চোখের সামনে রবার্ট প্যাটিনসন আর জেনিফার লরেন্স। রেড কার্পেটের বাইরের চত্তরে তখন হুইহুল্লোড় পড়ে গেছে। যে যত জোরে চিৎকার করতে পারে ততটাই উচ্চস্বরে ডাকছেন। কেউ হ্যালো প্যাটিজনসন, কেউ আবার হ্যালো জেনিফার।

৭৮ তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের গতকালের লাল গালিচায় গতকাল দুই হলিউড তারকার আলোয় ঝলমলে উপস্থিতি যেনো নতুন করে প্রাণ দিল। বহুল প্রতীক্ষিত ছবি ‘ডাই মাই লাভ’ নিয়ে এসেছেন তারা। ছবিটি এবার মূলত প্রতিযোগিতা বিভাগে লড়ছে।

এই যুগল কেবল পর্দায় নয়, বাস্তবেও লাল গালিচায় রীতিমতো মন কাড়লেন উপস্থিত ভক্ত ও সাংবাদিকদের। তারা দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন হাত নেড়ে, হাসিমুখে উপস্থিত ভক্তদের শুভেচ্ছা জানাতেও ভুল করেননি। 

 

জেনিফার লরেন্স এদিন ছিলেন একদমই নববধূসুলভ, একটি দীর্ঘ সাদা করসেটেড গাউন পরে যা ডিজাইন করেছিলেন ডিওর-এর কৌশলী ডিজাইনাররা। তার পরনে ছিল একটি মার্জিত হেডস্কার্ফও, যা তার লুককে আরও রাজকীয় করে তোলেছিল। 

‘ডাই মাই লাভ’ মূলত মাতৃত্বকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে—যেখানে জেনিফার লরেন্সের চরিত্রটি ধীরে ধীরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। ছবিতে তার চরিত্রটি পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়ে নিজের ভেতরের দানবের সঙ্গে লড়াই করতে থাকে। তার পাশে রয়েছেন স্বামী চরিত্রে রবার্ট প্যাটিনসন—যিনি স্নেহশীল হলেও স্ত্রীর মানসিক অবক্ষয়ের কাছে অসহায়। এই দাম্পত্য সম্পর্ক ও মানসিক সংকটের গল্প নিয়েই এগিয়েছে ‘ডাই মাই লাভ’ এর গল্প। 

 

ছবিটি পরিচালনা করেছেন লিন র‍্যামজি।  এই ছবির কাহিনি চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে আরিয়ানা হারউইচ-এর উপন্যাস অবলম্বনে।

ফ্রান্সের পল্লী অঞ্চলে চিত্রায়িত এই সিনেমা ও এর চরিত্রগুলোর বেদনা, আবেগ, এবং অস্তিত্বসংকটের চিত্রটা কানে দর্শকদের হৃদয়ে আলোড়ন তুলেছে।  এই কান উৎসবেই প্রথমবার প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন লরেন্স, আর প্যাটিনসন বরাবরই কানের প্রিয় মুখ। 

গত ১৩ মে দক্ষিণ ফ্রান্সের কান শহরের পালে দ্য ফেস্টিভ্যালে শুরু হয়েছে ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসব। চলবে ২৪ মে পর্যন্ত। এই উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক লালগালিচা পর্ব। এই পর্বে বিশ্বের খ্যাতিনামা অভিনেত্রী, গায়িকা ও মডেলরা বাহারি পোশাকে হাঁটেন। এবারের আসরে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে ২২টি চলচ্চিত্র। এছাড়া ‘আঁ সার্তে রিগা’, ‘আউট অব কম্পিটিশন’, ‘মিডনাইট স্ক্রিনিংস’, ‘কান প্রিমিয়ার’ এবং ‘স্পেশাল স্ক্রিনিংস’-প্রতিটি বিভাগেই দেখা যাবে নানা ঘরানার, নানা দেশের চলচ্চিত্র।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব চলচ চ ত র প য ট নসন চর ত র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব 

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন। 

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে। 

এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র‌্যান্ডেল। 

এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব। 

১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।

রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”

চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”

গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”

শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র‌্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”

শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”

ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”

ঢাকা/তারিকুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
  • ‘মবের’ পিটুনিতে নিহত রূপলাল দাসের মেয়ের বিয়ে আজ
  • এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
  • ডাইনির সাজে শাবনূর!
  • প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব 
  • টগি ফান ওয়ার্ল্ডে উদযাপিত হলো হ্যালোইন উৎসব
  • উদ্ভাবন–আনন্দে বিজ্ঞান উৎসব
  • নবীনদের নতুন চিন্তার ঝলক
  • বিজ্ঞান উৎসব উদ্বোধন করল রোবট নাও
  • ‘ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসবে’ আলোয় ভাসল গারো পাহাড়