বিহারে নির্বাচনের আগে বড় ছেলেকে ত্যাজ্য করলেন লালু প্রসাদ, কারণ কী
Published: 26th, May 2025 GMT
বিধানসভার ভোটের আগে বড় অশান্তি দেখা দিল ভারতের বিহার রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও আরজেডির সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদবের পরিবারে। জ্যেষ্ঠ ছেলে তেজপ্রতাপ যাদবকে ত্যাজ্য করলেন লালু। শুধু পরিবার থেকেই নয়, দল থেকেও আগামী ছয় বছরের জন্য নির্বাসিত হলেন তেজপ্রতাপ। চলতি বছরের শেষ দিকে বিহার রাজ্যের বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।
গতকাল রোববার ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে এক বার্তায় তেজপ্রতাপকে ত্যাজ্য করার কথা জানালেন লালু প্রসাদ। তিনি লেখেন, আগামী ছয় বছর দলের সঙ্গেও তেজপ্রতাপের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। লালুর বার্তা অনুযায়ী, তেজপ্রতাপের আচরণ পারিবারিক মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
কোন আচরণের জন্য জ্যেষ্ঠপুত্রের প্রতি লাল প্রসাদ এত নির্দয় হলেন, ‘এক্স’ বার্তায় তিনি অবশ্য তা ব্যাখ্যা করেননি। তবে সেই কারণ চাপাও থাকেনি। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কই যে সেই কারণ, গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে দিনভর চলে সেই চর্চা।
বিহারের আরেক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দারোগা রাইয়ের নাতনি ঐশ্চর্যের সঙ্গে ২০১৮ সালে বিয়ে হয়েছিল তেজপ্রতাপের। কিন্তু সেই বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। অভিযোগ, বিয়ের পরও তেজপ্রতাপ নাকি তাঁর পুরোনো প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিলেন। সেই প্রেমিকার সঙ্গে নিজের ছবি দিন কয়েক আগে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করে তেজপ্রতাপ লিখেছিলেন, ‘ওই নারী, অনুষ্কা যাদব, তাঁর প্রেমিকা। দীর্ঘ ১২ বছর তাঁদের সম্পর্ক। সেটাই নাকি লালুর ক্ষোভ ও ক্রোধের কারণ। তাই এই সিদ্ধান্ত।’
তেজপ্রতাপ যদিও দাবি করেছেন, তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ করা হয়েছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ছবিসহ সেই পোস্ট তিনি মুছেও দেন। বলেন, তিনি ও তাঁর পরিবারকে হেনস্তা ও পারিবারিক ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ওই চক্রান্ত। কিন্তু তাতে বিপর্যয় ঠেকানো যায়নি।
বিপর্যয়ের জন্য তেজপ্রতাপ নিজেই অবশ্য দায়ী। ২০১৮ সালে বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তাঁর সঙ্গে স্ত্রী ঐশ্বর্যের অশান্তি ও ঝগড়ার শুরু। মাস কয়েকের মধ্যেই ঐশ্বর্য বাপের বাড়ি চলে যান। তাঁর প্রতি লালু পরিবারের অভব্য ব্যবহারের অভিযোগও এনেছিলেন। যার দরুন দুই পরিবারের মধ্যে অশান্তি দেখা দিয়েছিল।
ঐশ্চর্যের বাবা চন্দ্রিকা রাই ছিলেন আরজেডির নেতা। লালু পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় তিনি আরজেডি ছেড়ে দেন। সেই থেকে তেজপ্রতাপ ও ঐশ্বর্যের বিচ্ছেদের মামলা আদালতে বিচারাধীন। দুই পরিবার একে অন্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও এনেছে। ঐশ্বর্যের অভিযোগ, তেজপ্রতাপ মাদকাসক্ত। তেজপ্রতাপের অভিযোগ, ঐশ্বর্য লোভী। তাঁর স্ত্রী নাকি খোরপোশের জন্য বিরাট টাকা দাবি করেছেন।
তেজপ্রতাপকে নিয়ে লালু প্রসাদের পরিবারে অশান্তি অবশ্য এই প্রথম নয়। বারবার নানা কারণে তেজপ্রতাপ বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। দলীয় অনুশাসন মানতে চাননি। একবার উপমুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিও জানিয়ে বসেছিলেন। সেই কারণে ছোট ভাই তেজস্বীর প্রকাশ্য বিরোধিতাও করেছিলেন।
২০১৫ থেকে ২০১৭ ও তারপর ২০২২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত নীতীশ কুমারের মন্ত্রিসভায় পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালেও তেজপ্রতাপ বিতর্ক ডেকে এনেছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকার লালু প্রসাদের নিরাপত্তা কমিয়ে দেওয়ায় তেজপ্রতাপ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হুমকি দিয়েছিলেন।
লালু প্রসাদের সঙ্গে ছেলে তেজপ্রতাপ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস দ র জন য পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর হেনস্তাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দিন (৪৫) ওই বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাসে এক তরুণী তাঁর পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করছেন। বাসে ওঠার পর সামনের আসনে বসা ওই ব্যক্তি তাঁর পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণী প্রতিবাদ জানাতে সামনে এগিয়ে যান এবং প্রশ্ন করেন, ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনার সমস্যা কী?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ওই ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে তরুণীকে চড় মারেন। মুহূর্তেই তরুণী জুতা খুলে পাল্টা আঘাত করেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনই বাসের সামনের দিকে পড়ে যান। তরুণী নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ করেন।
ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই তরুণীর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ঘটনাটিতে উভয় পক্ষের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
নাজিম উদ্দিনকে আটক করার সঙ্গে যুক্ত র্যাব-৪–এর মেজর আবরার ফয়সাল সাদী প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীকে কটূক্তি ও হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর হেনস্তকারী ব্যক্তিকে আটক করতে র্যাব-৪–এর একটি দল অভিযান শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যায় নাজিম উদ্দিনকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। পরে তাঁকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক প্রথম আলোকে বলেন, হেনস্তার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে আজ শুক্রবার সকালে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাজিম উদ্দিন ধানমন্ডি ১৫ থকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় চলাচলরত রমজান পরিবহনের কন্ডাক্টর। ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জের ধরে তাঁদের দুজনের মধ্যে মারামারি হয়। ছাত্রীটি মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।
আজ সন্ধ্যায় পাঠানো র্যাব-৪–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রমজান পরিবহনের একটি বাস ধানমন্ডি ১৫ থেকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় যাচ্ছিল। বাসটি বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ের সামনে পৌঁছালে চালকের সহকারী মো. নিজাম উদ্দিন বাসটির যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর দিকে তাকিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় নাজিম উদ্দিন তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তাঁকে চড় মারেন। একপর্যায়ে তরুণীও আত্মরক্ষার্থে নিজের পায়ের জুতা খুলে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে আঘাত করেন।