পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীর কাছ থেকে আট মাসের মেয়েকে নিয়ে দেড় লাখ টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। মেয়েকে ফিরে পেতে আদালত ও পুলিশের দ্বারে দ্বাীরে ঘুরছেন মা পপি বেগম। আদালত শিশুটিকে খুঁজে দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। আর পুলিশ বলছে, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ঘটনাটি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ফুলসূতী  ইউনিয়নের রামপাশা গ্রামের। শিশুটিকে ফিরে পেতে ফরিদপুরের এক নম্বর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ৯ ডিসেম্বর মামলা করেন শিশুর মা পপি বেগম। ওই মামলায় স্বামী কাইয়ুম বিশ্বাস, তাঁর তিন বোন মিতা আক্তার, বুলি বেগম, সাগরী আক্তারসহ মোট পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।

সরদারের মেয়ে পপি বেগমের সঙ্গে পাশের ফরিদপুরের নগরকান্দার রামপাশা গ্রামের মানিক বিশ্বাসের ছেলে কাইয়ুম বিশ্বাসের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে নানা বিষয়ে তাঁদের পারিবারিক কলহ চলছিল। তাঁদের একটি মেয়েশিশু হয়। পাঁচ মাস আগে কলহের জের ধরে পপি বেগমকে তালাক দেন কাইয়ুম।

পপি বেগমের ভাষ্য, তালাকের সময় জোর করে মেয়েকে রেখে দেন কাইয়ুম। পরে মেয়েকে নগরকান্দার শাখরাইল গ্রামের কহিনুর বেগমের কাছে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। এই বিক্রির মধ্যস্থতা করেন নগরকান্দার দলিল লেখক আলমগীর তালুকদার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে পপি বেগম বলেন, ‘আমার বাচ্চাডারে দেখবার জন্য রাতে ঘুম হয় না, খাবার পারি না। আমার কলিজাডা শুকায় গেছে। যার কাছে বাচ্চা বিক্রি করা হয়েছে, তার মায়ের পা পর্যন্ত জড়ায় ধরছি, তবুও দেখতে দেয় নাই।’
এ–সংক্রান্ত মামলা হওয়ার পর থেকে শিশুটির বাবা কাইয়ুম বিশ্বাস আত্মগোপনে আছেন। তবে কাইয়ুমের বোন মিতা আক্তারের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলে একজন কলটি ধরে মিতার স্বামী পরিচয় দেন এবং ব্যস্ত আছেন বলে কেটে দেন।
এ বিষয়ে নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ সফর আলী বলেন, ‘আদালত আমাদের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছে, সে অনুযায়ী কাজ চলছে। কিন্তু অভিযোগে বাচ্চাটি বিক্রির যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। শিশুটিকে খুঁজে পেলে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নগরক ন দ

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ডাকাত দলের ১৩ সদস্য গ্রেপ্তার

মাদারীপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ১৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ডাকাতি হওয়া একটি পিকআপ উদ্ধার করা হয়েছে।

বুধবার (১ অক্টোবর) দুপুরে জেলার রাজৈর থানায় সংবাদ বিবৃতির মাধ্যমে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মাদারীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) সালাহ উদ্দিন কাদের।

আরো পড়ুন:

ময়মনসিংহে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা, গ্রেপ্তার ২

কুমিল্লায় ডাকাত সর্দার দুলালসহ ১৩ সদস্য গ্রেপ্তার

উদ্ধার হওয়া পিকআপটির মালিক খুলনার রুপসা উপজেলার শিরগাতি গ্রামের সরদার জাহাঙ্গীর আলম (৬২)। তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় ফলের ব্যবসা করেন।

গ্রেপ্তার ডাকাতরা হলেন, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার খাটরা গ্রামের শাহ আলম শেখ (৪০), একই উপজেলার পরারন গ্রামের কবির চোকদার (৪৫), সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুরের জাকির খাঁ (৫০), ভাঙ্গার কাউলীবেড়া গ্রামের ইকরাম আলী মুন্সী (৩৫), পাতরাইল গ্রামের হৃদয় বয়াতি (২৩), নগরকান্দা উপজেলার মীরাকান্দা গ্রামের সুমন হোসেন মাতুব্বর (২৬), ঢাকার কেরানীগঞ্জের পুরান পাঁচদোনা আল আমিন (৪৫), কেরানীগঞ্জের ঘাটার চর এলাকার হাবিব (২৫), নগরকান্দার ছোট নাওডোবার ইকবাল হোসেন (৩৬), মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার শংকরদী গ্রামের সুজন মাতুব্বর (২৭), কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার গুশ্বা গ্রামের সোহাগ ওরফে নোবেল (২৬), একই উপজেলার সাইটুটা গ্রামের ডালিম সরকার (৩০) ও স্বপন (২৫)।

পুলিশ জানায়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খুলনার তেরখাদা থেকে তরমুজ নিয়ে মাদারীপুরের মস্তফাপুর ফলের আড়ৎয়ে যাচ্ছিল একটি পিকআপ। পথিমধ্যে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ব্রিজ এলাকার গঙ্গাবর্দী স্থানে আসলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ওপর থেকে চালক-হেলপারকে মারধর করে তরমুজ ভর্তি পিকআপটি নিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাত দল।

ওইদিন রাতেই রাজৈর থানায় ডাকাতি মামলা করা হয়। পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর ডাকাত দলের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে রাজৈর থানা পুলিশ। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যমতে ভাঙ্গা, সদরপুর, নগরকান্দা, কেরানিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় অভিযান চালিয়ে আরো ছয় ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।

মঙ্গলবার রাতে আবার অভিযান চালিয়ে আরো পাঁচজনসহ ডাকাত দলের মোট ১৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একইসঙ্গে তাদের তথ্য অনুযায়ী গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে ডাকাতি করা পিকআপটি উদ্ধার করা হয়। পরে রাজৈর থানা থেকে পিকআপ মালিককে খবর দেওয়া হয়।

পিকআপ মালিক ও ফল ব্যবসায়ী সরদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমার ডাকাতি হওয়া পিকআপটি রাজৈর থানার পুলিশ অনেক কষ্ট করে উদ্ধার করেছে। একইসঙ্গে ডাকাত দলও গ্রেপ্তার হয়েছে। আমি রাজৈর থানা পুলিশের জন্য দোয়া করি এবং তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। গ্রেপ্তার ডাকাতদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করছি।”

মাদারীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) সালাহ উদ্দিন কাদের বলেন, “আমগ্রাম থেকে তরমুজ ভর্তি পিকআপ ডাকাতির ঘটনায় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ধাপে ধাপে এ পর্যন্ত মোট ১৩ জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি এবং তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পিকআপটিও উদ্ধার করেছি।”

তিনি বলেন, “এরা মুলত মহাসড়কে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। এর আগে আটজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছি এবং আজ আরো পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “ডাকাতি করা তরমুজগুলো ঢাকার যাত্রাবাড়ী নিয়ে বিক্রি করে দেয় ডাকাতরা। এরপর গাজীপুরের জয়দেবপুরে নিয়ে পিকআপটি লুকিয়ে রাখে।”

ঢাকা/বেলাল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ডাকাত দলের ১৩ সদস্য গ্রেপ্তার