রাজস্ব আদায়, আমদানি ও রপ্তানিতে স্থবিরতা
Published: 26th, May 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি আলাদা বিভাগ প্রতিষ্ঠার অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। গত ১২ দিনের আন্দোলনে রাজস্ব সংগ্রহ কার্যক্রম কার্যত বন্ধ ছিল। প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম এবং স্থলবন্দরগুলোতে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা গেছে।
এদিকে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসের পর এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ আন্দোলন স্থগিত করেছে। আজ থেকে সব কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আন্দোলনের কারণে গত কয়েকদিনে কত টাকা রাজস্ব আদায় কমেছে– এমন প্রশ্নে গতকাল এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা বলেন, বছরের মে এবং জুন মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়। এ সময় সাধারণত দৈনিক দেড় থেকে ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। সেই হিসাবে গত ১২ দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায় কম হতে পারে।
মতামত জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান সমকালকে বলেন, এনবিআর সংকট অর্থনীতির ওপর ইতোমধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অর্থনৈতিক কার্যক্রমে আরও বিঘ্ন ঘটুক–তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। এনবিআর কর্মকর্তারা কর্মসূচি স্থগিত করেছেন এবং আলোচনায় অংশ নেওয়ার ও সংস্কারকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। একটি টেকসই সংস্কার একটি পেশাদার ও ন্যায়সংগত কর ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে।
সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গতকাল দিনভর ছিল অচলাবস্থা।
আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ছিল স্ববিরতা। কাস্টমস কর্মকর্তারা অফিসে থাকলেও করেননি শুল্কায়নের কাজ। ৫টার পরে সীমিত পরিসরে শুল্কায়নের কিছু কাজ করেছেন তারা।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে স্বাভাবিক সময়ে যে পরিমাণ পণ্য খালাস হয়, তার অর্ধেকও গতকাল হয়নি। বন্দরে তৈরি হয়েছে কনটেইনার জট। গতকাল পর্যন্ত বন্দরে জমেছিল ৪২ হাজার কনটেইনার। পণ্য খালাস করার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় কনটেইনার বোঝাই আরও ১৮টি জাহাজ ভাসছে বন্দর সীমানায়। ঈদের আগে এমন অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা।
ইন্টারন্যাশানাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, ‘ঈদের আগে এমন কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত করছে আমাদের। কারখানার কাঁচামাল নিতে পারছি না সময় মতো। এ জন্য ব্যাহত হবে উৎপাদন। আর উৎপাদন ব্যাহত হলে সময়মতো পণ্য রপ্তানি করতে পারব না। অথচ আমাদের মাথার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্ক হার হুমকি হয়ে আছে এখনও।’
বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, শুল্কায়ন, পরীক্ষণসহ আমদানি কার্যক্রম না হলে বন্দর থেকে কনটেইনার খালাস করা যায় না। কনটেইনার খালাস না হলে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানোর কার্যক্রমেও ধীরগতি দেখা দেয়।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের মোট আমদানি-রপ্তানির ৯৫ শতাংশ পণ্যের শুল্কায়ন হয়। শুল্কায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। কনটেইনার খালাসে ধীরগতির ফলে তৈরি পোশাক, ওষুধ খাতসহ আমদানিনির্ভর শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমদানি পণ্য খালাস কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় শিল্পের অনেক কাঁচামাল আটকে আছে। রোববার সারাদিন অপেক্ষা করেও তারা পণ্যের শুল্কায়ন করতে পারেননি। ৫টার পর সীমিত পরিসরে কিছু পণ্যের শুল্কায়ন হলেও তা ছিল নগণ্য।
স্থলবন্দরের পরিস্থিতি
দেশব্যাপী কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিতে সকাল থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দরে অচলাবস্থা দেখা দেয়। শুল্কায়ন ও পরীক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ভোগান্তির মধ্যে পড়েন আমদানি ও রপ্তানিকারকরা। এ দিন সকাল থেকে দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলে আমদানি-রপ্তানি চালু থাকলেও পণ্য শুল্কায়ন ও পরীক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বিকেল ৫টার পর শুল্কায়ন ও পরীক্ষণ কার্যক্রমের কিছু কাজ হলেও তা সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট ছিল না। এর মধ্যেই সোমবার থেকে কাস্টমস কর্মকর্তারা পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়ায় ভারতে রপ্তানির জন্য পণ্য লোড বন্ধ করে দেয় অনেক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, পেট্রাপোল বন্দরের সেন্ট্রাল পার্কিংয়ে পণ্যবোঝাই ৫৫০টি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। অনেক রপ্তানিকারক পণ্য লোড বন্ধ রেখেছে। এভাবে চলতে থাকলে বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিবেশ নষ্ট হবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমসবিষয়ক সম্পাদক শহিদুল আলম বলেন, বিকেল ৫টার পর কিছু কাজ হচ্ছে। তবে ফাইলের স্তূপ জমে গেছে।
শুল্ক ছাড়পত্র না পাওয়ায় তামাবিল বন্দরের ওপারে ভারতের ডাউকি এলাকায় ৪-৫শ পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। পাথর ও চুনাপাথর বহনকারী এসব ট্রাক আটকা পাড়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন আমদানিকারকরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরেও এ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। স্থলবন্দরের শূন্যরেখায় ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক কাস্টমস ছাড়পত্র না পাওয়ায় আটকা পড়ে। তবে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ১৫০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের শুল্কায়ন সম্পূর্ণ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
হিলি স্থলবন্দরেও সকাল থেকে শুল্কায়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক জানান, কাস্টমস কর্মকর্তারা কর্মবিরতি পালন করায় বন্দরে পণ্যবাহী শতাধিক ট্রাক খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে করে আমদানিকৃত পণ্যের জন্য অতিরিক্ত বন্দর ভাড়া ও গাড়ি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। পচনশীল পণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই অবস্থা লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে। কাস্টমস জানায়, রোববার বুড়িমারী স্থলবন্দরে ভারত থেকে আদা ও পাথরবাহী ৩৭টি পণ্যবাহী গাড়ি বাংলাদেশে এসেছে। এসব গাড়ির শুল্কায়ন ও পরীক্ষণ হয়নি।
এদিকে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি মোংলা বন্দরে পালিত হলেও জেটিতে কনটেইনারসহ অন্য কোনো জাহাজ না থাকায় এর কোনো প্রভাব পড়েনি। বন্দরের নৌ চ্যানেলে রোববার ৮টি জাহাজের অবস্থান ছিল। এসব জাহাজে যথারীতি স্বাভাবিকভাবে পণ্য ওঠানামা করেছে। তবে জেটিতে কোনো জাহাজ না থাকায় অপারেশন কাজ বন্ধ ছিল।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন চট্টগ্রাম ব্যুরো এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা)
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনব আর কর মকর ত র বন ধ ছ ল আমদ ন ক কর ছ ন র জন য গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া’
ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীনন্দা শঙ্কর। সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’, সুমন ঘোষের ‘বসুপরিবার’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই তারকা। বলা যায়, টলিউডের প্রথম সারির সব নির্মাতার সঙ্গেই কাজ করেছেন এই নৃত্যশিল্পী।
গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন শ্রীনন্দা। সেখানে সংসার, কাজ নিয়ে সময় কাটছে তার। তবে অভিনয়ে নেই। অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ কী? ফের কী অভিনয়ে ফিরবেন না শ্রীনন্দা?
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে আলাপকালে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রীনন্দা। এ অভিনেত্রী বলেন, “টলিউডে যাদের সঙ্গেই কাজ করেছি, তাদের সঙ্গে এখনো আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতাও বলা চলে। মুশকিল হলো, বাংলা সিনেমায় তেমন বাজেট থাকে না। সত্যিই যদি খুব ভালো সিনেমা হয় বা এমন কোনো পরিচালক আমাকে অফার দেন যেখানে কোনো ভাবেই ‘না’ করব না। আমি নিশ্চয়ই আবার অভিনয়ে ফিরব।”
আরো পড়ুন:
কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
পরিচালকের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন শোলাঙ্কি
কিছু কিছু লোকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গিয়েছেন শ্রীনন্দা। কারণ, তাদের সঙ্গে মানসিকভাবে মেলেনি। তার ভাষায়—“মুম্বাই, কলকাতা বা সাউথ ইন্ডাস্ট্রি যেখানেই হোক না কেন, আমি ভালো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কেউ এমন চরিত্রে সুযোগ দেন, যেখানে প্রয়োজনে টাকাটা ভুলে গিয়ে শুধু পরিচালকের নাম দেখেই কাজটা করব।”
কিছুটা ইঙ্গিপূর্ণভাবে শ্রীনন্দা বলেন, “কাজের পাশাপাশি আমার সংসারও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই পেতে হবে, যার জন্য সংসারটা ইগনোর করার কথা ভাবব। অর্থাৎ মনে হবে সংসার ফেলে এই সিনেমাটা আমাকে করতেই হবে। এই বয়েসে একটু কফি খেতে যাবেন? কাজ দেবেন? এগুলো করতে পারব না। সবাই তো চেনেই আমাকে। কাজ দিতে হলে দেবেন।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব শ্রীনন্দা। অনেকে ভেবেছিলেন, এ মাধ্যমে কাজ করে টাকা আয় করে থাকেন। তাদের উদ্দেশে শ্রীনন্দা বলেন, “অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা এটাও আমার পেশা। এখান থেকে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। আমি নিজেও আগে বিষয়টা জানতাম না। পোস্ট করতে করতে বুঝেছি। আমি এখন মুম্বাইয়ে মায়ের সঙ্গে পুরোদমে নাচের স্কুল চালাচ্ছি। এখন মোট ছয়টা ব্রাঞ্চ এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। সব মিলিয়ে ভালো আছি।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলের শিকার হন শ্রীনন্দা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বলেছিলেন, ‘রিল মামনি’। আমি আর মা এটা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। মাঝেমধ্যে এসব বেশ মজাও লাগে। তবে যে পরিমাণ ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটা খুব মন থেকেই ভক্তরা দিচ্ছেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ।”
ঢাকা/শান্ত