ধবলধোলাইয়ের শঙ্কা, সম্মান বাঁচানোর মিশনে বাংলাদেশ
Published: 1st, June 2025 GMT
একদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) নেতৃত্ব পরিবর্তনের উত্তেজনা, অন্যদিকে মাঠে টানা দুই টি-টোয়েন্টিতে হারের হতাশা। সব মিলিয়ে অস্থির সময় পার করছে দেশের ক্রিকেট। এমন এক সময়েই আজ রোববার পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি খেলতে নামছে বাংলাদেশ। লক্ষ্য একটাই, ধবলধোলাই এড়ানো।
নতুন বিসিবি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তিনি দায়িত্ব নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায়ই সিরিজ খুইয়েছে বাংলাদেশ দল। স্বাভাবিকভাবেই এত অল্প সময়ে মাঠের পারফরম্যান্সে তার প্রভাব পড়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর দুই দিন যেতে না যেতেই ভক্তদের প্রত্যাশার ভার তার কাঁধে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে হারলেই তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হবে বাংলাদেশ। আরব আমিরাতের মতো দলের কাছেও হারের পর পাকিস্তানের কাছে ধবলধোলাই হলে তা হবে লিটন দাসদের জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা।
দলের দুরবস্থার মূল কারণ ব্যাটিং। প্রথম দুই ম্যাচে ভালো সূচনা করেও মাঝপথে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। দুই ম্যাচেই পাকিস্তান আগে ব্যাট করে ২০১ রানের বড় পুঁজি গড়লেও জবাবে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে অলআউট হয় ১৬৪ রানে এবং দ্বিতীয়টিতে ১৪৪ রানে।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের আক্রমণাত্মক মেজাজ বিপাকে ফেলেছে সফরকারীদের। তবে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে বাংলাদেশের বোলাররা, বিশেষ করে ডেথ ওভারে। দুই ম্যাচেই শেষ দিকে পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছেন তারা। কিন্তু ব্যাটিংয়ে আগ্রাসনের অভাব স্পষ্ট। ব্যাটাররা বারবার ছন্দপতনের শিকার হয়েছেন, রান তাড়ায় চাপ নিতে পারেননি। এ অবস্থায় কেউ কেউ মনে করছেন, টার্গেট ডিফেন্ড করাই হতে পারে বাংলাদেশের জন্য বেশি উপযোগী কৌশল।
আইসিসির সর্বশেষ র্যাংকিং বলছে, টি-টোয়েন্টিতেও ১০ নম্বরে নেমে গেছে বাংলাদেশ। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই সম্মান বাঁচাতে হলেও আজ জয়ের বিকল্প নেই লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। আজকের ম্যাচের পারফরম্যান্সেই জানা যাবে, শেষ পর্যন্ত ধবলধোলাই এড়াতে পারে কি না বাংলাদেশ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধবলধ ল ই
এছাড়াও পড়ুন:
খেলার নামে আদম পাচার ঠেকাতে তৎপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ
বিদেশে খেলোয়াড় পাঠানোর নামে মানব পাচারের ঝুঁকি রোধ এবং যোগ্য খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত করতে নতুন নিয়ম চালু করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। ৯ অক্টোবর এনএসসি এক চিঠিতে ফেডারেশনগুলোকে জানিয়েছে, এখন থেকে বিদেশে ক্রীড়া দল পাঠানোর আগে ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে ফ্লাইটের কমপক্ষে ১০ দিন আগে জিওর (সরকারি আদেশ) জন্য প্রস্তাব পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচিত খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও পারফরম্যান্স–সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্রও এনএসসিকে দিতে হবে।
অভিযোগ আছে, কিছু ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন অনেক বছর ধরেই দলের সঙ্গে ভুয়া খেলোয়াড়-কর্মকর্তা পাঠিয়ে আদম পাচার করে আসছে। দুই একটা ঘটনা সামনে এলেও এসবের বেশির ভাগই থেকে যায় আড়ালে। ছোট খেলাগুলো থেকেই এ ধরনের অভিযোগ বেশি আসে। এনএসসির একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত এ ধরনের অপকর্ম ঠেকাতেই বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ফ্লাইটের অন্তত ১০ দিন আগে জিওর প্রস্তাব পাঠানোর নিয়ম করা হয়েছে। এনএসসির পরিচালক (ক্রীড়া) আমিনুল এহসান সরাসরি তা না বললেও তাঁর কথায়ও সে আভাস আছে, ‘আমি বলব না শুধু আদম পাচার রোধ করতে এই নিয়ম করেছি। তবে কোথাও কোথাও এসব খেলার নামে মানব পাচারের প্রশ্ন চলে আসে।’
অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।ফারহাদ জেসমিন, সাবেক অ্যাথলেট ও বিএও অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যানএনএসসির কাছে ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন এত দিন জিওর জন্য খেলোয়াড়দের নামই শুধু পাঠাত। যাঁর নাম দেওয়া হতো, তিনি আসলেই খেলোয়াড় কি না বা খেলোয়াড় হলে তাঁর যোগ্যতা কী বা যোগ্য কাউকে বাদ দিয়ে অযোগ্য কাউকে নেওয়া হচ্ছে কি না, এসব যাচাই–বাছাই করা হতো না। এনএসসি তাই জানত না কিসের ভিত্তিতে একজন খেলোয়াড়কে দলে নির্বাচিত করা হয়েছে। নতুন নিয়মে এনএসসিকে এসব দিতে হবে।
জিওর জন্য আবেদনকারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে সময় লাগে বলে ১০ দিন আগে তালিকা চাওয়ার যুক্তি আছে। কিন্তু পারফরম্যান্স আর ফিটনেসের তথ্যপ্রমাণও পাঠানোর নিয়মটা একটু অভিনবই, যা নিয়ে অবশ্যই নানা রকম প্রশ্ন তোলা যায়। তবে জিওর জন্য ফ্লাইটের ১০ দিন আগে নাম চাওয়ার নিয়মটাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক অ্যাথলেট ফারহাদ জেসমিন লিটি বলেছেন, ‘অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।’
আরও পড়ুনবিশ্বকাপের আগে সৌদি লিগে খেলতে চেয়েছিলেন মেসি, সৌদি সরকারের ‘না’১১ ঘণ্টা আগেআদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।ক্রীড়াঙ্গনে স্বজনপ্রীতি ঠেকাতেও এ নিয়ম ভূমিকা রাখবে বলে ফারহাদ জেসমিনের আশা, ‘অনেক ফেডারেশন অনেক সময় যোগ্যতার বিচার না করে নিজেদের পছন্দের খেলোয়াড় নিয়ে যায়। দেখে মনে হয়, বিদেশভ্রমণই মুখ্য, পারফরম্যান্স মুখ্য নয়।’ বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, ‘এটা ভালো উদ্যোগ। কারণ, এনএসসির জানার অধিকার আছে, বিদেশে টুর্নামেন্টে আমরা কাদের নিয়ে যাচ্ছি।’ সম্প্রতি হকি তারকা রাসেল মাহমুদকে বয়সের অজুহাতে বাদ দেয় হকি ফেডারেশন। এ নিয়ে সমালোচনা হলে এনএসসিকে বিষয়টি তদন্তও করতে হয়।
এনএসসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেট-ফুটবলসহ সব খেলাতেই বিদেশে দল পাঠানোর জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। কিন্তু আদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।
আরও পড়ুনআগে চা পরে লাঞ্চ—বদলে যাচ্ছে ক্রিকেটের শতবর্ষ পুরোনো এক রীতি১৫ ঘণ্টা আগেএনএসসির পরিচালক আমিনুল এহসান অবশ্য তা মনে করেন না, ‘প্রায় প্রতিদিনই এনএসসির কাছে অনেক খেলোয়াড় অভিযোগ করেন, কোনো না কোনো কর্মকর্তার অপছন্দের কারণে নাকি তিনি দল থেকে বাদ পড়েছেন। এ কারণেই খেলোয়াড় নির্বাচনের তথ্যগুলো এনএসসির জানা থাকলে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে একটা উত্তর দেওয়া যায়। এটা ফেডারেশনের কাজে হস্তক্ষেপ নয়। স্বচ্ছতার স্বার্থে এনএসসি তা জানতে চাইতে পারে।’