অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন প্রলম্বিত করতে মন খারাপের নাটক করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সরকারের সমর্থনপুষ্ট হঠাৎ গজিয়ে ওঠা একটি রাজনৈতিক সংগঠন কীভাবে সরকারের মুখপাত্র হয়? আবার অন্তর্বর্তী সরকার কিছু পছন্দের ব্যক্তিকে ডেকে সর্বদলীয় রাজনৈতিক বৈঠক বলে গণমাধ্যমে প্রচার করেছে। এই সরকার নির্বাচন প্রলম্বিত করতে এখন মন খারাপের নাটক মঞ্চস্থ করেছে। আমরা এর অবসান চাই। 

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এনডিএমের আগামী অর্থবছরের সংক্ষিপ্ত বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরতে এই আয়োজন করা হয়। 

এনসিপি নেতাকর্মীর সমালোচনা করে ববি হাজ্জাজ বলেন, তারা বলছেন, নির্বাচিত সরকার এলে বিচার করবে না। মানে নির্বাচিত সরকারের প্রতি কোনো আস্থা নেই। নির্বাচিত সরকারের প্রতি যাদের আস্থা নেই, তাদের জনগণের হয়ে কথা বলার অধিকার নেই। এই অধিকার যদি অর্জন করতে চান, ভোট দেন, ভোট নিয়ে আসেন। তখন তারা বলবেন, আমরা চুপ করে শুনব।  

এর আগে লিখিত বক্তব্যে ববি হাজ্জাজ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বিষয়ে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলেন, আমরা চাই, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে এই সরকার এমন এক বাজেট প্রস্তাব করবে যা পরবর্তী নির্বাচিত সরকার মেয়াদের বাকি অংশে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে। আমরা চাই, বাজেটের জন্য জনগণ না হয়ে, জনগণের জন্য যেন বাজেট হয়।

এনডিএমের মহাসচিব মোহাম্মদ মমিনুল আমিনের সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের উচ্চ পরিষদ সদস্য হুমায়ুন পারভেজ খান, ভাইস চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার সাইদুল আজম, যুগ্ম বিভাগীয় সম্পাদক সাকিব আহমেদ প্রমুখ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বব হ জ জ জ ন র ব চ ত সরক র সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি পেল আরও ৫২ প্রতিষ্ঠান

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন করে ৫২ প্রতিষ্ঠানকে সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। তাদের কেউ ১০০ টন, কেউবা ২০০ টন করে চাল রপ্তানি করতে পারবে। তারা সবাই মিলে ৫ হাজার ৮০০ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানি করতে পারবে। গতকাল বুধবার এ ব্যাপারে পরিপত্র জারি করা হয়েছে।

রপ্তানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে সব সময়ই চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ। তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।

জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মো. মাহবুবুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব প্রবাসী বাংলাদেশিরা বসবাস করেন, তাঁদের দিক থেকে আরও সুগন্ধি চালের চাহিদা রয়েছে। রপ্তানিকারকদের দিক থেকেও আবেদন পড়ে ছিল। তাই অনুমতি দেওয়া হলো।’

এর আগে গত ৮ এপ্রিল ১৩৩ প্রতিষ্ঠানকে ১৮ হাজার ১৫০ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দুই দফা মিলিয়ে অনুমোদনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াল ২৩ হাজার ৯৫০ টন। আগের দফায় অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সুগন্ধি চাল রপ্তানি করতে বলা হয়েছিল। এবারের পরিপত্রে অবশ্য ৩০ নভেম্বরের মধ্যে চাল রপ্তানির নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে সরকার চাইলে যেকোনো সময় অনুমতি বাতিল করতে পারবে।

এবার প্রতি কেজি চালের রপ্তানি মূল্য হতে হবে কমপক্ষে ১ দশমিক ৬০ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে হিসাব করলে এক কেজি সুগন্ধি চালের দাম দাঁড়াবে ১৯৬ টাকা ৮০ পয়সা। গত এপ্রিলে অনুমতি দেওয়ার সময়ও প্রতি কেজি চালের রপ্তানি মূল্য ১ দশমিক ৬০ ডলারের কথা বলা হয়েছিল। তখন প্রতি ডলারের মূল্য ছিল ১২২ টাকা। তাতে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি কেজি চালের দাম পড়ে ১৯৫ টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে অনুমোদিত পরিমাণের বেশি চাল কেউ রপ্তানি করতে পারবে না। আর প্রতিটি চালান জাহাজীকরণ শেষে রপ্তানিসংক্রান্ত সব কাগজপত্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। এ অনুমোদন কোনোভাবেই হস্তান্তরযোগ্য নয়। অর্থাৎ অনুমোদিত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নিজে রপ্তানি না করে অন্যের মাধ্যমে রপ্তানি করতে পারবে না, অর্থাৎ সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়া যাবে না।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুগন্ধি চাল রপ্তানি করে দেশের ২৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার আয় হয়েছিল। পরের ২০২০-২১ অর্থবছরে তা কমে হয় ২০ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এই আয় ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও কমে ১০ লাখ ৭০ হাজার ডলারে নেমে আসে। এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি স্থগিত রাখে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্তও রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পরে গত জানুয়ারিতে সরকার আবার রপ্তানি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অনুমতি নিলেও অনেকে রপ্তানি করতে পারে না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ সুগন্ধি চাল রপ্তানি শুরু করে। প্রথম বছরে ৬৬৩ টন চাল রপ্তানি হয়। পরের বছরগুলোতে রপ্তানি বাড়তে থাকে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ হাজার ৮৭৯ টনে উন্নীত হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বছরে সুগন্ধি চাল উৎপাদিত হয় ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। প্রতিবছর গড়ে রপ্তানি হয় ১০ হাজার টন। বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্য, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে এ চাল রপ্তানি করে আসছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে রপ্তানিযোগ্য সুগন্ধি চালের একটি তালিকা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে কালিজিরা, কালিজিরা টিপিএল-৬২, চিনিগুঁড়া, চিনি আতপ, চিনি কানাই, বাদশাভোগ, কাটারিভোগ, মদনভোগ, রাঁধুনিপাগল, বাঁশফুল, জটাবাঁশফুল, বিন্নাফুল, তুলসী মালা, তুলসী আতপ, তুলসী মণি, মধুমালা, খোরমা, সাককুর খোরমা, নুনিয়া, পশুশাইল, দুলাভোগ ইত্যাদি।

সুগন্ধি চাল রপ্তানির সঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়—এ তিন দপ্তর জড়িত। জানা গেছে, সুগন্ধি চাল রপ্তানি করতে গেলে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সম্মতি নিতে হয়, এবারও তা নিতে হয়েছে। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমতি দিলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যদি ফাইটোস্যানিটারি সনদ না দেয়, তাহলে কেউই সুগন্ধি চাল রপ্তানি করতে পারে না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হলেও দুই মাস পরে খাদ্য মন্ত্রণালয় তা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায়। আর অক্টোবরে এসে কৃষি মন্ত্রণালয়ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলে সুগন্ধি চাল রপ্তানি বন্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়। তখন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, এসিআই ফুডস, প্রমি অ্যাগ্রো ফুডস, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজসহ ৩৩টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিপাকে পড়ে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে পরিবর্তন আসছে
  • বাজেট কী এবং কীভাবে দেওয়া হয়
  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য থাকছে বরাদ্দ
  • শুল্কে বড় পরিবর্তন আসছে
  • সোমবার বিকেল চারটায় বাজেট দেবেন অর্থ উপদেষ্টা, বিটিভিতে সম্প্রচার হবে
  • সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি পেল আরও ৫২ প্রতিষ্ঠান
  • বাজেটে টেকসই প্রবৃদ্ধির বার্তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের
  • বৈষম্য নিরসন ও নারীর ক্ষমতায়নে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দাবি
  • চাপের মুখে রয়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি