মোবাইল ব্যাংকিং অর্থপাচার, ঘুষ, অনলাইন জুয়া, সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন ও ক্রিপ্টো ট্রেডিংসহ অবৈধ অর্থ লেনদেনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে ‘মোবাইল আর্থিক সেবাখাতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.

ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, অনলাইন জুয়ায় প্রায় ১১০০ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) এজেন্ট শনাক্ত করা হয়েছে। অর্থপাচার, ঘুষ, অনলাইন জুয়া, সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন ও ক্রিপ্টো ট্রেডিংসহ অবৈধ অর্থ লেনদেনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে মোবাইল ব্যাংকিং। আইপিএল-বিপিএলের মতো টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে দেশে দেদারসে মোবাইলে অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেন হলেও তা বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয় না সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

ক্ষুদে বার্তা পাঠানো ছাড়া কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, শুধু ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে দায় সারছে সেবাদাতারা। নভেম্বর ২০২২-অক্টোবর ২০২৩ সাল পর্যন্ত জালিয়াতি বা প্রতারণার শিকার হয়ে ব্যক্তিগত হিসাবধারী সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে ৮৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। এজেন্ট সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে ৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এমএফএস সেবায় জালিয়াতি ও প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টধারীদের ৫২.৬ শতাংশ প্রলোভন বা মিথ্যা তথ্য, ৪২.১ শতাংশ ফোনকল বা এসএমএস পাঠিয়ে প্রতারণা এবং ১২.৩ শতাংশ অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। ৩২ জেলা এমএফএস অ্যাকাউন্টধারীদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

এমএফএস খাতের জন্য স্বতন্ত্র আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে টিআইবি জানায়, বাংলাদেশে এমএফএস সেবামূল্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের সেবামূল্যের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। নগদ উত্তোলনে এমএফএসের সেবামূল্য প্রতি ২৫ হাজার টাকায় ২০০ টাকা থেকে ৪৬২ টাকা। যেখানে ব্যাংকের খরচ সর্বোচ্চ ২৯ টাকা। সেন্ড মানি করতে এমএফএসে ২৫ হাজারে খরচ শূন্য থেকে ১৫০ টাকা। অথচ ব্যাংকে কোনো খরচ নেই।

টিআইবি আরও জানায়, ২০২৪ সালে এমএফএস এ নগদ উত্তোলনের ক্ষেত্রে মোট প্রায় ৫ দশমিক ৫ লাখ কোটি টাকার সেবামূল্য হিসাবে অন্তত ৪ হাজার ৪১০ কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করেছে। যেখানে সমপরিমাণ নগদ উত্তোলনে ব্যাংক আদায় করেছে সর্বোচ্চ ৬৩৯ কোটি টাকা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ট আইব র শ ক র হয় আর থ ক ট আইব

এছাড়াও পড়ুন:

বিকাশ থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠানোর সেবা চালু হচ্ছে, খরচ হাজারে সাড়ে ৮ টাকা

দেশে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফএস) একে অপরের মধ্যে পারস্পরিক লেনদেন চালু হচ্ছে। এর ফলে বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো যেকোনো মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) হিসাব দিয়ে নিজেদের মধ্যে তাৎক্ষণিক লেনদেন করা যাবে। পাশাপাশি যেকোনো ব্যাংকে টাকা পাঠানো যাবে। এর মাধ্যমে কমে আসবে নগদ টাকা লেনদেন। আগামী ১ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় এই সেবাটি চালু হবে। এর মাধ্যমে দেশের আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এই ব্যবস্থায় কত খরচ হবে তা–ও নির্ধারণ করে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশে নগদ অর্থ লেনদেন কমানোর জন্য এনপিএসবি অবকাঠামো ব্যবহার করে সব ব্যাংক, এমএফএস প্রতিষ্ঠান এবং লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তলেনদেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে ব্যাংক, পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো এই লেনদেন শুরু করবে।

খরচ কত পড়বে

এই ব্যবস্থায় গ্রাহককে সর্বোচ্চ কত টাকা খরচ দিতে হবে, তা–ও নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, ব্যাংক থেকে যেকোনো ব্যাংক, এমএফএস ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারকে এক হাজার টাকা পাঠালে গ্রাহককে ১ টাকা ৫০ পয়সা মাশুল গুনতে হবে। বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা থেকে যেকোনো এমএফএস, ব্যাংক ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারের হিসাবে এক হাজার টাকা পাঠালে খরচ দিতে হবে সাড়ে ৮ টাকা। পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসাব থেকে যেকোনো ব্যাংক বা এমএফএসে টাকা পাঠালে প্রতি হাজারে খরচ দিতে হবে ২ টাকা।

বিনিময় ব্যর্থ

আইসিটি বিভাগের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) প্রকল্পের আওতায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ইন্টার-অপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্ম (আইডিটিপি) ‘বিনিময়’ চালু হয় ২০২২ সালের নভেম্বরে। ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) মধ্যে আর্থিক লেনদেনের জন্য প্ল্যাটফর্মটি চালু করা হয়েছিল। বিনিময় চালুর পরও সেবাটি আর চালু হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত জানুয়ারি মাসে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, এমএফএসের মধ্যে আন্তলেনদেন পরিচালনার জন্য বিনিময় নামের যে প্ল্যাটফর্ম করা হয়েছিল, সেটি ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের শেল কোম্পানি। এমএফএসে আন্তলেনদেন ব্যবস্থা এগোতে না পারার একটা বড় কারণ, এটি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়া হয়েছিল।

নথিপত্র অনুযায়ী, সজীব ওয়াজেদ ছাড়াও এ প্ল্যাটফর্ম থেকে সুবিধা নিয়েছেন সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ছেলে জারেফ হামিদ। বিনিময় প্ল্যাটফর্মটি ওরিয়ন ইনফরমেটিক্স, মাইক্রোসফট, ফিনটেক লিমিটেড ও সেইন ভেঞ্চারস যৌথভাবে তৈরি করে। এর মধ্যে ফিনটেক লিমিটেড নসরুল হামিদের স্ত্রী সীমা হামিদ ও ছেলে জারেফ হামিদের, যা ২০২২ সালে নাম পরিবর্তন করে হয় ভেলওয়্যার লিমিটেড। এর মালিকানায় আছে জারেফ হামিদ ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি প্রাইম হোল্ডিংস এলএলসি। বিনিময় পরিচালনার জন্য ভেলওয়্যারের সঙ্গে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চুক্তি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিনিময় তৈরির আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় একই ধরনের সেবা চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেবাটি চালুর কথা ছিল। তখন এ নিয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে শেষ পর্যন্ত সেবাটি আর চালু হয়নি। পরে সরকারি প্রকল্পের আওতায় বিনিময় চালু হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিকাশ, নগদ, রকেটে একে অপরকে টাকা পাঠাতে খরচ কত হবে
  • ব্যাংকের কার্ড থেকে নগদ, বিকাশে টাকা পাঠানোর নতুন সুবিধা
  • বিকাশ থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠানোর সেবা চালু হচ্ছে, খরচ হাজারে সাড়ে ৮ টাকা
  • আসছে শাখাবিহীন ডিজিটাল ব্যাংক