কক্সবাজারের সাবেক ডিসি ও জেলা জজসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছাল
Published: 17th, June 2025 GMT
জালিয়াতির একটি মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. রুহুল আমিন, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়েছে। মাতারবাড়ীতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলা থেকে ডিসির নাম বাদ দিতে এ জালিয়াতি হয় বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে উঠে আসে।
আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান এই মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন। তবে আসামিপক্ষ সময়ের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে পরবর্তী শুনানির দিন আগামী ১ জুলাই ধার্য করেন।
দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, বিচারকাজের জন্য কক্সবাজার থেকে মামলাটি চট্টগ্রামে আসে। ফলে আসামিপক্ষ আদালতে জামিন বর্ধিত করার আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন এবং আগামী ধার্য দিন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন বহাল রাখেন।
কাজী ছানোয়ার আহমেদ আরও বলেন, কক্সবাজারের সাবেক ডিসি রুহুল আমিন ২০১৭ সালে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যান। পরে তিনি জামিনে আসেন। এর আগে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম বর্তমানে অবসরে রয়েছেন।
অন্য তিন আসামি হলেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং আদালতের স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে মাতারবাড়ীর বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী এই দুর্নীতির ঘটনায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো.
তবে মামলার পরপরই তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো কাগজপত্র থেকে ১ নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে তা পাঠান। বিষয়টি জানাজানির পর বাদী কায়সারুল একই আদালতে রুহুল আমিন, সাদিকুল ইসলামসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন।
সেই মামলার তদন্ত শেষে দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক রিয়াজউদ্দিন গত বছরের ১ জুলাই পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর বাদীপক্ষের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী মামলার সব নথিপত্র আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদ আহমদের কাছে দাখিল করেন। পরদিন (২০ নভেম্বর) সকালে আদালতের কর্মচারী সৈয়দ আকবর নথিপত্র কক্সবাজার ডাকঘরে জমা দেওয়ার জন্য রওনা দিলে তাঁকে আবার আদালতে ফিরিয়ে এনে খামটি স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদের মাধ্যমে জেলা ও দায়রা জজের কাছে পাঠানো হয়। পরে নানা কৌশলে আবেদন থেকে জেলা প্রশাসকের নাম বাদ দেওয়া হয়।
তদন্তে আরও উঠে আসে, ফৌজদারি দরখাস্ত রেজিস্টারে ২৮ জন আসামির নাম থাকলেও পরে ৩টি পৃষ্ঠা পাল্টে ১ নম্বর আসামি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাফর আলমের নাম বসানো হয় এবং বাদীর স্বাক্ষর জাল করে ২৮ জনের জায়গায় ২৭ জনকে আসামি দেখিয়ে দুদকে নথি পাঠানো হয়। এই জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি সিআইডির হস্তলিপি বিশারদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
দুদক ও আদালত সূত্র জানায়, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ ছিল ২৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে চিংড়িঘের বাবদ ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ওই অর্থের মধ্যে মনগড়া ২৫টি ঘের দেখিয়ে ১৯ কোটি ৮২ লাখ টাকার বেশি তুলে আত্মসাৎ করা হয়। আরও বিভিন্ন উপায়ে আত্মসাৎ করা হয় টাকা।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বর প্রথম আলোতে ‘শুরুতে লুট ২২ কোটি টাকা’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরদিন মামলাটি দায়ের হয়।
শুরুতে লুট ২২ কোটি টাকাউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স দ ক ল ইসল ম জন র ব র দ ধ র হ ল আম ন তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কার নিয়ে আমাদের প্রস্তাবের বাইরে বহু প্রস্তাবে একমত হয়েছি: সালাউদ্দিন আহমদ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপি নিজেদের সংস্কার প্রস্তাবের বাইরে বহু প্রস্তাবের বিষয়ে একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবের বাইরে বহু প্রস্তাবে আমরা একমত হয়ে গিয়েছি আলোচনায়। সেটা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করলে দেখবেন।’
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের অসমাপ্ত আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন সালাউদ্দিন আহমদ।
বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, অনেক প্রস্তাবের সঙ্গে নীতিগতভাবে, আবার কোনো কোনোটির বিষয়ে আংশিকভাবে একমত হয়েছেন তাঁরা। জুডিশিয়ালি, ম্যাজিস্ট্রেসি, দুদকের ক্ষেত্রে এবং আরও অন্যান্য ক্ষেত্রে একমত হয়েছেন। যেমন নির্বাচনী ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বহু বিষয়ে একমত হয়েছেন, যেগুলো তাঁদের প্রস্তাবের বাইরে ছিল।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, ‘বর্তমান সংবিধানে যে বিষয়টা আছে, রাষ্ট্রপতির হাতে সেই ক্ষমতা। রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবে প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দিতে পারেন। এখন বিদ্যমান যে অবস্থা, তাতে বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিককে প্রধান বিচারপতি বানিয়ে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমরা মনে করি, এটা থাকা ঠিক হবে না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য এ বিষয়ে আমরা একটি রেস্ট্রিকশনে (বিধিনিষেধ) আসতে চাই। রাষ্ট্রপতিকে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে, এই এই ক্রাইটেরিয়ার (বৈশিষ্ট্যের) ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন।’
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের বিষয়ে সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের ধারণার সঙ্গে আমরা একমত। এটি আমরা আমাদের প্রস্তাবিত ৩১ দফাতেও উল্লেখ করেছি। উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা ১০০ হবে। এটির নাম সিনেট নামকরণ করা হয়েছে, যদিও এটি এখনো ফাইনাল করা হয়নি। ১০০ আসনের বিষয়ে আমাদের প্রস্তাবের সঙ্গে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের বিষয়ও একমত। তবে কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের এ বিষয়ে আপত্তি আছে। তাদের সংখ্যা হয়তো বেশি নয়।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আজকের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামী ছাড়া বিএনপি, এনসিপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান।