ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, বাংলাদেশে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস) পেতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ে ৭ থেকে ১৫ গুণ বেশি খরচ হয়। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায়ও বাংলাদেশে এমএফএস সেবার খরচ বেশি। ‘মোবাইল আর্থিক সেবা খাতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক টিআইবির এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।  
টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নগদ উত্তোলনে এমএফএসে খরচ প্রতি ২৫ হাজার টাকায় ২০০ থেকে ৪৬২ টাকা। যেখানে ব্যাংকের খরচ সর্বোচ্চ ২৯ টাকা। ‘সেন্ড মানি’ করতে এমএফএসে ২৫ হাজার টাকায় সর্বােচ্চ খরচ ১৫০ টাকা। অথচ ব্যাংকে কোনো খরচ নেই। ২০২৪ সালে সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা ‘ক্যাশ আউট’-এর ক্ষেত্রে গ্রাহকদের থেকে কমপক্ষে ৪ হাজার ৪১০ কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। যেখানে সমপরিমাণ নগদ উত্তোলনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আয় করেছে মাত্র ৬৩৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশে এমএফএসে খরচের হার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তুলনায় অস্বাভাবিক। 
প্রতিবেদনে এমএফএস মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা ও অর্থ পাচার হয় বলে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এমএফএস ব্যবহার করে জালিয়াতি, প্রতারণা, ঘুষের অর্থ লেনদেন, অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেন ও পাচারের উদ্বেগজনক চিত্র গবেষণায় উঠে এসেছে। অনলাইন জুয়ায় প্রায় ১ হাজার ১০০ এমএফএস এজেন্ট শনাক্ত করা হয়েছে। শুধু ২০২২ সালেই প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে এমএফএস ব্যবহার করে। 
তিনি উল্লেখ করেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক রেমিট্যান্সের রেকর্ড বেড়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো, এমএফএস ব্যবহার করে অবৈধ হুন্ডি লেনদেন নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে (বিকাশ) ২৫ হাজার টাকা নগদ উত্তোলনে ৩৭২ টাকা ৫০ থেকে ৪৬২ টাকা ৫০ পয়সা আদায় করা হয়। যেখানে সমপরিমাণ টাকা উত্তোলনে পাকিস্তানে (ইজি প্যায়সা) ৩৫৫ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিয়ানমারে (ওয়েভ পে) ২৩১ টাকা ৩০ পয়সা সেবামূল্য হিসেবে আদায় করা হয়। ভারতে (ফোন পে) এ ধরনের সেবায় কোনো সেবামূল্য আদায় করা হয় না।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, এমএফএস খাত করায়ত্ত করার জন্য রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে ‘নগদ’-কে বিশেষ অনৈতিক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। জনগণকে আর্থিকভাবে শোষণ, রাষ্ট্রের অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি ঘুষ লেনদেন ও অর্থ পাচারের জন্যও এ খাতকে ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ‘নগদ’-এর পরিচালনাকারী চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান থার্ড ওয়েভ নিয়ম লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত প্রায় ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি তৈরি করেছে। প্রভাব বিস্তার করে সুরক্ষা ভাতা ও উপবৃত্তির অর্থ বিতরণের সুবিধা গ্রহণ, আন্তঃলেনদেন প্ল্যাটফর্ম (বিনিময়) সম্পর্কিত অনিয়ম-দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার ও অবৈধ বৈদেশিক লেনদেনের মতো ঘটনা পাওয়া গেছে। তথ্য বলছে, ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা নগদের শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। 

মোবাইল আর্থিক সেবা খাতে বিদ্যমান সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণে ১৩ দফা সুপারিশ প্রস্তাব করেছে টিআইবি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এমএফএস খাতের জন্য স্বতন্ত্র আইন প্রণয়ন, লেনদেন খরচ কমানো এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা সহজ ও সাশ্রয়ী করা, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার আলোকে এ পরিচালন ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো নিশ্চিত করা, এজেন্ট ও পরিবেশকদের কমিশনের সীমা নির্ধারণ, তদারকি নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ ফেলো মোহাম্মদ নূরে আলম এবং রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট কাজী আমিনুল হাসান।  

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ট আইব র র অর থ আর থ ক ল নদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার শনাক্ত

চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে নয় ব্যক্তি শহীদ হন। এ ঘটনা নিয়ে ছড়ানো বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার শনাক্ত করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেদের (পিআইবি) ফ্যাক্টচেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম ‘বাংলাফ্যাক্ট’।

বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান টিম জানিয়েছে, ২০২৪ এর গণজুলাই অভ্যুত্থানের সময় শহীদ ৯ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা হত্যা করেছে-এমন একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই দাবি বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন। ঘটনায় জামায়াতের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়া একটি কোলাজ ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বাংলাফ্যাক্ট জানায়, ছবিটির হুবহু মিল রয়েছে ২০২৪ সালের ১৩ অক্টোবর প্রকাশিত দৈনিক সমকালের এক প্রতিবেদনে ব্যবহার করা ছবির সঙ্গে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় ৯ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী শহীদ হন। তারা হলেন-রিয়া গোপ, দীপ্ত দে, হৃদয় চন্দ্র তরুয়া, রিপন চন্দ্র শীল, রথিন বিশ্বাস, রুদ্র সেন, শুভ শীল, তনয় চন্দ্র দাস ও সৈকত চন্দ্র দে।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে

ভারতে যুবককে কুপিয়ে রক্তাক্ত করার ভিডিও বাংলাদেশের বলে অপপ্রচার: বাংলাফ্যাক্ট

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, দুর্গাপূজার সময় শহীদদের পরিবার তাদের প্রিয়জনদের অনুপস্থিতি গভীরভাবে অনুভব করেন।

তাছাড়া, অন্যান্য গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো বিশ্বস্ত সূত্রেও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হিন্দুদের হত্যার ঘটনায় জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

বাংলাফ্যাক্ট দেশে চলমান গুজব, ভুয়া খবর ও অপতথ্য রোধে কাজ করছে এবং যাচাই করা নির্ভরযোগ্য তথ্য জনগণের কাছে তুলে ধরছে।

সূত্র: বাসস

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইয়ামালের জন্মদিন: ১৮ বছরে ১৮ জাদুকরি মুহূর্ত
  • ফেনীর বন্যা: এক বছর সরকার কী করেছে?
  • অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করলেন স্ত্রী
  • আগামী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিশ্চিত হলো কোন কোন দেশের
  • প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, কাজই শুরু হয়নি
  • পোশাকে গড়ে ২১% শুল্ক আদায়
  • কাউকে আর ‘ফ্যাসিস্টের’ ভূমিকায় ফিরতে দেওয়া হবে না
  • সহিংসতায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার শনাক্ত
  • শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক