময় বনরক্ষীদের তাড়া খেয়ে নৌকায় মাংস রেখে নদীতে ঝাঁপ দেন তিন ব্যক্তি। দুজন নদী সাঁতরে লোকালয়ে ফিরলেও একজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি তখন। পরদিন সুন্দরবনের মধ্যে খাল থেকে ওই ব্যক্তির লাশ পেয়েছেন স্বজনেরা। তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

লাশ উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির নাম মফিজুল সানা। বাড়ি খুলনার সুন্দরবন-সংলগ্ন দাকোপ উপজেলায়। তাঁর শ্বশুরবাড়ি খুলনার পাইকগাছায়। সেখান থেকে তিনিসহ চারজন ১৮ এপ্রিল সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যান। ২২ এপ্রিল ফেরার পথে ওই ঘটনা ঘটে। ২৪ এপ্রিল কয়রার আওতাধীন সুন্দরবনের বেতনাখালী খালের পশ্চিম পাড় থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

বন বিভাগের হড্ডা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাবিত মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার ভোরের আলো ফোটার আগে শিবসা নদীর পূর্ব পাশের কেওড়াতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে নৌকা থেকে হরিণের ৪টি মাথা ও ৬০ কেজি মাংস জব্দ করা হয়েছিল। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। বনরক্ষীদের উপস্থিতি টের পেয়ে নৌকা ফেলে পালিয়ে যান শিকারিরা। তবে কারও মৃত্যু বা লাশ উদ্ধারের বিষয়ে তাঁদের জানা নেই।

এ ঘটনায় মামলা করতে গতকাল মঙ্গলবার কয়রায় আসেন নিহত মফিজুলের বাবা আবদুল মজিদ সানা। তবে থানার পুলিশ মামলা না নেওয়ায় তিনি খুলনার আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। আবদুল মজিদ সানা বলেন, ‘আমার ছেলে মফিজুল পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালী এলাকায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে সুন্দরবনে গিয়েছিল। তার সঙ্গে একই নৌকায় ওই এলাকার মিজান গাজী, রুহুল কুদ্দুস মোড়ল ও বাদশা গাজী ছিলেন। পরে ২২ এপ্রিল রাতে তাঁদের কয়েকজন বাড়ি ফিরে জানান, নৌকায় হরিণের মাংস থাকায় বন বিভাগের হড্ডা টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা মফিজুলকে আটক করেছে। আর তাঁরা পালিয়ে এসেছেন।’

আবদুল মজিদ আরও বলেন, পরে বন বিভাগে খোঁজ নিলে তাঁরা জানান, কোনো আসামি ধরেননি তাঁরা। ২৪ এপ্রিল সুন্দরবনের বেতনাখালী খালের পশ্চিম পাড় থেকে ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাত ও পায়ে রশি দিয়ে বাঁধার চিহ্ন স্পষ্ট। এখন তাঁর ছেলের মৃত্যুতে কে বা কারা জড়িত, সেটি খতিয়ে দেখার জন্য মামলা করতে এসেছেন।

তবে মামলা না নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

এমদাদুল হক বলেন, এমন কোনো অভিযোগ নিয়ে কেউ মামলা করতে থানায় আসেননি। বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

মফিজুলের সঙ্গে সুন্দরবনে যাওয়া গড়ইখালী এলাকার মিজান গাজী বলেন, ‘মফিজুলসহ আমরা চারজন সুন্দরবনে গিয়েছিলাম হরিণ শিকার করতে। বনে ফাঁদ পাতার পর হঠাৎ দেখি একদল অস্ত্রধারী ডাকাত আসছে। পালানোর সময় আমাদের সঙ্গে থাকা বাদশা গাজীকে ডাকাতেরা ধরে ফেলে। সে এখনো ডাকাতদের হাতে বন্দী। পরে আমরা তিনজন রাতের অন্ধকারে সুন্দরবনের হড্ডা টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন শিবসা নদী ধরে লোকালয়ের দিকে আসছিলাম। তখন বনরক্ষীরা আলোর ইশারা দেয়। আমরা ভয়ে নৌকা ফেলে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তখন নদীতে প্রচণ্ড তুফান হচ্ছিল। আমাদের তিনজন সাঁতরে কে কোথায় যাচ্ছি বুঝিনি। পরে দুজন নদীর কিনারে পৌঁছালেও মফিজুলকে আর পাইনি। আমরা এলাকার লোকজন ডেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও কোনো সন্ধান পাইনি। ভেবেছিলাম, তাকে হয়তো বনরক্ষীরা ধরে নিয়ে গেছে। এক দিন পর বনের ভেতরে জেলেদের মাধ্যমে লাশের সন্ধান পাই। তখন বনের বেতনাখালী খালের পাড় থেকে মফিজুলের লাশ উদ্ধার করা হয়।’

নিহত মফিজুলের শ্বশুর মোস্তাক গাজী বলেন, সুন্দরবন থেকে অন্যরা ফিরে এসে মফিজুলের নিখোঁজ হওয়ার খবর দেন। তিনি বন বিভাগ, আদালত সবখানে খোঁজখবর নিয়েও হদিস পাননি। এক দিন পর খবর আসে, কয়রার হড্ডা টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন সুন্দরবনের একটি খালে মফিজুলের লাশ ভাসছে। পরে আত্মীয়স্বজন গিয়ে লাশ এনে বাড়িতে দাফন করেছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন স ন দরবন স ন দরবন র বন ব ভ গ বনরক ষ টহল ফ

এছাড়াও পড়ুন:

কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। ভারতীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে। খবর আনন্দবাজারের।

খবরে বলা হয়েছে, নদী ও বনভূমি এলাকায় সীমান্ত বরাবর বিএসএফ মোতায়েন আছে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট, বঙ্গোপসাগর অংশে কোস্ট গার্ডের নজরদারি চলছে। ড্রোন, সেন্সর ও ক্যামেরা, কিছু জায়গায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের তরফেও উপকূল এলাকায় দিনরাত নজরদারি চলছে।

উপকূল থানাগুলোর পক্ষ থেকে নদীপথে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। রাতেও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। নদীপথে কোনো জলযান দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রে এখন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্যজীবীদের জলযান চলাচল করার কথা নয়। তাই জলযান দেখলেই তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশি জাহাজগুলোতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।

সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, আগেও উপকূলবর্তী এলাকায় পুলিশের নজরদারি চলত। এখন বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলা নদী ও স্থলপথে পুলিশের টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। নাকা চেকিং হচ্ছে। চলছে তল্লাশিও।

উত্তর ২৪ পরগনাতেও উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে জল ও স্থলসীমান্তে। জল, ভূমি ও আকাশে অত্যাধুনিক ইজ়রাইল রাডারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

ইতোমধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করতে পারে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। ফলে সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থেকে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টাল থানা পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জলসীমান্ত। স্থলসীমান্ত ৪৪ কিলোমিটার। সীমান্ত সুরক্ষায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাচ্চাসহ ভালুকের বিচরণ, সতর্কতা
  • ‘তোর সময় শেষ’ লেখা চিঠির সঙ্গে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে সাংবাদিককে হুমকি
  • কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
  • সৌন্দর্যের সন্ধানে সুন্দরবনের গহীনে : দ্বিতীয় পর্ব
  • সুন্দরবনে অস্ত্রসহ বনদস্যু আটক
  • উপকূল রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ধস, প্লাবনের আশঙ্কা সুন্দরবন তীরবর্তী জনপদে