সাভারে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। গতকাল সোমবার সকালে বসুন্ধরা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ বিক্ষোভ চলাকালে মহাসড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন। পরে শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এর আগে রোববার হেমায়েতপুর-সিংগাইর মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা।
অবরোধকারীরা জানান, হেমায়েতপুর ঋষিপাড়া এলাকার বসুন্ধরা গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা এপ্রিল ও মে মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পাননি। এ জন্য প্রথমে তারা গত রোববার কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে সোমবারের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের সময়সীমা নির্ধারণ হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধে তারা সরে যান। সোমবারও কর্মস্থলে গিয়ে তারা কোনো সুখবর পাননি। পরে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
অবরোধের খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তারা সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দেন। পরে পুলিশ জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
কারখানা শ্রমিক শিল্পী আক্তার বলেন, আমরা এপ্রিল ও মে মাসের বেতন পাব। কারখানা মালিক বারবার বেতনের তারিখ দিলেও পরিশোধ না করে গা-ঢাকা দিয়েছেন।
শ্রমিক সুমন মিয়া বলেন, বারবার তারিখ দিয়েও মালিকপক্ষ দুই মাসের বকেয়া বেতন দিচ্ছে না। সেনাবাহিনী কয়েকবার মালিককে কারখানায় এনে বেতন দেওয়ার তারিখ ঘোষণা করালেও নির্ধারিত তারিখে বেতন দেয়নি। সামনে ঈদ। বেতন-বোনাস না পেলে কী করব?
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাভার থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন বলেন, ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস না দিলে তারা চলবে কীভাবে, ঈদ করবে কীভাবে? দুই মাসের বেতন পাবে শ্রমিকরা। কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ থাকবে, তারা যেন দ্রুত শ্রমিকদের পাওনা টাকা পরিশোধ করেন।
বেতন পরিশোধের বিষয়ে জানতে কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর সঙ্গে মোবইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। আমরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। পরে পুলিশ বাধ্য হয়ে টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে ও জলকামান ব্যবহার করে অবরোধকারী শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বসুন্ধরা পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ গত ১৭ মে এক নোটিশে পরদিন ১৮ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত কারখানা লে-অফ ঘোষণা করে। নোটিশে শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের বকেয়া বেতন ২৫ মে পরিশোধ করা হবে বলে জানানো হয়। ওই দিন দুপুরে শ্রমিকরা বকেয়া বেতন নিতে কারখানায় আসেন। তবে কারখানার মালিকপক্ষ বা কর্মকর্তাদের কেউ না আসায় ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকরা বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কারখানাসংলগ্ন হেমায়েতপুর-সিংগাইর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ ও সেনাসদস্যদের উপস্থিতিতে ২৯ তারিখ বকেয়া বেতন পরিশোধের সময় দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর পরই মালিক মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর শ ধ
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবেশ রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এখানকার বনজ, জলজ ও খনিজ সম্পদের বৈচিত্র্য আমাদের জীবনধারার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। তবে শিল্পায়ন, নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অসচেতনতা পরিবেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এই প্রেক্ষাপটে পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এসব আইন কতটা কার্যকর, কতটুকই-বা প্রয়োগ করা হচ্ছে? এসব আইন সম্পর্কে জনসচেতনতার যেমন অভাব, তেমনি আছে প্রায়োগিক সীমাবদ্ধতা।
পরিবেশ রক্ষায় আইনের মধ্যে আছে– বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত)। এটি পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (ইআইএ), শিল্পকারখানার অনুমোদন প্রভৃতি বিষয়ে নির্দেশনা দেয়। দ্বিতীয়ত, বন আইন, ১৯২৭ ও সংশোধনীসমূহ, যা বনভূমি সংরক্ষণ এবং অবৈধ বন উচ্ছেদ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তা ছাড়া ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ বায়ুদূষণ রোধে ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩-ও প্রাসঙ্গিক। এটি নদী, খাল, জলাশয় সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আইন, যা জনগণের পানির অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। তা ছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১ কঠিন ও বিপজ্জনক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
উল্লিখিত আইনগুলোতে পুলিশ বা অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সরাসরি কর্তৃত্ব আংশিকভাবে উল্লেখ রয়েছে, তবে তা সাধারণত সহায়ক ভূমিকার পর্যায়ে সীমাবদ্ধ। যেমন বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুসারে পরিবেশ অধিদপ্তরই পরিবেশ সংরক্ষণের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে এ আইনের ৪ক(১) উপধারা অনুসারে, এই আইনের অধীন কোনো ক্ষমতা প্রয়োগ বা কার্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক বা তাঁর কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা অন্য কোনো সরকারি বা সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করতে পারবেন এবং এইরূপ অনুরোধ করা হলে এই সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ সহায়তা প্রদান করবে।
বন আইন, ১৯২৭-এর ৫২ ধারা অনুসারে পুলিশ কর্মকর্তা বাজেয়াপ্তযোগ্য সম্পত্তি জব্দ করতে পারবেন; ৬৪ ধারা অনুসারে পরোয়ানা ব্যতীত অপরাধ সংঘটনকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন; ৬৬ ধারা অনুসারে যে কোনো বন অপরাধ সংঘটনে বাধা প্রদান করতে পারবেন। এই আইনের ৭৯ ধারা অনুসারে বন সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় জনগণ পুলিশ অফিসারকে তথ্য প্রদান এবং গ্রেপ্তারে সহায়তা করবে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-তে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক স্বয়ং বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট জেলার কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বা তৎকর্তৃক মনোনীত কোনো বন কর্মকর্তাকে আইন প্রয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এ আইনের অধীন অনুসন্ধান কমিটি, ইট প্রস্তুত নিষিদ্ধকরণ, লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্সের শর্ত ও মেয়াদ পর্যবেক্ষণ, লাইসেন্স স্থগিত ও বাতিলকরণ, ইটভাটা পরিদর্শন এবং আইনের ধারা লঙ্ঘন ও অপরাধ আমলে নেওয়া, তদন্ত করা;
সর্বোপরি এ আইন প্রয়োগের কোনো ক্ষেত্রেই পুলিশ তথা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩-তে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সদস্য কর্তৃক নির্বাচিত নির্বাহী কমিটিকে আইন প্রয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এ আইনের ৯ নম্বর ধারা বিশ্লেষণে দেখা যায়, নির্বাহী কমিটিতে ১৫টি মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন অধিদপ্তর সদস্য থাকলেও আইন প্রয়োগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী কোনো সংস্থাকে এ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১-এ পরিবেশ অধিদপ্তর এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে এই বিধিমালা প্রয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, যেখানে পুলিশের ভূমিকার উল্লেখ নেই।
সার্বিকভাবে দেখা যায়, পরিবেশসংশ্লিষ্ট অধিকাংশ আইনে পুলিশকে পরোক্ষভাবে সহায়ক ভূমিকায় রাখা হয়েছে, তবে সরাসরি ক্ষমতা সীমিত। এ কারণে এসব আইন বাস্তবায়নে প্রশাসনিক সমন্বয় অপরিহার্য।
প্রচলিত পরিবেশ আইনগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিতকল্পে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ক্ষমতা প্রদান করে যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিবেশ আইনের কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় সরকার ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে পরিবেশ সংরক্ষণের কাজকে শক্তিশালী করতে হবে। শিক্ষা ও প্রচারের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাজেট ও প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষ, আইনজীবী, ভুক্তভোগী কর্তৃক সরাসরি অভিযোগ এবং পুলিশ কিংবা সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিবেশ আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ গ্রহণ, তা অনুসন্ধান এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মামলা করার বিধান প্রবর্তন করা যেতে পারে।
মো. শাহ্জাহান হোসেন, পিপিএম: উপ-পুলিশ কমিশনার ,সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন
বিভাগ, ডিএমপি, ঢাকা
princeofbuilders@gmail.com