ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু বরগুনায়, আক্রান্তের হারও বেশি
Published: 8th, June 2025 GMT
শুক্রবার (৬ জুন) রাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরগুনা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মারা যান মোনালিসা জেরিন (৩০)। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত জাফরুল হাসান ফরহাদের ছোট মেয়ে। এ নিয়ে চলতি বছর বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারালেন ৭ জন। যা সারাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যায় জেলা পরিসংখ্যানে সর্বোচ্চ। উদ্বেগের বিষয় ডেঙ্গু আক্রান্তের দিকেও শীর্ষে অবস্থান করছে বরগুনা।
জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৭৮৩। এর মধ্যে শুধু বরগুনা জেলায় রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১১৭। এ হিসেবে দেশে ডেঙ্গু রোগীর ২৫ শতাংশই বরগুনা জেলায়। গত ৭ দিনে দেশে ৪৮১ জন রোগী নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বরগুনাতে রয়েছেন ২০৪ জন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য বলছে, বরগুনার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও ৫টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ও প্লাটিলেট টেস্ট বন্ধ রয়েছে কিট সংকটের কারণে। এ ছাড়া স্যালাইন সংকটেও ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
রবিবার (৮ জুন) দুপুরে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, ৬০০ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। বেড সংকটে বেশিরভাগ রোগী বিছানা পেতেছেন মেঝেতে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সার্বক্ষণিক মশারির মধ্যে থাকার কথা থাকলেও নিয়ম-নীতি মানছেন না অনেকে। ফলে সাধারণ রোগীর সঙ্গে মিশে গেছেন ডেঙ্গু রোগীরা। এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে স্বজনরাও একই বিছানায় থাকছেনে। রয়েছে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন মো.
হাসপাতাল থেকে মশারি দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন শাহরিয়ার।
চারদিন ধরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন সদরের দক্ষিণ মনসাতলীর মনোজ শীল। তিনি বলেন, ‘‘ভয়াবহ পরিস্থিতি! হাসপাতালে স্যালাইন দিতে পারছে না। নাপা পর্যন্ত বাইরে থেকে কিনতে বলছে। আমরা তো ভাই ঠেকে গিয়ে এখানে এসেছি। এখন তারা যা বলবে শুনতে হবে।’’
শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই ডেঙ্গু আক্রান্ত। কলেজ রোড এলাকার সাইমন (৯) শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছে তিনদিন। সাইমনের মা সোনিয়া আক্তার বলেন, ‘‘হাসপাতালে ওষুধ নাই, স্যালাইন নাই, এমনকি সিভিসি প্লাটিলেট টেস্ট পর্যন্ত করানো যায় না। অসুস্থ শিশুকে নিয়ে প্রতিদিন টেস্ট করানোর জন্য বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে ঘুরতে হয়। এটা যে কি কষ্টের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুঝবে না। এখানে ভর্তি থাকা মানেই শুধু মনের শান্তি যে- বাচ্চা অসুস্থ হাসপাতালে ভর্তি করছি।’’
একই চিত্র জেলার আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা, বামনা ও বেতাগী উপজেলায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। অনেকে ভরসা রাখতে না পেরে পাশে পটুয়াখালী ও বরিশালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তালতলীর স্থানীয় সাংবাদিক হাইরাজ মাঝি বলেন, ‘‘হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও সিবিসি টেস্ট করানো যাচ্ছে না। রোগীরা প্রাইভেট ক্লিনিকে বাড়তি টাকা ব্যয় করে টেস্ট করতে বাধ্য হচ্ছেন। উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আলাদা নজর দেওয়া উচিত এসব উপজেলায়।’’
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজোয়ানুর আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘একের পর এক ডেঙ্গু রোগী আসছে হাসপাতালে। চিকিৎসক সংকট থাকায় আমরাও হিমশিম খাচ্ছি। পরিস্থিতি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় এবং ঢাকায় জানানো হয়েছে।’’
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘ডেঙ্গুর প্রবণতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টির মৌসুম পর্যন্ত এমন বাড়তেই থাকবে। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। জেলা প্রশাসন সঙ্গে নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন ডেঙ্গু দমনে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। এমন পরিস্থিতি দু’একদিনে তৈরি হয়নি। ফলে দু’একদিনে এ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যাবে না।’’
‘‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ঘরে বসে থাকার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বরগুনায় সবচেয়ে বেশি,’’ বলেন তিনি।
ঢাকা/শান্ত
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট স ট কর পর স থ ত বরগ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না। মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?
ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো। বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা
রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে।
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত।
জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।
ঢাকা/লিপি