সালটা ২০১৪। ফ্রেব্রুয়ারি মাস, জাহিদ হক নিজের কম্পিউটারকে হ্যান্ডিক্যাম দিয়ে ভিডিও করেন। সেই ভিডিও তিনি ইউটিউবে প্রকাশ (আপলোড) করেন। শুরু হয়েছিল এভাবেই। এরপর ২০১৫ সালে জাহিদ হকের সঙ্গে যোগ দিলেন অনন্য জামান। শুরু হলো ‘পিসিবিল্ডার বাংলাদেশ’ নামে ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও দেওয়া। দিনরাত কষ্ট করে ভিডিও বানিয়ে বানিয়ে আপলোড করা ও নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই চ্যানেলটির একমাত্র কাজ। এভাবে চলতে থাকে, লোক বাড়তে থাকে, এখন আর পিসিবিল্ডার বাংলাদেশ একটি চ্যানেল না। গত ১০ বছরে তৈরি হয়েছে নিজেদের দুটি ব্র্যান্ডসহ নানা উদ্যোগ। নিজেদের ব্র্যান্ডের মধ্যে মাউস প্যাড ও কুলার ফ্যান, যা ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে। এখন ৪০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে, নিজেদের অফিস হয়েছে, মাসিক প্রায় ৭ লাখ টাকা বেতন কর্মীদের। আর অফিস পরিচালনায় তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়।  

পিসিবিল্ডার বাংলাদেশ ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলের গ্রাহকের (সাবস্ক্রাইবার) সংখ্যা এখন ৬ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি। তাদের ফেসবুক পেজের অনুসারী ৪ লাখ ৪৮ হাজার। টিকটকে অনুসারীর সংখ্যা ৫২ হাজার ১০০।

দেশে সফটওয়্যার, কোডিং এবং এ-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ব্যাঙের ছাতার মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ইউটিউব চ্যানেল থাকলেও নেই হার্ডওয়্যার-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের কোনো প্রতিষ্ঠান। অথচ সফটওয়্যার, অ্যাপ, ওয়েবসাইট, ইন্টারনেট বা ইন্টারনেটের দুনিয়া হার্ডওয়্যার ছাড়া কোনোটিরই কোনো ভিত্তি থাকে না। হার্ডওয়্যার নিয়ে সেভাবে মানুষের জানার বা শেখার আগ্রহ দেখা যায় না। বাস্তবতাও ভিন্ন কথাই বলছে। বর্তমানে পৃথিবীর সব থেকে বড় প্রতিষ্ঠান; কিন্তু কোনো সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান নয়। বরং এনভিডিয়া পৃথিবীর সব থেকে দামি প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। তারা গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট বা জিপিইউ তৈরি করে। পৃথিবীর অন্যতম বড় চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টিএসএমসির কথাও বলা যায়।

আরও পড়ুননির্মাতাদের বাড়তি আয়ের সুযোগ দিতে ইউটিউবের নতুন উদ্যোগ১৬ মে ২০২৫কম্পিউটার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিই উদ্দেশ্য

বাংলাদেশের একদল তরুণ ঠিকই দেশের মানুষকে কম্পিউটার ও কম্পিউটার হার্ডওয়্যার-সংক্রান্ত তথ্য, সহযোগিতা ও জ্ঞান পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ২০১৪ সালে জাহিদ হক ছোট্ট একটি ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে পিসিবিল্ডার বাংলাদেশ শুরু করেন। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের পিসি-সংক্রান্ত, হার্ডওয়্যার ইত্যাদি সম্পর্কে রিভিউ ও প্রাথমিক থেকে শুরু করে অ্যাডভান্সড স্তরের তথ্য, বাজারে কোন সময় কোন বাজেটে কোন পণ্যটি কার জন্য জুতসই হবে—এই বিষয়গুলো সহজে উপস্থাপন করে যাচ্ছে পিসিবিল্ডার বাংলাদেশ।

পিসিবিল্ডার বাংলাদেশের হেড অব অপারেশনস একই সঙ্গে চিফ হোস্ট অনন্য জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় বিভিন্ন বাজেটে ও বিভিন্ন কাজের জন্য পিসি তৈরি করা। তবে এর পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য, যেমন মনিটর, ল্যাপটপ, গ্রাফিকস কার্ড, এসএসডি, কি–বোর্ড, মাউস, কেসিং, কুলারের রিভিউ থাকে। ফলে ক্রেতারা ওই পণ্যের ভালো–মন্দ সম্পর্কে জেনে সচেতন হতে পারেন।’ এ ছাড়া বাংলাদেশে গত ১০ বছরে সর্বোচ্চ মানের যেসব পিসি তৈরি হয়েছে, তার একটি বড় অংশই হয়েছে পিসিবিল্ডার বাংলাদেশের মাধ্যমে। প্রধান ইউটিউব চ্যানেলের পাশাপাশি পিসিবিল্ডার মিডিয়া গ্রুপের রয়েছে বেশ কিছু ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ, যার প্রধান উদ্দেশ্য পাঠক, দর্শকদের সহায়তা করা।

৪০ জন কর্মী

অনন্য জামান প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘পিসিবিল্ডার বিডিতে বর্তমানে আছে চল্লিশের বেশি কর্মী, যাদের বেশির ভাগই তরুণ। এই দলের সদস্যরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দেশের সব বয়স, শ্রেণির দর্শকের কাছে কম্পিউটার-সংক্রান্ত সঠিক জ্ঞান, সচেতনতামূলক তথ্য ও পরামর্শ পৌঁছে দেওয়ার জন্য। বিশাল এই দলের সদস্য হিসেবে বিভিন্নজন বিভিন্ন ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন। সিনেমাটোগ্রাফার, ভিডিও এডিটর, হোস্টের পাশাপাশি পিসি তৈরি, সার্ভার, এসএসডি, মনিটর, কি–বোর্ড-মাউস, কেসিং ইত্যাদি বিষয়ের ওপর গবেষণা করে স্ক্রিপ্ট লিখে আধেয় বা কনটেন্ট তৈরি করার জন্যও রয়েছেন অনেকজন।

তাঁরা মনকাড়া, সাবলীল সহজ উপস্থাপনার মাধ্যমে দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। দলের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে রয়েছেন মান্না, অতুল, আকিব, কাওসার, পিয়াস, শোয়েব, তালহাসহ অনেকে।

অনন্য জামান বলেন, ‘নিজেদের ব্র্যান্ডের মধ্যে মাউস প্যাড ও কুলিং ফ্যান বাজারে এনেছি, যা ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে। আমরা আগে ৩০০ পিস মাউস প্যাড নিয়ে এসেছিলাম। সেটা অনলাইনে দেওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। চাহিদা বেশি থাকায় এরপর আমরা প্রি–অর্ডার নেওয়া শুরু করলাম, সেখানেও ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। এরপর আমরা নিয়ে এলাম কুলিং ফ্যান, যেটা অভাবনীয় সাড়া ফেলেছে।’

আরও পড়ুনইউটিউব চ্যানেলে যে ধরনের ভিডিও প্রকাশ করলে অর্থ আয়ের সুযোগ বন্ধ হবে০৬ এপ্রিল ২০২৫টিএসএমসি মেলার সামনে পিসিবিল্ডার দল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ র ডওয় য র অনন য জ ম ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বোনকে খুন করে লাশ বস্তায় ভরেন, পুলিশ জিজ্ঞেস করলে জানান বস্তায় গম

ভারতের উত্তর প্রদেশের গোরখপুরে এক তরুণ তাঁর বোনকে খুন করে লাশ একটি বস্তায় ভরে রেখেছিলেন। ওই বস্তা নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাঁকে ভেতরে কী আছে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘এর মধ্যে গম আছে।’

উত্তর প্রদেশের ৩২ বছর বয়সী রাম আশিস নিষাদ তাঁর ১৯ বছর বয়সী বোন নীলমকে খুন করেন।

ওই এলাকায় একটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। আশিসের বাবা চিংকু নিষাদ সেখানে সরকারের জমি অধিগ্রহণ বাবদ ছয় লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন।

পুলিশ জানায়, ওই ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া অর্থের ভাগাভাগি নিয়েই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঝগড়া হয়। ওই রুপি বোনের বিয়েতে খরচ করা হবে জেনে রাম আশিস ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

পুলিশ জানায়, গত সোমবার রাম আশিস একটি কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে বোন নীলমকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর নীলমের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভেঙে ফেলে দেহটি একটি বস্তায় ভরেন। পরে বাইকের সঙ্গে বেঁধে তিনি গোরখপুর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে কুশীনগরের একটি আখখেতে বস্তাটি ফেলে আসেন।

সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে অভিযুক্ত

সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে রাম আশিসকে একটি বস্তা নিয়ে যেতে দেখা যায়। সন্দেহ করা হচ্ছে, ওই বস্তার মধ্যে ছিল তাঁর বোনের লাশ। কুশীনগর যাওয়ার পথে পুলিশ তাঁকে থামিয়ে বস্তায় কী আছে জানতে চেয়েছিল।

রাম আশিস পুলিশকে জানান, বস্তায় গম আছে। পরে আবার তিনি কুশীনগরের দিকে মোটরসাইকেল চালিয়ে যান। সেখানে তিনি আখখেতে নীলমের লাশ ফেলে দেন।

এরপর নীলমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাঁর বাবা প্রথমে ধরে নেন, মেয়ে ছটপূজার জন্য কোথাও গেছে। তবে প্রতিবেশীরা যখন জানান, সোমবার রাম আশিস একটি বস্তা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। তখন পরিবারের সন্দেহ হয় এবং ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হয়।

পুলিশ প্রথমে নিখোঁজের ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে ও তদন্ত শুরু করে। গত মঙ্গলবার নীলমের পরিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানায়, রাম আশিসই নীলমকে খুন করেছেন।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় রাম আশিস প্রথমে কিছু না জানার ভান করেন। তবে পুলিশের টানা জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পরে বোনকে খুনের কথা স্বীকার করেন। গত বুধবার রাতে আখখেত থেকে নীলমের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

আগামী জানুয়ারি মাসেই নীলমের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাকও হয়ে গিয়েছিল।

রাম আশিসের বাবা চিংকু অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া ওই ছয় লাখ রুপি মেয়ের বিয়েতে খরচ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এ কারণে রাম ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। কারণ, তিনি জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া ওই রুপির ভাগ চেয়েছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নড়াইলে ৩ দিন ধরে স্কুলছাত্রী নিখোঁজ
  • সিটা প্রকল্প যথাযথ পরিমার্জনের আহ্বান
  • রোহিতের পর কোহলির রেকর্ডও কাড়লেন বাবর, পাকিস্তানের সিরিজ জয়
  • নাজমুলই থাকছেন টেস্ট অধিনায়ক
  • লাইটবার খুলে পড়ার আশঙ্কায় টেসলার সাইবারট্রাকের ১০ শতাংশ গাড়ি প্রত্যাহার
  • বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার
  • সিলেটে বাসদ কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান, আটক ২২
  • যাত্রাবাড়ীতে বিদ্যুৎমিস্ত্রিকে পিটিয়ে হত্যা
  • বোনকে খুন করে লাশ বস্তায় ভরেন, পুলিশ জিজ্ঞেস করলে জানান বস্তায় গম
  • নারায়ণগঞ্জে সরকারি চিকিৎসায় আস্থা ফেরাতে ডিসির উদ্যোগ