সৌন্দর্যের সন্ধানে সুন্দরবনের গহিনে : শেষ পর্ব
Published: 3rd, May 2025 GMT
ফটোশ্যুট শেষে, ফিরতি পথে ট্রলারের যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। ফুলে ওঠা সাগর আভাস দিচ্ছে জোয়ারের কারণে জল বেড়ে যাচ্ছে। সামিহাকে জল থেকে তুলে কোলে নিতেই কান্না শুরু করল। কান্না দেখে মনে হচ্ছে ওর সাথে সাগরের ঢেউয়ের মিতালি হয়ে গেছে! বুকে নিয়ে বললাম, কেঁদো না আমার কাঁদুনে বুড়ি। তুমি বড় হলে বাবা আবার ঘুরতে নিয়ে আসবে। হঠাৎ চোখে পড়ল, মাথার উপর আকাশে চক্কর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে মরাখেকো শকুনের দল। ওরা লালচে নগ্ন মাথা ঘুরিয়ে কালো চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশ অতিক্রম করার সময় ওদের পাখার আওয়াজে পতপত শব্দ হচ্ছে। অনেক বছর পর বিলুপ্তপ্রায় শকুনের ঝাঁক দেখে মনটা খুশিতে ভরে উঠল।
জীবনের মায়া ত্যাগ করে জীবিকার তাগিদে হাজারো মানুষ ছুটে আসে দুবলার চর। ওরা সাগরকোলের বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে গড়ে তুলেছে শুঁটকিপল্লি। এখানে সাগরও মাঝিদের দুই হাত উজার করে উপহার দেয় প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ, ২০ প্রজাতির চিংড়ি, ৮ প্রজাতির লবস্টার, ৭ প্রজাতির কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক। যার কারণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষা এই চরে গড়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকিপল্লী। এখানে প্রচুর মাছ পাওয়া গেলেও জেলেদের আছে জীবনের ঝুঁকি। একদিকে আছে হাজারো বন্য জীবজন্তুর ভয়। অন্যদিকে আছে মানুষের মতো দেখতে আরও ভয়ঙ্কর জলদস্যু নামক জানোয়ারের ভয়। দুর্গম আর নিষ্ঠুর প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হয় জেলেদের। ওরা ঝড় জলোচ্ছ্বাসে আর জন্তু জানোয়ারের সাথে সংগ্রাম করে জীবিকার তাগিদে টিকে থাকে।
আমরা যখন দৃষ্টিনন্দন দুবলার চর থেকে ট্রলারে চেপে বসেছি, তখন জোয়ারের কারণে সাগর গর্ভবতী নারীর পেটের মতো ফুলে উঠেছে। সাগর থেকে সচল পানির আওয়াজ ভেসে আসছে। আওয়াজটা এখন আর নরম নয়, চাপা গর্জনের মতো শোনাচ্ছে। পানিতে বিপুল একটা আলোড়ন উঠছে। এরই মধ্যে ডুবে গেছে তীরের অর্ধেকটা। দুই ঘণ্টা আগে বালুর উপর সারিবদ্ধভাবে থাকা জেলেদের নৌকাগুলো, জলের উপর এমনভাবে ভাসছে যেন ওরা ঝিনুকের খোলসের চেয়ে বেশি কিছু নয়। ঢেউ নৌকাগুলোকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে সাগরের জলে। সত্যি, জোয়ার ভাটার মধ্যে লুকিয়ে আছে প্রকৃতির এক অবিশ্বাস্য রহস্য! কেউ যদি জীবনবোধ শিখতে চায়, তাহলে তার উচিত প্রকৃতির কাছে এসে স্রষ্টার ভাবনায় ডুব দেওয়া।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানগুলোর মধ্যে দুবলার চর অন্যতম। আমি দুবলার চরের সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হলেও একটা সুপ্ত বাসনা মনের কোনায় রয়ে গেল। মনে হলো, যদি তাঁবু খাটিয়ে রাত্রি কাটানো যেত দুবলার চরে, সকালের ঘুম ভাঙত পাখির কিচির-মিচির ডাকে। যদি সাগর তীরের বালুর উপর মাদুর বিছিয়ে বসে, সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মোহনীয় দৃশ্য উপভোগ করতে পারতাম! ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়ে যা শিখতে পারে, কোন বই মানুষকে তা শেখাতে পারে না। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শিক্ষক প্রকৃতি। ভ্রমণের মাধ্যমে প্রকৃতি দ্বারস্থ হয়ে মানুষ ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করে দিতে পারে!
জাহাজ সাগরের বাঁক ঘুরল। তারপর জোয়ারের স্রোত জলোচ্ছ্বাসের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলল নীলকমলের পথে। জানা গেল, জাহাজ নীলকমল পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল গড়াবে। জাহাজের ভেতরে সবাই তুমুল আড্ডায় মগ্ন। আড্ডায় মশগুল হয়ে সময় কিভাবে উড়ে গেল টেরই পেলাম না। মধ্য দুপুরের বেশ খানিকটা পর জাহাজ পৌঁছাল নীলকমলের কাছাকাছি। দমকা বাতাস বইছে। সমুদ্র উত্তাল, পাক খেয়ে উঠছে স্রোত। সমুদ্রের জল অবিরাম নেচে যাচ্ছে ঢেউয়ের তালে। কেবল বাতাস আর ঢেউ দখল করে রেখেছে সমুদ্র। গাইড রুমের দরজায় দরজায় এসে কড়া নেড়ে বলে গেল, যাদের সঙ্গে বাচ্চা আছে আর সাহস কম তারা হিরণপয়েন্ট যাবেন না। আজকে সাগর খুব উত্তাল।
আমাদের মধ্যে যারা সাহসী তারা ক্ষিপ্র চিতার মতো জাহাজ থেকে ট্রলারে ঝাঁপিয়ে পড়ল। উতলা বাতাসে সবার পরিহিত পোশাক উড়ছে। উত্তাল সাগর দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনো ঝড়ের প্রস্তুতি। আমাদের যখন তীরে নামিয়ে দেয়া হলো, তখন সমুদ্রের বুকে নৃত্যরত বড় ঢেউগুলো তীরে এসে ছোটো হয়ে আছড়ে পড়ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাতাসের গতি কমে গেল। গাইড বলল, সাবধানে পথ চলবেন, জায়গাটা খুব ভয়ঙ্কর। বাজপাখির মতো ক্ষিপ্র, শিকারী খুনে রয়েল বেঙ্গলের বাস এই বনে। মুখে মুখে সবার কাছে পৌঁছে গেলো সতর্কবাণী। কথা শুনে আতঙ্কে শিউড়ে উঠলাম! ভয়ে শরীরে ছমছমে একটা আবহ তৈরি হয়ে খামচে ধরল হৃদপিণ্ড।
বনের গহীনে পথ চলছি। হিরণ পয়েন্টে এসে অনুভব করছি বাতাসের মান ও স্বাদ বদলে গেছে। শহরের বাতাসের মতো এখানে দম আটকানো ধুলোবালি নেই। দূষিত বাতাস উধাও হয়েছে নাকের সীমানা থেকে। বাতাসে জল ও জঙ্গলের গন্ধ লেগে আছে। নীলকমল সংরক্ষিত অভয়ারণ্য। নীলকমলের আরেক নাম হিরণপয়েন্ট। অভয়ারণ্য হওয়ায় এই স্থান বাঘ, হরিণ, বানর, পাখি এবং সরিসৃপের নিরাপদ আবসস্থল। হরিণের অবাধ বিচরণের জন্য স্থানটিকে হিরণপয়েন্ট বলা হয়।
বেশ খানিকটা ফার্নের ঝোঁপ পেরুনোর পর সুন্দরী, গেওয়া ও কেওড়ার বনের ভেতরে দিয়ে পথ চলছি। বনের ভেতর বাতাস স্থির, গুমোট, চারপাশ ঝিম মেরে আছে। কোন সাড়াশব্দ নেই, পাখিরা ডাকছে না। এ ধরনের রোমহর্ষক ও রহস্যময় প্রকৃতির মুখোমুখি হলে সব ভাষাই হারিয়ে যায়। নীরবে প্রকৃতি দেখে এগিয়ে যাচ্ছি। কোনটা বাঘের পায়ের ছাপ আর কোনটা হরিণের তা নিয়ে সহকর্মীদের গবেষণা জমে উঠেছে। সৌমেনদা হরিণের পায়ের তাজা চিহ্ন দেখিয়ে বলল- হরিণ কিছুক্ষণ আগেই এখানে বিচরণ করেছিল। হরিণ যেখানে বিচরণ করে বাঘ তার আশেপাশে লুকিয়ে থাকে। কথা শুনে মনে হচ্ছে বিপজ্জনক পথে হাঁটছি, এখানে পদে পদে জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা। কেউ জানে না কোথায় ওঁৎ পেতে আছে বন্যপ্রাণীর দল? শরীরে ছমছমে রহস্যময় ভয়ের একটা আবহ তৈরি হলো। এমন পরিস্থিতিতে মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন। কয়েক মুহূর্ত পর কাঁপাকাঁপা স্বরে পরিমল বলল, এই যে বাঘের পায়ের চিহ্ন পেয়েছি। কাদার ওপরে স্পষ্ট হয়ে আছে বাঘের থাবা, নখের গর্ত। একজন নিশ্চিত হয়ে বলল, এটা বাঘের পায়ের তাজা চিহ্ন। নির্ঘাত হরিণ শিকার করতে এসেছিল। শুনে মনে হচ্ছিল জঙ্গলের ভেতর থেকে বাঘ এসে ঘাড়ের উপর হামলে পড়ল বলে! তবে মনের বাঘে খেলেও আমরা বনের বাঘের দেখা পেলাম না। বনের শেষ মাথায় এসে দেখা মিলল বন্য শুকর ও বানরের।
পরিদর্শন শেষে নীলকমলের ঘাটে রাখা ট্রলারে চড়ে বসেছি। সরু নালার পথ ধরে নোঙর করা জাহাজের দিকে চলছি। জোয়ারের কারণে জল-উৎসব শুরু হয়েছে সাগরের বুকে। নীলকমল আসার সময় যে বালুচর জেগেছিল তা ফিরতি পথে চোখের সামনে প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে। খালের বামপাশে হরিণের পাল ঘাস খেয়ে যাচ্ছে। ডানপাশে বন্য শুকর তীর ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফিরতি পথে সাগরের নির্মল হিমেল হাওয়া খেতে খেতে চিত্রা হরিণের ছুটে চলার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মন জুড়িয়ে গেল।
চিত্রা হরিণের ছুটে চলার মতো ট্রলার ছুটে চলছে নোঙর করা জাহাজের দিকে! ট্রলার সাগরে প্রবেশ করলে দিগন্তের বাঁকে তাকালাম। আকাশ গোধূলির সোনালি আলোয় ঝলমল করছে। দূরের সাগরের জল আর দিগন্ত বিস্তৃত রক্তিম আকাশ যেন আলিঙ্গন করছে। পশ্চিম দিগন্তের ক্লান্ত শ্রান্ত সূর্যটাকে মেঘ ঢেকে দিয়ে ঘুম পাড়াতে পাঠাচ্ছে পশ্চিমের অতলান্তে। সাগরের বুকে এমন মনোরম দৃশ্য নাগরিক জীবনের সব ঝড়ঝঞ্চা ভুলিয়ে মনে প্রশান্তির ছোঁয়া এনে দেয়।
সূর্যাস্তের দৃশ্য অবলোকন করতে জাহাজে ফিরে রুমে না গিয়ে ছাদে এসে দাঁড়ালাম। শেষ বিকালের বুড়ো সূর্যের আলোয় পাকা ডাবের বর্ণ ধারণ করেছে আকাশ। হলদেটে সূর্যরশ্মি চাদরের মতো পড়ে আদরের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে দিগন্তকে। সূর্যাস্ত দেখার এ অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। সাগরের জলের শেষ প্রান্ত দিয়ে লাল সূর্য আস্তে আস্তে দিগন্ত রেখায় বিলীন হচ্ছে। জলে তার প্রতিফলন অন্য এক রূপ নিয়েছে। মনে হচ্ছে সাগরের জলকে স্রষ্টা সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছেন। সন্ধ্যার পর চাঁদ আর হাজার নক্ষত্রের আলোয় আলোকিত চারপাশ। আমরা চাদের রুপালি আভায় জাহাজের ছাদে এক আরামদায়ক সন্ধ্যা অতিবাহিত করছি। সমানতালে বারবিকিউ পার্টি চলছে। চড়ুইভাতির আধুনিক রূপ। চুলায় কয়লা বিছিয়ে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিড়ালের মতো শান্ত হয়ে বসে চাঁদের আলোয় ভিজতে ভিজতে তুমুল আড্ডা জমে উঠেছে। সাগরের জলের উপর তারা ভরা এমন আকাশের নিচে কখনো বসা হয়নি আমার।
রাত যখন গভীর হয়ে এলো তখন পর্যটকবাহী সাত-আটটি জাহাজ সমুদ্রের বুকে নৃত্যরত ঢেউয়ের উপর পাশাপাশি নোঙ্গর করা হলো। পালকওয়ালা হাঁসের মতোই দলবদ্ধ হয়ে পানিতে ভাসছে জাহাজগুলো। যাতে জলদস্যুরা আক্রমণ করলে একসাথে মোকাবিলা করা যায়। সঠিক নিরাপত্তা চাইলে দলবেঁধে এমন নোঙর করা ছাড়া কোনো গতান্তর নেই। নোঙ্গর করা জাহাজ থেকে এক অপার্থিব আলো ছড়াচ্ছে। সাগরের জলে পাশাপাশি ভাসমান জাহাজ দেখে মনে হচ্ছে এটা ভাসমান এক ভূতুড়ে শহর!
ভ্রমণের শেষ দিন আমাদের সর্বশেষ পরিদর্শন স্থান হচ্ছে করমজল। এই স্থানটি খুলনা শহরের কাছাকাছি। পশুর নদীতে নোঙর করা জাহাজ থেকে আমরা ট্রলারে চলে এলাম করমজল। ঘাট থেকে নেমে প্রথমেই চোখে পড়ল খাচায় আবদ্ধ চিত্রা হরিণের দল। ওদের দেহের লালচে বাদামী লোমযুক্ত চামড়ায় সাদা সাদা ফোঁটা। মনে হচ্ছে এমন বৈশিষ্ট্যের কারণেই নাম চিত্রা হরিণ। মাথার উপরের শিংগুলো ডালপালার মতো ছড়িয়ে রয়েছে। হরিণগুলোর ঘাড় সরু ও বুক তুলনামূলক বেশি স্ফীত।
