‘সকালে চোখের সামনে বাবা-দাদা বের হলো, ফিরল লাশ হয়ে। মা কিছুই খেতে পারছে না, কিছু বলতে পারছে না।’—কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন ইলমি আক্তার।

আজ বুধবার সকাল সাতটার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার চুমুরদি ইউনিয়নের বাবলাতলা এলাকায় বাস-মাহিন্দ্র মুখোমুখি সংঘর্ষে ইলমির বাবা মনির সরদার (৩৮) মারা যান। তাঁর বাড়ি শিবচরের মাদবরেরচর ইউনিয়নের ডাইয়ারচরে।

ওই দুর্ঘটনায় মনিরসহ নিহত হন পাঁচজন। দুর্ঘটনায় মনিরের বাবা ইব্রাহিম সরদার (৬৫) ও ফুফাতো ভাই তারা মিয়া শেখ (৪২) নিহত হন। নিহত অন্য দুজন হলেন ভাঙ্গার ঘারুয়া ইউনিয়নের চৌকিঘাটা গ্রামের মিজানুর রহমান (৪৫) ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোষগাতি এলাকার আহাদুল মুন্সী (৪৫)। তাঁরা সবাই মাহিন্দ্রর যাত্রী ছিলেন।

আজ বেলা তিনটার দিকে ইব্রাহিম সরদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একই সঙ্গে বাবা-ছেলেকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোকের মাতম। খবর পেয়ে প্রতিবেশীরাও তাদের বাড়িতে ভিড় করেছেন। পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে চলছে কান্নার রোল। প্রতিবেশীরা নিহতের স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ঈদের আগে এমন মৃত্যু যেন কেউ মেনে নিতে পারছে না। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় বাকরুদ্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী।

মনিরের মেয়ে ইলমি আক্তার এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। হঠাৎ বাবার মৃত্যুতে তার সামনে অনিশ্চয়তা। বাবার শোকে কাতর ইলমি বলল, ‘বাবা চলে গেল, এখন আমাদের ভবিষ্যৎ কে দেখবে?

বেলা ২টার দিকে নিহত ব্যক্তিদের লাশ নিজ বাড়ি শিবচরে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী। নিহত ব্যক্তিদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বাদ আসর।

নিহত মনির সরদারের স্ত্রী ইতি আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার সব শ্যাষ হইয়া গেল। আমার সন্তানগুলো কাকে বাবা বলে ডাকবে? ওদের পড়ালেখা কে করাবে? আমার সংসারডা ভেসে গেল। হায় আল্লাহ তুমি আমার সঙ্গে কেন এমন করলা। তুমি আমার স্বামীরে ফিরাইয়া দাও?’

ইলমি ছাড়া মনির–ইতি দম্পতির দুই ছেলেসন্তান আছে। তাদের একজনের বয়স ১০ বছর, অন্যজনের দেড় বছর।

প্রতিবেশী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘সকাল বেলা ওদের সঙ্গে দেখা। ওরা গরু কিনতে টেকেরহাট যাবে বলেছিল। দুর্ঘটনায় কতগুলো পরিবারের স্বপ্নকে মুহূর্তেই নিঃশেষ করে দিল। দুই দিন পরেই ঈদ। পরিবারটি ঈদের আনন্দের প্রস্তুতির জায়গায় এখন বিষাদের ছায়া।’

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

রকিবুজ্জামান বলেন, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। আমরা অবৈধ তিন চাকার যানবাহন বন্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন য় পর ব র আম র স সরদ র

এছাড়াও পড়ুন:

কিশোরীকে ধর্ষণ ও গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে 

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে কিশোরীকে ধর্ষণ ও গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ উঠেছে। ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের সাবেক বিএনপি নেতা বাবর আলী মেম্বারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী কিশোরীর পরিবার।

এদিকে মামলা না করে সালিশ দরবারে দফায় দফায় সভা করে মীমাংসার চেষ্টা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কিশোরীর বাবা। তিনি বলেন, মেয়ে সুস্থ হলেই মুরব্বিদের সঙ্গে নিয়ে থানায় অভিযোগ দেব।

বিষয়টি জানতে পেরে বেলকুচি থানার উপপরিদর্শক আইনুল হক সোমবার দুই দফা কিশোরীর বাড়িতে যান। এ সময় বাবর মেম্বার গা ঢাকা দেন। তিনি মোবাইলে কথা বললেও পুলিশের সামনে আসেননি।

স্বজনদের বরাত দিয়ে উপপরিদর্শক আমিনুল হক সমকালকে বলেন, ওই কিশোরীর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। কখনও কখনও ধানের চাতালেও কাজ করেন। বাবা শ্রমিকের কাজের সুবাদে সিরাজগঞ্জের বাইরে থাকেন। ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাবর আলীর ওই বাড়িতে যাতায়াত ছিল। গত রোজার ঈদের আগে বাবর আলী কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর বাবর আলী ভ্রূণ নষ্ট করতে ওষুধপথ্য কিনে দেন। এসব কারণে ২৯ মে কিশোরীর পেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। বাবর আলী তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

উপপরিদর্শক আরও বলেন, ধর্ষণ ও অবৈধ গর্ভপাতের সত্যতা পাওয়া গেলেও কিশোরীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাকে পুলিশের সামনে আসতে দেওয়া হয়নি। বাবর মেম্বারকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। থানায় অভিযোগ দিতে কিশোরীর স্বজনদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে বিএনপি নেতা বাবর আলীর মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘মেয়েটি অবৈধভাবে গর্ভধারণ করে। পরিবারের অনুরোধে তার চিকিৎসায় সহযোগিতা করেছি। কে তাকে ধর্ষণ করেছে, সে কীভাবে অন্তঃসত্ত্বা হলো জানি না। এ ঘটনায় আমার সম্পৃক্ততা নেই।’ 

থানার ওসি মোহাম্মদ জাকরিয়া হোসেন ছুটিতে আছেন। পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল বারেক পদোন্নতি নিয়ে পাশের চৌহালী উপজেলায় গেছেন। তাদের অবর্তমানে দায়িত্বে থাকা এসআই সাইফুল ইসলাম বলেন, কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না দিলে পুলিশের কি-ই বা করার আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাধারণ বন্দীদের সঙ্গে আছেন ‘ভিআইপি’রাও, কী থাকে কারাগারের ঈদের খাবারে
  • জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে স্বজনদের হামলায় দুই বোন নিহত
  • কিশোরীকে ধর্ষণ ও গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে