নারী সংসদ সদস্য: সংরক্ষিত নাকি সরাসরি ভোটে?
Published: 2nd, June 2025 GMT
শিক্ষার্থী-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের পর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন রাজনীতিতে নারীদের সক্রিয় উপস্থিতি ও নেতৃত্ব। ‘নতুন বাংলাদেশ’ নারীদের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ দাবি করে, বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত থাকলেও এ বিষয়ে গণতান্ত্রিক সব পক্ষ মোটাদাগে একমত। তাঁরা মনে করেন, এখন সময় এসেছে জুলাই অভ্যুত্থানে সম্মুখসারির নারী যোদ্ধাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পদ্ধতি পরিবর্তনের অগ্রসৈনিকে পরিণত করার।
আমিও মনে করি, জুলাই যে কয়টা জং ধরা দরজা খুলে দিয়েছে, তার মধ্যে নারীদের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ অন্যতম। জুলাই–পরবর্তী কোনো রাজনৈতিক দল, নতুন বা পুরোনো, কেউই নারীদের ছাড়া বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য রাজনীতি করতে পারবে না। বিগত দশকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বড় বড় নারী নেত্রীর আধিপত্য দেখা গেলেও তাঁরা বেশির ভাগই পারিবারিক সূত্রে সেই পথ ধরে হেঁটে দেশ শাসন করেছেন।
একজন সাধারণ নারী তাঁর মেধা, দক্ষতা, যোগ্যতা দিয়ে রাজনীতিতে আসতে পারবেন, দেশ পরিচালনায় অংশ নিতে পারবেন, সে রকম কোনো পথ আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নেই বা কখনো তৈরি হয়নি। নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার, নারীর স্বাধীনতা—এসব শব্দে বা এসব বিষয়ে সভা, সেমিনার, পত্রপত্রিকা মুখর থাকলেও আদতে আমাদের রাজনৈতিক মহল নারীকে কখনো সামনে আসতেই দেয়নি।
পেছন দিকে তাকালে, আশানুরূপ সফল নারী রাজনীতিবিদ আমরা দেখতে পাই না। বড় বড় রাজনৈতিক দল স্বজনপ্রীতির বাইরে গিয়ে তৃণমূল থেকে নারী তুলে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। দলীয় নীতিনির্ধারক পর্যায়ে নারী রাজনীতিবিদদের উপস্থিতি প্রায় শূন্য। রাজনৈতিক দল ও সংসদে উভয় ক্ষেত্রেই নারীরা ‘শোভাবর্ধনকারী’ হিসেবে জায়গা পেয়েছেন।
কিন্তু জুলাই–পরবর্তী প্রেক্ষাপট ভিন্ন। গত বছরের ১৪ জুলাই রাতে যখন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ নারীরা রাজপথে নেমেছিলেন, সেদিনই ঠিক হয়ে গিয়েছিল স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পরিণতি। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যেসব নারীর মধ্যে রাজনৈতিক স্পৃহা তৈরি হয়েছে, যেসব তরুণ, পরিশ্রমী, মেধাবী নারী দেশ পুনর্গঠনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে চাইছেন, তাঁরা নিজেদের রাজনীতিতে যুক্ত করছেন। নারীদের সাধারণত ‘অ্যাকটিভিস্ট’ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু বর্তমানে নারীরা তা থেকে বের হয়ে ইতিমধ্যে মূলধারার রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
নারী নেতৃত্বে যে আমূল পরিবর্তন আসছে, সে আভাস নতুন বাংলাদেশ পেয়ে গেছে। শুধু নারীদের জন্য নয়, নারী হয়ে আপামর জনগণের জন্য কাজ করার প্রত্যয় বর্তমান নারী রাজনীতিবিদদের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে। পুরোনো অস্বাস্থ্যকর রাজনৈতিক সংস্কৃতি রাতারাতি পরিবর্তন হবে না, এটা জেনেবুঝে নারীরা শুধু সাহসী পদক্ষেপই নিচ্ছে না; বরং সেকেলে, অচল সংস্কৃতি পরিবর্তনেও বদ্ধপরিকর। এর একটা দৃষ্টান্ত দেখা যায় নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির দিকে তাকালে। যে দল আত্মপ্রকাশই করেছে একঝাঁক নারী নেতা নিয়ে, যাঁরা বিভিন্ন পটভূমি ও পেশা থেকে উঠে এসেছেন।
