বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে ফুলে উঠছে মেঘনা নদী। এতে প্লাবিত হয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলার উপকূলীয় এলাকার অন্তত ৪০টি গ্রাম। এর ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন এসব গ্রামের প্রায় দুই লাখ মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এসব গ্রাম প্লাবিত হয়। এদিকে ঝোড়ো হাওয়ায় গাছ উপড়ে লক্ষ্মীপুরের অনেক স্থানে বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে গতকাল সকাল থেকেই বিদ্যুৎহীন পুরো জেলা।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকেই জোয়ারের পানিতে ফুলে উঠছে নদী। পানির উচ্চতা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তিন থেকে চার ফুট বেড়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর সদরের চর রমনী মোহন; রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী; কমলনগর উপজেলার চর মার্টিন, পাটারির হাট, চর কালকিনি, সাহেবের হাট, চর ফলকন; রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার, চর রমিজ, বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়নের মেঘনা নদীসংলগ্ন অন্তত ৪০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। বাড়িঘরের পাশাপাশি এসব গ্রামের ফসলি জমি, হাটবাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নদী–তীরবর্তী বাঁধ না থাকায় সহজেই নদীর পানি উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।

সদর উপজেলার মজু চৌধুরীর হাট এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা বেগম জানান, সন্ধ্যার আগে হঠাৎ নদীর পানি ফুলে ওঠে। সন্ধ্যার মধ্যেই তাঁর ঘরে দুই ফুট পানি উঠে যায়। এতে ঘরের মালামাল নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়ে তাঁর পরিবার। ঘরে থাকা ধান ও সয়াবিন সব ভিজে গেছে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান বলেন, লক্ষ্মীপুরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেড়েছিল। তবে তা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসছে।

জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ২৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ৬৪টি মেডিকেল টিমও গঠন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনা খাবার মজুত রয়েছে।

বিদ্যুৎহীন পুরো জেলা

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে লক্ষ্মীপুরে গাছ পড়ে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে যাওয়ায় পুরো জেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। তীব্র বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে গতকাল সকাল থেকেই জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকেও বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা যায়নি। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কাজ করছেন।

লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৫টি উপজেলা ও ৩ পৌরসভা মিলে ৯ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটার বিদ্যুতের লাইন আছে। এর আওতায় গ্রাহকসংখ্যা ৫ লাখ ৫১ হাজার ৭৬৪। লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দারা জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন তাঁরা। এমনকি মুঠোফোনের চার্জও শেষ হয়ে যাচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক মো.

শফিউল আলম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুতের লাইনে গাছ পড়েছে, খুঁটি ভেঙে গেছে, তারও ছিঁড়ে গেছে। তাই এখন পর্যন্ত পুরো জেলায় বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে একটি টিম কাজ করছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব দ য ত র ল ইন লক ষ ম প র র উপজ ল র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে মেঘনার ব্লক বাঁধের ১২ স্থানে ধস, আতঙ্কে বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ১২টি স্থানে নতুন করে ধস দেখা দিয়েছে। রামগতির ১০টি ও কমলনগরে ২টি স্থানে বাঁধের ব্লক ধসে পড়ে। এতে নদীতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে।

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও প্রবল জোয়ারের তোড়ে গত শুক্রবার থেকে বাঁধের ব্লক ধসে পড়তে শুরু করে। এতে অনেক স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। কিছু স্থানে ব্লক ধসে পড়ায় জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। রামগতি উপজেলায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বড়খেরী, চরগাজী, মাছঘাট, মালিবাড়ী, উছখালী ও ওয়াপদা অফিসসংলগ্ন এলাকায়। এ ছাড়া কমলনগরের মাতাব্বরহাট ও লুধুয়া বাজার অংশে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আমি নিজেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি এবং দ্রুত বাঁধ মেরামতের জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেছি। সময়মতো কাজ শুরু না হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঝুঁকি রয়েছে।সৈয়দ আমজাদ হোসেন, ইউএনও, রামগতি উপজেলা

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিম্নমানের ব্লক ব্যবহার করার কারণে জোয়ারের তোড়ে ব্লক ধসে পড়ার ঘটনা ঘটছে। এর আগে গত বছরও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। নতুন করে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করার দাবি বাসিন্দাদের।

বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ১৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালে ব্লক দিয়ে সাড়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে বাঁধের ব্লক বৃষ্টি-জোয়ারে ধসে পড়ছে। কাজের মান খুবই খারাপ ছিল, তা না হলে এত তাড়াতাড়ি ব্লক ধসে যেত না। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি টেকসই বাঁধ দরকার। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এলাকাবাসী চরম বিপদের মুখে পড়বে।’

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিজেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি এবং দ্রুত বাঁধ মেরামতের জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেছি। সময়মতো কাজ শুরু না হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঝুঁকি রয়েছে।’

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব স্থানে ধস দেখা দিয়েছে, সেগুলো আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করব।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মেঘনার তীব্র ভাঙনে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ২৪২ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা নদীতে হারিয়ে গেছে। এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় এক লাখ মানুষ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লক্ষ্মীপুরে মেঘনার ব্লক বাঁধের ১২ স্থানে ধস, আতঙ্কে বাসিন্দারা