ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ডিএমপির ২৩২২ মামলা
Published: 8th, May 2025 GMT
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৩২২টি মামলা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। গতকাল বুধবার এ অভিযান চালানো হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অভিযান চলাকালে ২৮৯টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১০১টি গাড়ি রাস্তা থেকে রেকার দিয়ে সরানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুনরাজধানীতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ডিএমপির ১ হাজার ৯৩৮ মামলা২১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড এমপ
এছাড়াও পড়ুন:
‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ
হাজার হাজার মানুষ বৃষ্টি উপেক্ষ করে ঢাকায় একত্রিত হয়ে এ সপ্তাহেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের বার্ষিকী উদযাপন করেছে। তারা দেশের নতুন ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে এই আনন্দের দৃশ্য গত ১২ মাসের পুরো ছবি বর্ণনা করে না। ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের পথে বেশ কিছু জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধর্মীয় উগ্রপন্থার উত্থান, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা প্রতিবন্ধকতা দেশের উন্নয়নযাত্রাকে কঠিন করে তুলছে বলে রবিবার (১০ আগস্ট) প্রকাশিত বিবিসির এক বিশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতির অঙ্গীকার রেখে গত ৫ আগস্ট ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
২৮ দফার এ ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।”
আরো পড়ুন:
‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ
ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা দেশে টিকতে পারবে না: মৎস্য উপদেষ্টা
বিবিসিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, সংঘবদ্ধ সহিংসতা, প্রতিশোধমূলক হামলা এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থার পুনরুত্থান ঘটেছে, যা দেশের গণতন্ত্রের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাজার হাজার বিক্ষোভকারী শেখ হাসিনার বাসভবন ও কার্যালয় ঘেরাও করে। ঠিক তার আগ মুহূর্তে সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যান। এখনও তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে দেশের আদালতের মানবতাবিরোধী অপরাধসহ বিভিন্ন মামলার বিচারকাজ চলছে।
নারী অধিকারকর্মী শিরীন হক বিবিসিকে বলেন, “আমার মনে হয় আমরা একটি শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করেছি, বিপ্লব হয়নি। মূলত, নারীবিদ্বেষ অক্ষুণ্ণ রয়েছে।”
নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৮ নভেম্বর নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে। ‘নারীপক্ষ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হক ছিলেন সেই কমিশনের প্রধান।
গত ১০ এপ্রিল এ কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকার— এ তিন বিষয়ে সুপারিশ করেছে, যেখানে সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি জোরালো করার কথা বলা হয়েছে। নারীর অগ্রগতির জন্য আছে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও জাতীয় সংস্থাগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর সুপারিশও। সেখানে লিঙ্গ সমতার জন্য আহ্বান জানানো হয় — বিশেষ করে নারীদের উত্তরাধিকার ও বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার নিয়ে, বিবাহের ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা এবং পুলিশ ও অন্যদের দ্বারা হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার যৌনকর্মীদের অধিকার সুরক্ষার আহ্বান জানানো হয়।
পরে হাজার হাজার ইসলামি কট্টোরপন্থীরা এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে, তাদের দাবি ছিল এই সুপারিশগুলো ইসলামবিরোধী এবং ‘পুরুষ ও নারী কখনোই সমান হতে পারে না’। তারা নারীবিষয়ক কমিশন বিলুপ্ত করার এবং কমিশনের সদস্যদের শাস্তি দেওয়ার দাবি তুলেছিল। এরপর কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে আর আগায়নি।
শিরীন হক বিবিসিকে বলেন, “আমি হতাশ হয়েছিলাম যে অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের যথেষ্ট সমর্থন করেনি যখন আমরা নানাবিধ হয়রানির শিকার হয়েছিলাম। তবে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার অফিসে বিবিসি যোগাযোগ করলে কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি।
বিবিসিকে কর্মী সংগঠকরা বলছেন, এই বিক্ষোভ ছিল কেবল একটি উদাহরণ কীভাবে কট্টোরপন্থীরা সাহসী হয়ে উঠেছে। তারা দেশের কিছু অঞ্চলে মেয়েদের ফুটবল খেলা, নারী সেলিব্রেটিদের বাণিজ্যিক প্রচারমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের বিরোধিতা করেছে এবং কিছু ক্ষেত্রে নারীদের পোশাকের কারণে জনসম্মুখে হয়রানি করেছে।
সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ এবং মানবাধিকার বিষয়ক পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে অনেকেই আছেন যারা শুধু দায়বদ্ধতা চান না, তারা প্রতিশোধ ও বিচার চেয়েছেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে যেসব অবিচার ঘটেছিল তা চলতে পারে না এবং বর্তমান সময়েও সেগুলোকে পুনরায় চালানো উচিত নয়।"
আওয়ামী লীগ দাবি করেছে, গত এক বছরে তাদের শতাধিক সমর্থক লাঞ্ছিত হয়েছে। যদিও সরকার তা অস্বীকার করছে। কয়েকজন সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগের কিছু সমর্থক হত্যার অভিযোগে কারাগারে রয়েছেন। তাদের জামিন আবেদন বারবার আদালত থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
আরো পড়ুন: আশা আর অচলাবস্থার দোলাচলে দেশ
নাহিদ ইসলাম গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বে ছিলেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, “বৃহৎ কোনো উত্তোলনের পর স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে সময় লাগে। আমরা এখন একটি রূপান্তরকালীন পর্যায়ে আছি।”
দেশের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে স্বীকার করেলেও নাহিদ ধর্মীয় উগ্রপন্থার বৃদ্ধির আশঙ্কাকে অস্বীকার করেন।
তবে উন্নতিরও কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। অনেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনীতি স্থিতিশীল করার জন্য কৃতিত্ব দিচ্ছেন এবং আশঙ্কার বিপরীতে ব্যাংকিং খাত টিকে আছে। বাংলাদেশ তার ঋণের দায়িত্ব পালন করেছে, খাদ্যমূল্য মোটামুটি স্থিতিশীল রেখেছে, এবং রেমিট্যান্স ও আন্তর্জাতিক ঋণের কারণে শক্তিশালী বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ (বর্তমানে ৩০ বিলিয়ন ডলার) বজায় রেখেছে। রপ্তানিও স্থিতিশীল রয়েছে।
এছাড়া, আরো অনেক এমন বিষয় আছে যা সহজে মাপা যায় না।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “হাসিনা পতনের পর থেকে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এবং এখন সবাই মুক্তভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে।”
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, কেউ কেউ ছাত্র নেতাদের অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর প্রভাব নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তাদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল হাসিনা পতনের অভূতপূর্ব প্রতিবাদের নেতৃত্ব দেওয়ার স্বীকৃতিতে। এখনও দুজন অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। সমালোচকরা বলছেন, ছাত্রদের চাপের কারণে কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
“সরকার মাঝে মাঝে জনমতের কিছু দাবি মেনে নিয়েছে, বিশেষ করে ছাত্রদের, কারণ তারা ভয় পায় যে অন্যথায় আরো কঠোর প্রতিবাদ শুরু হতে পারে। তবে এটি ব্যতিক্রম, নিয়ম নয়,” বলেন ডেভিড বার্গম্যান।
এদিকে, আওয়ামী লীগের এক নির্বাসিত নেতা অভিযোগ করেছেন, দলটির সমর্থকদের নিস্তব্ধ করা হচ্ছে এবং আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।”
“আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে না,” বলেন হাসিনার মন্ত্রিসভার সাবেক এক মন্ত্রী।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও কারাগারে মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “আমরা একটি স্বৈরশাসন ব্যবস্থার পতন করেছি, কিন্তু যতক্ষণ আমরা সেই স্বৈরশাসকের মতো আচরণ বন্ধ না করব ততক্ষণ নতুন বাংলাদেশ গঠন সম্ভব নয়।”
বিবিসির মতে, বাংলাদেশ এখন একটি সংকটপূর্ণ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে, এবং আগামী ছয় মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। অনেকে বলেন, যদি এই সংকীর্ণ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অর্থবহ পরিবর্তন না আসে, তাহলে বিদ্রোহে নিহতদের আত্মত্যাগ অর্থহীন হয়ে যেতে পারে।
ঢাকা/ইভা/তারা