২.বাংলাদেশ জন্মের পর ১৯৭২ সালের সংবিধানে সংসদে নারীদের জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষিত রাখার বিধান করা হয়। পরবর্তী সময় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের মধ্য দিয়ে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০–এ উন্নীত করা হয়, যেটা এখনো চলছে। এর পাশাপাশি সাধারণ আসনেও নারীরা পুরুষদের মতো নির্বাচন করতে পারবেন। নারীদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখার পেছনে তখন উদ্দেশ্য ছিল অসম রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে নারীদের জন্য রাজনীতিতে এগিয়ে আসার পথ তৈরি করা। যাতে পরে এই সংরক্ষিত আসন ছাড়াও সাধারণ আসনগুলোতেও নারীদের প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ ধীরে ধীরে বাড়ে আর একসময় সংরক্ষিত আসনেরই প্রয়োজন না পড়ে।
১৯৭২ সালে এ রকম প্রত্যাশা নিয়ে সংসদ যাত্রা করলেও ২০২৫ সালে এসেও আমরা সেই প্রত্যাশা থেকে অনেক দূরে। তার অন্যতম কারণ, যেকোনো দল সংসদে প্রাপ্ত মোট আসনের অনুপাতে সংরক্ষিত নারী আসনে আসন লাভ করে থাকেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সংরক্ষিত আসনে তাঁদেরই মনোনয়ন দেয়া হয়, যাঁরা দলীয় নেতাদের সুনজরে থাকেন। আনুগত্য বা তোষামোদের পুরস্কার হিসেবে তাঁদের মনোনীত করা হয়।
তার মানে হলো, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের ৫০ জনকে সত্যিকারের নির্বাচিত বলা যায় না। তাঁদের কোনো নির্বাচনী এলাকা থাকে না, তাঁদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা থাকে না, তাঁরা দলীয় নেতাদের দ্বারা নিযুক্ত হন। অর্থাৎ পুরুষ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন জনগণের ভোটে আর নারী সংসদ (সংরক্ষিত আসনে) নির্বাচিত হবেন পুরুষ সংসদ সদস্যের দ্বারা। এটি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ভীষণ রকমের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।
প্রশ্ন জাগতে পারে, নারী কেন পুরুষের মতো সাধারণ আসনে নির্বাচন করতে পারেন না? পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচনের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৯৭৩ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারণ আসনে অংশগ্রহণকারী নারী প্রার্থীর সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল। ৫৩ বছরের ইতিহাসে কেবল ২০১৮ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ নারী সাধারণ আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হলেও মোট ৩৫০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৫০টি তথা ১৪ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা অবশ্যই বৈষম্যমূলক। কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া হাসিনার পতনের পর সংসদে নারী আসনের ক্ষেত্রে সিলেকশন মডেলের কোটা প্রথা একেবারেই মানানসই নয়। যে উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালে সংরক্ষিত নারী আসন করা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য গত ৫৩ বছরে কোনো রাজনৈতিক দল হাসিল করতে দেয়নি। নারীর ক্ষমতায়নের নামে নারীদের দমন করেছে, নারীকে দেখানো হয়েছে ‘পিছিয়ে পড়া অবলা জনগোষ্ঠী’ হিসেবে। অন্যদিকে বাস্তবতা হচ্ছে, কাঠামোগত বৈষম্যের মধ্য দিয়ে নারীকে পিছিয়ে রাখা হয়েছে।
হাসিনা পতনের পর নতুন বাংলাদেশে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। নারীদের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি কাঙ্ক্ষিত। সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন—উভয় কমিশনই সংসদের আসন বাড়িয়ে ৪০০ করে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ১০০–তে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি এসব আসনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নারী প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য তাদের নিজ নিজ প্রস্তাবে সুপারিশ করেছে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন চেয়েছে প্রচলিত পদ্ধতিতে সরাসরি ভোটে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচন। পদ্ধতি যেটাই হোক, এ সুপারিশের মানে হলো এসব আসনে শুধু নারীরা প্রার্থী হবেন, তাঁদের মধ্যে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা হবে আর জনগণ ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচিত করবেন। দলীয় বাছাইয়ের পরিবর্তে জনগণের ভোটে নারী প্রার্থী নির্বাচিত হবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কেবল এনসিপি এই সুপারিশের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে।
সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি এবারই প্রথম উঠেছে, তা নয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের লেখা জাতীয় সংসদ: নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন বইয়ের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, আশির দশকে বিভিন্ন নারী সংগঠন এ দাবি তুলেছিল। পরবর্তী সময় ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর দেশে যখন নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়, তখন ‘ঐক্যবদ্ধ নারী সমাজ’ নামে ১৯টি নারী সংগঠন (বাংলাদেশ মহিলা সমিতি ছাড়া) একযোগে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারী সংসদ সদস্যের দাবি তুলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তৎকালীন দলীয় প্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল।
বড় দুই দলের তৎকালীন দুই প্রধান নারী হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা এ প্রস্তাবে সাড়া দেননি। দুই দলই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করেছে। কিন্তু সংবিধানের ৬৫(২) ধারার সুবিধা নিয়ে নিজ দলের নারীদের সংরক্ষিত আসনে বসিয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, ২০২৫ সালে এসেও বিএনপি সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের বিরোধিতা করছে। আমরা দেখে এসেছি, এই সংরক্ষিত নারী আসনের নামে দলীয় প্রভাবশালী পুরুষ নেতাদের স্ত্রী-কন্যাদের মনোনয়ন দেওয়া হতো। এসব সংরক্ষিত আসনে নারীরা জনগণের প্রতি নয়, দলের নেতার প্রতি অনুগত থাকেন। জনগণের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হলে শুধু অলংকার হয়ে বসে না থেকে নির্বাচিত পুরুষ প্রতিনিধিদের মতো নারীরাও একই ক্ষমতা প্রয়োগ, একই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ পাবেন, সমস্যা সংসদে পেশ করতে পারবেন; সর্বোপরি জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত হবে। ফলে এটি হবে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে নারীদের সাধারণ আসনে প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি পাবে।
নারীদের জন্য রাজপথের আন্দোলন থেকে মূলধারার রাজনীতিতে যাওয়ার পথ সুগম, স্বচ্ছ, নিরাপদ করার দায়িত্ব আমাদের সবার; আর সেটা দেশের স্বার্থে। নারীর সক্রিয় ও সরব উপস্থিতিই জুলাইয়ের ‘স্পিরিট’। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায় থেকে নেতৃত্ব উঠে আসবে। অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে স্থানীয় পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব গ্রামীণ উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে। গ্রামীণ সমাজের মানুষের সমস্যা সম্পর্কে একজন স্থানীয় নেতা যতটা ভালো বুঝবেন, শহর থেকে একজন নেতার ততটা বোঝার কথা নয়।
