উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ২৬ জুন শুরু হচ্ছে। ১১টি শিক্ষা বোর্ড এরই মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করেছে। প্রশ্ন ও উত্তরপত্র উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিন্তু মহামারি করোনা সংক্রমণ বাড়ায় পরীক্ষা শুরুর সময় নিয়ে বিকল্প চিন্তা করছে শিক্ষা বোর্ড। এর সঙ্গে ডেঙ্গু পরিস্থিতিকেও আমলে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছে সংশ্লিষ্টরা।

গত কিছুদিন ধরে আবারো করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৬০ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। অন্যদিকে একই সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৫৭০; মারা গেছেন ২৮ জন।

শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক সর্বশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ জনকে পরীক্ষা করে ৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮০৭ জন।

গত কয়েক দিনে ডেঙ্গুর পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, পরীক্ষার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি এমন থাকলেও পরীক্ষা যথানিয়মে ও নির্ধারিত সময়ে শুরু করা হবে। সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে একাধিক বিকল্পও ভেবে রাখা হচ্ছে।

২৬ জুন সারা দেশের ৯ হাজার ৩১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছে। পরীক্ষা হবে ২ হাজার ৭৯৭ কেন্দ্রে। তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হবে ১০ আগস্ট। এরপর ব্যবহারিক পরীক্ষা ১১ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা জানিয়েছেন, করোনা ও ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ে শঙ্কা থাকলেও তারা নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শুরু করবেন। উচ্চ মাধ্যমিকে বিষয় বেশি থাকায় পরীক্ষা নিতে সময় লাগে। নির্ধারিত সূচির বাইরে গিয়ে পরীক্ষার ক্ষেত্রে আপাতত কোনো বিকল্প হাতে নেই। এ জন্য পরীক্ষা শুরু করার পর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তবে এখনই অটোপাস সংক্রান্ত কিছু কোনোভাবেই ভাবছে না পরীক্ষাসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অভিভাবকরাও অটোপাসের বিষয়ে আগ্রহী নয়। আর, করোনা সংক্রমণ ক্রমবর্ধমান হলেও পরীক্ষা সম্পন্ন করার বিষয়েই ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০২০ সালের মার্চে দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৮ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি দফায় দফায় বাড়ানো হয়। করোনার কারণে স্কুল-কলেজ খুলতে না পারায় ২০২০ সালে জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অটোপাস দেওয়া হয়। জেএসসির ২৫ শতাংশ ও এসএসসির ৭৫ শতাংশ ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি অটোপাসের ফল প্রকাশ করা হয়। তবে এ ফল প্রকাশে মান বণ্টন, আইন সংশোধনসহ অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয় সরকারকে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, “এটি সত্যি, ডেঙ্গু এবং করোনা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। অভিভাবকরাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নানা শঙ্কার কথা জানাচ্ছেন। তবে আমাদের হাতে পরীক্ষা শুরু করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।”

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, “আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু ও করোনার ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। এই অবস্থায় রবিবার থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে। তাই শঙ্কা বাড়ছে। তবে আমরা আশা করি, সরকার সকল বিষয় আমলে নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।”

ঢাকা/হাসান/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ক রমণ ব কল প পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়

রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।

গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।

আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।

পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।

প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।

সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পানিতে ভাসছিল ২২ দিনের শিশুর মৃতদেহ, ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন মা
  • বাঁধন কাঁদলেন, কিন্তু কেন...
  • মামাত বোনকে ধর্ষণ-হত্যা করে নিখোঁজের গল্প সাজায় নয়ন: পুলিশ
  • গণঅভ্যুত্থানে আহত সামিউলের দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়
  • আমাদের যত ঘুঘু 
  • বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচের নিয়ম পাল্টাচ্ছে এমসিসি
  • যথাসময়ে এইচএসসি পরীক্ষা আছে বিকল্প চিন্তাও
  • কমিটি নেই, সবাই নেতা
  • কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়