উৎসবে সাশ্রয়ী কেনাকাটায় ভরসা বিকাশ পেমেন্ট
Published: 23rd, May 2025 GMT
প্রিয়জনের জন্য পোশাক ও উপহার কেনা, ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে সাজসজ্জার জিনিসপত্র কেনা, খাবার-দাবারের জন্য প্রয়োজনীয় আয়োজনের পাশাপাশি ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে যুক্ত হয় কোরবানির পশুসহ নানা অনুষঙ্গের কেনাকাটা। কিছু বাসার পাশের দোকান থেকে, কিছু অনলাইনে, আবার কিছু পণ্য পাইকারি বাজার থেকে কেনেন আবুল কালাম আজাদ। সারা বছরের সব কেনাকাটার মতোই এ সময়ে কেনাকাটায় তিনি ভরসা রাখেন বিকাশ পেমেন্টে। আজাদ জানান, ক্যাশ টাকা বহনের ঝুঁকি নিতে চান না, বিশেষ করে ঈদের কেনাকাটার ভিড়ের সময়টায়। তাছাড়া কাজের ফাঁকে সময় সুযোগ মতো কেনাকাটা সারেন। ফলে সব মুহূর্তের জন্য তার কাছে সবচেয়ে সহজ হয় বিকাশ পেমেন্ট।
যে কোনো ধরনের কেনাকাটায় নাজনীন সুলতানার ভরসা অনলাইনে কেনাকাটা। নাজনীন বলেন, ‘বিকাশ পেমেন্টের কারণে আমি সহজেই অনলাইন কেনাকাটা করে ফেলতে পারি, আমার সময় তো বাঁচেই, পাশাপাশি কোন খাতে কত খরচ করলাম তার হিসাব রাখাও সহজ হয়।’
একটি এনজিওতে চাকরির সূত্রে বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলায় পরিবার নিয়ে বাস করেন আফসানা পারভীন। চাকরির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে গড়ে তোলা নিজের ফেসবুকভিত্তিক পোশাক বিক্রির পেজটাও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারায় তিনি গ্রামে বসেই সারাদেশের গ্রাহকের কাছে স্বাচ্ছন্দ্যে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। আফসানা জানান, বিকাশ পেমেন্টের কল্যাণে তার ব্যবসা বিস্তার করা সম্ভব হয়েছে।
প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে এভাবে দেশের আনাচে-কানাচে বিকাশ পেমেন্টের এমন হাজারো গল্প তৈরি হয়। উদ্যোক্তা এবং গ্রাহকের লেনদেন সহজ, তাৎক্ষণিক, নিরাপদ হয় বিকাশ পেমেন্টে। গলির ছোট মুদি দোকান হোক বা সুপরিচিত ব্র্যান্ডশপ– দেশজুড়ে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ মার্চেন্টে বিকাশ কিউআরের মাধ্যমে পেমেন্ট করার সুযোগ ডিজিটাল পেমেন্টকে সবার কাছেই সহজলভ্য করে তুলেছে। কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে দ্রুত ও নিরাপদে পেমেন্টের সুবিধা গ্রাহককে ডিজিটাল পেমেন্টে অভ্যস্ত করতে ভূমিকা রাখছে।
বর্তমানে বিকাশ অ্যাপ থেকে ৪৫টি ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট এবং ৪৯টি ব্যাংকের ভিসা, অ্যামেক্স বা মাস্টারকার্ড থেকে অ্যাড মানি করার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি দেশব্যাপী প্রায় সাড়ে ৩ লাখ এজেন্ট পয়েন্ট থেকে ক্যাশ ইন-এর সুযোগ তো আছেই। যখনই প্রয়োজন তখনই বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা এনে পেমেন্ট করার সুবিধা দেশে ডিজিটাল লেনদেনের ইকোসিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখছে।
এদিকে জরুরি প্রয়োজনে কেনাকাটাকে আরও সহজ করতে দেশে প্রথমবারের মতো যৌথভাবে ‘পে-লেটার’ নামের বিশেষ জামানতবিহীন ঋণ সেবা চালু করেছে বিকাশ ও সিটি ব্যাংক। এ সেবার মাধ্যমে বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকলেও গ্রাহক প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে বিকাশ অ্যাপ থেকেই তাৎক্ষণিক সিটি ব্যাংকের এই বিশেষ ঋণ নিয়ে মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। সাত দিনের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করা যায় কোনো ‘ইন্টারেস্ট’ ছাড়াই। আবার গ্রাহক চাইলে ৩ বা ৬ মাসের কিস্তিতেও পরিশোধ করতে পারছেন ঋণ। বিকাশ অ্যাপে পে-লেটারের জন্য বিবেচ্য গ্রাহক ৫০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ সীমা পেতে পারেন। অ্যাপের ‘পেমেন্ট’ অথবা ‘লোন’ অপশন থেকে পে-লেটার ফিচার ব্যবহার করতে পারছেন গ্রাহকরা।
বিকাশের ইভিপি ও হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘দৈনন্দিন ব্যস্ততায় মূল্যবান সময় বাঁচাতে গ্রাহকরা ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। এই আচরণগত পরিবর্তনের মূলে রয়েছে ডিজিটাল লেনদেনের প্রতি মানুষের আস্থা ও নির্ভরতা। গ্রাহকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিকাশও তাই উৎসব-পার্বণের সময় সুপারস্টোর, ব্র্যান্ডশপ, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থানে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্টসহ নানা অফার দিয়ে থাকে। পাশাপাশি ডিজিটাল পেমেন্টের প্রকৃত সুবিধা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে বিকাশ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইউটিলিটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, টেলিকম অপারেটর, সরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিওসহ নানা ধরনের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে দেশে একটি ডিজিটাল লেনদেনের ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’
এই ঈদুল আজহায় বিকাশ পেমেন্টে কেনাকাটার সব ডিসকাউন্ট ও পেমেন্ট অফারগুলো দেখে নেওয়া যাবে এই লিংকে– https://www.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সম দ ধ ড জ ট ল ল নদ ন র জন য গ র হক কর র স ক উন ট
এছাড়াও পড়ুন:
১১ বছর পেরিয়ে গেলেও দগদগে ব্রাজিলের সেই ক্ষত
হেক্সা জয়ের বড় স্বপ্ন নিয়ে ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল ব্রাজিল। তবে সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে স্বাগতিকরা আটকে যায় সেমিতেই। সেবার বেলো হরিজেন্তের মিনেইরো স্টেডিয়াম সেমিফাইনালে জার্মানি গুণে গুণে ৭ বার বল ঢুকিয়েছিল ব্রাজিলের জালে। যা ফুটবল সমর্থকদের কাছে ‘সেভেন আপ’ নামে পরিচিত। ৮ জুলাই ২০১৪, এই তারিখটা দগদগে ক্ষত হয়ে থাকবে ব্রাজিলের ফুটবলে। সেই ম্যাচের ১১ বছর পূর্তি হল আজ। প্রতি বছর এ দিনটা এলেই দগদগে হয়ে ভেসে ওঠে ভয়াবহ সে স্মৃতি। ৭ শব্দটাই একটা ট্রমাতে পরিণত হয় ব্রাজিলের জন্য।
সেদিনের সেই ম্যাচের আগে ব্রাজিলের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডির নাম ছিল মারাকানাজো। ১৯৫০ সালের সেই বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে শুধু ড্র হলেই চলত ব্রাজিলের। এমন উপলক্ষ্যে দুই লাখ দর্শক হাজির হয়েছিলেন মাঠে। কিন্তু উৎসবের সেই ম্যাচ বিষাদে পরিণত হয় উরুগুয়ের বিপক্ষে ব্রাজিলের ২-১ গোলের হারে। লাখো জনতার স্রোতে থেমে যায় সাম্বার উৎসব। ওই ট্রাজেডির ৬৪ বছর পর মিনেইরো স্টেডিয়ামের সেই বিপর্যয়ের পর থেকেই তুলনা চলে, মারাকানাজো নাকি মিনেইরাজো- বিপর্যয়ের মাত্রা বেশি কোনটিতে।
বিশ্ব ফুটবলে সবচেয়ে সফল দল ব্রাজিল, কিন্তু ব্রাজিলিয়ানরাও জানেন এই ইতিহাস আর পাল্টানো যাবে না। যতবার বিশ্বকাপ দরজায় কড়া নাড়বে ততোবার ঘুরে ফিরে আসবে ওই গল্প। সেই দিনের হারার যন্ত্রণাময় মুহূর্ত নিশ্চয়ই এখনও বেশ মনে লেগে আছে বহু সেলেসাও সমর্থকের হৃদয়ে। মিনেইরাজোর সেই ট্রমা ব্রাজিলের প্রাণভোমরা নেইমারও ভুলতে পারেননি।
২০২২ কাতার বিশ্বকাপের আগে এক সাক্ষাৎকারে নেইমার জানিয়েছিলেন, ‘আমি বলবো না সেটা (ঘরের মাঠে জার্মানির বিপক্ষে ৭-১ গোলে হার) আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে মুহুর্ত। তবে এটি অবশ্যই সবচেয়ে কঠিন মুহুর্তগুলির মধ্যে একটি ছিল। আমার প্রথম বিশ্বকাপ, আমার নিজের দেশে, তাই আমি খুব জিততে চেয়েছিলাম।’
ব্রাজিলের সে সময়ের তারকা স্ট্রাইকার ফ্রেডের বাড়ি ছিল হরিজেন্তেই। জার্মানির কাছে ওমন বিধ্বস্ত হওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, ‘ম্যাচ শেষ হওয়ার পর আমি একটা গর্তে লুকিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। যেখান থেকে আর কখনোই ফিরে আসতে হবে না।’
সে ট্রাজেডির অনেক পরে সংবাদমাধ্যমে এই নিয়ে কথা বলেছেন ব্রাজিলের গোলরক্ষক হুলিও সিজার। যাকে ফাঁকি দিয়েই জার্মানরা একে একে সাতবার বল জড়িয়েছিল জালে। সিজার বলেছিলেন, ‘এখনো যখন আমি শুয়ে থাকি, ম্যাচটি নিয়ে চিন্তা করি। আমি কল্পনা করি সেই দিনটির কথা, বহু বছর পর যেদিন সংবাদমাধ্যমে ঘোষণা হবে- হুলিও সিজার, ৭ গোল খাওয়া গোলরক্ষক মারা গেছেন।’
সেলেসাওদের তখনকার কোচ ছিলেন ব্রাজিলের ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক লুইস ফিলিপ স্কলারি। তিনি বলেছিলেন, ‘এটা আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। আমি সম্পূর্ণ দায় নিচ্ছি।’ ম্যাচ শেষে কাঁদতে কাঁদতে জাতির উদ্দেশে ক্ষমাও চেয়েছিলেন অধিনায়ক ডেভিড লুইজ।
ব্রাজিলিয়ান দৈনিক গ্লোবো ম্যাচটার স্মৃতি নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিল তখনকার জার্মান কোচ জোয়াকিম লো। তাদের দেওয়া সাক্ষাৎকারে এখনও ম্যাচের স্মৃতি তরতাজা জোয়াকিমের, ‘ঘরের মাঠে সেমিফাইনাল খেলাটা সবসময় চাপের। ব্রাজিলও সেই চাপে ছিল। আমি সেই বিশ্বকাপের কথা প্রতিদিনই স্মরণ করি, কারণ এটা বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিল। ব্রাজিলের মতো ঐতিহ্যবাহী দেশে বিশ্বকাপ জেতাটা বিশেষ কিছু।’
মারাকানায় ব্রাজিলকে ৭-১ গোলে হারানো নিয়ে জোয়াকিম বলেন, ‘ব্রাজিলের জাতীয় সঙ্গীত বাজার পর থেকে দর্শকরা আবেগী হয়ে পড়েছিল। প্রথম কয়েক মিনিট ব্রাজিলই ভালো খেলেছে। কিন্তু প্রথম ১০ মিনিটে গোল পেয়ে গেলাম আমরা (১১ মিনিটে করেছিলেন মুলার)। এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।’
সেই ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেন জার্মানির ক্লোসা, মুলার, ক্রুস এবং ওজিল। সবাই মিলে গোল উৎসবে মেতে উঠেছিলেন। জার্মানির সেই বিজয়ী দলের খেলোয়াড় ম্যাটস হামেলস পরে জানিয়েছিলেন, তারা ইচ্ছা করেই বিরতির পর আর কোনো জাদুকরি খেলা খেলতে চাননি। তারা শুধু চেয়েছিলেন ম্যাচটি শেষ করতে। ম্যাটস হামেলস বলেন, আমরা শুধু চেয়েছি খেলায় মনোযোগী থাকতে। খেলার মধ্যে সেলেসাওদের কোনোভাবেই অপমান করতে চাইনি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, খেলার মধ্যে সিরিয়াস থাকতে হবে। তবে ব্রাজিলকে অপমান করা হয়, এমন কিছু থেকে বিরত থাকব। খেলার মধ্যে জয়-পরাজয় থাকবেই। তবে প্রতিপক্ষকে সম্মান দেখাতে হবে। আমরা সে কাজ করেছি। দ্বিতীয়ার্ধের পর আমরা কোনো জাদুকরি খেলা দেখাইনি।
যদিও পরবর্তীতে ম্যাটস হামেলসের এমন কথা উড়িয়ে দিয়েছেন জার্মান কোচ জোয়াকিম। তার কথায়, ‘এটা বাজে কথা। বরং আমি মনে করিয়ে দিয়েছিলাম বাছাইপর্বে সুইডেনের কাছে শুরুতে ৪ গোল দিয়ে শেষ ৩০ মিনিট ৪ গোল হজম করার কথা। ফুটবলে যে কোনও কিছু ঘটতে পারে। তবে খারাপ লাগছিল ব্রাজিলের জন্য। কারণ এর আগে ঘরের মাঠে ২০০৬ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে এভাবে বাদ পড়ার বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমাদেরও। নিজেদের দলের জন্য গর্ব হলেও ব্রাজিলের জন্য খারাপ লাগছিল আমার।’
সেই হারের ১১ বছর পরও বড় কোনো শিরোপা জিততে পারেনি ব্রাজিল। গত কোপা আমেরিকায়ও সেলেসাওরা ছিল পরিষ্কার ফেভারিট। তবু কোয়ার্টারেই থামতে হয়েছে তাদের। উরুগুয়ের বিপক্ষে নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য ড্র করার পর টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হেরে আসর থেকেই বিদায় নেয় দরিভাল জুনিয়রের দল।