কুয়েটে ১০০ দিনেও সংকট কাটেনি, ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধে হতাশা
Published: 29th, May 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সংঘর্ষের পর ১০০ দিন পার হলেও সংকট কাটেনি। উপাচার্য না থাকায় চলমান অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে সেশনজট নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে কুয়েটে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এ ঘটনা কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। পরে ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক মো.
শিক্ষক সমিতি বলেছে, সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার না হলে তাঁরা ক্লাসে ফিরবেন না।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য শিক্ষক সমিতি বা শিক্ষকদের যে দাবি ছিল, আমরা সেই অবস্থানেই আছি। আগের ঘটনাগুলোর বিচার করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আমরা ক্লাসে ফিরব।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন যেহেতু উপাচার্য নেই, আমরা তাঁর জন্য অপেক্ষা করছি। সরকার একজন উপাচার্য নিয়োগ দেবে এবং তিনি এসে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিলে আমরা যেকোনো দিন ক্লাসে ফেরার জন্য প্রস্তুত।’
সেশনজট প্রসঙ্গে অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, ‘সব তো আর শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে হয়নি। প্রথম দুই মাস তো ছাত্র, সরকার, প্রশাসন এসব বিষয় ছিল। আমাদের দিক থেকে যতটুকু পিছিয়ে যাচ্ছে, আমরা আশা করছি, সেই ঘাটতি ঠিক করে ফেলা যাবে। এ জন্য একজন উপাচার্য যত শিগগিরই আসবেন, তত বিষয়টা সহজ হবে।’
কুয়েট ১৯ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী জানান, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ভর্তি হয়ে এর মধ্যে প্রায় দেড় বছরের সেশনজট পোহাতে হয়েছে। এখন আবার একই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রায় সাড়ে তিন মাস হয়ে যাচ্ছে, এখনো ক্লাসে ফিরতে পারিনি আমরা। শিক্ষার্থী ও তাঁদের পরিবারের ওপর মানসিক চাপ যাচ্ছে।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের মো. ওবায়দুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মনে করছি, ঈদের আগে এই জটিলতা কাটবে না। সামনে ঈদের ছুটি, শিক্ষার্থীরা তাই বাসায় চলে যেতে শুরু করেছেন। আমাদের চাওয়া, ঈদের আগেই নতুন ভিসি স্যার এসে বা তিনি না এলে যেন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা মিলে আলোচনা করে সবকিছু ঠিক করে আমাদের জানিয়ে দেন, যাতে আমরা ঈদের ছুটির পরই ক্লাসে ফিরতে পারি।’
একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ৪ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদ ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।
কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশ শান্ত আছে। সব পক্ষই এখন চুপচাপ। তবে কবে থেকে ক্লাস শুরু হবে, নতুন উপাচার্য না আসা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের আর্থিক ক্ষমতা উপাচার্যের হাতে। উপাচার্যের স্বাক্ষর ছাড়া বেতন-বিল পাস হয় না। এ কারণে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১ হাজার ১০০ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা এবং ঈদুল আজহার উৎসব ভাতা। উপাচার্যের স্বাক্ষরের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে কুয়েটের রেজিস্ট্রার মো. আনিসুর রহমান ভূঞার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। বিশ্ববিদ্যালয়–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ৫ মে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত অপ্রত্যাশিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারীদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক সমিতির দাবির সঙ্গে সংগতি রেখে প্রশাসন কিছু সিদ্ধান্ত নেয়। এর অংশ হিসেবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শোকজ নোটিশ পাঠিয়ে তাঁদের জবাব দিতে বলা হয়। শিক্ষক সমিতি প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও শিক্ষার্থীরা এটিকে প্রহসন হিসেবে বিবেচনা করেন।
শোকজের পর প্রতিবাদ কর্মসূচির পাশাপাশি একাডেমিক কার্যক্রম চালু, নতুন একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন ও আগে ঘোষিত পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ওই কর্মসূচির মুখে উপাচার্য শৃঙ্খলা কমিটির সভা আপাতত না করার সিদ্ধান্তের কথা আন্দোলনকারীদের জানিয়ে দেন। আর উপাচার্যের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষক সমিতিকে ক্ষুব্ধ করে। এরপরই মূলত শিক্ষক সমিতি আরও কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। শিক্ষকদের লাগাতার কর্মসূচিতে অচলাবস্থার মধ্যে ২২ মে অন্তর্বর্তী উপাচার্য পদত্যাগপত্র জমা দেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ চ র য ন উপ চ র য র শ ক ষকদ র স ঘর ষ প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে জেলা শহর রেলগেইট সংলগ্ন এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক কাউসার আলম জানান, দুপুর ২টার দিকে নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে চট্টগ্রামের দিকে রওনা হয়। রেলগেটের কাছাকাছি একজন ব্যক্তি এই ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হন।
তিনি আরো জানান, মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তার পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। মরদেহ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের জন্যে পাঠানো হচ্ছে। অপমৃত্যু মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাত নারীর মৃত্যু
ঝিনাইদহে তুচ্ছ কারণে ছুরিকাঘাতে ছোট ভাই নিহত
ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মাসুদ