মেঘনার জোয়ারে লক্ষ্মীপুরের ২০ গ্রাম প্লাবিত
Published: 30th, May 2025 GMT
নিম্নচাপের প্রভাবে টানা তিন দিন ধরে বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ২০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে, দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এদিকে, ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর শুক্রবার (৩০ মে) সকাল ৮টা থেকে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। তবে, এখনো লঞ্চসহ অন্যান্য ছোট নৌযান চলাচল বন্ধ আছে। এতে দুই পাড়ে আটকা পড়েছে কয়েক শত পণ্যবাহী ট্রাক এবং অসংখ্য যাত্রী। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
মজু চৌধুরী হাট ফেরিঘাটের সহকারী ম্যানেজার মো.
ঘাটে আটকে পড়া যাত্রী আবু তাহের, এনামুল ও আলমগীর হোসেন বলেছেন, “বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে এসে ঘাটে আটকে আছি। ভোলায় যেতে পারছি না। লঞ্চ না ছাড়ায় ভোগান্তির শেষ নেই।”
একই কথা বলেন ভোলাগামী যাত্রী কালাম, ফরিদ উদ্দিন ও ইব্রাহিম। তারা জানান, লঞ্চ কখন ছাড়বে, সে বিষয়ে কেউ কিছু জানাতে পারছে না।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বছরের এই সময়ে এমন টানা পানি ওঠা-নামা এই প্রথম। পুকুরের মাছ, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। দুই শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বলে দাবি করছেন অনেকে।
রামগতি ও কমলনগরের চরকালকিনি, সাহেবের হাট, পাটওয়ারীর হাট, চর ফলকন, চর মার্টিন, চর লরেঞ্চ ইউনিয়ন ও রামগতির আলেকজান্ডার, বড়খেরী, চর গাজী ও চর আবদুল্লাহ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বসতঘর, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় প্রচণ্ড দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রামগতি আবহাওয়া সতর্কীকরণ অফিসের কর্মকর্তা মো. সৌরভ হোসেন।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার জানিয়েছেন, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার মজুত আছে। বন্যার আশঙ্কা না থাকলেও প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/লিটন/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।