ট্রাম্পের বাজেট বিলকে বিরক্তিকর ও জঘন্য আখ্যা দিলেন মাস্ক
Published: 4th, June 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রস্তাবিত বাজেট ও কর বিলকে বিরক্তিকর ও জঘন্য আখ্যা দিয়েছেন ধনকুবের ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ইলন মাস্ক। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে এক মাস আগে বিলটি অনুমোদিত হয়। প্রস্তাবিত বিলে ট্রিলিয়ন বা লাখ কোটি ডলারের করছাড়, প্রতিরক্ষা ব্যয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দ ও সরকারের ঋণসীমা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই বিল মোটেও মনঃপূত হয়নি ইলন মাস্কের।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একাধিক পোস্টে মাস্ক লিখেছেন, ‘এই অবিশ্বাস্য ও অপচয়মূলক বিলের কারণে বাজেট ঘাটতি ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা আড়াই লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। ফলত মার্কিন নাগরিকদের ওপর অমানবিক ঋণের বোঝা চাপবে। যারা এই বিলে ভোট দিয়েছে, তাদের লজ্জা হওয়া উচিত।’
২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় থেকেই ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করেছেন ইলন মাস্ক। নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। এরপর ট্রাম্প নির্বাচিত হলে ইলন মাস্ক প্রশাসনের ডিওজিই নামের পরামর্শক বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু এর মধ্যে ইলন মাস্কের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার কারণে তাঁর শত্রু তৈরি হয়। এমনকি টেসলার বিক্রয়কেন্দ্রে হামলা পর্যন্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের নীতিগত বিরোধও তৈরি হয়। এ পরিস্থিতিতে তিনি গত ৩১ মে হঠাৎ পদত্যাগ করেন। বাজেট হ্রাসে কাজ করছিল সেই দল। প্রশাসন ছাড়ার পর এটাই মাস্কের প্রথম প্রকাশ্য ট্রাম্পবিরোধী অবস্থান।
ট্রাম্প প্রশাসনের একজন মুখপাত্র জানান, প্রেসিডেন্ট মাস্কের অবস্থান সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত। প্রেস সচিব ক্যারোলাইন লেভিট বলেন, নানা সমালোচনা থাকলেও এ বিলের বিষয়ে ট্রাম্প এখন কঠোর অবস্থানে আছেন। এই বিলের নাম ‘বিগ বিউটিফুল অ্যাক্ট’।
বিলটির বিতর্কিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে: ২০১৭ সালের করছাড়ের মেয়াদ বৃদ্ধি, ঋণসীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব, অবৈধ অভিবাসীদের বিপুল হারে বহিষ্কারে অর্থায়ন, প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো ও নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, যেগুলো ‘পোর্ক ব্যারেল’ হিসেবে পরিচিত। মার্কিন রাজনীতিতে ‘পোর্ক’ শব্দটির অর্থ হলো, বিশেষ নির্বাচনী স্বার্থে বরাদ্দ হওয়া অর্থ—এই অর্থ ব্যয়ে প্রায়ই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
এই বিল ঘিরে রিপাবলিকান দলের ভেতরেই বিভাজন তৈরি হয়েছে। সিনেটে এ নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক হবে, এমন সম্ভাবনা আছে। কেন্টাকির রিপাবলিকান সিনেটর রান্ড পল স্পষ্ট জানিয়েছেন, ঋণসীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব থাকলে তিনি বিলটির পক্ষে ভোট দেবেন না। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেন, ‘কেন্টাকির মানুষ পলকে সহ্য করতে পারে না, তার মতামত পাগলামির শামিল।’
এদিকে রাজনৈতিক সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিয়স জানিয়েছে, ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ইলন মাস্কের স্টারলিংকের স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সরকারের দায়িত্বশীল পদে থাকা একজন ব্যক্তির মালিকানাধীন কোম্পানি থেকে সরকারি সেবা নেবে, এটা স্বার্থের সংঘাত বলে মনে করে ট্রাম্প প্রশাসন।
বিল নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের নেতা চাক শুমার বলেছেন, ‘ইলন মাস্ক এই পুরো প্রক্রিয়ার অংশ ছিলেন। তিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন। সেই তিনিও বলেছেন, বিলটি খারাপ। আমরা কল্পনাও করতে পারি না, এটি কতটা খারাপ হতে পারে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যরা চান, আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যে বিলটি কংগ্রেসে পাস হয়ে আইনে পরিণত হোক।
এদিকে সরকারি ব্যয় হ্রাসে অনড় অবস্থানে থাকা রিপাবলিকানদের মন জয়ে ট্রাম্প আলাদা পরিকল্পনারও কথা বলেছেন। তাঁর প্রস্তাব, ৯ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৯৪০ কোটি ডলার খরচ কমানো হবে। এই ব্যয় হ্রাস পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি কমবে বিদেশি সহায়তা, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ও সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম এনপিআর ও পিবিএসের অর্থায়ন।
এদিকে বাজেট বিল নিয়ে মাস্ক রাজনৈতিক হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যারা আমেরিকান জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, আগামী নভেম্বরে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র প বল ক ন র প রস ত ব ইলন ম স ক অবস থ ন এই ব ল বল ছ ন র জন ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রস্তাবিত বাজেটে রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত নেই: বিএনপি
রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এই অভিযোগ করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাজেট নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায় দলটি।
আমীর খসরু বলেন, দেশে এখন যেহেতু সংসদ বা গণতান্ত্রিক কোনো সরকার নেই, তাই তাঁরা আশা করেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য স্থাপনের মাধ্যমে বাজেট প্রণয়ন করবে। সরকার চাইলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিতে পারত। বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী ও তরুণ প্রতিনিধিরাও অংশ নিতে পারতেন। কিন্তু সেটি করা হয়নি।
রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত নিলে বাজেট প্রণয়ন একমুখী, অংশগ্রহণহীন ও গতানুগতিক ধারার হতো না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
আমীর খসরু বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি প্রায় ‘ডবল ডিজিট’। তা কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করার কথা বলা হচ্ছে, যা বাস্তবসম্মত মনে হয় না। দারিদ্র বৃদ্ধির হারে লাগাম টানা যেত। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ২৭ লাখের বেশি মানুষ আগের চেয়ে বেশি দরিদ্র হয়ে পড়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। সেটা এবারের বাজেটে ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যা আগের সরকারের মতোই অবান্তর ও কাগুজে প্রবৃদ্ধি। খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে। অপর্যাপ্ত, ত্রুটিপূর্ণ, দুর্নীতিগ্রস্ত সামাজিক সুরক্ষা খাতে পেনশন ও কৃষি ভর্তুকি অন্তর্ভুক্ত করে বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টা হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু সামাজিক সুরক্ষার জন্য সরকারি বরাদ্দ অপর্যাপ্ত থেকে যাচ্ছে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, কলেজ ও স্কুলগুলোকে পূর্ণাঙ্গ কর মওকুফের আওতায় আনা যেত। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতা এলে শিক্ষার এসব ক্ষেত্রকে পূর্ণাঙ্গ কর মওকুফের আওতায় আনা হবে।
অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা সমাধানে বাজেটে সুস্পষ্ট রূপরেখার প্রয়োজন ছিল বলে উল্লেখ করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথনকশা উপস্থাপন। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে শিল্পকারখানা স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার দরকার ছিল। জরুরি ছিল ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি বিভিন্ন খাতে সহায়তার মাধ্যমে আরও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি। বিশাল সুদের হারের সঙ্গে অতিরিক্ত কর ও শুল্ক শিল্পে বড় চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে উৎপাদনশীল খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কর্মসংস্থানও কমতে পারে। মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির ওপর আর্থিক চাপ বাড়লে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। দারিদ্র্য বিমোচনের অগ্রগতিও থমকে যেতে পারে।
ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় কমানো, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো ও ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস’ কমানোর কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাজেটে নেই বলে উল্লেখ করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, এগুলো না থাকায় উদ্যোক্তারা অনিশ্চিত ও প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হবেন।
অনলাইন ব্যবসার ওপর শুল্ক বাড়ানোয় ডিজিটাল উদ্যোক্তারা চাপে পড়বেন বলে উল্লেখ করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, এতে তরুণ উদ্যোক্তাদের হতাশা বাড়বে। উদ্ভাবনও নিরুৎসাহিত হবে।
আমীর খসরু বলেন, ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা নাজুক। খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা ও করজাল সম্প্রসারণের মতো পদক্ষেপ নিলে রাজস্ব আহরণে নতুন ভিত্তি তৈরি হতো। সরকার ব্যাংক খাতের ওপর বেশি নির্ভরশীল। ‘ঋণ করে ঋণ শোধ’ দীর্ঘ মেয়াদে আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ কর ফাঁকি প্রদানকারীদের পুরস্কৃত করছে। নিয়মিত করদাতাদের প্রতি এটি অবিচার। এতে করব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ও চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।