বড় বড় রাজনৈতিক দল এখনো নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে সংরক্ষিত নারী আসনে বসিয়ে সংসদে দল ভারী করার পক্ষে। লক্ষণীয় হলো, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের নির্দেশনায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ৪৬ হাজার জনের ওপর এক জরিপ করে, যাতে ৭৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ মানুষ নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকা থেকে নারীদের সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। অন্তত ৩০ থেকে ৪০ বছর আগেও যদি এটা শুরু হতো, বাংলাদেশে রাজনৈতিক ইতিহাসে আমরা অনেক বলিষ্ঠ নারী নেতৃত্ব পেতাম।
নারীরা যখনই দায়িত্বশীল পদে গেছেন, তখনই দুর্নীতি কমেছে, স্বচ্ছতা বেড়েছে, গণতন্ত্রের অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে—বিভিন্ন দেশের বাস্তবতায় করা জরিপ থেকে এই বার্তা পাওয়া যায়। নারীদের অপেক্ষাকৃত বেশি মজলুমের পক্ষে কথা বলতে, রাজনীতি করতে, নীতি নির্ধারণে সমর্থন করতে দেখা যায়।
গত পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে শ্রমিকের মজুরি আদায়েও নারীদের রাজপথে বেশি দেখা গেছে। সরাসরি ভোটে নারী আসন ছাড়াও উচ্চকক্ষে ৩০ শতাংশ নারীর মনোনয়ন দেওয়ার সুপারিশ করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এতে প্রায় একমত পোষণ করে এনসিপি সুপারিশ করেছে ২৫ শতাংশ নারীর মনোনয়ন দেওয়ার জন্য এবং নির্বাচনের আগে উচ্চকক্ষের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করার জন্য।
৩.বাংলাদেশের সংসদীয় ইতিহাসে যুগে যুগে সংরক্ষিত নারী আসনসংখ্যা বৃদ্ধিকেই নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে। শুধু এই আসনসংখ্যা বাড়লেই কি নারীর ক্ষমতায়ন হবে? অতীতের অভিজ্ঞতা কিন্তু নেতিবাচক।
২০০৮ সালের আগে বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নারী নেতৃত্বের হার ছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের নিচে। পরবর্তী সময় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ২০০৮ সংশোধনের মাধ্যমে সেটা ৩৩ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়; শতাংশ যা–ই হোক, বাস্তবচিত্র একই।
প্রচলিত ধারণা মোতাবেক, রাজনীতি পুরুষের কাজ। পুরুষ প্রভাবিত ক্ষমতা ব্যবস্থাপনায় নারীদের রাজনীতি করার অনেক বাধার মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষার অভাব, রাজনৈতিক সচেতনতার অভাব, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ও দারিদ্র্য।
আসনসংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনা খুব প্রয়োজন। বাইরের দুনিয়ার সংগ্রাম নারীর জন্য যতই প্রতিকূল হোক না কেন, নারী কখনোই ঘর সামলানো থেকে বিরত থাকেনি। নারীর গার্হস্থ্য শ্রমের অর্থনৈতিক মূল্য ধর্তব্যে আনলে দেখা যাবে, ঘরে-বাইরে মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে নারীর অবিস্মরণীয় অবদান রয়েছে।
নারীদের জন্য রাজপথের আন্দোলন থেকে মূলধারার রাজনীতিতে যাওয়ার পথ সুগম, স্বচ্ছ, নিরাপদ করার দায়িত্ব আমাদের সবার; আর সেটা দেশের স্বার্থে। নারীর সক্রিয় ও সরব উপস্থিতিই জুলাইয়ের ‘স্পিরিট’। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। গুণগত ও সংখ্যাগত—সবভাবেই রাজনীতিতে নারীদের উপস্থিতি বাড়াতে হবে। নারীশক্তিকে আমলে না নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলই এখন এগোতে পারবে না।
তাজনূভা জাবীন যুগ্ম আহ্বায়ক, জাতীয় নাগরিক পার্টি
*মতামত লেখকের নিজস্ব
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স রক ষ ত ন র দ র র জন ত ক ন র দ র জন র জন ত ক স র র জন ত ত ন র ব চনব ব যবস থ উপস থ ত জনগণ র পরবর ত ন র পর র জন য র মন ন পর য য় ন র জন প রব ন আম দ র নত ন ব আসন র র জপথ
এছাড়াও পড়ুন:
‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।
আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।
আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।
রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।