ইরানে ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। দলটি বলেছে, এ হামলা মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বকে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।

আজ শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের এ কথাগুলো বলেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়ম লঙ্ঘন করে ইসরায়েল এ হামলা চালিয়েছে। এ হামলার মধ্য দিয়ে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল ফের তার সন্ত্রাসী রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।

ইসরায়েলের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ প্রতিরোধে জাতিসংঘ ও বিশ্ব সম্প্রদায়কে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। বিবৃতিতে বলা হয়, আগ্রাসী ইসরায়েলের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কড়া জবাব দিতে হবে।

ইসরায়েল আজ শুক্রবার ভোররাতে ইরানের সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ইরানের সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

আয়েশা (রা.) রাগ করলে নবীজি (সা.) কী করতেন

প্রতিটি দাম্পত্য জীবনে উত্থান-পতন থাকে। এমনকি সবচেয়ে প্রেমময় সম্পর্কেও কখনো কখনো অভিমান দানা বাঁধে। কিন্তু এই মুহূর্তগুলো কীভাবে সামলানো যায়, তা আমরা শিখতে পারি আমাদের প্রিয় মহানবী (সা.) এবং তাঁর স্ত্রী আয়েশা (রা.)-এর জীবন থেকে।

আয়েশা (রা.) ছিলেন রাসুল (সা.)-এর প্রিয় স্ত্রী এবং ইসলামের একজন মহান শিক্ষয়িত্রী, তিনিও মাঝেমধ্যে তাঁর স্বামীর প্রতি রাগ বা মন খারাপ অনুভব করতেন। কিন্তু তিনি কীভাবে তা প্রকাশ করতেন? আর রাসুল (সা.) কীভাবে তাঁর সেই আবেগের মুখোমুখি হতেন?

আয়েশার (রা.) রাগের প্রকাশ

আয়েশা (রা.) ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, প্রাণবন্ত ও স্পষ্টভাষী। একটি হাদিসে আয়েশা (রা.) নিজেই বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) তাঁর মেজাজ বুঝতে পারতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল(সা.) আমাকে বলতেন, ‘আমি জানি তুমি আমার ওপর খুশি আছ নাকি রাগ করেছ।’

আমি জিজ্ঞেস করতাম, ‘আপনি তা কীভাবে বোঝেন?’ তিনি বলতেন, ‘যখন তুমি খুশি থাকো, তখন বলো, “মুহাম্মাদের রবের কসম”, আর যখন রাগ করো, তখন বলো, “ইব্রাহিমের রবের কসম”।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৪৪০)

এটি একটি দাম্পত্য সম্পর্কের কোমল মুহূর্ত। আয়েশা (রা.)-এর এই হালকা রাগের প্রকাশ ছিল সূক্ষ্ম কিন্তু মানবিক। তিনি রাসুলের (সা.)নাম এড়িয়ে ইব্রাহিম (আ.)-এর নাম ব্যবহার করতেন, যা তাঁর রাগের একটি নিরীহ প্রকাশ। বোঝা গেলো, রাগ বা মন খারাপ প্রকাশ করা স্বাভাবিক, কিন্তু তা হওয়া উচিত সম্মান ও সীমার মধ্যে।

আয়েশা (রা.) নিজেই বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) তাঁর মেজাজ বুঝতে পারতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল(সা.) আমাকে বলতেন, ‘আমি জানি তুমি আমার ওপর খুশি আছ নাকি রাগ করেছ।’আরও পড়ুনকীভাবে মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসব২৭ এপ্রিল ২০২৫

নবীজির (সা.) অপূর্ব ধৈর্য

নবীজির (সা.) আচরণ ছিল এই গল্পের প্রকৃত শিক্ষা। তিনি স্ত্রীর রাগকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতেন, কিন্তু কখনো তাঁকে তিরস্কার বা অপমান করতেন না। পরিবর্তে, তিনি তাঁর আবেগ বুঝতেন এবং কোমলভাবে তা সামাল দিতেন। রাসুল (সা.)–এর এই আচরণ আমাদের শেখায় কীভাবে দাম্পত্য জীবনে ধৈর্য ও সহানুভূতি বজায় রাখতে হয়।

একটি ঘটনায় আয়েশা (রা.) নবীজির (সা.)অন্য স্ত্রী সাফিয়া (রা.)-এর উচ্চতা নিয়ে হালকা মন্তব্য করেছিলেন। এটি ছিল একটি মানবিক দুর্বলতার প্রকাশ, কিন্তু নবীজি (সা.)তাঁকে কঠোরভাবে তিরস্কার করেননি। তিনি শুধু বলেছিলেন, ‘তুমি এমন কথা বলেছ, যা সমুদ্রের পানিতে মিশলে তা বিষাক্ত করে দিত।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৮৮২)

এ কথায় তিনি আয়েশা (রা.)-কে তাঁর ভুলটুকু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর সম্মান বজায় রেখেছিলেন।

আয়েশা (রা.) ২ হাজার ২১০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যা তাঁর অগাধ জ্ঞান ও বুদ্ধির পরিচয় দেয়। তিনি তাফসির, ফিকহ, আরবি সাহিত্য এবং ইতিহাসে পারদর্শী ছিলেন।

ঈর্ষার মুহূর্তে রাসুলের (সা.)কোমলতা

আরেকটি ঘটনায় আয়েশা (রা.) নবীজির (সা.) অন্য স্ত্রীর পাঠানো খাবারের থালা ভেঙে ফেলেছিলেন ঈর্ষার বশে। এটি ছিল একটি বিব্রতকর মুহূর্ত, কারণ সাহাবিরা উপস্থিত ছিলেন।

কিন্তু নবীজি (সা.) কী করলেন? তিনি রাগ করেননি বা আয়েশা (রা.)-কে অপমান করেননি। পরিবর্তে তিনি শান্তভাবে ভাঙা থালার টুকরো সংগ্রহ করলেন এবং নিজের থালা দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দিলেন। এরপর তিনি আয়েশা (রা.)-এর দিকে ইঙ্গিত করে হেসে বললেন, ‘তোমাদের মা ঈর্ষান্বিত হয়েছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,২২৫)

এ ঘটনা আমাদের শেখায়, রাগ বা ঈর্ষার মুহূর্তে কীভাবে শান্ত থাকতে হয়। নবীজি (সা.) তাঁর স্ত্রীর আবেগকে মেনে নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর আচরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, একটি সম্পর্কে ভালোবাসা ও বোঝাপড়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনকঠিন সময়ে মহানবী (সা.)-এর জয়ের কৌশল১১ মে ২০২৫

আয়েশার শিক্ষা ও রাসুলের প্রভাব

হজরত আয়েশা (রা.) ছিলেন একজন অসাধারণ নারী। তিনি ২ হাজার ২১০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যা তাঁর অগাধ জ্ঞান ও বুদ্ধির পরিচয় দেয়। তিনি তাফসির, ফিকহ, আরবি সাহিত্য এবং ইতিহাসে পারদর্শী ছিলেন।

সাহাবিরাও তাঁর কাছে পরামর্শ নিতেন। কিন্তু তাঁর এই মানবিক দিক—রাগ, ঈর্ষা বা মন খারাপ—তাঁকে আমাদের কাছে আরও কাছের করে তোলে। তিনি আমাদের দেখান, আবেগ প্রকাশ করা স্বাভাবিক, কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করা শিক্ষার বিষয়।

রাসুল (সা.) তাঁকে এই শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর তরুণ মনকে বুঝতেন এবং তাঁর ভুলগুলো সংশোধন করতেন কোমলভাবে। যখন আয়েশা (রা.) কিছু ইহুদির প্রতি অভিশাপ দিয়েছিলেন তাঁদের অভিবাদনের ভুলের জন্য, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছিলেন, ‘তুমি কেন তাদের অভিশাপ দিলে? আমি তো শুধু তাদের অভিবাদন ফিরিয়ে দিয়েছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০৪৪)

মহানবী (সা.) ছিলেন সবার জন্য রহমত এবং তাঁর দাম্পত্য জীবন আমাদের জন্য একটি আলোকবর্তিকা। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রয়েছে একজন রাসুল (সা.), যিনি তোমাদের কষ্টে ব্যথিত হন, তোমাদের কল্যাণের জন্য আগ্রহী এবং মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১২৮)

আরও পড়ুনমহানবী (সা.) যেভাবে সমালোচনা মোকাবেলা করতেন০৯ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আয়েশা (রা.) রাগ করলে নবীজি (সা.) কী করতেন