গাজীপুরে এখনো করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়নি
Published: 16th, June 2025 GMT
দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় আক্রান্তদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য ১৬টি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। তবে সেখানে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। সবেমাত্র কীটের চাহিদা প্রস্তুত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সোমবার (১৬ জুন) জানিয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৬ জনের শরীরে।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র বলছে, তারা ২০ হাজার কীটের চাহিদা প্রস্তুত করেছেন। মঙ্গলবার (১৭ জুন) তারা এটা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাবেন। তবে করোনা রোগীদের জন্য ১০টি বেড প্রস্তুত রেখেছেন। এরমধ্যে ৫টি পুরুষ ও ৫টি মহিলা রোগীদের জন্য। এখনো পর্যন্ত কোনো করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়নি।
আরো পড়ুন:
এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে থাকবে মেডিকেল টিম
করোনা ও ডেঙ্গু: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরুরি নির্দেশনা
গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, এখনো পর্যন্ত তাদের কাছে করোনা আক্রান্ত রোগীর কোনো তথ্য আসেনি৷ তবে গাজীপুরের ৪টি উপজেলা কালিয়াকৈর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ১ হাজার করে কীটের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সেগুলো সিভিল সার্জন অফিস হতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে৷ সেখান হতে কীট আসলেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হবে৷
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিল্পঅধ্যুষিত গাজীপুর জেলায় অর্ধকোটি মানুষের বসবাস। দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনা রোগী সনাক্ত হলেও গাজীপুরে আক্রান্ত হয়নি, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ এখানকার হাসপাতালে কীট নেই। পরীক্ষা হচ্ছে না, এ জন্য রোগী সনাক্ত হয়নি। দ্রুত পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করলে রোগী পাওয়া যাবে৷
গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান অফিসার আমানুল্লাহ জানান, গাজীপুরে এখনো পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর তথ্য তাদের কাছে আসেনি। সরকারি হাসপাতালে কীটের চাহিদা দিয়েছে। সেগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা পেয়ে যাবে।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক আব্দুস সালাম সরকার জানান, এখন পর্যন্ত গাজীপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ নিয়ে কোনো রোগী হাসপাতালে আসেনি। প্রাথমিকভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য ১০টি বিছানা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো বেড সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। তিনি আশা করেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কীট পেয়ে যাবেন।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়।
ঢাকা/রেজাউল/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ত পর ক ষ র ন অফ স স র জন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র কেড়ে নিল তরুণ ইরানি কবি আর তাঁর পুরো পরিবারকে
মাত্র ১০ দিন পরে ছিল পারনিয়া আব্বাসির ২৪তম জন্মদিন। নিজের জন্মদিন উদ্যাপন পরিকল্পনা কি করে ফেলছিলেন এই তরুণী, হয়তো আরও একটি চমৎকার কবিতা তাঁর কলম থেকে বেরিয়ে আসত।
কিন্তু এসব কিছু আর হলো না; বরং রক্তে ভেসে যাওয়া গোলাপি রঙের ম্যাট্রেসের ওপর বিশাল বিশাল কংক্রিট খণ্ডের স্তূপের নিচ থেকে বেরিয়ে আসা কয়েক গোছা চুলে পরিণত হয়েছেন পারনিয়া।
নিজের নোট বইয়ে পারনিয়ার লেখা শেষ কবিতা ছিল—
‘আমি পুড়ে যাই,
আমি বিবর্ণ হয়ে যাই,
আমি এক নীরব তারা হয়ে উঠি,
যে তোমার আকাশে ধোঁয়া হয়ে যায়...’
মাত্র ২৩ বছর বয়সে সত্যি সত্যি নীরব তারা হয়ে গেছেন ইরানের উদীয়মান এই কবি। গত শুক্রবার ভোররাতে তেহরানে ইসরায়েলের হামলায় পারনিয়ার পরিবারের সব সদস্য নিহত হন।
সেদিন সকালেই হয়তো পারনিয়ার সঙ্গে দেখা হতো তাঁর প্রিয় বান্ধবী মরিয়মের। কান্নাজড়ানো গলায় মরিয়ম বলেন, ‘তিনি সবই ছিলেন। একজন কবি, একজন শিক্ষক ও একজন কন্যা। তিনি মাত্র কয়েক দিন আগে ব্যবস্থাপনায় স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ইরানের মেল্লি ব্যাংকের কেন্দ্রীয় শাখায় নিজের চাকরি ধরে রাখতে তিনি ভর্তি স্থগিত রেখেছিলেন।’
পারনিয়া ছিলেন শিক্ষিত এক তরুণী, যাঁর দুই চোখ ভরা ছিল স্বপ্ন। তিনি নিজের পেশা ও দেশের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। ঘাজভিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুবাদ বিষয়ে লেখাপড়া করা এই তরুণী জীবনে আরও অনেকটা এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।পারনিয়া ছিলেন শিক্ষিত এক তরুণী, যাঁর দুই চোখ ভরা ছিল স্বপ্ন। তিনি নিজের পেশা ও দেশের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। ঘাজভিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুবাদ বিষয়ে লেখাপড়া করা এই তরুণী জীবনে আরও অনেকটা এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
ক্ষেপণাস্ত্রের একটি আঘাতে, আগুনের একঝলকে এ সবকিছু শেষ হয়ে গেল। শুক্রবার ইসরায়েলের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র তেহরানের সাত্তারখান সড়কের অর্কিড কমপ্লেক্সে তাঁদের অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে আঘাত হানে। ক্ষেপণাস্ত্রটি যখন পারনিয়াদের ভবনে আঘাত হানে, ঠিক সেই মুহূর্তে স্বপ্নবান এ তরুণী কি ঘুমের ঘোরে কোনো স্বপ্ন দেখছিলেন?
আরও পড়ুনইসরায়েলের গুপ্তহত্যার পর ইরানের নতুন সামরিক নেতৃত্বে কারা এলেন৯ ঘণ্টা আগেমরিয়ম জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি পারনিয়াদের ভবনের ঠিক মাঝখানে আঘাত হানে। যে কারণে ভবনের পুরো একটি অংশ ধসে পড়ে, ভবনের আরও বেশ কয়েকজন বাসিন্দা নিহত হয়েছেন।
ধসে পড়া ভবনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন তুলেছে। ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি গোলাপি রঙের ম্যাট্রেস, সেটির এক প্রান্ত রক্তে ভেসে যাচ্ছে, রক্তের ওপর কয়েক গোছা চুল, যেন কংক্রিটের চাদর মুড়ি দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে কেউ।
ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে সবার প্রথমে পারনিয়ার মৃতদেহ বের করে আনেন উদ্ধারকর্মীরা। এরপর আনা হয় তাঁর ভাই পারহামের মৃতদেহ, ১৬ বছরের এ কিশোরের জীবন সবে শুরু হয়েছিল।
তিনি সবই ছিলেন। একজন কবি, একজন শিক্ষক ও একজন কন্যা। তিনি মাত্র কয়েক দিন আগে ব্যবস্থাপনায় স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ইরানের মেল্লি ব্যাংকের কেন্দ্রীয় শাখায় নিজের চাকরি ধরে রাখতে তিনি ভর্তি স্থগিত রেখেছিলেন।মরিয়ম, নিহত পারনিয়ার বান্ধবীপারনিয়ার বাবা অবসরে যাওয়া শিক্ষাকর্মী আর মা মেল্লি ব্যাংকের সাবেক কর্মীর মৃতদেহ তখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। কয়েক ঘণ্টা পর ভারী যন্ত্রপাতি এনে কংক্রিটের স্তূপ সরিয়ে তাঁদের মৃতদেহ বের করা হয়।
আরও পড়ুনইসরায়েলি হামলায় নিহত আইআরজিসি গোয়েন্দাপ্রধান কাজেমি কে ছিলেন১০ ঘণ্টা আগেতেহরানের ওই ভবনের চতুর্থ ব্লকে ১০টি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল—তৃতীয় থেকে পঞ্চম তলা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। মরিয়ম বলেন, ‘মনে হচ্ছিল, যেন ওই ইউনিটগুলো পুরো হারিয়ে গেছে।’
যা পড়ে আছে, তা হলো কয়েক গোছা চুল এবং আর এক তরুণীর লেখা সেই পঙ্ক্তিগুলো—যিনি একসময় আগুনে পুড়ে যাওয়ার আর বিবর্ণ হয়ে মুছে যাওয়ার কথা লিখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত বাস্তবতা এমন নির্মম হয়ে তাঁর সামনে এল, যা তিনি কখনো কল্পনাও করেননি হয়তো।
ধ্বংসস্তূপে পরিণত তাঁরই ঘরের নীরবতায় সেই পঙ্ক্তিগুলোর প্রতিধ্বনি যেন শোনা যাচ্ছিল।
পারনিয়ার নীরব তারা হয়ে যাওয়া শুধু একটি যুদ্ধের গল্প নয়, এটা এক চুরি হয়ে যাওয়া ভবিষ্যতের গল্প, না–বলা কবিতার গল্প, আর এমন সব জীবনের গল্প, যেগুলোর শেষ কখনোই ধ্বংসস্তূপ আর আগুনে হওয়ার কথা ছিল না।
আরও পড়ুনখামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনা ট্রাম্পের আটকানোর কথা জানিয়ে দেওয়ার মানে কী৮ ঘণ্টা আগে