ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার নারীদের একটি মারাত্মক রোগ। বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে এটি নারীদের ক্যানসারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ না থাকায় ডিম্বাশয়ের ক্যানসারকে বলা হয় সাইলেন্ট কিলার বা নীরব ঘাতক।

কেন হয়

ডিম্বাশয় হচ্ছে নারীর প্রজনন অঙ্গের একটি অংশ, যা ডিম্বাণু উৎপন্ন করে। এ অঙ্গে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির ফলে ক্যানসার হয়। সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের ঝুঁকি বেশি। তবে এর চেয়ে কম বয়সেও হতে পারে।

এর পেছনে যেসব কারণ রয়েছে:

● পারিবারিক ইতিহাস অর্থাৎ পরিবারের কারও ক্যানসার থাকা (বিশেষ করে ব্রেস্ট বা ওভারিয়ান ক্যানসার)।

● বংশগত জেনেটিক মিউটেশন (যেমন বিআরসিএ১ ও বিআরসিএ১ জিন)।

● বয়স, বন্ধ্যত্ব বা দীর্ঘ মেয়াদে হরমোন থেরাপি।

● অতিরিক্ত ওজন।

লক্ষণ ও উপসর্গ

ওভারিয়ান ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ সাধারণত অস্পষ্ট থাকে এবং সহজেই উপেক্ষিত হয়। ফলে প্রায়ই রোগটি দেরিতে ধরা পড়ে। তবে নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দিলে গুরুত্ব দেওয়া উচিত:

● পেট ফোলা বা অস্বস্তি।

● ক্ষুধামান্দ্য বা দ্রুত পেট ভরে যাওয়া।

● তলপেটে ব্যথা।

● প্রস্রাবের তীব্রতা বা ঘন ঘন প্রস্রাব।

● অজানা কারণে ওজন হ্রাস।

● মাসিক চক্রে অস্বাভাবিকতা।

চিকিৎসা

ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের চিকিৎসানির্ভর করে এর স্তর (স্টেজ), ক্যানসারের ধরন ও রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। সাধারণত সার্জারি (ডিম্বাশয় ও আশপাশের টিস্যু অপসারণ), কেমোথেরাপি ও প্রয়োজনে টার্গেটেড থেরাপি ব্যবহৃত হয়।

সচেতনতা ও প্রতিরোধ

ওভারিয়ান ক্যানসার প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা। যাঁদের ঝুঁকি বেশি, তাঁদের উচিত নিয়মিত স্ত্রী ও প্রসূতিরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, নিয়ন্ত্রিত ওজন ও সন্তান ধারণ ক্যানসারের ঝুঁকি কিছুটা কমাতে সাহায্য করে।

স্বাস্থ্যসচেতন নারীদের উচিত নিজেদের প্রতি যত্নশীল হওয়া ও প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে অবহেলা না করা।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) ডা. কুদরত-ই-ইলাহী, অধ্যাপক ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট, মেডিসিন ও মেডিকেল অনকোলজি, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা

আগামীকাল পড়ুন: হাত-পা ঝিন ঝিন করে কেন 

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর

সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।

একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।

তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।

রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।

সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।

তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’

এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান

সম্পর্কিত নিবন্ধ