পাঁচ সিনেমা পেল ‘ইউ’ সার্টিফিকেট, একটি পেল অ্যাডাল্ট
Published: 4th, June 2025 GMT
নতুন ঈদে বাঙালি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য হাজির হচ্ছে নানা স্বাদের ছয়টি চলচ্চিত্র। ঈদ ঘিরে সিনেমা হলগুলোয় যেমন জমজমাট প্রস্তুতি, তেমনি দর্শকমনে বাড়ছে কৌতূহল ও প্রত্যাশা। যদিও শুরুতে একাধিক চলচ্চিত্র মুক্তির তালিকায় ছিল, সময় ঘনিয়ে আসতেই একে একে সরে দাঁড়িয়েছে বেশ কয়েকটি। শেষতক ঈদে মুক্তি পাচ্ছে যেসব সিনেমা, সেগুলো হলো-‘তাণ্ডব’, ‘নীলচক্র’, ‘উৎসব’, ‘ইনসাফ’, ‘টগর’ এবং ‘এশা মার্ডার : কর্মফল’।
এই ছয়টি সিনেমার মধ্যে আরিফিন শুভ অভিনীত ‘নীলচক্র’ সবচেয়ে আগে, অর্থাৎ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েছিল। সেই সময় সিনেমাটি ‘ইউ’ সার্টিফিকেট লাভ করে, যার অর্থ-এটি সব বয়সের দর্শকের জন্য উপযোগী ও পরিবারসম্মত। ছবিটির দৈর্ঘ্য ১ ঘণ্টা ৫৩ মিনিট।
অন্যদিকে বাকি পাঁচটি সিনেমা ছাড়পত্র পেয়েছে সম্প্রতি-গতকাল ও আজ বুধবার। এর মধ্যে শরিফুল রাজ অভিনীত ‘ইনসাফ’ ছাড়া বাকি সব চলচ্চিত্রই পেয়েছে ‘ইউ’ সার্টিফিকেট। একমাত্র ‘ইনসাফ’-ই পেয়েছে ‘এ’ বা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্ধারিত সার্টিফিকেট, যার অর্থ এটি শুধু প্রাপ্তবয়স্ক দর্শকদের জন্য উপযোগী। অ্যাকশনধর্মী এই সিনেমার দৈর্ঘ্য ২ ঘণ্টা ২৯ মিনিট। অন্যদিকে ‘ইউ’ সার্টিফিকেট পাওয়া অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলো হলো—
তাণ্ডব : অ্যাকশন ও রোমান্টিক গল্পে সাজানো এই সিনেমার দৈর্ঘ্য ২ ঘণ্টা ৯ মিনিট।
উৎসব : পারিবারিক গল্প নিয়ে নির্মিত ছবিটি ১ ঘণ্টা ৫২ মিনিট।
এশা মার্ডার : কর্মফল : একটি রহস্য-রোমাঞ্চে ঘেরা মার্ডার মিস্ট্রি, দৈর্ঘ্য ২ ঘণ্টা ২৬ মিনিট।
টগর : রোমাঞ্চকর আবহে নির্মিত এই সিনেমার দৈর্ঘ্য ২ ঘণ্টা ২৩ মিনিট।
শেষ মুহূর্তে ঈদের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরেকটি চলচ্চিত্র। ‘তোমার আমার প্রেম কাহিনি’। ছবিটি পেয়েছে ‘ইউ’ সার্টিফিকেট, তবে এটি মুক্তি পাবে ঈদের পর।
সব মিলিয়ে ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছয়টি সিনেমা নানা স্বাদের গল্প নিয়ে হাজির হচ্ছে প্রেক্ষাগৃহে—কখনো রহস্যময়, কখনো রোমান্টিক, আবার কখনো আবেগঘন পারিবারিক বাঁকে। সিনেমাপ্রেমীদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি রঙিন ও বৈচিত্র্যময় উৎসব।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদ র স ন ম চলচ চ ত র দ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গাজাবাসীর ঈদ: ‘কোরবানি দেওয়ার মতো কিছু নেই শুধু নিজেদের ছাড়া’
গত ঈদের আগে আল-জাজিরা একটি ভিডিও প্রচার করে। সেখানে দেখা যায়, গাজার এক মা তাঁর ছয় বছর বয়সী মেয়ের কবরের পাশে বসে আছেন। মেয়েটি মারা গেছে ঈদের তিন দিন আগে এক বিমান হামলায়। মা তার জন্য যে লাল জামাটি কিনেছিলেন, সেটিই কবরের মাটির ওপর রেখে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ঈদে ওকে এটা পরিয়ে দিতাম। এখন ওর কবরের ওপর রেখে গেলাম। জামাটা ওর সঙ্গে যেন থাকে।’
লাখো মুসলমান যখন ঈদুল আজহার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তখন ফিলিস্তিনের গাজা এক মরুভূমির নিস্তব্ধতা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সেখানে ঈদ নেই। আছে কেবল খালিপেটে দীর্ঘশ্বাস, ধ্বংসস্তূপে শিশুদের কান্না আর আশাহীন এক অপেক্ষা। একটু যদি কেউ রাজি হন নিজের আনন্দের মধে৵ ভাবতে, তাহলে মনে আসবেই—এই ঈদের উৎসব কি কেবল তাঁদের জন্য, যাঁদের ঘরবাড়ি আছে, রান্নাঘরে খাবার আছে; আর আছে নতুন জামার আনন্দে হাসতে জানা শিশু?
