ওয়ার্ডবয়দের সঙ্গে চালকদের যোগসাজশে বাড়ছে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া: অভিযোগ চট্টগ্রাম সিটির মেয়রের
Published: 18th, June 2025 GMT
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়দের সঙ্গে চালকদের যোগসাজশের কারণে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বেড়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন। এতে রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এই অভিযোগ করেন।
চমেক হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া পুনর্মূল্যায়ন নিয়ে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন। সভায় পুলিশ, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ২০১৮ সালের বিদ্যমান ভাড়ার তালিকার ওপর ১০ শতাংশ হারে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়। ছয় মাসের জন্য নতুন এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। তবে ১০ শতাংশ হারে ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে আপত্তি জানায় মালিক সমিতি। তাঁরা ভাড়া ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র শাহাদত হোসেন বলেন, এটা (অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া) এখনকার সমস্যা নয়, দীর্ঘদিনের সমস্যা। যাঁরা অ্যাম্বুলেন্স চালান, তাঁদের সঙ্গে ওয়ার্ডবয়দের যোগাযোগ আছে। যখন কোনো রোগী মারা যান, তখন ওয়ার্ডবয় তৎপর হয়ে যান। ওয়ার্ডবয়রা একটা ভাগ পান। যার কারণে ভাড়া বেড়ে যায়। একদম মোদ্দাকথা হলো সেটা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পরিচালকের উচিত শুধু ওয়ার্ডবয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়ে একদিন সভা করা। ওই সভায় ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদেরও রাখার কথা বলেন তিনি।
২০১৮ সালে ৫ স্তরে দূরত্ব ও গাড়ি ভেদে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল। তার ওপর ভিত্তি করেই ভাড়া সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন মেয়র। পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্সের ফিটনেস প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন তিনি।
মেয়র বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স ফিট আছে কি না, সেটা আগে দেখতে হবে। যেসব গাড়ি ফিটনেস নেই, সেগুলো রাস্তায় চলাচলের উপযোগী করতে হবে। যাঁদের অ্যাম্বুলেন্সের ফিটনেস আছে, তারাই চালাতে পারবেন। আজ থেকে অভিযান হবে। কোনো ধরনের শোষণ-নির্যাতন, রোগীকে নিয়ে টালবাহানা চলবে না। স্পষ্ট বলে দিতে চাই, আমাদের মানবিক হতে হবে রোগীদের প্রতি।’ এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অন্যায় ও রোগীদের ওপর জবরদস্তি সহ্য করা হবে না বলে মেয়র মন্তব্য করেন।
চিকিৎসা সামগ্রীর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ফার্মেসি মালিকদের সঙ্গে বৈঠকেরও তাগিদ দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এখন করোনার সময় দেখবেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভসের দাম বাড়িয়ে দেবে তারা।’
সভা সম্পর্কে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দীন বলেন, ২০১৮ সালের ভাড়া থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করে অ্যাম্বুলেন্সের নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নিচ্ছে কি না, তা ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষণ করবেন।
সভায় উপস্থিত অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় দুর্গ ফিরে পেতে তৎপর বিএনপি, ভাগ বসাতে চায় জামায়াত
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নিজ জেলা বগুড়ায় দলের হারানো দুর্গ পুনরুদ্ধারে ব্যাপক তৎপর বিএনপি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলায় সংসদীয় সাতটি আসনের মধ্যে দুটি হাতছাড়ার মাধ্যমে দলের দুর্গ নড়বড় হয়ে যায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে পাঁচটি আসনই হাতছাড়া হয়। সামনের নির্বাচনে সব কটি আসন নিজেদের কাছে রাখতে তৎপর দলটি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দলে পুরোদমে নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে। দলের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এখন মাঠে ব্যস্ত গণসংযোগ, মতবিনিময় সভা আর এলাকার ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে।
বসে নেই নির্বাচনী জোটে একসময়ের শরিক দল জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির দুর্গে ভাগ বসাতে মরিয়া তারা। ইতিমধ্যে সংসদীয় সাত আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের তৎপরতা ও সরব উপস্থিতি চোখে পড়লেও জাতীয় নাগরিক পার্টি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি।
বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা)
বগুড়া-১ আসনটি ১৯৭৩ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপির ওয়াজেদ হোসেন তরফদার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনেও আসনটি বিএনপির দখলে ছিল।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনয়ন দেয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শোকরানাকে। তাঁকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক প্রয়াত আবদুল মান্নান বিজয়ী হন। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলামকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আবদুল মান্নান। ২০১৯ সালে তাঁর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর স্ত্রী সাহাদারা মান্নান সংসদ সদস্য হন।
বর্তমানে মাঠে সরব বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কাজী রফিকুল ইসলাম। ঈদের ছুটিতে তিনি নির্বাচনী এলাকায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। ভোটারদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়, গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। বিপদে–আপদে ভোটারদের পাশে ছিলাম।’ তিনি মনোনয়ন পেলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন জিয়া শিশু কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন চৌধুরী ও সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহসানুল তৈয়ব।
জামায়াত এ আসনে জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিনকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ)
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে বগুড়া-২ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। ১৯৭৯ সালে সেখানে বিএনপির আবুল হাসনাত চৌধুরী সংসদ সদস্য হন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে মোজাফফর হোসেন, ১৯৮৮ সালে ফ্রিডম পার্টি থেকে সৈয়দ মাসকুরুল আলম চৌধুরী, ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর শাহাদাত-উজ-জামান সংসদ সদস্য হন। ১৯৯৬–এ আসনটিতে বিএনপি থেকে এ কে এম হাফিজুর রহমান, ২০০১ সালে রেজাউল বারী ও ২০০৮ সালে এ কে এম হাফিজুর রহমান সংসদ সদস্য হন। পরে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ সংসদ সদস্য হন। ২০১৮ সালে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আসনটি ছেড়ে দেয় বিএনপি। ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি জাপার শরিফুল ইসলামের কাছে হেরে যান।
জেলা বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এ আসনে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী ঘোষণা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছেন শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম। তিনি জেলা বিএনপির সহসভাপতি। ৫ আগস্টের পর তিনি কয়েক দফা লন্ডনে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে আসছে নির্বাচনে আসনটি নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমানকে ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
মীর শাহে আলম বলেন, আসনটি ধানের শীষের দুর্গ। শিবগঞ্জবাসী চায়, এ আসনে জিয়া পরিবারের কেউ প্রার্থী হোক। তারেক রহমান যাঁর হাতে ধানের শীষ তুলে দেবেন, তাঁকে জয়ী করতে সর্বস্তরের নেতা–কর্মীরা একযোগে কাজ করবেন।
এই আসনে জামায়াত সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাদাতুজ্জামানকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে।
বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি)
বগুড়া-৩ আসনটিতে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাসান আলী তালুকদার সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির আবদুল মজিদ তালুকদার, ১৯৮৬ সালে জাসদের এ বি এম শাহজাহান, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এ বি এম শাহজাহান, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির আবদুল মজিদ তালুকদার, ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপির আবদুল মোমেন তালুকদার এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম তালুকদার সংসদ সদস্য হন।
এ আসনে এবার বিএনপি থেকে বগুড়া শহর বিএনপির সভাপতি ও সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস হামিদুল হক চৌধুরী, বগুড়া অ্যাডভোকেট বার সমিতির সভাপতি আতাউর রহমান খান, আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মুহিত তালুকদার ও বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুল বারী তালুকদার মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন।
অন্যদিকে জামায়াত এখানে দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুণাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আবু তাহেরকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু)
১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সাল থেকেই বগুড়া-৪ আসনটি জাসদকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ২০০৮ ও ২০১৮ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন জাসদের প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন। ২০১৪ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। তবে ২০১৮ সালে তিনি জেলা বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনের কাছে পরাজিত হন। পরে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যের পদত্যাগের পর ২০২৩ সালের উপনির্বাচনে রেজাউল করিম আবার সংসদ সদস্য হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে রেজাউল করিমকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে এককভাবে মাঠে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশে গণতন্ত্র ছিল না। মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ধানের শীষের পক্ষে চারদিকে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে।
বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট)
১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আসনটি জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মো. সিরাজের দখলে ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি জানে আলমকে মনোনয়ন দেয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবর রহমান সংসদ সদস্য হন। পরে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির গোলাম মো. সিরাজকে হারিয়ে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন।
জেলা বিএনপির সূত্রে জানা যায়, এ আসনে আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজ, তাঁর ছেলে শেরপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য ও তরুণ শিল্পপতি আসিফ সিরাজ রব্বানী। এখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান ও শেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র জানে আলমও মনোনয়নপ্রত্যাশী।
গোলাম মো. সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসছে নির্বাচনে বাবা-ছেলে দুজনই ধানের শীষের কান্ডারি হওয়ার জন্য মাঠে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যাঁকে খুশি মনোনয়ন দেবেন। মনোনয়ন–দৌড়ে ছেলের কাছে হেরে গেলেও সে হার হবে অনেক সুখের।’
জামায়াত এখানে একক প্রার্থী হিসেবে শেরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দবিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করেছে।
বগুড়া-৬ আসন (সদর)
২০০৮ সাল পর্যন্ত সব জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন বিএনপির দখলে ছিল। এর মধ্যে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চারবার সংসদ সদস্য হন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ২০১৪ সালে এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাপার নুরুল ইসলাম বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে তিনি শপথ না নেওয়ায় উপনির্বাচনে বিএনপির গোলাম মো. সিরাজ বিজয়ী হন। পরে দলীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করলে আরেকটি উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান বিজয়ী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন।
জেলা বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, আসছে নির্বাচনে তারেক রহমানের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ছাড়া খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমানও প্রার্থী হতে পারেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, বগুড়া-৬ আসনটি জিয়া পরিবারের আসন। এ ছাড়া জেলার সংসদীয় সাতটি আসনে কোথায় কাকে ধানের শীষের প্রার্থী করা হবে, সে ব্যাপারে তারেক রহমান সিদ্ধান্ত নেবেন। ২০০১ সালের পর দেশে অবাধ নির্বাচন হয়নি। বগুড়া বিএনপির দুর্গ ছিল, এখনো অক্ষুণ্ন আছে।
এ আসনে বগুড়া শহর জামায়াতের আমির আবিদুর রহমান সোহেলকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত।
বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর)
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী উপজেলায়। ১৯৭৮ সালে তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো এ আসনে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও এ আসনে খালেদা জিয়া বিজয়ী হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি ২ লাখ ৩২ হাজার ৭৬১ ভোট পান। তবে প্রতিবারই খালেদা জিয়া আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচন হয়। তিনটি উপনির্বাচনে বিজয়ী হন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার।
২০০৮ সালের উপনির্বাচনে দলের স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য মওদুদ আহমদ জয়ী হন। ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। তখন জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আলতাফ আলী সংসদ সদস্য হন। ২০১৮ সালে মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিল করা হলে গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিলটনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তাঁর মনোনয়ন বাতিল হলে শেষ মুহূর্তে রেজাউল করিম বাবলুকে সমর্থন দেয় বিএনপি। ২০২৪ সালে এখানে আওয়ামী লীগের মোস্তফা আলম বিজয়ী হন।
জেলা বিএনপির সূত্র বলছে, আসছে নির্বাচনে এই আসনে জিয়া পরিবারের কারও প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এ আসনে জেলা জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম রব্বানীকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত।