একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস ও মুক্তি পাওয়ার পর মগবাজারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তাঁকে আলাদা কক্ষ দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো দলীয় কোনো পদ বা দায়িত্বে অধিষ্ঠিত করা হয়নি এ টি এম আজহারুল ইসলামকে। দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রায় ১৩ বছর ধরে কারাবন্দী থেকেও তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন।

গত বুধবার এ টি এম আজহারুল ইসলাম মুক্তি পেয়েছেন। তখন থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে গুঞ্জন ছড়ায় যে তিনি জামায়াতের আমির হচ্ছেন।

দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানিয়েছেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সদ্য কারামুক্ত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের এখনই আমির বা দলীয় প্রধান হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, আমির নির্বাচিত হন দলের রুকন বা শপথধারী সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে। বর্তমান আমির ডা.

শফিকুর রহমান তিন বছর (২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫) মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁর মেয়াদ। এ বছরের শেষের দিকে আবার জামায়াতের আমির পদে নির্বাচনপ্রক্রিয়া শুরু হবে।

ওই নেতারা জানিয়েছেন, পরবর্তী আমির পদের জন্য কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন, তার জন্য তিনজনের একটি বাছাই তালিকা হয়। এই তিনজন কারা হবেন, সেটা মজলিসে শূরার সদস্যদের গোপন ভোটে ঠিক করা হয়। এই তিনজনের নাম সারা দেশের রুকনদের জানিয়ে দেওয়া হয়।এরপর সারা দেশের রুকনরা গোপন ব্যালটে এই তিনজনের মধ্যে যে কাউকে আমির পদের জন্য ভোট দিতে পারেন। এই তিনজনের বাইরেও কারও কাছে অন্য কাউকে আমির পদের জন্য যোগ্য মনে হলে তিনি তাঁকে ভোট দিতে পারেন। এরপর নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন ভোট গণনা করে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্তকে আমির ঘোষণা করেন। এ টি এম আজহারকে আমির হতে এ প্রক্রিয়ায় ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে।

দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, এ টি এম আজহারুল ইসলামকে দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির করার সম্ভাবনা বেশি। বর্তমানে জামায়াতের নায়েবে আমির তিনজন। তাঁরা হলেন দলের সাবেক তিন সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান, সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও আ ন ম শামছুল ইসলাম। গঠনতন্ত্রে নায়েবে আমিরের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা নেই। গঠনতন্ত্রে ‘প্রয়োজনীয় সংখ্যক’ বলে উল্লেখ রয়েছে।

এ টি এম আজহারুল ইসলাম ২০১১ সালের ২২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে রাজধানীর বড় মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন। তখন তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদে ছিলেন। তার আগে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর একবার ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল পদেও ছিলেন। প্রায় ১৩ বছর কারাবন্দী থাকার পর গত ২৮ মে তিনি মুক্তি পান। আগের দিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ সর্বসম্মত রায়ে তাঁকে খালাস দেন।

কারাগার থেকে কীভাবে শূরার সদস্য হলেন

জামায়াতের গঠনতন্ত্রের নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় রুকনদের ভোটে এ টি এম আজহারুল ইসলাম কারাগারে থেকেও দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য হয়েছেন। কারাবন্দী থেকেও কীভাবে মজলিসে শূরার সদস্য হলেন, জানতে চাইলে দলের একজন সাংগঠনিক নেতা জানান, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের রুকনরা ভোট দিয়ে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য নির্বাচন করেন। প্রতি জেলা থেকে বাধ্যতামূলকভাবে একজন, আবার রুকনের সংখ্যানুপাতে অনেক জেলায় মজলিসে শূরার একাধিক সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন।

বর্তমানে সারা দেশে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য তিন শতাধিক বলে জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে।

ওই সূত্র জানায়, তিনটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য নির্বাচন করা হয়। প্রথম ধাপে সারা দেশের রুকনরা (সদস্য) ভোটের মাধ্যমে মজলিসের শূরার সদস্য নির্বাচন করেন। মজলিসের শূরার সংখ্যা দুই শতাধিক। এরপর মজলিসে শূরার নির্বাচিত এই সদস্যরা গোপন ব্যালটে (গঠনতন্ত্র মোতাবেক) আরও ৩০ জন মজলিসের শূরার সদস্য নির্বাচন করেন। এটি হচ্ছে দ্বিতীয় ধাপ। এই ৩০ জন মূলত কেন্দ্রীয় নেতা, যাঁদের সুনির্দিষ্ট কোনো এলাকা নেই। এর মাধ্যমে দলের আমিরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মজলিসে শূরায় যুক্ত হন।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, ৩০ জনের ওই তালিকায় এটি এম আজহারের নামও আছে। তিনি ১৩ বছর ধরে মজলিসের শূরার সদস্যদের গোপন ভোটে শূরার সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন।

