দক্ষিণ সুদানের একটি হাসপাতালে বোমা হামলায় অন্তত ৭ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা দাতব্য সংস্থা ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’ (এমএসএফ)। বিশ্বের সবচেয়ে নবীন রাষ্ট্রটিতে আবারও সর্বাত্মক গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।

এমএসএফ এক বিবৃতিতে দক্ষিণ সুদানের উত্তরাঞ্চলীয় ওল্ড ফ্যাংগাক এলাকায় তাদের হাসপাতালে ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে বোমা হামলার’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। হামলায় ওই অঞ্চলের সবশেষ কার্যকর হাসপাতাল ও ওষুধের দোকান ধ্বংস হয়ে গেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এমএসএফ বোমা হামলা বন্ধের আহ্বান জানায়। পোস্টে সংস্থাটি লিখেছে, ‘বোমা হামলা বন্ধ করুন। বেসামরিক মানুষদের রক্ষা করুন। স্বাস্থ্যসেবা খাতকে রক্ষা করুন।’ এ হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলেও উল্লেখ করেছে এমএসএফ।

হাসপাতাল লক্ষ্য করে কেন হামলা চালানো হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, এ বিষয়ে কথা বলতে দক্ষিণ সুদানের সেনাবাহিনীর কোনো মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

দক্ষিণ সুদানে এমএসএফের প্রধান মামান মুস্তাফা রাজধানী জুবা থেকে আল–জাজিরাকে বলেন, অস্ত্রশস্ত্রসজ্জিত দুটি হেলিকপ্টার থেকে হাসপাতালের ওপর ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তাঁর মাঠপর্যায়ের দল।

মুস্তাফা বলেন, হেলিকপ্টার দুটি হাসপাতাল ও চিকিৎসাসামগ্রী লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপের পর ওল্ড ফ্যাংগাক শহরে টানা গুলিবর্ষণ করেছে।

মুস্তাফা আরও বলেন, ‘বেসামরিক জনগণ ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ ও বিপর্যয়কর…আমরা হতবাক হয়ে গেছি। হাসপাতালটি ২০১৪ সাল থেকে, অর্থাৎ ১০ বছর ধরে সেখানে ছিল।’

গৃহযুদ্ধের নতুন আশঙ্কা

জাতিসংঘ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সতর্ক করে বলেছে, ২০১১ সালে সুদান থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই অস্থিরতায় জর্জরিত দক্ষিণ সুদান। দেশটির আবারও সর্বাত্মক গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে আছে।

প্রেসিডেন্ট সালভা কির ও প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাশারের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তি ভেঙে পড়ার কারণে গত কয়েক মাসে দেশে নতুন করে সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে।

দক্ষিণ সুদানের প্রধান দুই জাতিগোষ্ঠী ডিংকা ও নুয়ের–এর প্রতিনিধিত্ব করেন কির ও মাশার। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ হয়। এতে প্রায় চার লাখ মানুষ নিহত হন। ২০১৮ সালের শান্তিচুক্তির পর তারা একটি ঐক্যের সরকার গঠন করেছিল।

এবার আবারও কির ও মাশারের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। গত মার্চ মাস থেকে মাশার গৃহবন্দী। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আরও পড়ুনদক্ষিণ সুদানে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ২০ জন নিহত৩০ জানুয়ারি ২০২৫

যেখানে এমএসএফের হাসপাতালের ওপর হামলা হয়েছে, সেই ওল্ড ফ্যাংগাক হচ্ছে ফ্যাংগাক কাউন্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। এটি জংগলেই রাজ্যের অন্তর্গত, যা মূলত নুয়ের জাতিগোষ্ঠী–অধ্যুষিত এলাকা ও ঐতিহাসিকভাবে মাশারের নেতৃত্বাধীন সুদান পিপলস লিবারেশন মুভমেন্ট-ইন-অপজিশনের (এসপিএলএম-আইও) ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

নাইরোবি থেকে আল–জাজিরার ক্যাথরিন সোই জানিয়েছেন, তিনি ফ্যাংগাক কাউন্টির কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন, যিনি এ হামলার জন্য সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন। ওই কর্মকর্তা এসপিএলএম-আইও-এর ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে।

ওই কমিশনার আল–জাজিরাকে বলেন, ‘শুধু সেনাবাহিনীই এ ধরনের হামলা চালানোর সামর্থ্য রাখে।’

এদিকে ক্যাথরিন বলেন, ‘আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাঁরা বলেছেন.

..ওই বিমান ছিল সরকার পরিচালিত।’

আরও পড়ুনসুদানে যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৫৩ লাখ মানুষ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • পুলিশের ৯ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর