পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের প্রকল্প এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকল্পের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডে (এনপিসিবিএল) কর্মরত ছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো.

জাহেদুল হাছান স্বাক্ষরিত দুটি চিঠিতে তাঁদের অব্যাহতি ও নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানানো হয়। গতকাল শনিবার চিঠি দুটি তাঁরা হাতে পেয়েছেন।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। বিষয়টি প্রকল্পের নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।

অব্যাহতিপত্রে বলা হয়েছে, এনপিসিবিএলে তাঁদের আর প্রয়োজন নেই। ৮ মে থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হলো। তবে সবাই নোটিশ পেমেন্ট বাবদ তিন মাসের বেতন পাবেন।

প্রকল্প এলাকায় নিষেধাজ্ঞা–সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ ও আবাসিক এলাকা গ্রিনসিটিতে প্রবেশ বন্ধ করা হলো।’

অব্যাহতি পাওয়া কর্মকর্তারা হলেন এসপিসিবিএলের ডেপুটি চিফ সুপারিনটেন্ড মো. হাসান আলী, ঊর্ধ্বতন সহকারী ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম, আবু রায়হান, রফিকুল হাসান, জয়নাল হোসেন, নাঈম আল সাকিব, আবু সাঈদ, এ কে এম আবদুল্লাহ আল আমিন, শাহ ইখতিয়ার আলম, ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ, সহকারী ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল নোমান, আসিফ খান, মোহাম্মদ ইমামুল আরেফিন, মো. ইকরাম, মো. রুহুল আমীন, উপসহকারী ব্যবস্থাপক ইসমাইল হাসেন, রুবেল হোসেন ও টেকনিশিয়ান ফিরোজ আহম্মেদ।

চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের দাবি, ১৮ জন কর্মকর্তার সবাই দক্ষ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১২ জন বুয়েট থেকে পাস করা প্রকৌশলী। ১৮ জনই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ে রাশিয়া থেকে একাধিকবার প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করায় তাঁদের অবৈধভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন। একই সঙ্গে প্রকল্পের স্বার্থে চাকরি পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছেন। অন্যথায় তাঁরা আইনের আশ্রয় নেবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাকরিচ্যুত এক প্রকৌশলী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের দাবিদাওয়া তুলে ধরলেই দমন করা হয়। তাঁদের দমানোর চেষ্টা করা হয়। এর প্রতিবাদ করায় বেছে বেছে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। প্রকল্পের আবাসিক এলাকা থেকে সবাইকে তিন দিনের মধ্যে পরিবার নিয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। এতে তাঁরা চরম সমস্যায় পড়েছেন।

জানতে চাইলে এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহেদুল হাছান বলেন, চাকরিচ্যুত ব্যক্তিদের বিষয়ে যথাযথ তদন্ত ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বেশ কিছুদিন ধরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল হাছানের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে এনপিসিবিএলের আন্দোলন করে আসছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ৬ মে তাঁরা ঈশ্বরদী শহরে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন। ৭ মে প্রকল্প এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেন। এ নিয়ে প্রথম আলোতে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুনরূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিচালকের অপসারণের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ০৬ মে ২০২৫আরও পড়ুনপরিচালকের অপসারণের দাবিতে কর্মচারীদের বিক্ষোভ২২ জানুয়ারি ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন কর মকর ত চ কর চ য ত স ব এল র

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে পরকীয়া প্রেমিকের হাতে নারী খুন

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার কৃষ্ণবাটি গ্রামে তৃপ্তি রাণী (৪০) নামের এক নারীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুরে তৃপ্তি রানী মাঠে ঘাস কেটে বাড়িতে ফেরার পথে শংকর নামের এক স্থানীয় যুবক তৃপ্তি রানীকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।

আরো পড়ুন:

প্রথম স্ত্রীকে তালাক না দেওয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্মহত্যা

যে কারণে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে গলায় ফাঁস দিলেন স্বামী

তৃপ্তি রানী উপজেলার কৃষ্ণবাটি দক্ষিণ পাড়ার অবনিশ মল্লিকের স্ত্রী। অভিযুক্ত শংকর নিহতের প্রতিবেশী। হত্যাকাণ্ডের পরে সে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। 

তৃপ্তি রানী পরকীয়ার জের ধরে হত্যার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

কৃষ্ণবাটি এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য সাধন দাস বলেছেন, তৃপ্তির স্বামী অবনিশ ভ্যানচালক। এই দম্পতির একটি সন্তান আছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ির পাশের এক নারীর সঙ্গে মাঠ থেকে ঘাস কেটে বাড়ি ফিরছিলেন তৃপ্তি। পথে শংকর তাদের গতিরোধ করে। এ সময় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শংকর তৃপ্তিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে হাতে থাকা ধারাল অস্ত্র দিয়ে তৃপ্তির ঘাড়ে ও মাথায় এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তখন তৃপ্তির সঙ্গে থাকা নারী বাধা দিতে গেলে তাকেও হত্যার ভয় দেখায় শংকর। 

সাধন দাস বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত তৃপ্তি রাণীকে মনিরামপুর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করেন। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে স্বজনরা তৃপ্তিকে নিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যায় নড়াইলে পৌঁছালে পথেই তৃপ্তির মৃত্যু হয়। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে তৃপ্তির সঙ্গে শংকরের পরকীয়া নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন ছিল। একপর্যায়ে শংকর তৃপ্তিকে ঘরে তুলতে চান। তখন তৃপ্তি শংকর কাছে তার ভিটাবাড়ি দাবি করেন। শংকর তাতে রাজি না হওয়ায় তাদের দুজনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে তৃপ্তিকে খুন করেছে শংকর। 

মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলুর রহমান খান বলেছেন, পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে শংকর নামের এক ব্যক্তি বৃহস্পতিবার দুপুরে তৃপ্তি রানীকে কুপিয়ে আহত করে। ঢাকায় নেওয়ার পথে তৃপ্তি মারা যান। গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত শংকর পলাতক আছে। 

ঢাকা/রিটন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