ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন করা সম্ভব: তারেক রহমান
Published: 29th, May 2025 GMT
জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা না করায় রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন করা সম্ভব। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবারও আহবান জানাচ্ছি- জনগণের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করুন। ডিসেম্বরের মধ্যেই সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণা করুন। এখানে অন্তর্বর্তী সরকারের জয় বা পরাজয়ের কোনো কিছু নেয়।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, হাজারো শহীদের রক্তস্নাত বাংলাদেশে দীর্ঘ দেড় দশকে ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন হয়েছে। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে বর্তমানে। গণঅভ্যুত্থানের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেয়া এই সরকার হয়তো বৈধ। তবে এই সরকার কোনোভাবেই কিন্তু জবাবদিহিমূলক নয় এবং জনগণের কাছে এই সরকারের জবাবদিহি করার কোনো সুযোগও নেই।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ১০ মাসেও জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করেনি। ফলে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এই অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ার কারণেই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের ভোটে একটি স্থিতিশীল সরকার না থাকায় কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগও হচ্ছে না। ইতোমধ্যে শত শত শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আরও অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সেক্টরে এ ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। জনগণ তাদের সমস্যার কথা সরকারের কাছে তুলে ধরার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, দেশের জনগণ সরাসরি নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে প্রস্তুত। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। গণতন্ত্রের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সংস্কার প্রস্তাব এরই ভেতর দেওয়া হয়েছে। সংস্কারের ব্যাপারে কোনো রাজনৈতিক দলের তেমন কোন আপত্তি নেই। তবে সংস্কার নিয়ে অযথা সময়ক্ষেপণে আপত্তি অবশ্যই রয়েছে। শুধু রাজনৈতিক দলের নয়, রাজনৈতিক দলগুলো বাইরেও বিভিন্ন সংগঠনও এ ব্যাপারে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে। এ কারণেই আমরা মনে করি, প্রস্তাবিত সংস্কার শেষ করে যদি উদ্দেশ্য সঠিক থাকে, গণতন্ত্রের পক্ষে থাকে- তাহলে ডিসেম্বরের ভেতরে নির্বাচন দিন। তবে আমি এটাও মনে করি, বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে সংস্কার প্রস্তাব শেষ করে (যেসব সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে) ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন করা সম্ভব।
তারেক রহমান আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই জনগণের কোনো যোগাযোগ নেই। জনগণের দুঃখ-দুর্দশা সমস্যার ব্যাপারে অনেক উপদেষ্টা অবগত নয়। তাদের কেউ কেউ অফিসে বসে ফাইলপত্র দেখে, সমস্যা চিহ্নিত করে হয়তো সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছে। জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছাড়া, প্রশাসননির্ভর হয়ে, ফাইল ওয়ার্ক দিয়ে যদি সব সমস্যার সমাধান করা যেত, তাহলে নিশ্চয়ই রাজনৈতিক দল রাজনীতির দরকার হতো না।
দেশের চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া জরুরি। সরকার বা সরকার প্রধানের চিন্তা-চেতনা জনগণের ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা থেকে স্বৈরাচারের জন্ম হয়। রাষ্ট্র ও জনগণের উপর যাতে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা না হয়, সেজন্য রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। জনগণের ভোট ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারকে জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা করা যায়।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন ড স ম বর র সরক র র জনগণ র প রস ত ব এনপ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনে যারা আছেন, তারা নিজেদের কাজে ফিরে যান: খসরু
ঐকমত্য কমিশনে যারা আছেন, তারা আগে যে কাজ করতেন, তাদেরকে সে কাজে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী বিভাগের ব্যবসায়ীদের এক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অনুরোধ জানান।
ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ তুলে আমীর খসরু বলেন, “জোর করে আরেকটি দলের অথবা দুটি দলের বা তিনটি দলের মতামত বাকি দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা একটা রাজনৈতিক দল, তারাও একটি রাজনৈতিক দল। এখানে ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে তাদের দাবি আমাদের ওপর চাপাতে চাচ্ছে, জনগণের ওপর চাপাতে চাচ্ছে। অথচ, ঐকমত্য কমিশন করার উদ্দেশ্য ছিল, ঐকমত্য যতটুকু হবে, সেটা নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাব।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “ঐকমত্য হয়েছে, সই হয়েছে, তার বাইরে গিয়ে এখন নতুন নতুন দাবি নিয়ে আসছে। তাদের দাবি মানতে হবে, না মানলে এটা হবে, সেটা হবে...। আবার তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে ঐকমত্যের কিছু লোকজন। তাদেরও আবার মতামত আছে। রাজনীতিবিদদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে তারা তাদেরটা চাপাতে চাচ্ছে। আবার ঐকমত্য কমিশনেরও একটা নিজস্ব মতামত আছে। ঐকমত্য কমিশনের মতামতের জন্য তো তাদেরকে সেখানে রাখা হয়নি। এখন তাদেরও মতামত আছে এবং ওটা আমাদেরকে মানতে হবে।”
দেশের মানুষকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “ঐকমত্য কমিশনে যারা আছেন, যাদের দাবি রাজনীতিবিদদের ওপর চাপাতে চান, জনগণের ওপর চাপাতে চান; তাদের প্রতি আমার অনুরোধ- আপনারা যে যেই কাজ করতেন আগে, ওই জায়গায় ফিরে যান। বাংলাদেশের মানুষকে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে দেন। আমি অনুরোধ করছি, আপনারা স্ব স্ব কাজে ফিরে যান। বাংলাদেশের মানুষকে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দয়া করে তাদের ওপরেই ছেড়ে দেন। আপনাদেরকে এই দায়িত্ব কেউ দেয় নাই।”
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আগামী নির্বাচনে তাদের সিদ্ধান্ত দেবে। যেসব দল তাদের দাবি-দাওয়া চায়, তাদেরকে জনগণের কাছে যেতে হবে তো। জনগণের মতামত নিতে হবে তো। জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে তো। মতামত জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া চলবে না।”
নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা চলছে, অভিযোগ করে আমীর খসরু বলেন, “ব্যবসায়ীরা আমাকে প্রতিনিয়ত বলছেন, ফেব্রুয়ারি নয়; পারলে এখনই নির্বাচন করে আমাদেরকে একটু মুক্ত করেন। আমাদের ব্যবসা ধ্বংস হওয়ার উপক্রম। আমরা কোনো বিনিয়োগ করতে পারছি না। বিদেশিরা কোনো বিনিয়োগ করছে না। সুতরাং, এই নির্বাচনকে যারা বিলম্বিত করতে চায় তাদের স্বার্থের জন্য, এখানে ব্যবসায়ীদেরকে সোচ্চার হতে হবে। দ্রুতই নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।”
রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই বিভাগীয় ব্যবসায়ী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী বিভাগীয় ব্যবসায়ী ফোরাম এর আয়োজন করে। এতে বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনুসহ রাজশাহী বিভাগের আট জেলার ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমান।
ঢাকা/কেয়া/রফিক