করোনার নতুন ধরনের বিস্তার, সতর্কতা জোরদার
Published: 9th, June 2025 GMT
নভেল করোনা ভাইরাস আবারো নতুন রূপে ফিরে আসছে। পাঁচ বছর আগে বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ রূপ নেয়া এই ভাইরাস এখনো থেমে নেই। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকায় বাংলাদেশেও সতর্কতা জোরদার করা হয়েছে। ঈদুল আজহার সময় মানুষজনের চলাচল ও ভিড় বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে নতুন করে তাগিদ দিয়েছে সরকার।
নতুন ধরন: সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানায়, সাম্প্রতিক নমুনা পরীক্ষায় করোনার যেসব ধরন পাওয়া গেছে, সেগুলো হলো—এনবি.
আইইডিসিআরের এক কর্মকর্তা জানান, এই উপধরণগুলো দ্রুত ছড়ালেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষণ হালকা থাকে— যেমন হালকা জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা বা সর্দি হতে পারে। তবে যাদের আগেই শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা, হৃদরোগ বা ডায়াবেটিস আছে; তাদের জন্য এসব ধরণ বিপজ্জনক হতে পারে। দেশে পরীক্ষার হার কম হলেও যেসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তার ৭৫ শতাংশেই নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে, যা উদ্বেগজনক।
আরো পড়ুন:
দেশে আরো ৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত
ভারতে করোনার প্রকোপ বাড়ায় বেনাপোলে সতর্কতা জারি
ঈদের ভিড়ে মাস্ক পরার নির্দেশনা
ঈদ উপলক্ষে মানুষ বাস, ট্রেন ও লঞ্চে ভিড় করে বাড়ি গেছে। সেই ভিড়ে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ে। এজন্য সরকার গণপরিবহন ও জনসমাগমপূর্ণ জায়গায় মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা জারি করেছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় জানানো হয়, ঈদের সময় রেলস্টেশন এবং ট্রেনের অভ্যন্তরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। রেলকর্মীদের মাধ্যমে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে জীবাণুনাশক ছিটানো এবং জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।
সীমান্তে স্ক্রিনিং কার্যক্রম
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় সীমান্তবর্তী এলাকায় বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুদ রানা জানান, বেনাপোল সীমান্তে স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আগত যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। উপসর্গ থাকলে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে তাদের আইসোলেশনেও পাঠানো হচ্ছে।
আখাউড়া, হিলি, বুড়িমারী ও অন্যান্য সীমান্ত পয়েন্টেও একই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
নজর এখন মার্কেট ও ধর্মীয় সমাবেশে
যেহেতু কোরবানির পশুর হাট শেষ হয়ে গেছে, এখন কর্তৃপক্ষের নজর মার্কেট ও গণজমায়েতের উপর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক প্রফেসর ডা. মো. নাজমুল ইসলাম জানান, করোনার নতুন ধরনগুলো অনেক ক্ষেত্রে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। যদিও লক্ষণ হালকা, তবে সংক্রমণ হার বেশি। ঈদের সময়ে ঘন জনসমাগমে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে। এজন্য জেলা পর্যায়ে প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
বুস্টার ডোজ না নেওয়ায় ঝুঁকি
দেশে করোনা টিকার প্রাথমিক ডোজ নিয়েছেন প্রায় ৭৮ শতাংশ মানুষ। কিন্তু দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ বা তৃতীয় ডোজ নেওয়ার হার এখনো ৩০ শতাংশের নিচে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. রওশন হক জানান, যারা বুস্টার ডোজ নেননি, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে। নতুন ধরনে আক্রান্ত হলে তাদের জটিলতা বেশি হতে পারে। তাই দ্রুত বুস্টার ডোজ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শনিবারের (৭ জুন) তথ্যমতে, আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন কোনো মৃত্যুর খবর নেই। দেশে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ২১ হাজার ৭৪২ জনে এবং মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ৫০০। তবে নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় প্রকৃত চিত্র অনিশ্চিত।
জনসচেতনতা এখন সবচেয়ে বড় অস্ত্র
করোনা এখন মৌসুমী সংক্রমণের মতো হলেও অবহেলা করলে ভয়াবহ হতে পারে। যারা বাইরে যান, মার্কেটে কেনাকাটা করেন, গণপরিবহনে চলাফেরা করেন তাদের সচেতনতা জরুরি।
জনসাধারণের জন্য করণীয়
বাইরে গেলে মাস্ক পরুন। সাবান দিয়ে বারবার হাত ধুতে থাকুন। হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখুন। উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে করোনা পরীক্ষা করুন। এখনো যারা বুস্টার ডোজ নেননি, তারা দ্রুত নিয়ে নিন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘করোনা আগের মতো ভয়াবহ নয়, তবে একে একেবারে হালকা করে দেখা ঠিক হবে না। নতুন ধরন, সীমান্ত থেকে আগত যাত্রী এবং ঈদের সময় ভিড়; সবকিছু মিলিয়ে সংক্রমণ ফের বাড়ার আশঙ্কা থাকছেই। এ জন্য ব্যক্তি সচেতনতা ও প্রশাসনিক উদ্যোগ সমানভাবে জরুরি।’’
ঢাকা/এএএম/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ক রমণ কর ন র পর ক ষ সতর ক র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
জরায়ুর ফাইব্রয়েড কতটা ভয়ের
প্রতিবছর জুলাই মাস বিশ্বব্যাপী ‘জরায়ুর ফাইব্রয়েড সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালিত হয়। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য নারীদের মধ্যে জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা টিউমার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো, এর সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং সুস্থ জীবনযাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরা।
ফাইব্রয়েড হলো জরায়ুর একধরনের নন ক্যানসারাস টিউমার বা মাংসপিণ্ড, যা প্রজননক্ষম নারীদের হতে পারে। লেইওমায়োমা বা মায়োমা নামেও এটি পরিচিত। জরায়ুতে নানা ধরনের টিউমারের মধ্যে বেশি দেখা যায় ফাইব্রয়েড। সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি নিরীহ হয়। তবে সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না করলে জীবনমানের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে।
লক্ষণ বা উপসর্গ
এই টিউমার লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অন্য কোনো সমস্যায় পেটের আলট্রাসাউন্ড করতে গিয়ে ধরা পড়ে। তবে যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে—
অতিরিক্ত ও দীর্ঘ সময় ধরে ঋতুস্রাব।
তলপেটে চাপ বা ব্যথা। শরীর ফুলে যাওয়া।
ঘন ঘন প্রস্রাব বা মূত্রনালির সমস্যা।
সহবাসের সময় ব্যথা অনুভব করা।
গর্ভধারণে সমস্যা বা বন্ধ্যত্ব।
বয়স ও বংশগতির প্রভাব।
ওজনাধিক্য, হরমোন পরিবর্তন ইত্যাদি।
নির্ণয় ও চিকিৎসা
আলট্রাসাউন্ড, পেলভিক ইমেজিং, এমআরআই বা জরুরি ক্ষেত্রে হাইফু বা হিস্টেরস্কোপি ব্যবহারের মাধ্যমে জরায়ুতে ফাইব্রয়েড শনাক্ত করা যায়।
টিউমার ছোট হলে বা উপসর্গ না থাকলে ওষুধ ও পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। গুরুতর ক্ষেত্রে মায়োমেকটমি, ইউটেরাইন আর্টারি এম্বোলাইজেশন, এমআরআই গাইডেড ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড বা জরায়ু অপসারণ করা হয়। চিকিৎসার ধরন বাছাইয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কেন সচেতনতা জরুরি
ফাইব্রয়েড খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। কিন্তু অনেক নারী উপসর্গ পেয়েও সময়মতো এর চিকিৎসা নেন না। এতে করে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হতে পারে। মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, ক্ষুধা, ক্লান্তি, বন্ধ্যত্ব নিয়ে উদ্বেগ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা—এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় মানসিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।
এই টিউমার ডিজেনারেটিভ, ইনফেকশন অথবা সারকোমেটাজে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে সারকোমেটাজ বা জরায়ু ক্যানসারে রূপ নেয় মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ক্ষেত্রে। তাই ক্যানসার ভেবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ফাইব্রয়েড নিয়ে গবেষণা এখনো সীমিত। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা। ফাইব্রয়েড হলে সন্তান হবে না, এমন ধারণাও অমূলক। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়। এ জন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. শারমিন আব্বাসি, স্ত্রীরোগ ও বন্ধ্যত্ববিশেষজ্ঞ