১৩ লাখ ২০ হাজার টন জ্বালানি তেল কিনবে সরকার
Published: 3rd, June 2025 GMT
আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৫ সময়ের জন্য ১৩,২০,০০০ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি করবে সরকার।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে জি-টু-জি ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্রের (টেন্ডার/কোটেশন) ভিত্তিতে বিভিন্ন গ্রেডের জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভার সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে বিপিসি মোট জ্বালানি তেলের চাহিদার ৫০% আন্তর্জাতিক দরপত্রের (কোটেশন) মাধ্যমে এবং অবশিষ্ট ৫০% জি-টু-জি প্রক্রিয়ায় আমদানি করে থাকে।
দেশে জ্বালানি তেলের সরবরাহ উৎস বহুমুখীকরণ, সরবরাহ লাইন-আপ অধিকতর নিশ্চিতকরণ এবং প্রতিযোগিতামূলক দর প্রাপ্তির লক্ষ্যে আমদানিতব্য জ্বালানি তেলের পরিমাণকে ৪টি প্যাকেজে (এ, বি, সি এবং ডি) বিভক্ত করে জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৫ সময়ের জনা আন্তর্জাতিক দরপত্র (কোটেশন) আহ্বান করা হয়। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি ২৭-০৪-২০২৫ তারিখে ২টি ইংরেজি, ৩টি বাংলা জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, ১টি স্থানীয় পত্রিকা এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, বিপিসি ও বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) এর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
আরো পড়ুন:
কমল ডিজেল-অকটেন-পেট্রোলের দাম, কেরোসিনে বেড়েছে ১০ টাকা
বিমানের ফুয়েলের দাম কমল, রাত ১২টা থেকে কার্যকর
এছাড়া, বাংলাদেশে অবস্থিত তেল সমৃদ্ধ দেশের দূতাবাস ও মিশনকে ই-মেইলে দরপত্র (কোটেশন) বিজ্ঞপ্তি পাটানো হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিপিসির চট্টগ্রামে প্রধান কার্যালয় এবং ঢাকাস্থ লিয়াজোঁ অফিস হতে মোট ১৩টি দরপত্র দলির বিক্রয় করা হয়।
জানুয়ারি-জুন ২০১৫ সময়ে উন্মুক্ত দরপত্র (কোটেশন) ভিত্তিতে ১৩,২০,০০০ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানির অনুমতির বিপরীতে ২০২৫ জুন মাসের সম্ভাব্য আমদানিতব্য পরিমাণসহ জানুয়ারি-জুন ২০২৫ সময়ে আন্তর্জাতিক দরপত্র (কোটেশন) ভিত্তিতে প্রায় ১২,৪০,০০০ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে।
উল্লেখ্য, জ্বালানি তেলের ব্যবহার কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় অনুমোদিত পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানির প্রয়োজন হয়নি। দেশে জ্বালানি তেলের ব্যবহার হ্রাস-বৃদ্ধি, আগামী অক্টোবর হতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কার্যক্রম ও নভেম্বর হতে কৃষিসেচ মৌসুম শুরু হলে এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ফার্নেস অয়েল গ্রহণ প্রবণতাসহ পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিতকরণে জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৫ প্রান্তিকে আন্তর্জাতিক দরপত্র (কোটেশন) প্রক্রিয়ায় ১২.
একটি একক দরপত্রের মাধ্যমে ৪টি প্যাকেজের আওতায় জ্বালানি তেল ক্রয়ের প্রক্রিয়া প্রহণ করা হয়। দর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক একটি দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে (বিডা) ৪টি প্যাকেজের সবকটি অথবা যেকোনো সংখ্যক প্যাকেজের জন্য দরপ্রস্তাব করার সুযোগ রাখা হয়। দরপত্র দলিলের ক্লজ-৬ অনুযায়ী প্যাকেজ ‘এ’ এবং প্যাকেজ ‘বি’তে আলাদাভাবে ওয়েটেড অ্যাবরেজ (প্যাকেজভিত্তিক মোট প্রিমিয়াম মার্কিন ডলার-মোট সর্বোচ্চ পরিমাণ ব্যারেল) অনুযায়ী এবং প্যাকেজ ‘সি’ এবং ‘ডি’-তে ১টি করে পণ্য হওয়ায় প্রস্তাবিত দর অনুযায়ী সর্বনিম্ন দর নির্ধারণ করা হয়েছে।চাহিদার বিপরীতে আমদানিতব্য পরিমাণে ফ্লেক্সিবিলিটির বিষয় বিবেচনা করে দরপত্র প্রক্রিয়ায় গ্যাস অয়েল, ফার্নেস অয়েল ও গ্যাসোলিন পার্সেল আমদানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সীমা রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা বিবেচনা করে জ্বালানি তেলের মূল্য (প্রিমিয়ামের ভিত্তিতে) নির্ধারণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পরিমাণ বিবেচনা করা হয়েছে। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি অনুসারে দরপত্র দাখিলের সর্বশেষ সময় ০৭-০৫-২০২৫ এর মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠান হতে দরপ্রস্তাব পাওয়া যায়। দরদাতার মনোনীত প্রতিনিধি ও উন্মুক্তকরণ কমিটির সব সদস্যের উপস্থিতিতে দরপত্র খোলা হয়। প্রাপ্ত ৯টি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের দরপ্রস্তাব হতে প্রাথমিক মূল্যায়নে ৮টি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব প্রাথমিকভাবে প্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়নে একটি প্রতিষ্ঠান অযোগ্য বিবেচিত হয়। এ প্রেক্ষিতে ৮টি গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠানসমূহ প্যাকেজ এ-তে ৬টি, প্যাকেজ বি তে ৪টি, প্যাকেজ সি তে ৫টি এবং প্যাকেজ ডি তে ৬টি গ্রহণযোগ্য দরপ্রদান দাখিল করে। ৪টি প্যাকেজের গ্রহণযোগ্য দরদাতা প্রতিষ্ঠানের প্যাকেজভিত্তিক প্রাপ্ত দর প্রস্তাবসমূহের তুলনামূলক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়েছে।প্রাপ্ত দরপ্রস্তাবের সাথে টেন্ডার সিকিউরিটি হিসেবে ৯টি প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত বিডবডের সঠিকতা বিপিসি নিশ্চিত করেছে। দরপ্রস্তাবের বৈধতার মেয়াদ ৩০-০৯-২০২৫ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
১২-০৫-২০২৫ অনুষ্ঠিত মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক দাখিলকৃত কোটেশনের কারিগরি ও আর্থিক বিষয়াদি পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মূল্যায়ন প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। প্রাথমিক মূল্যায়নে প্রহণযোগ্য ৬টি প্রস্তাব হতে কারিগরি মূল্যায়নে ৮টি প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত প্রস্তাব প্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রস্তাবিত প্রিমিয়াম তথা নিরুপিত ওয়েট অ্যাভরেজ এর ভিত্তিতে প্যাকেজ ‘এ’ তে পেট্রোচায়না ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুরা প্রা.লি. সিঙ্গাপুর এবং প্যাকেজ ‘বি’ এবং ‘সি’ তে ভিটল এশিয়া প্রা.লি. সিঙ্গাপুর এবং প্যাকেজ ‘ডি’ তে সায়নোসেম ইন্টারন্যাশনাল ওয়েল (সিঙ্গাপুর) প্রা.রি.-কে সর্বনিম্ন মূল্যায়িত ও কৃতকার্য দরদাতা হিসেবে চারটি প্যাকেজে (প্রিমিয়াম রেফারেন্স প্রাইস অনুযায়ী) সর্বমোট মার্কিন ডলার ৭৪,৯১,১৮,১২০.০০ মার্কিন ডলার বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ৯ হাজার ১৩৯ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার টাকা দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করেছে।
ঢাকা/হাসনাত/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ট র ক টন প রক র য় য় র প রক র য় ত ল আমদ ন ল আমদ ন র রহণয গ য প রস ত ব পর ম ণ কম ট র অন য য় দরদ ত প রহণ গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনে রাশিয়া-বেলারুশ সামরিক মহড়ায় কেন অংশ নিল ভারত
রাশিয়া-বেলারুশের যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে ভারত। গতকাল মঙ্গলবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস এ খবর জানিয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও এ খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
রাশিয়ার নেতৃত্বে গত শুক্রবার ‘জাপাদ-২০২৫’ নামে পাঁচ দিনের এ সামরিক মহড়া শুরু হয়। দুই দেশের সীমান্তে চলা মহড়ায় ভারতীয় সেনাদের অংশগ্রহণ মস্কো ও নয়াদিল্লির সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক আরোপের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও জাপাদ-২০২৫ সামরিক মহড়ায় ৬৫ সশস্ত্র সেনা পাঠানোর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
যেকোনো ধরনের আগ্রাসন প্রতিহত করতে সেনাদের প্রস্তুতি প্রদর্শনের জন্য রাশিয়া ও বেলারুশ নাটকীয় এ সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে।
এক লাখ সেনা এ মহড়ায় অংশ নিয়েছেন। মহড়ায় পারমাণবিক সক্ষমতার বোমারু যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। এমন একটি সময়ে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা চরমে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে পোল্যান্ডে রাশিয়ার ড্রোন ভূপাতিত করা হয়।
এক লাখ সেনা এ মহড়ায় অংশ নিয়েছেন। মহড়ায় পারমাণবিক সক্ষমতার বোমারু উড়োজাহাজ ও যুদ্ধজাহাজের প্রদর্শন করা হয়েছে। এমন একটি সময়ে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন ন্যাটো দেশের সঙ্গে উত্তেজনা চরমে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে পোল্যান্ডে রাশিয়ার ড্রোন ভূপাতিত করা হয়।গতকাল ছিল সামরিক মহড়ার শেষ দিন। এদিন সামরিক পোশাক পরে আসা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘আজ আমরা জাপাদ-২০২৫ কৌশলগত মহড়ার চূড়ান্ত ধাপ পরিচালনা করছি।’
এ মহড়ায় অংশ নেওয়া ভারত একমাত্র বিদেশি শক্তি নয়। ক্রেমলিনের বরাত দিয়ে তাস বলেছে, ইরান, বাংলাদেশ, বুরকিনা ফাসো, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ও মালির ‘টাস্কফোর্স এবং সামরিক দল’ এ মহড়ায় অংশ নিয়েছে।
কিন্তু ভারতীয় সেনাদের অংশগ্রহণ অবশ্যই বিশেষ। ভারতের সেনাবাহিনীর অভিজাত পদাতিক বাহিনী কুমায়ুন রেজিমেন্ট মহড়ায় অংশ নেওয়া ভারতীয় দলটির নেতৃত্ব দিয়েছে। ভারতীয় সেনাদের মহড়ায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির ‘সহযোগিতা ও পারস্পরিক বিশ্বাসের মনোভাব জোরদার করা’।
রাশিয়ার এ মহড়ায় অংশগ্রহণ অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হবে। কারণ, এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের একজন ভারত, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং স্বাভাবিক অংশীদার। আমার বিশ্বাস, আমাদের বাণিজ্য আলোচনাগুলো ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্বের সীমাহীন সম্ভাবনা উন্মোচনের পথ তৈরি করবে।নরেন্দ্র মোদি, ভারতের প্রধানমন্ত্রীগত মাস থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, এ শুল্কের মধ্যে ২৫ শতাংশ ভারতের ওপর ‘জরিমানা’ হিসেবে আরোপ করা হয়েছে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার কারণে ভারতকে এ শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ভারত–চীনের কাছে বিক্রি করা তেলের অর্থ ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে নিতে রাশিয়াকে সহায়তা করছে।
আরও পড়ুনরাশিয়া-বেলারুশের সামরিক মহড়া চলছিল, ‘অবাক করে দিয়ে’ হাজির মার্কিন কর্মকর্তারা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫গত শুক্রবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘মনে হচ্ছে, অন্ধকারতম-গভীরতম চীনের ভেতরে আমরা ভারত ও রাশিয়াকে হারিয়ে ফেলেছি। একসঙ্গে তাদের ভবিষ্যৎ দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ হোক।’
পোস্টে তিয়ানজিনে এসসিও সম্মেলনে একসঙ্গে থাকা চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, পুতিন ও মোদির একটি ছবিও যুক্ত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বরিসোভের কাছে রাশিয়া-বেলারুশ যৌথ সামরিক মহড়ায় বেলারুশের এমআই-৩৫ হেলিকপ্টারও অংশ নেয়। শত্রুর ওপর আক্রমণ চালাতে এই হেলিকপ্টার ব্যবহৃত হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