বাড়ি ছেড়েছিল কিশোর-কিশোরী, থানায় আনার পর কিশোরের আত্মহত্যার চেষ্টা
Published: 2nd, June 2025 GMT
ছেলে–মেয়ে দুটি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সম্পর্কে তারা চাচাতো ভাই–বোন। ভালোবেসে বিয়ে করতে তারা বাড়ি ছেড়ে গিয়েছিল। নিখোঁজ মেয়ের জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন বাবা।
এরপর ছেলে–মেয়ে দুজনকে উদ্ধার করে থানায় আনে পুলিশ। তাদের বসিয়ে রাখা হয়েছিল নারী-শিশু হেল্প ডেস্কের পৃথক দুটি কক্ষে। বাইরে চলছিল দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার আলোচনা। এরই মধ্যে কক্ষের জানালার পর্দা দিয়ে বৈদ্যুতিক পাখার (ফ্যান) সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই কিশোর। বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশ দরজার ছিটিকিনি ভেঙে তাকে উদ্ধার করে।
পঞ্চগড় সদর থানায় গতকাল রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। ওই কিশোর পুলিশি পাহারায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আত্মহত্যার চেষ্টা করা ওই কিশোর (১৭) পঞ্চগড় পৌরসভার একটি মহল্লার বাসিন্দা। আর ওই কিশোরী (১৭) পঞ্চগড় সদর উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা। তারা পৃথক দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তারা দুজন সম্পর্কে চাচাতো ভাই-বোন (দুজনের বাবা মামাতো-ফুফাতো ভাই)।
পুলিশ ও কিশোর-কিশোরীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিকটাত্মীয় সমবয়সী ওই কিশোর-কিশোরী প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত বুধবার দুজনেই বাড়ি থেকে চলে যায়। এরই মধ্যে ওই কিশোরীর বাবা পঞ্চগড় সদর থানায় মেয়ে নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন। বৃহস্পতিবার মেয়েটিকে নিয়ে ওই কিশোর তাঁর বাড়িতে ওঠে; জানায় তারা বিয়ে করেছে। বিষয়টি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। পরে মেয়েটির বাবার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রোববার দুপুরে ওই কিশোরের বাড়ি থেকে তাদের দুজনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ। পরে তাদের দুজন নারী-শিশু হেল্প ডেস্কের পৃথক দুটি কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। এ সময় কক্ষের বাইরে পাহারায় ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। এরই মধ্যে হঠাৎ করে ওই কিশোর কক্ষের ভেতর থেকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেয়। সন্দেহ হলে জানালা দিয়ে পুলিশ সদস্যরা দেখেন ওই কিশোর চেয়ারের ওপরে উঠে জানালার পর্দা দিয়ে বৈদ্যুতিক ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁসি দিচ্ছে। এ সময় তাঁদের চিৎকারে অন্যান্য পুলিশ সদস্যসহ ওই কিশোরের স্বজনেরা ছুটে এসে দরজার ছিটকিনি ভেঙে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
ওই কিশোরের বাবা অটোরিকশাচালক। গতকাল রাতে তিনি বলেন, ‘মেয়েটির বাবা আমার মামাতো ভাই। ছেলে-মেয়ে কীভাবে কী করেছে আমি জানি না। বৃহস্পতিবার তারা দুজন আমার বাড়িতে আসে। পরে আমি মেয়ের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। মেয়ের পরিবার আমাদের পরিবারের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল। এ জন্য হয়েতো তারা প্রথমে মেনে নিতে চাইছিল না। আজ (রোববার) দুপুরে ছেলে-মেয়ে দুজনকেই পুলিশ থানায় নিয়ে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে থানায় আমাদের দুই পরিবারের সমঝোতার আলোচনা চলছিল। এরই মধ্যে ছেলেটা এমন ঘটনা ঘটাল।’
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রেজওয়ান উল্ল্যাহ বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে একজন কিশোরকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। রোগীর সঙ্গে আসা লোকজন জানিয়েছেন, সে গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। তবে আমরা কোনো দাগ বা ইনজুরি পাইনি। তবে রোগী এনজাইটিতে ভুগছিল; সে ঘাবড়ে গিয়েছিল। আমরা তার চিকিৎসা দিয়েছি এবং পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’
গতকাল রাতে পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ হিল জামান বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় দুজনকেই নারী-শিশু হেল্প ডেস্কের পৃথক দুটি কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। সেখানে পুলিশ পাহারা দিচ্ছিল। হঠাৎ করেই ছেলেটি ভেতর থেকে ছিটকিনি আটকিয়ে জানালার পর্দা দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগানো শুরু করে। বিষয়টি দেখতে পেয়ে ওই কিশোরের স্বজনদের উপস্থিতিতে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুজনের পরিবার তাদের জিম্মায় নিতে চেয়েছে। কারও কোনো অভিযোগ না থাকায় তাদের দুজনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ওই ক শ র র র পর ব র পর ব র র গতক ল র র দ জন ব ষয়ট দ জনক
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।
সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।
স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা