ওসমানীনগরে ভবন নির্মাণের মাঝে আটকে আছে ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতিজাদুঘর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর স্মৃতি সংরক্ষণে এই গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হয়।
জেনারেল ওসমানীর স্মৃতিবিজড়িত পৈতৃক নিবাস ওসমানীনগরের দয়ামীরে মহাসড়কের পাশে এই গ্রন্থাগার ও স্মৃতিজাদুঘর স্থাপনের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে প্রায় ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে প্রায় দেড় যুগ সময় অতিবাহিত হলেও চালু হয়নি এর কার্যক্রম। আগামীতে সেটি হবে কিনা সে ব্যাপারেও কিছু বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ২০০৮ সালে ৩ হাজার ৫৩৫ বর্গফুট স্থানজুড়ে ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতিজাদুঘর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। একই বছর ২২ ডিসেম্বর সিলেট জেলা পরিষদের উদ্যোগে প্রায় ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভবন নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ।
২০০৯ সালের মধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পর গ্রন্থাগার ও স্মৃতিজাদুঘর চালুর জন্য আসবাব ক্রয় করে ভবনটি সজ্জিত করা হয়। স্থাপন করা হয় জেনারেল ওসমানীর সংক্ষিপ্ত জীবনীসংবলিত ম্যুরাল। এরপর ২০১২ সালে সীমানাপ্রাচীরে বেষ্টিত ভবনের সামনে পরিকল্পিতভাবে ফুলের বাগান এবং এসএস স্টিলের বসার জায়গা তৈরি করে দিলে দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে ভবন ও এর চারদিক। এরপর আর কোনো কাজে লাগানো হয়নি স্থাপনাগুলো। আটকে যায় স্মৃতি রক্ষার মূল উদ্যোগটি
বিগত সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এলে তাঁকে দিয়ে এই গ্রন্থাগার ও স্মৃতিজাদুঘরটি চালু না করে লোক দেখানো উদ্বোধন করা হয়। এরপরেও এর কার্যক্রম চালুর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণতা ঘিরে ধরতে শুরু করেছে স্থাপনাগুলোকে। সামনে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য যে ফুলের বাগান ছিল তাও এখন নেই। সীমানাপ্রাচীর থাকা সত্ত্বেও ভবনের চারদিকে গরু-ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছে। ভেতরের আসবাবে জমেছে ধুলার স্তর। বাগানে বসার জন্য এসএস স্টিলের তৈরি বেঞ্চগুলো নেই। 
স্থানীয় দয়ামীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি এসটিএম ফখর উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ দিনেও চালু হয়নি ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতিজাদুঘরটি। এই মহান ব্যক্তির নামে স্মৃতি রক্ষার এ প্রতিষ্ঠানটি চালু হওয়ার প্রত্যাশা করছে সবাই।
সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আপ্তাব আহমদ বলেন, বঙ্গবীর এমএজি ওসমানীর স্মৃতি রক্ষায় গ্রন্থাগার ও স্মৃতিজাদুঘরটি দেড় যুগেও চালু না হওয়া দুঃখজনক। ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অবস্থা খারাপ। ভবনটি সংস্কার করে এই বীর যোদ্ধার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গ্রন্থাগার ও স্মৃতিজাদুঘরটি চালুর দাবি জানান তিনি। 
সিলেট জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী সন্দ্বীপ কুমার সিংহ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন এ ব্যাপারে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভবন ন র ম ণ ভবন ন র ম ণ ওসম ন র স

এছাড়াও পড়ুন:

বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল

বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।

যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।

শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।

এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।

পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।

শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।

বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।

গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলাম

স্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।

আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • গবাদিপশু থেকে মানুষের শরীরে ‘তড়কা’ রোগ, প্রতিরোধে যা করবেন
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার