গুজরাট থেকে উড়োজাহাজ-লঞ্চে করে চোখ বেঁধে আনা হয়েছে, জানালেন ভুক্তভোগীরা
Published: 12th, May 2025 GMT
সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ফেলে যাওয়া ৭৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের অনেকে অসুস্থ, কারও কারও শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন আছে। একজনের হাত ভাঙা। বেশির ভাগই কয়েক দিন না খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাঁদের সবাইকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার দোতলার একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। কয়েকজন জানিয়েছেন, ১৫ দিন পর এই প্রথম থানায় এসে ভাত খেতে পেরেছেন তাঁরা।
পুলিশ জানিয়েছে, বিএসএফ যে ৭৮ জনকে ফেলে রেখে গেছে, তাঁদের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশি এবং ৩ জন ভারতীয় নাগরিক। গত শুক্রবার তাঁদের শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ফেলে রেখে যায় বিএসএফ। এরপর বন বিভাগ তাঁদেরকে উদ্ধারের পর শনিবার রাত ১১টার দিকে কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান বলেন, ক্যাম্প থেকে তাঁকে জানানো হয়েছিল, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা কয়েক দিন না খেয়ে থাকার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের হাত ভেঙে গেছে, আরও কয়েকজনের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় খাবার, স্যালাইন ও পানি নিয়ে তিনি সেখানে পৌঁছান।
শ্যামনগর থানার দোতলায় ৭৮ জনকে একসঙ্গে রাখা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নড়াইল জেলার ৬৩ জন, বাকি ৮ জনের বাড়ি সাতক্ষীরা, যশোর, বরিশাল ও ঢাকা জেলায়। তিনজন ভারতীয় নাগরিকের বাড়ি ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে।
গত শুক্রবার ভোরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী দেশটিতে অবৈধভাবে থাকা ৭৮ বাংলাদেশিকে কয়েকটি স্পিডবোটে করে এনে সুন্দরবনের গহিনে মান্দারবাড়িয়া এলাকায় নামিয়ে দিয়ে যায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ য মনগর
এছাড়াও পড়ুন:
ঘর থেকে তুলে নিয়ে চুরির অপবাদে নির্যাতনের শিকার জাকিরের চোখ হারানোর শঙ্কা
অন্য সব দিনের মতোই গত শনিবার রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজ ঘরে ঘুমিয়েছিলেন জাকির শেখ। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ছয়টায় হঠাৎ স্থানীয় শতাধিক ব্যক্তি জাকিরের বাড়িতে প্রবেশ করেন। ঘর থেকে তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির পাশের খোলা স্থানে। সেখানে চুরির অপবাদ দিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেন কিছু উৎসুক জনতা। তাঁর দুই চোখ খেজুরের কাঁটা আর সুই দিয়ে খুঁচিয়ে নষ্ট করে ফেলার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের।
জাকির শেখের (৫০) বাড়ি মাদারীপুরের সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের পশ্চিমমাঠ বাঘাবাড়ি এলাকায়। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তাঁর পরিবার জানিয়েছে, তাঁর দুটি চোখেই ভয়াবহ ক্ষত। চোখ দুটি পুরোপুরি হারানোর শঙ্কা রয়েছে। আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জাকিরের চোখে অস্ত্রোপচার করেছেন চিকিৎসক।
একই ঘটনায় পিটুনির শিকার আরও দুজন মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
জাকির শেখের বড় মেয়ে এনি আক্তার (২০) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আব্বুর অবস্থা ভালো নয়। ডাক্তার বলেছেন, তাঁর চোখের ৮০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। চোখে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আব্বুর চোখে বড় অপারেশন আজ হইছে। আব্বুর সঙ্গে আমি আছি। আমার আব্বুকে যারা চুরির মিথ্যে অপবাদ দিয়ে এই অবস্থা করেছে, তাদের বিচার চাই।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিরখাড়া ইউনিয়নের পশ্চিমমাঠ বাঘাবাড়ি এলাকার কয়েকটি বাড়িতে সম্প্রতি ছিঁচকে চুরির ঘটনা ঘটে। এরপর ‘স্থানীয় যুব সমাজের উদ্যোগে’ এলাকায় নিয়মিত পাহারায় বসেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে বাবুল শিকদার (২৫) নামের এক যুবক তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার পথে চোর সন্দেহে স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাঁকে আটক করেন। বাবুল একই ইউনিয়নের রায়েরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। খবর পেয়ে বাবুলকে উদ্ধারে তাঁর এক আত্মীয় ইস্রাফিল মাতুব্বর (৪০) গেলে তাঁকেও আটক করেন স্থানীয় লোকজন। এরপর চোর সন্দেহে দুজনকে রাতভর মারধর করা হয়। এরপর জাকির শেখের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে পিটুনি ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
জাকির শেখের পরিবারের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জেরে চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জাকিরকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন স্থায়ীয় কোহিনুর মাতুব্বর, কামাল, সজীব, ওমর, শফিকুলসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি।
অভিযুক্ত কোহিনুর মাতুব্বর ও কামাল হোসেন বলেন, ‘চোর সন্দেহে প্রথম যাকে ধরা হইছে, তার স্বীকারোক্তিতে ছিল জাকির শেখের নাম। এখানে চোরদের সঙ্গে আমাদের কিসের শত্রুতা। এগুলো বলে ঘটনা আড়াল করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন ছিঁচকে চোরের আতঙ্কে অতিষ্ঠ হয়ে গণপিটুনি দিয়েছে। এখানে ব্যক্তিগত শত্রুতা বা ক্ষোভ থেকে কাউকে আঘাত করা হয়নি।’
ফেরিওয়ালা জাকিরকে নির্যাতনে জড়িতদের বিচার চেয়ে সন্তানদের নিয়ে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন। আজ সকালে মাদারীপুর শহরের একটি বাসায়