সামনের দিকে এগুতেই পুকুরের মতো একটা স্থান, চারপাশে বাউন্ডারি করা। কাছে যেতেই চোখে পড়ল খামারের চারধারে গিজগিজ করছে ক্ষুধার্ত কুমিরের দল। ওদের চ্যাপ্টা মাথার উপরে বসানো ড্যাবড্যাবে চোখ দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ একটা কুমির চোয়াল খুলে হাঁ করলো। শ্বাসরুদ্ধকর বন্যপ্রাণীর প্রদর্শনী দেখে বিমোহিত হলাম। কিছুদূর এগিয়ে বনের সরু পথ ধরে হাঁটছি। দু’পাশের বড় গাছগুলো দেয়ালের মতো সুরক্ষা হয়ে কালের সাক্ষি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। গাছের ডালপালার ফোকর দিয়ে চুইয়ে আসা সূর্যরশ্মি জঙ্গলকে আলোকিত করে রেখেছে। অসাধারণ দৃশ্য! সাবধানতার সঙ্গে বনের ভেতরে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। বনের সৌন্দর্য আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রে নিয়ে গেছে। সৌন্দর্য দেখা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই। উত্তেজনা, আনন্দ আর রোমাঞ্চ নিয়ে এগুতেই চোখে পড়ছে হনুমানের দল। ওদের হালকা বাদামি মুখ ও বুকের উপর স্বতন্ত্র সাদা বা ক্রিমি প্যাঁচ আছে।
করমজলের ভেতর দিয়ে ঘুরে এসে আবার ঘাটের পাশে দাঁড়ালাম। ম্যানগ্রোভ বন দেখতে কয়েকশ লোক এসেছে। করমজলের ম্যানগ্রোভ বন জনবসতির কাছাকাছি হওয়ায় স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকায় ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। ভ্রমণ শেষে আঁকাবাঁকা জলের পথ ধরে এগিয়ে চলছে জাহাজ মংলার দিকে। ফিরতি পথে সুন্দরবনের পানে চেয়ে রইলাম, যতক্ষণ না দৃষ্টিসীমার আড়াল হলো। যখন মংলা ঘাটে নামিয়ে দেয়া হলো তখনও চোখের আভায় লেগে আছে সুন্দরবনের সৌন্দর্য। কানে বেজে চলছে সাগরের পানির অন্তহীন গর্জন। মনে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা জেগে উঠেছে সাগরে বহমান মৃদুমন্দ বাতাসের মতোই। ফিরতি পথে অনুভব করছি প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা প্রবল হয়ে উঠেছে মাত্র দুদিনে। উচ্ছ্বাস চেপে রেখে ফিরে যাচ্ছি ইট-পাথরের শহরে। ফিরে যাওয়ার পর সুন্দর বনের অনিন্দসৌন্দর্য হয়ত অদৃশ্য হাতছানি দিয়ে ডাকবে। স্মৃতি মনে পড়ে প্রকৃতির জন্য গভীর হাহাকার উঠবে বুকজুড়ে।
তারা//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন দর য র স ন দর ল র উপর বন র স ল র মত আম দ র ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ত্রসহ সুন্দরবনের দুই ‘জলদস্যু’ আটক
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নজির গাজী (৪৯) ও দিদারুল ইসলাম (৩৮) নামে দুই ’জলদস্যুকে’ আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা ও ১১টার দিকে উপজেলার উপকুলবর্তী যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় আটক দুই জলদস্যুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা।
