নান্দাইল পৌরসভার চারিআনিপাড়া মহল্লায় আরসিসি সড়কের পাশের প্রশস্ত ও গভীর একটি ড্রেন পথচারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঢাকনাবিহীন ওই ড্রেনে পড়ে ইতোমধ্যে আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন শিশুসহ গৃহপালিত পশু। কখনও ছোটখাটো যানবাহন পড়ে আহত হচ্ছেন যাত্রীরা।
জানা গেছে, নান্দাইল পৌরসভার চারিআনিপাড়া মহল্লার পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের পাশে হাকিম ভূঁইয়ার বাড়ির সামনে থেকে দক্ষিণে নরসুন্ধার পার পর্যন্ত এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ। ওই এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে ওই এলাকায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৭০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করে নান্দাইল পৌরসভা। আব্দুল কদ্দুছ নামে একজন ঠিকাদার কাজটি পেলেও তিনি তা বিক্রি করে দেন স্থানীয় ঠিকাদার আ.
সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকনাবিহীন ড্রেনে পানি চলাচল না থাকায় ময়লাযুক্ত কালো পানি জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, বংশ বিস্তার করছে মশা-মাছি। আশপাশের কয়েকজন বাসিন্দা নিজেদের টাকায় ড্রেনের কিছু অংশে পাকা ঢাকনা দিয়ে চলাচল করছেন। স্থানীয় কয়েকজন বয়স্ক নারী পাশে বসে থেকে ড্রেনে পড়ে যাওয়ার ভয়ে ছোট ছেলেমেয়েদের প্রতি নজর রাখছেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ইয়াসমিন নামে একজন জানান, তাঁর আড়াই বছরের সন্তান নুসাইবাও একদিন ড্রেনে পড়ে গিয়েছিল। গত কোরবানি ঈদের আগে হাট থেকে নিয়ে যাওয়ার পথে একটি বড় ষাঁড় গরু ড্রেনে পড়ে আহত হয়। পাশের সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় অসাবধানতাবশত প্রায়ই ড্রেনে পড়ে যায় লোকজন।
এ বিষয়ে নান্দাইল পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমান জানান, প্রকল্পটি বেশ বড় তাই আগামীতে এডিবির অর্থায়নে দুই ধাপে ড্রেনের ওপর ঢাকনা দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।
তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।
জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’
সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’
রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে