আরসিবির বিজয় উৎসবে নিহত ১১: কোহলির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
Published: 8th, June 2025 GMT
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (আরসিবি) আইপিএল শিরোপা উদ্যাপন ঘিরে ১১ জনের প্রাণহানি হয়। এ ঘটনায় বিরাট কোহলির নামে এক ব্যক্তি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার বিরুদ্ধে ‘আইপিএলের মাধ্যমে জুয়া’ প্রচার করে ভিড় উসকে দেওয়ার জন্য দায়ী করা হয়েছে।
তবে বেঙ্গালুরু পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়নি। প্রাণহানির ঘটনায় এরই মধ্যে যে মামলা হয়েছে, সেটির চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে।
গত ৩ জুলাই আইপিএলের শিরোপা জেতে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু (আরসিবি)। পরদিন বুধবার বিরাট কোহলিদের বরণ করে নিতে গিয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ আসে ব্যাঙ্গালুরুর চেন্নাস্বামি স্টেডিয়ামে। সেখানে হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১১ জন। এছাড়াও আহত হন অন্তত ৫০।
আজ রোববার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় সমাজকর্মী এইচ এম ভেঙ্কটেশ কাবন পার্ক থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। ভেঙ্কটেশ অভিযোগপত্রে লিখেছেন, কোহলি আরসিবি দলের একজন বিশিষ্ট সদস্য হিসেবে ‘আইপিএলের মাধ্যমে জুয়া’ প্রচার করে ভিড় উসকে দেওয়ার জন্য দায়ী। তার দাবি, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএল ‘কোনো খেলা নয়, বরং জুয়া, যা ক্রিকেট খেলাকে কলুষিত করেছে।’
দলের বিজয় উদ্যাপনের সময় বিপুলসংখ্যক ভক্তের ভিড় তৈরিতে কোহলির ভূমিকা এই বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী, যা পরবর্তী সময়ে পদদলিত হওয়ার ঘটনা সৃষ্টি করেছে বলে দাবি ভেঙ্কটেশের। তিনি অভিযোগ করেন, বেঙ্গালুরু দলের জুয়ায় অংশ নেওয়া এবং একটি নির্দিষ্ট স্থানে লোক জড়ো হতে উসকানি দিয়ে এ দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপট তৈরি করেন কোহলি। অতএব আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি, দয়া করে বিরাট কোহলি এবং তার দলের সদস্যদের এই দুর্ঘটনার এফআইআরে অভিযুক্ত করুন এবং ব্যবস্থা নিন।’
তবে বেঙ্গালুরু পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগটি গৃহীত হলেও এই পর্যায়ে কোনো নতুন এফআইআর দায়ের করা হবে না। একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এরই মধ্যে দায়ের করা একটি মামলার অধীন চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে।’
আরসিবির উদ্যাপনে প্রাণহানির ঘটনায় পুলিশ যে মামলা করেছে, সেখানে বিবাদী করা হয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ফ্র্যাঞ্চাইজি, কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন এবং ডিএনএ এন্টারটেইনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডকে। এ তিন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে অবহেলা, ভিড় ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা এবং প্রয়োজনীয় অনুমতি ছাড়াই অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য দায়ী করা হয়েছে।
এরই মধ্যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য দ আরস ব ঘটন য় র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।