এর আগে সোমবার রাত আটটার দিকে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে উঠে আসার সময় স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে অপর কয়েক সহযোগিসহ এসব জলদস্যুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আটকরা হলেন- শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের নওশাদ গাজী এবং আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম।
আবু হামজা, সিদ্দিক হোসেন ও আকবর আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে অপরিচিত পাঁচ/সাত জন ব্যক্তি সুন্দরবন তীরবর্তী যতীন্দ্রনগর বাজারে যায়। এসময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তারা মাইক্রো বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের জন্য কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নাম-পরিচয়সহ সুন্দরবন এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় যতীন্দ্রনগর বাজারে উপস্থিত লোকজন ধাওয়া করে দিদারুলকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে পৌঁছে নজীরকে আটকের পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ব্যবহৃত মাছ শিকারের নৌকার মধ্যে থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি দা উদ্ধার করে।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, জোনাব বাহিনী এখন সুন্দরবনে খুব বেশি তৎপর না। বরং নজীর, তার ভাই নবাব ও ছেলে আব্দুর রহিম এবং মুন্সিগঞ্জ আটিরউপর এলাকার আছাদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে জোনাবের নামে সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত। সোমবার রাতে নজীর আলীকে আটকের পরপরই তার ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাই নবাব ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
আটক নজীর আলীর ভাষ্য, তিনি সুন্দরবনের ত্রাস কুখ্যাত জোনাব বাহিনীর সদ্যদের উপরে তুলে দেওয়া এবং সুন্দরবনে নামিয়ে দেয়ার কাজ করেন। সোমবার ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে জোনাব বাহিনীর দুই সদস্যকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে যেয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি তারা পরিচিত জলদস্যুদের উপরে নিচে উঠানামার কাজ করেন বলেও দাবি তার। উপরে উঠে যাওয়া দুই জলদস্যু উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি তার নৌকার মধ্যে রেখে যায় বলেও তিনি দাবি করেন।
দিদারুল জানান, তিনি নজীর আলীর শ্রমিক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করারসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন। লোকারয়ে পৌঁছে দেওয়া দুই জলদস্যুকে সুন্দরবনের পুটেরদুনে এলাকা থেকে নিয়ে আসার কথাও নিশ্চিত করেন তিনি। তবে তার কাছে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাঙ্কসহ নানান সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন।
এদিকে অস্ত্র উদ্ধারসহ দু’জনকে আটকের বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, নজীরের দেওয়া তথ্যে নৌকায় থাকা ককসিটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। আটকের পর উভয়কে শ্যামনগর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করতেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাহিনীর নাম-পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।