‘সকালে চোখের সামনে বাবা-দাদা বের হলো, ফিরল লাশ হয়ে’
Published: 4th, June 2025 GMT
‘সকালে চোখের সামনে বাবা-দাদা বের হলো, ফিরল লাশ হয়ে। মা কিছুই খেতে পারছে না, কিছু বলতে পারছে না।’—কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন ইলমি আক্তার।
আজ বুধবার সকাল সাতটার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার চুমুরদি ইউনিয়নের বাবলাতলা এলাকায় বাস-মাহিন্দ্র মুখোমুখি সংঘর্ষে ইলমির বাবা মনির সরদার (৩৮) মারা যান। তাঁর বাড়ি শিবচরের মাদবরেরচর ইউনিয়নের ডাইয়ারচরে।
ওই দুর্ঘটনায় মনিরসহ নিহত হন পাঁচজন। দুর্ঘটনায় মনিরের বাবা ইব্রাহিম সরদার (৬৫) ও ফুফাতো ভাই তারা মিয়া শেখ (৪২) নিহত হন। নিহত অন্য দুজন হলেন ভাঙ্গার ঘারুয়া ইউনিয়নের চৌকিঘাটা গ্রামের মিজানুর রহমান (৪৫) ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোষগাতি এলাকার আহাদুল মুন্সী (৪৫)। তাঁরা সবাই মাহিন্দ্রর যাত্রী ছিলেন।
আজ বেলা তিনটার দিকে ইব্রাহিম সরদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একই সঙ্গে বাবা-ছেলেকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোকের মাতম। খবর পেয়ে প্রতিবেশীরাও তাদের বাড়িতে ভিড় করেছেন। পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে চলছে কান্নার রোল। প্রতিবেশীরা নিহতের স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ঈদের আগে এমন মৃত্যু যেন কেউ মেনে নিতে পারছে না। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় বাকরুদ্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী।
মনিরের মেয়ে ইলমি আক্তার এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। হঠাৎ বাবার মৃত্যুতে তার সামনে অনিশ্চয়তা। বাবার শোকে কাতর ইলমি বলল, ‘বাবা চলে গেল, এখন আমাদের ভবিষ্যৎ কে দেখবে?
বেলা ২টার দিকে নিহত ব্যক্তিদের লাশ নিজ বাড়ি শিবচরে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী। নিহত ব্যক্তিদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বাদ আসর।
নিহত মনির সরদারের স্ত্রী ইতি আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার সব শ্যাষ হইয়া গেল। আমার সন্তানগুলো কাকে বাবা বলে ডাকবে? ওদের পড়ালেখা কে করাবে? আমার সংসারডা ভেসে গেল। হায় আল্লাহ তুমি আমার সঙ্গে কেন এমন করলা। তুমি আমার স্বামীরে ফিরাইয়া দাও?’
ইলমি ছাড়া মনির–ইতি দম্পতির দুই ছেলেসন্তান আছে। তাদের একজনের বয়স ১০ বছর, অন্যজনের দেড় বছর।
প্রতিবেশী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘সকাল বেলা ওদের সঙ্গে দেখা। ওরা গরু কিনতে টেকেরহাট যাবে বলেছিল। দুর্ঘটনায় কতগুলো পরিবারের স্বপ্নকে মুহূর্তেই নিঃশেষ করে দিল। দুই দিন পরেই ঈদ। পরিবারটি ঈদের আনন্দের প্রস্তুতির জায়গায় এখন বিষাদের ছায়া।’
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন য় পর ব র আম র স সরদ র
এছাড়াও পড়ুন:
সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ক্লিনিকের চেয়ারম্যান ও আবাসিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে নবজাতকসহ তাদেরকে ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওই রাতেই শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম হাসপাতালে) নেওয়া হয়।
অভিযুক্ত চিকিৎসক পার্থ সমদ্দার কলাপাড়া পৌর শহরের জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসক এবং চেয়ারম্যান।শিশুটির
স্বজনদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রসব বেদনা নিয়ে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন লালুয়ার ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার মেয়ে ও রফিকুলের স্ত্রী মিম বেগম। ওই রাতেই মিমের সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডা. পার্থ সমদ্দার। সিজারের কিছুক্ষণ পরই টিকার কথা বলে নবজাতকের পায়ে একটি ইনজেকশন পুশ করা হয়। পরের দিন থেকেই নবজাতকের বাম পা ফুলতে শুরু করে এবং কান্না বাড়তে থাকে। বিষয়টি চিকিৎসক ও নার্সদেরকে অবহিত করলে তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। উল্টো ওই ক্লিনিকের কর্মী ও নার্সরা নবজাতকের স্বজনদের সঙ্গে অসদাচরণের পাশাপাশি তাদের ক্লিনিক থেকে বের করে দেন। পরে অন্যত্র এক্সরে করে জানা যায়, সিজারের সময় নবাজতকের পা ভেঙে ফেলেছেন চিকিৎসক।
নবজাতকের মা মিম আক্তার বলেছেন, বাচ্চা অনবরত কান্না করলে প্রথমে নার্স ও পরে চিকিৎককে অবহিত করা হয়। বাচ্চার বাম ফুলে গেলে তা জানানো হয়। কিন্তু, তারা এর কোনো প্রতিকার না করে আমাদের ধমকাতে থাকেন। ক্লিনিক ছেড়ে চলে যেতে চাপ প্রয়োগ করেন।
নবজাতকের নানা সিদ্দিক বলেন, টিকার কথা বলে আমার নাতিকে শরীর অবশ করার ইনজেকশন দিয়েছিল নার্সরা। ইনজেকশনের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার পরপরই আমার নাতি অনেক কান্না করে। আমার স্ত্রী নার্সদের বললে তারা তাকে মারধরের চেষ্টা করে। আমাদের সঙ্গে ক্লিনিকের সবাই অনেক খারাপ আচরণ করেছে। এভাবে রোগীদের সঙ্গে প্রাইভেট ক্লিনিকের কর্মকর্তারাও যদি অসদাচরণ করে, তাহলে আমরা কোথায় যাব?
সিজারের সময় নবজাকের পা ভাঙেনি, দাবি করে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান ডা. পার্থ সমদ্দার বলেছেন, আমি শিশু বিশেষজ্ঞ নই। নবজাতককে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেছেন, যদি সিজারিয়ান অপারেশনের প্রশিক্ষণ থাকে, তাহলে এনেস্থেসিস্টও সিজার করতে পারেন। তবে, এনেস্থেসিস্ট একাই সিজারিয়ান অপারেশন করতে পারেন না।
ঢাকা/ইমরান/রফিক