মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রস্তাবিত বাজেট ও কর বিলকে বিরক্তিকর ও জঘন্য আখ্যা দিয়েছেন ধনকুবের ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ইলন মাস্ক। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে এক মাস আগে বিলটি অনুমোদিত হয়। প্রস্তাবিত বিলে ট্রিলিয়ন বা লাখ কোটি ডলারের করছাড়, প্রতিরক্ষা ব্যয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দ ও সরকারের ঋণসীমা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই বিল মোটেও মনঃপূত হয়নি ইলন মাস্কের।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একাধিক পোস্টে মাস্ক লিখেছেন, ‘এই অবিশ্বাস্য ও অপচয়মূলক বিলের কারণে বাজেট ঘাটতি ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা আড়াই লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। ফলত মার্কিন নাগরিকদের ওপর অমানবিক ঋণের বোঝা চাপবে। যারা এই বিলে ভোট দিয়েছে, তাদের লজ্জা হওয়া উচিত।’

২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় থেকেই ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করেছেন ইলন মাস্ক। নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। এরপর ট্রাম্প নির্বাচিত হলে ইলন মাস্ক প্রশাসনের ডিওজিই নামের পরামর্শক বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু এর মধ্যে ইলন মাস্কের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার কারণে তাঁর শত্রু তৈরি হয়। এমনকি টেসলার বিক্রয়কেন্দ্রে হামলা পর্যন্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের নীতিগত বিরোধও তৈরি হয়। এ পরিস্থিতিতে তিনি গত ৩১ মে হঠাৎ পদত্যাগ করেন। বাজেট হ্রাসে কাজ করছিল সেই দল। প্রশাসন ছাড়ার পর এটাই মাস্কের প্রথম প্রকাশ্য ট্রাম্পবিরোধী অবস্থান।

ট্রাম্প প্রশাসনের একজন মুখপাত্র জানান, প্রেসিডেন্ট মাস্কের অবস্থান সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত। প্রেস সচিব ক্যারোলাইন লেভিট বলেন, নানা সমালোচনা থাকলেও এ বিলের বিষয়ে ট্রাম্প এখন কঠোর অবস্থানে আছেন। এই বিলের নাম ‘বিগ বিউটিফুল অ্যাক্ট’।

বিলটির বিতর্কিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে: ২০১৭ সালের করছাড়ের মেয়াদ বৃদ্ধি, ঋণসীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব, অবৈধ অভিবাসীদের বিপুল হারে বহিষ্কারে অর্থায়ন, প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো ও নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, যেগুলো ‘পোর্ক ব্যারেল’ হিসেবে পরিচিত। মার্কিন রাজনীতিতে ‘পোর্ক’ শব্দটির অর্থ হলো, বিশেষ নির্বাচনী স্বার্থে বরাদ্দ হওয়া অর্থ—এই অর্থ ব্যয়ে প্রায়ই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

এই বিল ঘিরে রিপাবলিকান দলের ভেতরেই বিভাজন তৈরি হয়েছে। সিনেটে এ নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক হবে, এমন সম্ভাবনা আছে। কেন্টাকির রিপাবলিকান সিনেটর রান্ড পল স্পষ্ট জানিয়েছেন, ঋণসীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব থাকলে তিনি বিলটির পক্ষে ভোট দেবেন না। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেন, ‘কেন্টাকির মানুষ পলকে সহ্য করতে পারে না, তার মতামত পাগলামির শামিল।’

এদিকে রাজনৈতিক সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিয়স জানিয়েছে, ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ইলন মাস্কের স্টারলিংকের স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সরকারের দায়িত্বশীল পদে থাকা একজন ব্যক্তির মালিকানাধীন কোম্পানি থেকে সরকারি সেবা নেবে, এটা স্বার্থের সংঘাত বলে মনে করে ট্রাম্প প্রশাসন।

বিল নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের নেতা চাক শুমার বলেছেন, ‘ইলন মাস্ক এই পুরো প্রক্রিয়ার অংশ ছিলেন। তিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন। সেই তিনিও বলেছেন, বিলটি খারাপ। আমরা কল্পনাও করতে পারি না, এটি কতটা খারাপ হতে পারে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যরা চান, আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যে বিলটি কংগ্রেসে পাস হয়ে আইনে পরিণত হোক।

এদিকে সরকারি ব্যয় হ্রাসে অনড় অবস্থানে থাকা রিপাবলিকানদের মন জয়ে ট্রাম্প আলাদা পরিকল্পনারও কথা বলেছেন। তাঁর প্রস্তাব, ৯ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৯৪০ কোটি ডলার খরচ কমানো হবে। এই ব্যয় হ্রাস পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি কমবে বিদেশি সহায়তা, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ও সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম এনপিআর ও পিবিএসের অর্থায়ন।

এদিকে বাজেট বিল নিয়ে মাস্ক রাজনৈতিক হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যারা আমেরিকান জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, আগামী নভেম্বরে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র প বল ক ন র প রস ত ব ইলন ম স ক অবস থ ন এই ব ল বল ছ ন র জন ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘‘বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি তোলা উচিত, চব্বিশ এবং আগের গণহত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন, ভোটাধিকার হরণ—এসবের জন্য যদি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হতে পারে। তাহলে একাত্তরে গণহত্যা, ধর্ষণ, নারকীয় হত্যাযজ্ঞের জন্য জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করতে হবে। একই অপরাধে দুই রকমের বিচার হতে পারে না।’’

শনিবার (১ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: দুলু

নৌকা ডুবেছে, শাপলা ভাসবে: এনসিপির তুষার

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘‘যদি আওয়ামী লীগের মতো একই ধরনের অপরাধে জামায়াতের বিচার না হয়, তাহলে সেটা হবে ইতিহাসের প্রতি অবিচার।’’

তিনি বলেন, ‘‘আজকে জামায়াত তাদের পোশাক-চেহারা, আচরণ পাল্টে নতুন রূপে হাজির হয়েছে। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করছে। কিন্তু, মূল উদ্দেশ্য বিএনপিকে আক্রমণ করা। এই বহুরূপীদের চেহারা জনগণ চিনে ফেলেছে।’’

বিএনপির এই নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বিএনপিই একমাত্র শক্তি। অথচ এই শক্তিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনের নামে প্রক্রিয়া চালালেও জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আলাল আরো বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার মনে করেছে, দেশের সব অনাচারের মূলে সংবিধান। কিন্তু সমস্যার মূল সংবিধান নয়—ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনগণের ভোটাধিকার হরণ। শেখ হাসিনার ১৬-১৭ বছরের শাসনে এই অন্যায়, নির্যাতন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারই হয়েছে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা।’’

ঢাকা/রায়হান/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ জনগণের নয়, কিছু উপদেষ্টার প্রয়োজন: হাফিজ
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম
  • বিএনপি ও জামায়াত কে কোন ফ্যাক্টরে এগিয়ে
  • অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল
  • সরকার নিরপেক্ষতা হারালে জনগণ মাঠে নামবে: তাহের
  • সংস্কার ইস্যুতে সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বিএনপি অবস্থান পরিবর্তন করে
  • বিএনপি-জামায়াত দেশকে অন্য এক সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
  • জনগণের সঙ্গে এটা প্রতারণা: মির্জা ফখরুল