রাফা, খান ইউনিস ও গাজার শহর—সবখানেই মসজিদ ধ্বংস হয়ে গেছে। ঈদের নামাজ পড়া হয় খোলা মাঠে, কখনো কখনো ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের পাশে। বহু জায়গায় কোনো জামাতই হয় না। কারণ, নেই নিরাপদ জায়গা, নেই ইমাম, নেই মাইক্রোফোন।
নামাজের পরপরই কেউ কেউ কবর জিয়ারত করেন। কেউ আবার চোখের জলে হারানো স্বজনকে স্মরণ করেন। ২০২৪ সালের ঈদের দিনেও থামেনি বোমা হামলা। গাজার আল-মাঘাজি ক্যাম্পে চালানো হয় বিমান হামলা। এতে অন্তত ১১ জন নিহত হন, যাঁদের মধ্যে সাতজনই শিশু। ঈদের নামাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন যাঁরা, তাঁরা নতুন করে কবর খোঁড়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
‘কোরবানি দেওয়ার মতো আর কিছু নেই শুধু নিজেদের ছাড়া।’ কথাটি বলছিলেন নুহা আল নাজ্জার, গাজার এক মা। তাঁর পরিবারের ঈদ মানে প্রতিদিনের ক্ষুধা, বোমাবর্ষণের আওয়াজ আর শিশুদের কান্না। দুই বছরের আলমা দিনভর কাঁদছে শুধু এক বোতল দুধের জন্য। মাসের পর মাস একফোঁটা দুধ মেলেনি। একসময়ের ঈদ এখানে ছিল কাবাব, কিশোর-কিশোরীদের হাসি আর আত্মীয়স্বজনের আনাগোনা। এখন সেখানে কেবল ধ্বংসস্তূপ, ক্ষুধার্ত শরীর আর আতঙ্কে ভয়ে কাঁপতে থাকা মুখ।
রাফা সীমান্ত দিয়ে কিছু সাহায্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করছিল গত ঈদের সময়। খাবারের জন্য হাহাকার এত তীব্র ছিল যে মানুষ একে অপরকে ধাক্কা দিয়ে উঠে পড়ে খাদ্যের গাড়িতে। চ্যানেল ফোর নিউজ জানায়, গমবাহী একটি ট্রাকে ধাক্কাধাক্কির ফলে ১২ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে তিনজন ছিল শিশু।
গাজার ঈদ আর আমাদের ঈদ এক নয়। আমাদের জন্য এই পার্থক্য শুধু আবেগের প্রশ্ন নয়, নৈতিকতারও। আমাদের ঈদের আনন্দের সামনে গাজার শিশুদের ক্ষুধার্ত মুখগুলো যেন অদৃশ্য আয়না হয়ে ওঠে। যারা বেঁচে থাকার জন্য লড়ছে, তাদের গল্পে ঈদ মানে এক নামহীন প্রার্থনা। এই প্রার্থনা শুধু গাজার নয়, আমাদের সবার হোক।নুহা বলেন, ‘আমি এক দিনে একটি শসা আর দুটি টমেটো কিনে তা ছোট ছোট টুকরায় ভাগ করি। সেটিই আমাদের দিনের একমাত্র খাবার।’ তাঁর এ কথায় কেউ ঈদের কোনো আমেজ পাবেন? না, এখানে আছে শুধু টিকে থাকার যুদ্ধ। ‘আমার একমাত্র ছোট ছেলেকে মিসরে পাঠানো হয়েছে চিকিৎসার জন্য। সে আমাকে ফোনে বলে, ‘মা, আমি সেই পুরোনো ঈদগুলোকে ফিরিয়ে আনতে চাই।’ আমি ওর কথা শুনে কাঁদি না। নিজের মুখ চাপা দিয়ে রাখি। যাতে ও না বুঝতে পারে আমি কতটা ভেঙে পড়েছি।’
নুহার ছোট মেয়ে মায়ার বয়স ১২। একসময় ঈদে তার আনন্দ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। এখন সে চুপচাপ থাকে। ‘আমি জিজ্ঞাসা করি—কী রে, খিদে পেয়েছে? ও বলে, না। কিন্তু আমি জানি, ওর পেট খালি। ও জানে, ঘরে কিছু নেই। তাই অভিযোগ করে না।’
ঈদ মানেই শুধু এই দোয়া—আজ যেন কেউ ইসরায়েলিদের গুলি বা বোমায় মারা না যায়। ঘরবাড়ি নেই, বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই। ঈদের নতুন জামার তো প্রশ্নই ওঠে না। শুধু আছে এক বেলা কোনোভাবে বাঁচার খাবার খুঁজে পাওয়া; আর পরের বোমা কখন কোথায় পড়বে, সেই অপেক্ষা।
গাজার বাইরে থাকা মানুষেরাও সুখে নেই। নুহার বোন সামার এলউফ। ওরা এখন দোহায় আশ্রয়ে আছেন। তিনি একজন খ্যাতিমান ফটোসাংবাদিক। একসময় গাজার ঈদ উদ্যাপনের ছবি তুলতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ওর ডাক পড়ত। আজ তাঁর ক্যামেরা কেবল শিশুদের মৃতদেহের ছবি তুলে রাখে। ‘প্রতিটা ছবি যেন আমার বুকে ছুরি চালায়’ বলেন সামার।
সামার বলেন, ‘আমি কিছুই করতে পারি না। কেবল চোখের পানি ফেলি আর বারবার খোঁজ নিই—আমার বোন, ওর সন্তানেরা এখনো বেঁচে আছে তো?’
তার পরও এই পরিবারের সদস্যরা ভালোবাসা আর স্মৃতিতে টিকে আছেন। ‘ঈদ এখন আমাদের হৃদয়ে একটি ক্ষত। সুখের স্মৃতি দুঃখের চেয়ে বেশি কষ্ট দেয়। তবু আমরা বিশ্বাস হারাই না। কারণ, ঘরে ফেরার স্বপ্ন আমরা এখনো দেখি’ বলেন নুহা।
অন্যদিকে পরিবার ছাড়া তৃতীয় ঈদ কাটাচ্ছেন লেখক শাদি সালেম। তিনি লিখেছেন, ‘গাজার ঈদ এখন আর উৎসব নয়, এটি প্রতিরোধের প্রতীক। ঈদ মানে শুধু একাকিত্ব নয়, এটি স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকার আর্তি।’
শাদি সালেমের মা ফোনে বলেন, ‘আমরা যতটা পারি, ততটাই করি। আমি আজ যাব আমার ভাইদের শহীদ পরিবারের কাছে, ঈদের শুভেচ্ছা দিতে।’ এই একটি বাক্য যেন গাজার হাজারো মায়ের মনের দৃঢ়তার কথা বলে।
‘আমরা চাই না কেউ আমাদের মতো কষ্টে থাকুক। সবাই যেন সুখে থাকে, শান্তিতে থাকে। শুধু দোয়া করি, সারা পৃথিবীর আর কেউ যেন এই বেদনার ভাগীদার না হয়।’ শেষে এই কথাটা বলছিলেন নুহা। কথাটায় কি অভিমান মিশে ছিল?
গাজার ঈদ আর আমাদের ঈদ এক নয়। আমাদের জন্য এই পার্থক্য শুধু আবেগের প্রশ্ন নয়, নৈতিকতারও। আমাদের ঈদের আনন্দের সামনে গাজার শিশুদের ক্ষুধার্ত মুখগুলো যেন অদৃশ্য আয়না হয়ে ওঠে। যারা বেঁচে থাকার জন্য লড়ছে, তাদের গল্পে ঈদ মানে এক নামহীন প্রার্থনা। এই প্রার্থনা শুধু গাজার নয়, আমাদের সবার হোক।
জাভেদ হুসেন প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী
(আলজাজিরা, আরব নিউজ, ডন, হিন্দুস্তান টাইমসের বিভিন্ন লেখা অবলম্বনে)