Samakal:
2025-06-06@10:49:33 GMT

চট্টগ্রামে ছোট গরুর বড় দাম

Published: 5th, June 2025 GMT

চট্টগ্রামে ছোট গরুর বড় দাম

এক দিন পরই ঈদুল আজহা। কোরবানির এই উৎসবকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তে জমজমাট চট্টগ্রামের ২২৮টি স্থায়ী-অস্থায়ী পশুর হাট। প্রায় প্রতিটি হাটে এসেছে পর্যাপ্ত পশু। তবে দাম বেশ চড়া।

চট্টগ্রামে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের চাহিদা ছোট আকারের গরুর। তাই ব্যাপারীরা ছোট ও মাঝারি আকারের গরু বেশি নিয়ে এসেছেন। তবে আকার ছোট হলেও এসব গরুর দাম বেশি হাঁকছেন বিক্রেতা। গোখাদ্যের দাম ও পরিবহন খরচ বাড়ার কারণে ছোট গরুর দাম বেশি বলে দাবি করছেন তারা।

ওজনভিত্তিক গরুর আকার প্রসঙ্গে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.

মো. আলমগীর জানান, সাধারণত এক থেকে দুই মণ ওজনের গরু ছোট আকারের। দুই থেকে তিন মণ ওজনের গরু মাঝারি এবং এর ওপরের ওজনের গরু বড় আকারের। চট্টগ্রামে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। জোগানও রয়েছে। বড় খামারে দুই হাজার কেজি ওজনের (প্রায় ৫০ মণ) বেশ কিছু গরু আনা হয়েছে।

হামজারবাগ থেকে গতকাল বুধবার তিন ছেলেকে নিয়ে নগরের বিবিরহাটে কোরবানির গরু কিনতে এসেছেন দুই চাকরিজীবী মো. লোকমান ও মো. ইমন। সামর্থ্য না থাকায় দুই পরিবার এবার এক গরু দিয়ে কোরবানি করবে। বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা বেশ কিছু গরু দেখেন তারা। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দেখেও গরু না কিনে বাজার থেকে বের হতে দেখা যায় তাদের। 

জানতে চাইলে মো. লোকমান বলেন, ‘আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই একই ভবনের আরেক পরিবারের সঙ্গে এবার কোরবানি করতে ছোট গরু কিনতে এসেছি। বাজারে ছোট ও মাঝারি গরু পর্যাপ্ত থাকলেও দাম বেশি। গতবার যেসব গরু ৬০ থেকে ৭০ হাজারে কেনা গেছে, এবার তার দাম চাইছে ১ লাখ ২০ হাজারের ওপরে।’

মো. ইমন বলেন, ‘ছোট অনেক গরু দেখে একটিও কিনতে পারিনি। কারণ গরু পছন্দ হলেও দাম বাজেটের চেয়ে বেশি। ছোট একটি গরুর দাম কেমনে লাখ টাকার ওপরে হয়? এত দাম দিয়ে কীভাবে কোরবানির পশু কিনবে মধ্যবিত্তরা? কোরবানি ঘনিয়ে এলেও দাম ছাড়ছেন না ব্যাপারীরা।’ এ দুই ক্রেতার মতো দাম বেশি নিয়ে হতাশার কথা প্রকাশের পাশাপাশি অনেকে ঝাড়লেন ক্ষোভও।

ভোলার লালমোহন থেকে দুই ট্রাক গরু নিয়ে আসা ব্যাপারী মো. ইদ্রিস বলেন, ‘বাজারে এবার ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। তাই ছোট গরু বেশি এনেছি। তবে বেশির ভাগ ক্রেতা দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে এবার ছোট গরুর দাম কিছুটা বেশি।’ কুমিল্লা থেকে ৩০টি গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী মাহি উদ্দিন। এর মধ্যে ২০টি ছোট। মাহি উদ্দিন বলেন, ‘বড় গরু কেনে খুব কম মানুষ। বাজারে ছোট গরুর ক্রেতার সমাগম থাকলেও বিক্রি কম। বেশির ভাগ ক্রেতা দরদাম করছে কেবল। গরুর লালন-পালন খরচ বেশি। তাই সামান্য লাভে বিক্রি করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই।’

চট্টগ্রামের পশুর হাটে কুমিল্লা, ফেনী, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশির ভাগ পশু আসে। এবার চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলার ২২৮টি স্থায়ী-অস্থায়ী পশুর হাটে গত ২৯ মে থেকে পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। নগরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায় ১৩টি স্থায়ী-অস্থায়ী হাট বসেছে। এর মধ্যে বিবিরহাট, সাগরিকা ও নূরনগর হাউজিং সোসাইটির হাট বড়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বলেন, এবার পশুর চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। এর বিপরীতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়েছে ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি, যা গতবার ছিল ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৯টি। উৎপাদিত পশুর মধ্যে গরু আছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৩টি। হাট মনিটরিংয়ে ৬৬টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদ ল আজহ ক রব ন ওজন র

এছাড়াও পড়ুন:

কোরবানির পশু সম্পর্কে যে বিষয়গুলো জানতেই হবে

নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে ইসলামী শরিয়তের আলোকে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এই  বিধানটি যে পশুটিকে জবাইয়ের মাধ্যমে আদায় করতে হবে তার বৈশিষ্ট্য জানাও ওয়াজিব।

কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য

ছয় প্রকার পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ বা বৈধ। এসব পশু ছাড়া অন্য পশু দিয়ে কোরবানি করা বৈধ নয়। এগুলো হচ্ছে- উট, গরু, ছাগল, দুম্বা, ভেড়া ও মহিষ। (হেদায়া : ৪/৪৪৮)

আরো পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে কোরবানির হাট: কম দামে খুশি ক্রেতা, হতাশ বিক্রেতা

ঢাকার গাবতলীতে নজর কাড়ছে আফগানি উট

এসব ভেতর দুম্বা, ছাগল ও ভেড়ার বয়স এক বছর হওয়া জরুরি। তবে ছয় মাসের ভেড়া ও দুম্বা মোটাতাজা হলে এবং দেখতে এক বছর বয়সের মতো দেখা দেলে তা দিয়েও কোরবানি করা জায়েজ। গরু ও মহিষ পূর্ণ দুই বছর বয়সী হওয়া এবং উট পাঁচ বছর বয়সী হওয়া আবশ্যক। এর কম হলে কোরবানি জায়েজ হবে না। (হেদায়া : ৪/৪৪৯)

উল্লিখিত আয়াতের আলোকে ইসলামী আইনজ্ঞরা বলেন কোরবানির পশু নিখুঁত, দৃষ্টিনন্দন, সুস্বাস্থ্যের অধিকার ও মধ্য বয়সী হওয়া উত্তম। দৃষ্টিনন্দন যেকোনো রঙের পশু যেমন কোরবানি করা যাবে, তেমনি চাষাবাদে ব্যবহৃত হওয়ার পরেও যদি কোনো পশু ত্রুটিমুক্ত থাকে তবে তা দিয়ে কোরবানি করা যাবে।

ইসলামী আইনজ্ঞরা বলেন, কোরবানি জায়েজ হওয়ার জন্য মৌলিকভাবে পশুকে চারটি মারাত্মক ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে। এগুলো হচ্ছে-. অন্ধত্ব, খ. গুরুতর অসুস্থতা, গ. খোড়া হওয়া, ঘ. গুরুতর স্বাস্থ্যহানি ও অঙ্গহানি ঘটা। (আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, কোরবানি অধ্যায়, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)

কোনো পশুর দুই চোখ বা এক চোখ অথবা এক চোখের এক-তৃতীয়াংশের বেশি নষ্ট হয়ে গেলে তা দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নয়। অনুরূপ যে পশুর একটি কান বা লেজের এক-তৃতীয়াংশের বেশি কেটে গেছে তা দিয়েও কোরবানি করা বৈধ নয়। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৮)

যে পশু এমন খোঁড়া যে তিন পায়ের ওপর ভর করে চলে, চতুর্থ পা মাটিতে লাগেই না, কিংবা মাটিতে লাগে বটে কিন্তু তার ওপর ভর করে চলতে পারে না-এমন পশু দিয়ে কোরবানি করা বৈধ নয়। তবে যদি খোঁড়া পায়ের ওপর ভর করে চলতে পারে, তবে তা দিয়ে কোরবানি করা বৈধ। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/২২৮)

শিং ওঠেনি এমন পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ। অনুরূপ শিংয়ের অগ্রভাগ ভেঙ্গে গেলেও তা দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ। কিন্তু শিং মূল থেকে ভেঙ্গে গিয়ে থাকলে তা দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নেই। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/২২৭-৮; ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৭)

যে পশুর গায়ে বা কাঁধে দাদ বা খুজলি হয়েছে তা দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ। কিন্তু ক্ষত যদি গোশত পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং তার কারণে পশুর স্বাস্থ্যহানি ঘটে তবে এমন পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নেই। (হেদায়া : ৪/৪৩২)

আল্লাহ সবাইকে সঠিকভাবে কোরবানি করার তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক: মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যেভাবে কোরবানি করতে হবে
  • টিভিতে যত কাহিনিচিত্র
  • কোরবানির পশু সম্পর্কে যে বিষয়গুলো জানতেই হবে