এমন আইন থাকা চলবে না, যা গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরে: জোনায়েদ সাকি
Published: 4th, May 2025 GMT
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া কোনো দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কার্যকর থাকতে পারে না। রাষ্ট্রে এমন কোনো আইন থাকতে পারবে না, যার মাধ্যমে সরকার গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরতে পারে। এ ধরনের যত আইন আছে, সেগুলো বাতিল করতে হবে।
আজ রোববার দুপুরে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন। সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ এ সভার আয়োজন করে।
সভায় জোনায়েদ সাকি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ন্যূনতম একটা প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে সেখানে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে কি না। ফলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর করা, প্রতিষ্ঠা করা কিংবা যাঁরা গণতন্ত্রের পক্ষে নিজেদের অঙ্গীকার রাখতে চান, তার প্রাথমিক ধাপ হলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা।
জবাবদিহি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের মালিক, সাংবাদিক সবার জবাবদিহি দরকার। জবাবদিহি ছাড়া একচ্ছত্র কর্তৃত্ব যদি তৈরি হয়, নিশ্চিতভাবে সেখানে স্বেচ্ছাচারিতা হবে।
কিছু গণমাধ্যমমালিকদের গোষ্ঠী স্বার্থের সেবা করার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, সেই ধারা এখনো বর্তমান। ফলে গণমাধ্যমের মালিকানা কীভাবে নির্ধারণ হবে, সংস্কারের ক্ষেত্রে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
একজন ব্যক্তি চাইলে অনেকগুলো গণমাধ্যম খুলে ফেললেন, এই জায়গাটা বন্ধ হওয়া দরকার বলেও মনে করেন সাকি। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের মালিকানার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার। যাতে একচেটিয়া স্বার্থের গণমাধ্যম না হয়।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘কারও একচ্ছত্র ক্ষমতা যাতে সমাজে তৈরি না হয়, সেটাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য আমরা লড়ছি।’ তিনি বলেন, মানুষ যখন মনে করবে ন্যায় পেতে শেষ পর্যন্ত গণমাধ্যমের কাছে যেতে হবে, সেই ভরসার জায়গা তৈরি হবে, সেদিন বুঝতে হবে বাংলাদেশে সত্যি সত্যি একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে।
এ দেশে অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়ানো সরকার তৈরি হয়েছে কিন্তু ‘মব’ আক্রমণ চলছে—এমন মন্তব্য করে জোনায়েদ সাকি বলেন, এখন কোনো জায়গায় মব আক্রমণের হুমকি দিলে সেই জায়গায় কার্যকর হয়ে যাচ্ছে। ভয়ের চোটে কারও চাকরি খেয়ে নেওয়া হচ্ছে। সুতরাং এই মব আক্রমণ বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্র যদি মব আক্রমণ বন্ধ করতে না পারে, তাহলে রাষ্ট্রেরই অস্তিত্ব থাকে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্ফুজ আনাম। আলোচনা সভায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সম্পাদকদের মধ্যে বক্তব্য দেন দ্য নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো সময় যুদ্ধবিরতি: জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি সম্ভব। তবে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে মস্কোর ওপর চাপ বাড়াতে মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। স্থানীয় সময় রোববার চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি এ আহ্বান জানান।
চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পেতর পাভেলের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, চাপ না বাড়ানো পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সংঘাত শেষ করতে কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেবেন না।
জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, রাশিয়া চাপ প্রয়োগ ছাড়া যুদ্ধ শেষ করার জন্য কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেবে না। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব রাশিয়ার উপেক্ষা করার আজ ৫৪তম দিন।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, যে কোনো মুহূর্তেই যুদ্ধবিরতি সম্ভব। সেটা আজ থেকেও হতে পারে। আর এই যুদ্ধবিরতি অন্তত ৩০ দিন চলা উচিত, যাতে কূটনীতির জন্য প্রকৃত সুযোগ তৈরি হয়।’
সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৮ থেকে ১০ মে পর্যন্ত ইউক্রেনে তিন দিনের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।
জেলেনস্কি বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ অর্থহীন। তিনি গত মার্চ মাসে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব অনুযায়ী অন্তত ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ৯ মে বিজয় দিবসের প্যারেডে ট্যাংকের প্রদর্শনী না করে পুতিনের উচিত ছিল, কীভাবে এই যুদ্ধ বাস্তবভাবে শেষ করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করা।
জেলেনস্কি বলেন, তিনটি বিষয় জরুরি। প্রথমত রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা, দ্বিতীয়ত ইউক্রেনকে সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং তৃতীয়ত ইউরোপজুড়ে উল্লেখযোগ্য হারে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি।