মডেল শীতলকে হত্যার বর্ণনা দিলেন প্রেমিক সুনীল
Published: 17th, June 2025 GMT
মিউজিক ভিডিওর শুটিং করতে গিয়ে নিখোঁজের খুন হওয়া মডেল শীতল চৌধুরী প্রেমিক সুনীলকে আটক করা হয়েছে। তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) এক তদন্তকারী কর্মকর্তা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানান, গত শনিবার রাতে সুনীল ও শীতলের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়, যা পরে সহিংসতায় রূপ নেয়। শীতলকে বেধড়ক মারধর করে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করেন সুনীল। এরপর মরদেহ গাড়িসহ খালে ফেলে দেন তিনি।
পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন পানিপাতের আহার গ্রামে একটি মিউজিক ভিডিওর শুটিংয়ে অংশ নিতে যান শীতল। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সুনীল সেখানে পৌঁছে তাকে গাড়িতে করে নিয়ে যান। কিছু পানীয় গ্রহণের পর তাদের মধ্যে পুরোনো বিষয় নিয়ে ঝগড়া বাধে। পরে শীতল তার বোন নেহাকে ফোন করে জানান, সুনীল তাকে মারধর করছেন। এরপর ফোন বন্ধ হয়ে যায় এবং আর কোনো যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
রোববার সোনিপাতের একটি খাল থেকে সুনীলের গাড়ি উদ্ধার করে পুলিশ। গাড়িতে শীতলের কোনও খোঁজ না মেলায় সন্দেহ দানা বাঁধে। সুনীল তখন দাবি করেন, অসাবধানতাবশত গাড়িটি খালে পড়ে যায়। তিনি সাঁতরে কোনোমতে বাঁচলেও শীতল ডুবে যান। এরপর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।
সোমবার পানিপাত জেলার খারখোদার রিলায়েন্স খাল থেকে গলা কাটা এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। ময়নাতদন্তের পর মরদেহটি শীতলের বলে শনাক্ত করা হয়।
তদন্তে জানা গেছে, শীতল ও সুনীলের মধ্যে ছয় বছরের সম্পর্ক ছিল। সুনীল তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও পরে জানা যায়, তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। এ কারণে শীতল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। শীতল নিজেও বিবাহিত এবং তার পাঁচ মাস বয়সী একটি সন্তান রয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার সুনীল পুলিশের কাছে দায় স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে সোনিপাত পুলিশ। সূত্র: এনডিটিভি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।