অর্থপাচার, ঘুষ, সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়নের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে মোবাইল ব্যাংকিং: টিআইবি
Published: 27th, May 2025 GMT
মোবাইল ব্যাংকিং অর্থপাচার, ঘুষ, অনলাইন জুয়া, সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন ও ক্রিপ্টো ট্রেডিংসহ অবৈধ অর্থ লেনদেনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে ‘মোবাইল আর্থিক সেবাখাতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.
তিনি বলেন, অনলাইন জুয়ায় প্রায় ১১০০ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) এজেন্ট শনাক্ত করা হয়েছে। অর্থপাচার, ঘুষ, অনলাইন জুয়া, সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন ও ক্রিপ্টো ট্রেডিংসহ অবৈধ অর্থ লেনদেনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে মোবাইল ব্যাংকিং। আইপিএল-বিপিএলের মতো টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে দেশে দেদারসে মোবাইলে অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেন হলেও তা বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয় না সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
ক্ষুদে বার্তা পাঠানো ছাড়া কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, শুধু ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে দায় সারছে সেবাদাতারা। নভেম্বর ২০২২-অক্টোবর ২০২৩ সাল পর্যন্ত জালিয়াতি বা প্রতারণার শিকার হয়ে ব্যক্তিগত হিসাবধারী সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে ৮৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। এজেন্ট সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে ৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এমএফএস সেবায় জালিয়াতি ও প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টধারীদের ৫২.৬ শতাংশ প্রলোভন বা মিথ্যা তথ্য, ৪২.১ শতাংশ ফোনকল বা এসএমএস পাঠিয়ে প্রতারণা এবং ১২.৩ শতাংশ অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। ৩২ জেলা এমএফএস অ্যাকাউন্টধারীদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
এমএফএস খাতের জন্য স্বতন্ত্র আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে টিআইবি জানায়, বাংলাদেশে এমএফএস সেবামূল্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের সেবামূল্যের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। নগদ উত্তোলনে এমএফএসের সেবামূল্য প্রতি ২৫ হাজার টাকায় ২০০ টাকা থেকে ৪৬২ টাকা। যেখানে ব্যাংকের খরচ সর্বোচ্চ ২৯ টাকা। সেন্ড মানি করতে এমএফএসে ২৫ হাজারে খরচ শূন্য থেকে ১৫০ টাকা। অথচ ব্যাংকে কোনো খরচ নেই।
টিআইবি আরও জানায়, ২০২৪ সালে এমএফএস এ নগদ উত্তোলনের ক্ষেত্রে মোট প্রায় ৫ দশমিক ৫ লাখ কোটি টাকার সেবামূল্য হিসাবে অন্তত ৪ হাজার ৪১০ কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করেছে। যেখানে সমপরিমাণ নগদ উত্তোলনে ব্যাংক আদায় করেছে সর্বোচ্চ ৬৩৯ কোটি টাকা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ট আইব র শ ক র হয় আর থ ক ট আইব
এছাড়াও পড়ুন:
অনলাইন জুয়ায় জড়িত হাজার এমএফএস এজেন্ট শনাক্ত: সিআইডি
সদ্য জারি হওয়া সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ–২০২৫ অনুযায়ী অনলাইন জুয়া ও বেটিংয়ের বিরুদ্ধে সারাদেশে অভিযান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি মোবাইল ব্যাংকিং (এমএফএস) এজেন্টকে অনলাইন জুয়ার লেনদেনে জড়িত থাকার প্রমাণসহ শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তাদের লাইসেন্স বাতিল ও জরিমানা করার উদ্দেশে তালিকা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খানের সই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, বর্তমানে মোবাইল অ্যাপ, ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অনলাইন জুয়া পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা সহজে অর্থ উপার্জনের আশায় জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন। অনেকেই আর্থিকভাবে দেউলিয়া ও নিঃস্ব হচ্ছেন। ফলে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, পারিবারিক সহিংসতা, এমনকি আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর ধারা ২০ অনুযায়ী অনলাইন জুয়া খেলা, জুয়া-সংক্রান্ত অ্যাপ বা পোর্টাল তৈরি ও প্রচারণা চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধের জন্য দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড প্রযোজ্য। এ ছাড়া ২১ ও ২২ ধারায় জুয়া-সংক্রান্ত লেনদেন, প্রতারণা বা জালিয়াতিকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে অনলাইন জুয়া ও বেটিংয়ে অংশ না নিতে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে এই সম্পর্কে সচেতন করতে নাগরিকদের প্রতি সিআইডি আহ্বান জানিয়েছে। সন্দেহজনক অ্যাপ, ওয়েবসাইট বা মোবাইল নম্বর সম্পর্কে তথ্য জানাতে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে। হটলাইন নম্বরগুলো হচ্ছে– ০১৩২০০১০১৪৬, ০১৩২০০১০১৪৭ ও ০১৩২০০১০১৪৮।