জামায়াতের নেতারা জানিয়েছেন, এরপর তৃতীয় ধাপে কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরায় আরও কিছুসংখ্যক সদস্য নির্বাচন করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের আমির পরামর্শক্রমে এটি করে থাকেন। এর প্রক্রিয়া হচ্ছে, সারা দেশের রুকনরা প্রথম ধাপে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার যে সদস্য নির্বাচিত করেন, এর যে সংখ্যা দাঁড়াবে, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ সদস্য মজলিসের শূরায় অন্তর্ভুক্ত করবেন কেন্দ্রীয় আমির। অর্থাৎ সব মিলে মজলিসের শূরার সদস্য ৩০০ হলে এর মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্য থেকে ৩০ জনকে দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন করা হয়। বাকি থাকেন ২৭০ জন। এটাকে পাঁচ ভাগ করলে এক ভাগের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৪ জন। অর্থাৎ আমির গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাবলে এই ৫৪ জনকে মজলিসে শূরায় তৃতীয় ধাপে যুক্ত করেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মূলত এই অংশ আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার প্রতিনিধি। এ ছাড়া যাঁরা দলীয় মাপকাঠিতে যোগ্য কিন্তু ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেননি, তাঁদের মজলিসে শূরায় যুক্ত করা হয়।

শপথ নিতে হবে আজহারকে

জানা গেছে, জামায়াতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যদের শপথ নিতে হয়। এ টি এম আজহার কারাগারে থাকায় তাঁর শপথ হয়নি। এখন তাঁকে শপথ নিতে হবে। এরপর  তাঁকে জামায়াতের আমির বিবেচনামতো দলীয় কোনো পদে যুক্ত করতে পারেন। এটি করতে আমির দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অথবা আরেকটু বৃহত্তর ফোরাম কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করে করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মতামত নিতে কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা পর্যন্ত যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন দলের একজন নেতা।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ১৯ জন, আর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ৫৫ জন। কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরার সদস্য তিন শতাধিক।

এ টি এম আজহারুল ইসলামকে কী পদে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি মাত্রই কারামুক্ত হয়ে এসেছেন। এখন ওনার চিকিৎসা, সুস্থতা ও বিশ্রামের বিষয় আছে। আমিরে জামায়াত পরামর্শের আলোকে এ বিষয়ে যা করার করবেন।’

আরও পড়ুনগলায় রশি ঝোলানোর পরিবর্তে ফুলের মালা পাচ্ছি: সংবর্ধনায় এ টি এম আজহার২৮ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মজল স র শ র র সদস য শ র র সদস য ন র ব চ এম আজহ র ল ইসল ম ক ন দ র য় মজল স সদস য ন র ব চ ত মজল স র শ র র স য ন র ব চ ত হয় দল র ক ন দ র য় প রক র য় দ র জন য র র কনর ত নজন র র আম র ক ত কর ৩০ জন

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় ছোট ভাইকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে

খুলনার কয়রা উপজেলায় মো. শহিদুল গাজী নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তার ছোট ভাই মো. সাহেব আলী গাজীকে (৪০) কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার উলা গ্রামে নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

কয়রা থানার ওসি মো. ইমদাদুল হক সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, হত্যায় জড়িত শহিদুল গাজীকে আটক করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, দুপুরে শহিদুল গাজী তার স্ত্রীকে মারধরে করে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন। এ সময় তার চিৎকারে পাশের বাড়ি থেকে সাহেব আলী গাজী ছুটে গিয়ে ভাবিকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। তখন শহিদুল হাতে থাকা শাবল দিয়ে সাহেব আলীকে আঘাত করলে সে মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর শহিদুল বটি দিয়ে ছোট ভাই সাহেব আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে।

একপর্যায়ে শহিদুলের স্ত্রী চিৎকার করতে করতে দৌঁড় দেন। তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিলে গেলে শহিদুল দৌঁড়ে বিল পাড়ি দিয়ে বারোপোতা গ্রামে যায়। এরপর হাতে থাকা শাবলের মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে জোর করে সন্তোষ মিস্ত্রির ঘরে ওঠে। তখন স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় পুলিশ তাকে আটক করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চরের কাদায় আটকে ছিল দুটি ডলফিন, নদীতে ছেড়ে দিলেন জেলেরা
  • আনন্দ, চমক আর তারকায় ভরপুর বিটিভির ‘আনন্দমেলা’
  • রাখাইনে সংঘর্ষে জান্তা বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নিহত
  • ‘আগে জামায়াত নেতাদের হত্যার বিচার, এরপর সংস্কার, তারপর নির্বাচন’
  • ‘আগে বিচার এরপরে সংস্কার তারপর নির্বাচন’
  • জবির দর্শন বিভাগে পদোন্নতি সভা আজ, নিষ্পত্তি হয়নি ৩ শিক্ষকের গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগ
  • খুলনায় ছোট ভাইকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে
  • বিসিবির নতুন সভাপতি বুলবুল
  • যে প্রক্রিয়ায় বিসিবির পরিচালক হবেন বুলবুল