Prothomalo:
2025-09-18@01:23:44 GMT

কোরবানি যেন ‘শো অফ’ না হয়

Published: 4th, June 2025 GMT

ঈদের আনন্দ সব মানুষের একরকম হয় না। কোরবানির ঈদ যেমন একজন সামর্থ্যবান মানুষের জন্য উৎসবের উপলক্ষ, তেমনি একজন অসামর্থ্যবান মানুষের জন্য হয়ে দাঁড়ায় নানা অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশ আর চাপের কারণ।

নিম্ন আয়ের বা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এক অদ্ভুত দ্বিধার মধ্যে পড়ে যায় এই ঈদে। একদিকে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতে চায়, অন্যদিকে বাজেট, ঋণ, বাজারদর আর সামাজিক চাপে কাতর হয়। পশুর দাম, জবাইয়ের খরচ, বিতরণের ব্যয়—সবকিছু সামলানোর চাপে কোরবানিই দেওয়া সম্ভব হয় না অনেকের পক্ষে।

এখানে একশ্রেণির মানুষ আছেন, যাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দামি গরুকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করে কোরবানিকে প্রতিযোগিতায় রূপ দেন। আর অসামর্থ্যবান পরিবারের মা-বাবা হিসাব করে দেখেন সন্তানদের হাসিমুখের পেছনে কতটা ত্যাগ জমা হয়ে আছে।

কোরবানি করা যেমন ইসলামের একটি মহান শিক্ষা, তেমনি সেটা সাধ্যের মধ্যে করাই মূল শিক্ষা। কিন্তু সমাজে একধরনের অদৃশ্য প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। কে কত বড় গরু কোরবানি দিচ্ছেন, এই প্রতিযোগিতার বোঝা সবচেয়ে বেশি পড়ে মধ্যবিত্তের লোকজনের ঘাড়ে। কারণ, তাঁরা চাইলেও না পারেন দেখাতে, না পারেন বাদ দিতে। মাঝামাঝি থেকে দুই দিক সামলানোই তাঁদের নিয়তি।

তবু তাঁরা কোরবানি করেন। কেউ ধারকর্জ করেন, কেউ সারা বছরের সঞ্চয় ভাঙেন। কারণ, তাঁরা জানেন, সন্তানদের সামনে আনন্দের মুখ গড়ে তুলতে হলে পেছনের ত্যাগ গোপন রাখতে হয়।

এই প্রবণতা কোরবানির মূল শিক্ষা ও উদ্দেশ্যকে আড়াল করে দিচ্ছে। এক পাশে আছে দামি গরুর ভিডিও ভাইরাল করার উন্মাদনা, অন্য পাশে আছে গরিব মানুষদের মধ্যে লুকিয়ে থাকার লজ্জা। একদিকে আলোকসজ্জিত কোরবানি, অন্যদিকে চুপচাপ নীরব থাকা অসহায় পরিবার।

কোরবানির মূল শিক্ষা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা পরিষ্কারভাবে কোরআনে বলেছেন, ‘আল্লাহর নিকট তাদের মাংস ও রক্ত পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ: ৩৭) এই আয়াত আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, কোরবানির বাহ্যিক রূপ নয়, বরং অভ্যন্তরীণ খোদাভীতিই আসল।

কোরবানি এমন এক ইবাদত, যেখানে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই একমাত্র লক্ষ্য। এখানে বড় গরু নয়, বড় নিয়তের মূল্য। এই কোরবানির ঈদে আমাদের দরকার একটু সহমর্মিতা, একটু বুঝেশুনে মূল্যায়ন করা—কে কী করলেন, তার চেয়ে বড় কথা হলো, কে কীভাবে ত্যাগ করলেন।

ঈদ যেন শুধু গরুর দাম নয়, বরং আত্মত্যাগ, সহানুভূতি আর মানবিকতার শিক্ষা দেয়। কোরবানি আমাদের কখনোই অর্থবিত্তের অহংকার দেখানো শেখায় না; বরং শেখায় ত্যাগের মর্মবাণী। তাই কোরবানির পশু কেনার অসুস্থ প্রতিযোগিতা পরিহার করি এবং পশুর দাম গোপন রাখি আর সেটাই প্রকৃত ত্যাগ বলে মনে করি।

ইসতিয়াক আহমেদ শিক্ষার্থী, নওগাঁ সরকারি কলেজ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক রব ন র

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে