রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল (আংশিক শ্রুত) শুনানির জন্য আপিল বিভাগের মঙ্গলবারের কার্যতালিকায় রয়েছে। এই আপিলের সঙ্গে প্রতীক বরাদ্দ বিষয়ে দলটির একটি আবেদনও তালিকায় রয়েছে।

আজ সোমবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের মঙ্গলবারের কার্যতালিকায় জামায়াতে ইসলামীর ২০১৩ সালে করা আপিলটি শুনানির জন্য ২ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে। সঙ্গে ২০১৩ সালে দলটির করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) এবং নির্দেশনা চেয়ে করা একটি আবেদনও রয়েছে।

এর আগে নির্দেশনা চেয়ে জামায়াতের করা ওই আবেদন আজ সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। দলটির করা ওই আপিলের সঙ্গে আবেদনটি আগামীকাল মঙ্গলবার (১৩ মে) আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসবে বলে চেম্বার বিচারপতি মো.

রেজাউল হক আজ সিদ্ধান্ত দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর করা আপিলের সঙ্গে আবেদনটি ট্যাগ (একসঙ্গে) করা হয়েছে। আবেদনটি প্রতীক বিষয়ে। আপিলের সঙ্গে প্রতীকের বিষয়েও শুনানি হবে। সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালে একটি রেজল্যুশন পাস করেছিলেন। এই রেজল্যুশন যখন পাস করা হয় তখন আপিলটি (২০১৩ সালে জামায়াতের করা) বিচারাধীন। আপিল বিচারাধীন অবস্থায় যেহেতু রেজল্যুশন পাস করা হয় সে জন্য ওই আবেদনটি (প্রতীকসংক্রান্ত) দায়ের করে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে একই সঙ্গে এটিও নিষ্পত্তি করা হয়।’

রেজল্যুশনে কী ছিল—এমন প্রশ্নে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, দাঁড়িপাল্লা প্রতীক যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের প্রতীক, এটি যেন কাউকে বরাদ্দ না দেওয়া হয়। রেজল্যুশন (২০১৬ সালের) যুক্ত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আবেদনটি করে। দলের আগে যে প্রতীক ছিল, রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে একই সঙ্গে যেন তা দেওয়া হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

এর আগে কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা বরাদ্দ না দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। চিঠির ভাষ্য, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের উপস্থিতিতে ১২ ডিসেম্বর (২০১৬ সালের) ফুল কোর্ট সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, ‘দাঁড়িপাল্লা’ ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে একমাত্র সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে। অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার না করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো হোক। চিঠির শেষাংশে বলা হয়, এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভার ওই সিদ্ধান্ত অনুসারে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে বা কোনো নির্বাচনে প্রার্থীর প্রতীক হিসেবে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বরাদ্দ প্রদান না করা এবং যদি বরাদ্দ করা হয়ে থাকে তাহলে ওই বরাদ্দ বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দলটির করা আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আপিলকারীর পক্ষে সেদিন কোনো আইনজীবী না থাকায় আপিল বিভাগ ওই আদেশ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) দেন। পরে দেরি মার্জনা করে আপিল ও লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে দলটির পক্ষ থেকে পৃথক আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে গত বছরের ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ আবেদন মঞ্জুর (রিস্টোর) করে আদেশ দেন। এরপর জামায়াতের আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। গত ৩ ডিসেম্বর শুনানি শুরু হয়। এরপর আরও কয়েক দিন শুনানি হয়।

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ। একই সঙ্গে আদালত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেন, যা ওই বছরই আপিল হিসেবে রূপান্তরিত হয়। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে দলটি।

তবে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে জামায়াত আবেদন করে, যা ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের তৎকালীন চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। এরপর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ক র যত ল ক য় শ ন ন র জন য আপ ল ব ভ গ র ২০১৩ স ল ২০১৬ স ল ড স ম বর ইসল ম র ব চ রপত র আপ ল বর দ দ আগস ট দলট র

এছাড়াও পড়ুন:

বিচারকের ছেলে হত্যা মামলার আসামি লিমন পাঁচ দিনের রিমান্ডে

রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আবদুর রহমানের বাসায় ঢুকে তাঁর ছেলেকে হত্যা ও স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গ্রেপ্তার লিমন মিয়ার (৩৪) পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ শনিবার দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক মামুনুর রশিদ এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গাজিউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আসামির সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুল ইসলাম। শুনানি শেষে আদালত লিমনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে বিচারকের ছেলের মৃত্যু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে: ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক১৪ নভেম্বর ২০২৫

গাজিউর রহমান বলেন, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিমন মিয়াকে হাসপাতাল ত্যাগের অনুমতি দেয়। এরপর তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে বেলা ২টার দিকে তাঁকে আদালতে তোলা হয়। রিমান্ড মঞ্জুরের পর আদালত থেকে তাঁকে রাজপাড়া থানায় নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁকে ওই ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

পুলিশ বলছে, গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী শহরের তেরখাদিয়া ডাবতলা এলাকায় ওই বিচারকের বাসায় যান গাইবান্ধার ফুলছড়ির বাসিন্দা লিমন মিয়া। এরপর তিনি বিচারকের ছেলে তাওসিফ রহমানকে (১৫) ছুরিকাঘাত ও শ্বাসরোধে হত্যা করেন। লিমনের ছুরিকাঘাতে ওই বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসিও (৪৪) আহত হন। এসব ঘটনার সময় ধ্বস্তাধ্বস্তির এক পর্যায়ে লিমনও আহত হন। পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার লিমন মিয়াকে একমাত্র আসামি করে রাজপাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন বিচারক মোহাম্মদ আবদুর রহমান। আসামি এই হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে বাসায় ঢুকে বিচারকের স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে ছুরিকাঘাতে হত্যা, স্ত্রী আহত১৩ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভেঙে গেল মীরার তৃতীয় সংসার
  • আলো দেখাচ্ছেন দৃষ্টিহীন তরুণ 
  • বাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে
  • জামিনের পর মামলা নিয়ে মেহজাবীনের বিবৃতি
  • ‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
  • বিচারকের ছেলে হত্যা মামলার আসামি লিমন পাঁচ দিনের রিমান্ডে