ছত্তার পাগলা নিতান্ত অখ্যাত কোনো সংগীতস্রষ্টা নন
Published: 17th, June 2025 GMT
ঐতিহ্যবাহী সংগীত যুগে যুগে নির্দিষ্ট জনপদে মানুষের হৃদয়ে থেকে থেকে প্রতিধ্বনিত হয়। সংগীত নৃবিজ্ঞানী টিমথি রাইস মনে করেন, সংগীতের একটি ধারা বিশেষভাবে ঐতিহ্যে রূপ নেয় সংশ্লিষ্ট জনপদের কোনো সংগীত ব্যক্তিত্বের মধ্য দিয়েই। তা সত্ত্বেও এই সংগীত একক কোনো ব্যক্তির নয়, এটি হয়ে ওঠে সেই জনপদেরই, অর্থাৎ জনগোষ্ঠীর সংগীত। ব্যক্তিনির্ভর কোনো গানও ঐতিহ্যে পরিণত হতে পারে যদি সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী তাতে তাদের চিরকালীন চেতনাগত ধ্বনি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়। তখন মানুষ সেই নির্দিষ্ট গানকে ধারণ করে, বহন করে, লালন করে, চর্চা করে এবং তা হয়ে ওঠে সবার।
এ ধরনের গান সাধারণত মুখে মুখে রচিত, সুরারোপিত, চর্চিত ও বিস্তৃত হয় বলেই একই গানের ভিন্ন ভিন্ন পাঠ বা টেক্সট পাওয়া যায়। ‘লেচুর বাগানে’ গানটিরও বেশ কয়েকটি পাঠ রয়েছে। অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী গানের ক্ষেত্রেই এ ধরনের ভিন্নতা দেখা যায়। এমনকি একই শিল্পীও পরিবেশনা ভেদে একই গানে রকমফের ঘটাতে পারেন—সে রকমফের শুধু স্মৃতিভ্রান্তিজনিত নয়; বরং দর্শক-শ্রোতা কিংবা পরিবেশনের স্থান-কালগত পরিপ্রেক্ষিতও এই পার্থক্যের পেছনে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া থাকে ঐতিহ্যজাত শিল্পমাধ্যমে সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে সমসাময়িককালের শিল্পীর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগের প্রবণতা।
উদাহরণস্বরূপ, ছত্তার পাগলার ‘ডিঙ্গা পোতা বন্দ/ ক্যা রে তুমি কান্দ/ যাও চলিয়া তেঁতুলিয়ার সাইদুলের কাছে/ সাইদুলরে যদি না পাও গিয়া/ তার পিতা আল্লাদ মিয়া/ তাকে তেঁতুলিয়ার কাছারিতে.
যেহেতু ঐতিহ্যবাহী গান শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জনগণের সংস্কৃতি হিসেবে চর্চিত হয়, তাই এতে পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা অঞ্চলের সাহিত্য-সংস্কৃতি ও লোকগান বিষয়ক বই-পুস্তকে দেখা যায়, লেচুর বাগানে গানটির একাধিক পাঠ রয়েছে। তবে গানের কথা, সুর ও পরিবেশনা ভঙ্গির ভিত্তিতে বেশির ভাগ গবেষক এটিকে ঘেটু গান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবুও এটি কেন ছত্তার পাগলার গান হিসেবে জনমানসে প্রতিষ্ঠিত হলো, তা বুঝতে হলে ছত্তার পাগলাকে বুঝতে হবে।
২০১৪ সাল পর্যন্ত সংগীত-যাপন করেছেন ছত্তার পাগলা। বিনোদন বাণিজ্যের জগৎ তাঁর অজানা ছিল না, তবে তিনি থেকেছেন নিজের আনন্দজগতে; নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও সংগীত পরম্পরার মধ্যে। এটাই ছিল তাঁর নিজস্ব পছন্দ, তাঁর ‘চয়েস’।
ছত্তার পাগলার কণ্ঠে ছিল অনন্য সুর। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূচনালগ্নেই নেত্রকোনা অঞ্চলে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এ অঞ্চলে শত শত চারণশিল্পী সংগীতকে তাঁদের ভাবপ্রকাশের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সংগীতময় এক অপার জীবন তাঁরা যাপন করেন প্রচলিত পার্থিবতার মধ্যেই। রশিদ উদ্দীন, জালাল খাঁ, উকিল–মুন্সিদের ধারাবাহিকতায় ছত্তার পাগলার অবস্থান—এই পরম্পরার উত্তরাধিকার প্রবহমান। এ অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি, জীবনব্যবস্থা এবং সামষ্টিক চিন্তাধারার ফলেই জন্ম নেয় এই বিশিষ্ট সংগীতধারা।
ছত্তার পাগলার জন্ম নেত্রকোনার পূর্বধলার হীরনপুরে। শৈশব কেটেছে লালছাপুর গ্রামে, পরবর্তীকালে বসতি গড়েন মোহনগঞ্জের নলুয়ার চরে। ২০১৪ সালে তাঁর মৃত্যুর পর থেকে এখানে তাঁর নামে ওরস অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তার মানে, জনপদের মানুষ তাঁর গান, বৈশিষ্ট্যময় সরল জীবন ও সাধনাকে স্মরণ করে, শ্রদ্ধা করে। মূলত তাঁর গান আশি-নব্বই দশকেই সারা দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ছত্তার পাগলা কোনো প্রচলিত বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করতেন না। পাতার বাঁশি, বাঁশের ‘কইঞ্চা’, এমনকি ফেলে দেওয়া খেলনার অংশ দিয়ে নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র তিনি তৈরি করতেন। গানে গানে তিনি জীবনের গল্প বলতেন। ঐতিহ্য অনুসারে নিজের ভঙ্গিতে ব্যাখ্যাও করতেন গান-সংশ্লিষ্ট বাস্তবতা। তাঁর পরিধানে ছিল বৈচিত্র্য, গলায় নানা রঙের মালা, হাতে ব্যান্ড-বালা, মাথায় কখনোবা পাগড়ি।
ছত্তার পাগলা ছিলেন এক অবিমিশ্র প্রকৃতিজাত সাধক শিল্পী। বঞ্চিত মানুষের হয়ে ‘কাঙাল মেরে জাঙাল দিলে গুনাহ হইব তর’ গেয়ে তিনি ক্ষমতাসীনদের অনাচারের প্রতিবাদ করতেন। ‘শাপলা বানু শাপলা বানু/ অই দেখ কামধেনু দুধের গাই/ বালটি লইয়া খাটে বইয়া/ বাছুর ছাড়া দুধ গিরাই…’—এই গানেও প্রকাশ পায় হাওরের মানুষজনের কল্পনাসুখ ও প্রতীকী স্বপ্ন, বিশ্বাস ও মিথ। এই গানগুলোর সুর ও কথা যেন হাওরের আকাশ থেকে নেমে আসে অনায়াসে। সেখানে কৃত্রিমতার লেশমাত্র নেই।
ছত্তার পাগলা বিশেষ মঞ্চের শিল্পী ছিলেন না। তিনি গাইতেন রেলস্টেশনে, ট্রেনের কামরায়। কখনো ছেলেকে উদ্দেশ করে গেয়েছেন, ‘হারভেজ্যা রে/ তর বল খেলাডা তওবা করে ছাড়/ একটা বলে বাইশজন লাইত্থায়/ তর ঠ্যাংডা হুঁশিয়ার...’। এ গান সরলভাবে সামাজিক শিক্ষার উপকরণ হিসেবে নন্দিত হয়, আবার একইসঙ্গে দেহতত্ত্বীয় গানের ধারায় একটি অনন্য সংযোজনও বটে। বল হয়ে ওঠে মানবদেহের রূপক। বলের ভেতরে যেমন বাতাসের গুরুত্ব, তেমনি মানবদেহের অস্তিত্বের জন্যও চাই বাতাস।
ছত্তার পাগলার দুই কন্যাও তাঁর সংগীতের সঙ্গী হতেন। পরিবার, সমাজ ও জনপদের সংগীত ঐতিহ্যের সঙ্গে তিনি মিশে ছিলেন। এর বাইরে তার আলাদা কোনো অস্তিত্ব ছিল না। তিনি নিজে যেমন গান বেঁধেছেন, আবার ঐতিহ্যবাহী গানকে নিজের মতো করে আত্তীকরণ করেছেন। লেচুর বাগানে গানটিও তিনি কেবল গেয়েছেন নয়, এর বাণী ও সুরে নিজস্ব সংযোজন ঘটিয়ে নেত্রকোনার জনপদে তিনি গানটিতে নবরূপে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন। সে জন্যই গানটি ছত্তার পাগলার গান হিসেবে গ্রাহ্য হয়েছে।
জীবনের শেষ প্রান্তে ছত্তার পাগলা তাঁর গানের সংকলন করতে চেয়েছেন স্থানীয় চিকিৎসক সহজ মানুষ আল মামুন কিংবা রইছ মনোরমদের সহায়তায়। সেই সংকলনে তিনি লেচুর বাগানে গানটিও রাখতে চেয়েছেন। সম্প্রতি সিনেমায় এই গানটি নতুন করে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিতর্ক থাকতে পারে, তবে এর মাধ্যমে ছত্তার পাগলার নাম বাণিজ্যিক ধারার সংগীতচর্চা ক্ষেত্রে নতুনভাবে আলোচিত হচ্ছে। নিকট অতীতে প্রায় একই রকম ঘটেছিল শাহ আবদুল করিম, উকিল মুন্সিদের ক্ষেত্রেও। যদিও তারা নগরের আলোয় না এলেও তাঁদের সাধন সম্পদের মর্যাগত ঘাটতির শঙ্কা ছিল না। তাঁদের আসন জনপদের মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী হয়েই আছে। তাঁদের সৃষ্টি জনপদের পরিচয় স্বাতন্ত্র্য নির্মাণ করেছে। সাধক শিল্পীরা সংগীতকে উপাসনার মতো ভাবেন। তারা বাণিজ্যের মোহে গানের আত্মাকে বিসর্জন দেন না। তাই তাদের সৃষ্টি পরম্পরায় বাহিত হয়। বাণিজ্যের হাটে বিক্রি হয়ে পুঁজির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী সংগীত পরম্পরার সম্বন্ধ নেই।
আজ ছত্তার পাগলা বেঁচে থাকলে লেচুর বাগানে গানটির নতুন রূপায়ণ দেখে কী বলতেন আমরা জানি না, তবে অনুমান করা যায়, তাঁর শিল্পসত্তা তাতে বিচলিত হতো না। কারণ, তাঁর কাছে সংগীত নিছক বিনোদন ছিল না; বরং তা মানুষের মানসিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের এক সরল অথচ অন্তর্গত প্রকাশ। সংগীত তাঁর কাছে ছিল জনপদের ভাষা, আত্মপরিচয়ের প্রতীক ও সংকেত।
প্রসঙ্গক্রমে গোলাম রব্বানী বিপ্লবের, ‘বৃত্তের বাইরে’ সিনেমার সেই গল্প মনে পড়ে। আপনমনে বাঁশি বাজানো এক শিল্পীকে নগরের বিনোদন বাজারে আনলে সে আর বাঁশি বাজাতে পারে না। পালিয়ে যায় নিজের প্রকৃতি ও মনের মানুষে ভরা প্রতিবেশে। এবং তখনই কেবল বাঁশিতে বেজে ওঠে অপার্থিব সুর।
আমরা উপলব্ধি করি, ঐতিহ্যবাহী সংগীতের সাংস্কৃতিক মানবিকতাকে মূল থেকে বিচ্যুত করা আত্মঘাতী। নির্দিষ্ট জনপদের সিগনেচার সংগীতকে বাণিজ্যিক স্বার্থে ‘রিপ্যাকেজিং’ করার মাধ্যমে আমরা আমাদেরই জাতিগত, আঞ্চলিক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক পরিচয়কে বিকৃতির ফাঁদে ফেলে দিই নিজেদের অজান্তেই।
২০১৪ সালে তাঁর ওফাতের পর থেকেই এখানে তাঁর নামে ওরস অনুষ্ঠিত হয়। তার মানে, মোহনগঞ্জের যে পরিমণ্ডলে ছত্তার পাগলা সংগীত যাপন করেছেন, সেই পরিমণ্ডলে তিনি সমাদৃত, সম্মানিত এবং উদ্যাপিত। জনপদ তাঁকে ভালোবেসেছে বলেই তিনি আজও উদ্যাপিত। ছত্তার পাগলা সুতরাং নিতান্ত অখ্যাত কোনো সংগীত স্রষ্টা নন। তাঁর গানগুলো বিগত শতকের আশি ও নব্বইয়ের দশকেই সারা দেশে জনপ্রিয় হয়েছিল।
তবে চলচ্চিত্র এমন এক মাধ্যম যেখানে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উপাদানের অবিকৃত প্রতিফলন ঘটতে পারে। সঠিকভাবে কাজটি করতে পারলে বিনোদন বাণিজ্যের উন্নতিই হবে। বাংলাদেশের সংগীতময় সংস্কৃতির মৌলিক রূপ রুপালি পর্দায় তুলে ধরতে পারলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের স্বতন্ত্র পরিচয় বিকশিত হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
ছত্তার পাগলারা আমাদের বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক। তাঁদের অবিকৃত উপস্থাপন অত্যন্ত জরুরি। বলিউড বা দক্ষিণ ভারতের সংগীত ব্যবসায়ীদের অনুকরণ করতে গেলে ঐতিহ্যকে নিছক আইটেমে পরিণত করা হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ত রক ন জনপদ র কর ছ ন এই গ ন করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারের সাবেক ডিসি ও জেলা জজসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছাল
জালিয়াতির একটি মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. রুহুল আমিন, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়েছে। মাতারবাড়ীতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলা থেকে ডিসির নাম বাদ দিতে এ জালিয়াতি হয় বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে উঠে আসে।
আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান এই মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন। তবে আসামিপক্ষ সময়ের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে পরবর্তী শুনানির দিন আগামী ১ জুলাই ধার্য করেন।
দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, বিচারকাজের জন্য কক্সবাজার থেকে মামলাটি চট্টগ্রামে আসে। ফলে আসামিপক্ষ আদালতে জামিন বর্ধিত করার আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন এবং আগামী ধার্য দিন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন বহাল রাখেন।
কাজী ছানোয়ার আহমেদ আরও বলেন, কক্সবাজারের সাবেক ডিসি রুহুল আমিন ২০১৭ সালে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যান। পরে তিনি জামিনে আসেন। এর আগে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম বর্তমানে অবসরে রয়েছেন।
অন্য তিন আসামি হলেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং আদালতের স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে মাতারবাড়ীর বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী এই দুর্নীতির ঘটনায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় দুদককে।
তবে মামলার পরপরই তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো কাগজপত্র থেকে ১ নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে তা পাঠান। বিষয়টি জানাজানির পর বাদী কায়সারুল একই আদালতে রুহুল আমিন, সাদিকুল ইসলামসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন।
সেই মামলার তদন্ত শেষে দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক রিয়াজউদ্দিন গত বছরের ১ জুলাই পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর বাদীপক্ষের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী মামলার সব নথিপত্র আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদ আহমদের কাছে দাখিল করেন। পরদিন (২০ নভেম্বর) সকালে আদালতের কর্মচারী সৈয়দ আকবর নথিপত্র কক্সবাজার ডাকঘরে জমা দেওয়ার জন্য রওনা দিলে তাঁকে আবার আদালতে ফিরিয়ে এনে খামটি স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদের মাধ্যমে জেলা ও দায়রা জজের কাছে পাঠানো হয়। পরে নানা কৌশলে আবেদন থেকে জেলা প্রশাসকের নাম বাদ দেওয়া হয়।
তদন্তে আরও উঠে আসে, ফৌজদারি দরখাস্ত রেজিস্টারে ২৮ জন আসামির নাম থাকলেও পরে ৩টি পৃষ্ঠা পাল্টে ১ নম্বর আসামি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাফর আলমের নাম বসানো হয় এবং বাদীর স্বাক্ষর জাল করে ২৮ জনের জায়গায় ২৭ জনকে আসামি দেখিয়ে দুদকে নথি পাঠানো হয়। এই জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি সিআইডির হস্তলিপি বিশারদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
দুদক ও আদালত সূত্র জানায়, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ ছিল ২৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে চিংড়িঘের বাবদ ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ওই অর্থের মধ্যে মনগড়া ২৫টি ঘের দেখিয়ে ১৯ কোটি ৮২ লাখ টাকার বেশি তুলে আত্মসাৎ করা হয়। আরও বিভিন্ন উপায়ে আত্মসাৎ করা হয় টাকা।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বর প্রথম আলোতে ‘শুরুতে লুট ২২ কোটি টাকা’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরদিন মামলাটি দায়ের হয়।
শুরুতে লুট ২২ কোটি টাকা