ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে করোনাভাইরাসে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ বিষয়ক প্ল্যাটফর্ম ‘কোভিড-১৯ ড্যাশবোর্ডে’ আজ শনিবার প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে ভাইরাসটিতে মোট তিনজন মারা গেছেন।

মৃত ব্যক্তিদের একজন ৬০ বছর বয়সী নারী। তিনি পেটে অস্ত্রোপচারের পর গুরুতর অন্ত্রের জটিলতায় ভুগছিলেন। পরে তাঁর দেহে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। অন্যজন ৭১ বছর বয়সী পুরুষ, যিনি নিউমোনিয়া, সেপটিক শক এবং তীব্র কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। সেপটিক শক হলো একটি স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা, যা সাধারণত রক্তে মারাত্মক সংক্রমণ (সেপসিস) থেকে সৃষ্টি হয় এবং দ্রুত চিকিৎসা না পেলে প্রাণঘাতী হতে পারে।

ড্যাশবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে ৩১ মে পর্যন্ত দিল্লিতে করোনায় সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩৭৫। গতকাল শুক্রবারের পর থেকে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত ৮১ রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

দিল্লি ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে হঠাৎ করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে করোনা ধরন ‘অমিক্রন’ সংশ্লিষ্ট নতুন ধরনকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। এসব দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনাক্ত হওয়া ধরনগুলো অমিক্রনের উপধারা, যার মধ্যে রয়েছে জেএন.

১-এর উপধারা এলএফ.৭ এবং এনবি১.৮।

ভারতে সম্প্রতি যেসব নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই কেরালা, মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও তামিলনাড়ু রাজ্যের। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংক্রমণ মৃদু প্রকৃতির এবং তা থেকে গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

যা মেনে চলা জরুরি

যদি সর্দি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা বা জ্বরের উপসর্গ থাকে কিংবা বহু মানুষের ভিড় রয়েছে, এমন কোনো জায়গায় যেতে হয়, তবে অবশ্যই মাস্ক পরা উচিত। ২০২৩ সালের এআইআইএমস/আইসিএমআর-কোভিড-১৯ জাতীয় টাস্কফোর্সের গাইডলাইন অনুযায়ী, মৃদু উপসর্গ থাকলে বাড়িতেই সঙ্গনিরোধে (আইসোলেশনে) থাকা নিরাপদ।

বাড়িতে বা একাধিক মানুষ আছে, এমন কোনো কক্ষে থাকতে হলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা এবং ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস চালিয়ে যেতে হবে। বিশ্রাম, তরল পান এবং উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধের মাধ্যমে মৃদু সংক্রমণ সামলানো যায়। জ্বর ও অক্সিজেনের মাত্রা নিয়মিত মেপে দেখতে হবে। অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।

শ্বাসকষ্ট হলে, অক্সিজেন স্তর ৯৩ শতাংশের নিচে নেমে গেলে অথবা পাঁচ দিনের বেশি সময় ধরে উচ্চ জ্বর বা তীব্র কাশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৬০ বছরের বেশি বয়সী, হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, যক্ষ্মা, দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুস, কিডনি বা লিভারের রোগে ভোগা ব্যক্তি, স্থূলতা রয়েছে এমন মানুষ বা যাঁরা এখনো টিকা নেননি—তাঁদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ক রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর

সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।

একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।

তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।

রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।

সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।

তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’

এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান

সম্পর্কিত নিবন্ধ